ছোটগল্পঃ- " আমার একটাই তুমি "

in hive-129948 •  6 months ago 

17-04-2024

০৪ বৈশাখ , ১৪৩০ বঙ্গাব্দ


🌼আসসালামুআলাইকুম সবাইকে🌼


people-2562102_1280.jpg

copyright free image from pixabay

তুমি কোথায় এখন? এখনও আসতেছো না যে! সেই কখন থেকে রোদের মাঝে বসে আছি! পলাশ কিছু বলে উঠার আগেই ফোন কেটেছিল আফরিন! মেয়েটাকে বুঝা বড় কঠিন। তিন বছরের প্রেম এখনও তার মন বুঝতে পারলো না পলাশ। দুনিয়াতে যদি কোনো কঠিন কাজ থাকে তাহলে সেটা হলো মেয়েদের মন বুঝা। কিছুদিন আগেই পলাশের জন্মদিন ছিল। কিন্তু আফরিন প্লেন করে রেখেছিল তাকে সারপ্রাইজ দিবে! কিন্তু তা আর হলো কই? পলাশই প্যাচ লাগিয়ে দিল। রাত বারোটায় অনেক আশা নিয়ে বসেছিল পলাশকে উইশ করবে বলে। কিন্তু পলাশ ফোন চার্জে লাগিয়ে শুয়ে পরে! সকাল হতেই চোখে পরে আফরিনের দশটা মিসড কল! ওয়াটসএপে সবই রাগের মেসেজ! এরপর থেকেই আফরিনের সাথে যোগাযোগ বন্ধ পলাশের। তবে খুব কষ্ট করে রাজি করিয়েছে দেখা করার। কিন্তু পলাশের আর সইছে না। কখন আসবে আফরিন! তার রাগ ভাঙাতে হবে আজ যে করেই হোক!

পলাশ আজ ইচ্ছে করেই সাদা পাঞ্জাবী পরে এসেছে। কড়া রোদের মাঝে রাস্তার পাশেই পলাশ দাঁড়িয়ে আছে। কোনো বাতাস নেই। এই রোদে দাঁড়িয়ে থাকতেও পলাশের ভালো লাগছে না। পলাশ মনে মনে ভাবছে! অপেক্ষা করা আসলেই কঠিন কাজ। সময় যেন যেতেই চাই না। ঠিক কিছুক্ষণ পরেই আফরিনের ফোন!

-তুমি কোথায় এখন?
-আমি ক্যাম্পাসের সামনে কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে আছি!
-কই? দেখছি না তো তোমাকে। আমি সেখানেই দাঁড়িয়ে আছি।

ঠিক তখনই মাথা ঘুরিয়ে ডান পাশে তাকাতেই দেখতে পায় আফরিন দাঁড়িয়ে আছে! মেয়েটা যে রাগ করেনি এটাই অনেক। পলাশ ভাবছে, রাগ করলে হয়তো দেখা করতে আসতোই না! আফরিন আজ সাদা রঙের শাড়ি পরেই বের হয়েছে। আফরিনকে আগে কখনো সাদা শাড়িতে দেখেনি পলাশ। খুব সুন্দর লাগছে আফরিনকে। আফরিনের কাছে যেতেই পলাশ ওমনি করে বলে উঠল! সরি আমি!

এখন ওসব সরি টরি বলে লাভ নাই!! আফরিনের রাগ যে এখনো কমেনি সেটা বুঝতে পেরেছে পলাশ। আফরিন তার ব্যাগ বের করে। সেখান থেকে চারশো টাকা বের করে পলাশের হাতে ধরিয়ে দেয়! যাও, কেক নিয়ে আসো গিয়ে!

এখন আবার কেক কেন? এই রোদের মাঝে কোথা থেকে কেক নিয়ে আসবো!

আফরিনের সোজা উত্তর! যেখান থেকে পারো নিয়ে আসো। আমি জানি না কিছু! কি আর করা। আফরিনের সাথে পলাশ রাগ করতে পারে না। মেয়েটা যে বড্ড ভালোবাসে তাকে সেটা ঠিকই বুঝতে পারে পলাশ। রোদের মাঝেই হাটাঁ শুরু করে। ঠিক তখন পিছন থেকে আফরিন ডাক দেয়! এই যে শোনেন! এদিকে আসেন!! কেক আনতে হবে না! এখানে বসে!

ঠিক তখন আফরিন কেক বের করে! ঘাসের মাঝে কেকটা লুকিয়ে রেখেছিল। তার মানে জন্মদিন সেলিব্রেশন করার জন্যই এতোকিছু! কেকটা বের করতেই দেখা যায় উপরে লেখা 'প্রিয়'। পলাশ দেখেই অবাক হয়ে যায়। পলাশের কান্না চলে আসে।

আফরিন তখন বলে উঠে, " আরে বোকা! কাদাঁর কি আছে! তোমার জন্মদিন আমি ঠিকই মনে রাখি, তুমি মনে না রাখলেও! "
পলাশ আফরিনের দিকে তাকিয়ে থাকে। তুমি এতো ভালো কেন? আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। হয়ছে! এবার কেক কাটেন! আর তখনই পলাশ কেক কেটে নেয়। আর আফরিনকে কেক মুখে তুলে দেয়। আর আফরিনও কেক পলাশকে খাওয়া দেয়। তবে কেকটা বড়। সবটা কেক খাওয়া যাবে না। তাই দুজন মিলে প্লেন করে আশেপাশে ছোট বাচ্চাদের দিয়ে দেয়া হবে। তারপর কেকটা দুজনে বাচ্চাদের মাঝে শেয়ার করে দেয়।

আফরিন আর পলাশ হাটঁতে থাকে। রাস্তার পাশেই কৃষ্ণচূড়া ফুলের গাছে। পলাশ আফরিনের দিকেই তাকিয়ে আছে। "দেখো, কৃষ্ণচূড়া ফুলগুলো কতো সুন্দর! "
তোমার থেকে বেশি না! তুমি কৃষ্ণচূড়ার থেকেও সুন্দর। হয়ছে বেশি পাম দিয়ে দিচ্ছেন। পাম না দিয়ে আমাকে একটা কৃষ্ণচূড়া ফুলে এনে দেন। কানে গুজে দিবো!

পলাশ ওমনি লাফ দিয়ে গাছ থেকে একটা কৃষ্ণচূড়া ফুল নিয়ে আসে। আফরিনের কানে গুজে দেয়। ঠিক তখন পলাশ আফরিনের হাতটি বলে বলে উঠল -

" শহরের সকল কৃষ্ণচূড়া ফুল ঝরে যাক,
তবুও আমার প্রেয়সী সুখে থাক।
কারণ আমার প্রেয়সীকে
অনেক ভালোবাসি। "

আফরিন হাসছে। পলাশ আফরিনের দিকে তাকিয়ে আছে অপলক দৃষ্টিতে। হাসলে আফরিনকে অনেক ভালো লাগে। পলাশ নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করে আফরিনের মতো মেয়েকে ভালোবাসতে পেরে। তার মতো একটি মেয়ে পাশে আছে বলেই স্বপ্নগুলো হয় সুন্দর।



10% beneficary for @shyfox ❤️

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNzq2MSXKSji21JRspt4nqpkXPR5ea7deLzvmJtuzVBwdLJUpBqtgAZ5gHtHPbayD2jR3CWqjkJ.png

ধন্যবাদ সবাইকে



WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg

আমি কে?

IMG-20211205-WA0092.jpg

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। সম্প্রতি আমি ইলেকট্রিক্যাল থেকে ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেছি। এখন বিএসসি এর জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছি। পাশাপাশি লেখালেখি করে আসছি গত দু বছর ধরে। ভালো লাগার জায়গা হলো নিজের অনুভূতি শেয়ার করা, আর সেটা আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। যাক,
নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

image.png

এমন রোমান্টিক গল্প পড়তে দারুণ লাগে। ভালোবাসায় একটু মান অভিমান, খুনসুটি না থাকলে ভালোবাসা জমে না। তবে গল্পটি পড়ে বুঝলাম যে আফরিন সত্যিই পলাশকে খুব ভালোবাসে। এই যুগে এমন ভালোবাসা পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার। যুগ যুগ ধরে ভালোবাসা বেঁচে থাকুক, সেই কামনা করছি। যাইহোক এতো চমৎকার একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।

আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া গল্পটি পড়ার জন্য 🌸।