13-05-2023
৩০ বৈশাখ , ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
আসসালামুআলাইকুম সবাইকে
সালটা ২০০৪। আমার বয়স সবেমাত্র তিন বছর। ভালোমন্দ বুঝার জ্ঞান কম। বলতে গেলে ছোট বাচ্চা! তিনবছরের বাচ্চা আর কতটুকুই বা বড় থাকে। তবে আগুন কোনটা পানি কোনটা এইটুকু বুঝ দুই বছর বয়সের পরেই হয়ে গিয়েছিল। গ্রামের ছেলে মেয়েরা ছোট বেলা থেকেই একটু দূরন্তপনার মধ্যে দিয়ে বেড়ে উঠে। চার দেয়ালে তাদেরকে আটকায়কে। সারাদিন শুধু ছোটাছুটি। তিন বছর বয়সেই যেন অনেক কিছুই বুঝতে শিখে গিয়েছিলাম।
তখন বর্ষার মৌসুম। সারাদিন শুধু বৃষ্টি। বৃষ্টির মধ্যে কোথাও যাওয়াও যায় না। ঘরে ভিতরে বসে থাকতে হয়। আর বড়দের চুর পুলিশ খেলায় আমাকে করা হয় দুধভাত! মনের আনন্দেই তাদের সাথে খেলা করতাম। কিন্তু তারা যে শুধুমাত্র নামে আমাকে খেলায় নিয়েছিল সেটা বুঝতে পারেনি। তবে খেলাটা উপভোগ করতাম। দুধভাত হিসেবে খেলার কারণে কখনো চোর হতে হয়নি।
বর্ষার সময় সারাদিন বৃষ্টি হতো। সারাদিন বৃষ্টি হওয়ার কারণে জমিগুলো পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। আমাদের বাড়ি তখন টিনের ছালের তৈরি। মাটর ঘর বললেও ভুল হবে না। বাড়ির সামনে আমাদের বড় পুকুরটা। বর্ষার পানিতে তখন ডুবি ডুবি অবস্থা। পুকুরের মাছ দেখতাম রাস্তা পেরিয়ে ক্ষেতে চলে যেত। লইট্যা মাছ ছিল তার মধ্যে অন্যতম। এছাড়াও ক্ষেতে খৈলা মাছ, ছোট ছোট পুটিঁ মাছ আরও কত মাছ। মাছের নামও মনে নেই।
তো সেবার আমাদের পুকুর পানিতে ভরে গিয়েছিল। একাধারে সাতদিন ধরে বৃষ্টি। সারাদিন মোষলধারে বৃষ্টির কারণ ধানের জমিসহ আমাদের পুকুর ডুবে গিয়েছিল! চোখের সামনে যেন পানি দেখতে পাচ্ছিলাম। পুকুর ডুবে গেল পানিতে! আমার বাবা তো তাড়াতাড়ি করে করে জাল দিয়ে বেড়া দেয়। নইতো সব মাছ চলে যাবে। জাল দিয়ে বেড়া দেয়ার পরও অনেক মাছ পুকুর থেকে চলে গিয়েছিল। তার দুদিন বাদে পানি একদম বাড়ির উঠোন অবধি চলে আসে। চলাফেরার ব্যবস্থা নেই।
বাড়ির কোণায় একগুচ্ছ কলা গাছ। কলা গাছগুলো তখন অনেক বড় হয়েছে। আমার চাচাতো কয়েকজন বড় ভাইয়েরা মিলে প্লেন করে কলা গাছ দিয়ে ভেলা তৈরি করবে। তখন কয়েকজন মিলে চারটা কলা গাছ কেটে ভেলা তৈরি করি। সেই সময় আমাদের বাড়ির সামনের প্রধান সড়কের উপর অবধি পানি চলে আসে। বন্যা যাকে বলে। ছোট বেলা এই সময় জীবনের প্রথম বন্যা দেখেছিলাম। চারিদিকে শুধু পানি আর পানি।
চাচাতো ভাইয়েরা কলা গাছের ভেলা দিয়ে মাছ ধরার প্লেন করে। গ্রামে মাছ ধরার জন্য বিভিন্ন রকমের জাল ব্যবহার হতো। ভেসাল জাল, টাকি জাল, ঠেলা জাল ইত্যাদি। তো চাচাতো ভাইয়েরা মাছ ধরতে যাবে শুনে আমারও যেতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু আমার মা দিতে চাইছিল না। সে কি কান্না! সোজা মাটিতে গড়াগড়ি শুরু করে দিয়েছিলাম। অতঃপর মা রাজি হলো চাচাতো ভাইদের সাথে মাছ ধরতে যেতে।
তবে শর্ত হলো আমি শুধু মাছ ধরা দেখতে পারবো। পানিতে নামা যাবে না। বৃষ্টির মধ্যেই বিকেলে চাচাতো ভাইদের সাথে চলে গেলাম মাছ ধরার জন্য। সড়কে যেতেই যেন সামনে বিশাল নদী! সব ধানের ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। রাস্তার মধ্যে নির্মিত ছিল একটা ছোট করে ব্রিজ। যাতে এ পাশের সব জমির পানি অপর পাশে যেত। ব্রিজের নিচে পানির স্রোত ছিল অনেক গতিতে। সেখানেই ফেলা হলো ভেসাল জাল। আপনারা নিশ্চয় চিনেছেন।
জাল ফেলে বেশ কিছু সময় ধরে বসে থাকতে হতো। কিছুক্ষণ পর পর জাল তুলে দেখা হতো মাছ উঠছে কি না! বন্যার সময় পানির অনেক বেগ থাকায় ছোট ছোট মলা মাছ, পুটি, কৈ এসব মাছই উঠতো বেশি। তবে আরেকবার যখন জাল তোলা হলো তখন কিছু মাছের সাথে উঠে এলে দোড়া সাপ। আমাদের দিকে দোড়া সাপ বলেই চিনে। এ সাপের কামড়ে তেমন কিছু হয় না।
পরেরবার যখন জাল তোলা হলো দেখা মিললো হলুদ রঙের দোড়া সাপের!! দেখেই একদম চিৎকার। আমি সাপ সেই ছোটবেলা থেকেই ভয় পায়। তারপর আর মাছ ধরা দেখা হয়নি। সোজা বাড়িতে। সেই সময়কার দিনে বন্যার পানিতে অনেকের ক্ষতি হয়েছিল। এমন দূর্যোগ যেন না হয় তেমনটাই প্রত্যাশা করছি। সবাই ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ সবাইকে
VOTE @bangla.witness as witness
OR
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
twitter share link
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ছোটবেলায় সবাই আমাদের মিথ্যে মিথ্যে খেলায় নিত ভাইয়া।তারপর জোর করে ভাত খাওয়াতো।মাটর ঘরটা কি?আর দোড়া সাপ বলতে কি দাঁড়াল সাপকে বুঝিয়েছেন!যাইহোক মাছ ধরতে খুবই মজার।কিন্তু বন্যায় আপনাদের পুকুরের অনেক মাছ চলে গিয়েছে জেনে খারাপ লাগছে।ছোটবেলায় আমরাও কলাগাছের ভেলা তৈরি করতাম।লেখাটি মজার ছিল,ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
দিদি হলুদ রঙের বিষহীন সাপ এটা বলতে পারেন। আমাদের দিকে দোড়া সাপ বলতো।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit