28-10-2022
১৩ কার্তিক,১৪২৯ বঙ্গাব্দ
আসসালামুআলাইকুম সবাইকে
কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভালো আছেন 🌼। আমি ভালো খারাপ মিলিয়েই আছি। তবে ভালো থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যায়হোক, আপনাদের সাথে কিছুদিন আগে ট্রেন জার্নির অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছিলাম। আজকে আবার শেয়ার করতে আসলাম। একটু অবাক হচ্ছেন তাই তো! অবাক হওয়ার কিছু নেই! আপনাদেরকে বলেছিলাম যে, ট্রেন জার্নির অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়ে থাকি। আর সেটাই আপনাদের সাথে শেয়ার করে থাকি। আর সেই অভিজ্ঞতাগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করতে ভালো লাগে।
আপনারা হয়তো জানেন যে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং এর জন্য আমি আশুগঞ্জ থাকি। আর ট্রেনিং সেশন সপ্তাহের দুদিন অফ থাকে। আর সে দুদিন সেখানে না থেকে বাড়িতে চলে আসি। আমার কিছু ফ্রেন্ড কিশোরগঞ্জ থেকে এসে ট্রেনিং করে। আমি অবাক হয় তাদের দেখে! কারণ প্রতিদিন এতোটা পথ পাড়ি দিয়ে কিভাবে ট্রেনিং করতে আসে! তবে তাদের কাছে শুনেছি, কিশোরগঞ্জ থেকে আশুগঞ্জ আসা-যাওয়ায় তাদের কোনো টাকায় খরচ হয় না! একদম বিনা টাকা চলে আসতে পারে। শুধু ভৈরব থেকে আশুগঞ্জ যেতে ২০ টাকা খরচ হয়! তবে এভাবে প্রতিদিন ৬০ কিমি রাস্তা ট্রেন জার্নি করা কি সম্ভব! ট্রেনে টিকেট ছাড়া গেলে এমনিতেই দাঁড়িয়ে যেতে হয়। তার উপর দুই ঘন্টা লাগে কিশোরগঞ্জ যেতে। কিশোরগঞ্জ থেকে আমার বাড়ি যেতে আরও বেশ খানিকটা পথ! প্রতিদিন আমার পক্ষ থেকে জার্নি করা সম্ভব না! তাই আশুগঞ্জ বাসা নিয়েছিলাম। কিন্তু সপ্তাহের পাচঁ দিন সেখানে থাকলে মনে হয়, কত দিন হয়ে গেল বাড়িতে যায় না! সপ্তাহের পাচঁটা দিন কিভাবে চলে যায় টেরও পায় না।
গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল! বাড়ি যাওয়ার প্লেন থাকে সেদিন। তাই তাড়াতাড়ি ট্রেনিং সেশন শেষ করে বাসায় চলে আসি। আমরা পাচঁ জন ফ্রেন্ড একটি বাসায় থাকি। সবাই এই দিনে বাড়িতে চলে যায়। তাই আমার সাথে এবার গিয়েছিল রমজান। তার বাড়িও ময়মনসিংহ! ট্রেনিং থেকে বাসায় আসতে ১ টা ৩০ মিনিটের মতো বেজে যায়! ২ টা ৪৫ মিনিটে বিজয় এক্সপ্রেস এসে দাড়াঁয় ভৈরব! সেখানে বেশিক্ষন দাড়াঁয়ও না। তাই তাড়াতাড়ি ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে গেলাম। আশুগঞ্জ আর ভৈরবে মাঝে শুধু একটা ব্রিজের ব্যবধান! ব্রিজ পাড় হলেই ভৈরব! ব্রিজ পার হতেও বেশিক্ষণ লাগে না। কিন্তু হেটেঁ অনেকটা পথ! প্রায় ১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য! মেঘনা নদীর উপর নির্মিজ ভৈরব ব্রিজে বিকেলে অনেক মানুষজন ঘুরতে আসে। মেঘনার সৌন্দর্য ভৈরব ব্রিজে দাঁড়িয়ে উপভোগ করতে পারে। যায়হোক, আমি আর রমজান চলে এলাম ব্রিজের টোল প্লাজার কাছে। যেখান টাকা দিতে হয় প্রত্যেক গাড়িকে। গাড়ির আকার অনুযায়ী একেক যানবাহনের জন্য একেক রকম টাকা ফিক্সড করা হয়েছে! সেখানে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু কোনো গাড়ি যেন আসতেছিল না। যা আসতেছিল সব ভারী বোঝা বহনকারী ট্রাক! ট্রাকে করে তো আর ব্রিজ পার হওয়া যাবে না।
কিছুক্ষণ পর দেখলাম একজন বাইক রাইডার আসলো। দেখে মনে হয়েছিল রাইডিং শেয়ার করে! আমি আর রমজান যেহেতু তাই দুজনেই সেটা দিয়ে যাওয়া যাবে। ভাড়া হিসেবে চাইলো ৫০ টাকা। আমরা দুজনে ৪০ টাকা দিব বলে রাজি হলাম। সেটা দিয়েই রাজি হলো! ২-৫ মিনিট লাগে ব্রিজ পার হতে! ব্রিজ পার হয়ে সোজা চলে গেলাম বাস স্ট্যান্ডে! বাস স্ট্যান্ড থেকে রেলওয়ে স্টেশন কাছেই! হেটেঁ গেলে ২০ মিনিট লাগবে। কিন্তু খরা রোদের মধ্যে হেটেঁ যাওয়ার ইচ্ছে হলো না। একটি অটোরিকশা নিয়ে নিলাম। স্টেশনে পৌঁছে গেলাম ২ টার দিকেই। সকাল থেকে আমরা দুজন কিছুই খায়নি । না খেয়েই ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং করতে প্লান্টে গিয়েছিলাম। তারপর পাশে একটি হোটেল ছিল। সেখানো দুজন পরোটা আর ডাল ভাজি খেয়ে নিলাম। ট্রেন আসতে এখনও দেরি! আমরা স্টেশনের ভিতরে গিয়ে কিছুক্ষণ বসে রইলাম। কিছুক্ষণ পরেই রেল কর্তৃপক্ষ মাইক দিয়ে বলে দিল ট্রেন আসতেছে এবং দুই নাম্বার প্লাটফর্ম এর রাস্তায় দাঁড়াবে! আমি আর রমজান রেল লাইন ক্রস করে চলে গেলাম দুই নাম্বার প্লাটফর্ম এ।
ঘড়িতে তখন ২ টা বেজে ১৬ মিনিট। পাশে কিছুক্ষণ গিয়ে বসে রইলাম। ঠিক ২ টা বেজে ২০ মিনিট বাজতেই দেখতে পেলাম ট্রেন আসতেছে। একদম সামনের দিকে চলে গেলাম। যেহেতু সিট পাবো না তাই দরজার পাশেই দাঁড়িয়ে যেতে হবে! ট্রেন কিছুক্ষন এসে দাঁড়ালো। কারন কিশোরগঞ্জ থেকে এগারোসিন্ধু এক্সপ্রেস ভৈরব লাইনে প্রবেশ করছিল। সেই ট্রেন লাইন ক্রস করলে বিজয় এক্সপ্রেস ছেড়ে যাবে ভৈরব থেকে। তারপর এগারো সিন্ধু এক্সপ্রেস রেল লাইন ক্রসিং করলে বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেন ছেড়ে দিল! আমি আর রমজান ট্রেনের দরজার পাশেই দাঁড়ালাম! তবে আমি কিছুটা ভয়ে ছিলাম যদি টিটি আসে টিকেট চেক করার জন্য! মানিব্যাগে ৭০ টাকা আছে। বাড়ি পর্যন্ত তো যেতে হবে! টিটি আসলে জামেলায় পড়ে যাবো! কিশোরগঞ্জ থেকে যারা আসতো তারা ভাড়া কখনো দেয় নি। সো কিছুটা রিলেক্সে ছিলাম। আর টিটি আসলে বলেছিলাম রমজানকে, সে যেন বিষয়টা দেখে!
ভৈরব থেকে কিশোরগঞ্জ যেতে দু ঘন্টা লাগে! আর একটি স্টেশন ছাড়া কোথাও থামে না। শুধু সরারচর এসে ট্রেন কিছুক্ষণ এর জন্য দাড়াঁয় ! রমজানের সাথে গল্প গল্প করতে করতে সরারচর চলে আসলাম। আসলে ট্রেনে আর বাসে উঠলে বুঝা যায় কতো ধরনের কন্টেন্ট যে আছে! একেকটা মানুষের জীবন যেন একেকটা কন্টেন্ট! লিখলে শেষ হবে না। এখন পর্যন্ত যতবার ট্রেনে ভ্রমণ কোনো না কোনো অপরিচিত লোকের সাথে পরিচয় হয়েছে! এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি! আমাদের পাশে এসেই দাঁড়ালো! বয়সে ৩৬-৪০ এটার ভিতরে হবে হয়তো! ভদ্রলোক দেখে মনে হলো উনি সবসময় ট্রেন জার্নি করেই অভ্যস্ত। এবার শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছে ট্রেনে করে! কিশোরগঞ্জ শ্বশুর বাড়ি। আমি আর রমজান মিলে কিছুক্ষণ ভদ্রলোকের শ্বশুর বাড়ির মজার কিছু কথা শুনলাম, হাহাহা! যাক, দেখতে দেখতে সরারচর চলে এসেছিলাম। সেখান থেকে কিশোরগঞ্জ যেতে আর বিশ মিনিট এর মতো লাগতে পারে।
আমি সামনের স্টেশনে নেমে যাবো! রমজানের বাড়ি যেহেতু ময়মনসিংহ তাই সে ময়মনসিংহ চলে যাবে ট্রেন দিয়ে। দেখতে দেখতে কিশোরগঞ্জ চলে এলাম। রমজানকে বিদায় জানিয়ে সেখান থেকে নেমে পড়লাম। নরমালি স্টেশনে টিকেট চেক করা হয়! গতকাল পায়নি টিকেট চেক করতে কাউকে। স্টেশন থেকে বেরিয়ে সোজা চলে গেলাম বাস স্ট্যান্ডে! সেখানে থেকে বাসে করে নান্দাইলে বাস স্ট্যান্ডে চলে গেলাম! আর বাস স্ট্যান্ড থেকে আমাদের বাড়ি বেশিদূরের রাস্তাও নয়। রিকশা নিয়ে সোজা বাড়িতে চলে এলাম।
Device | Oppo A12 |
---|---|
Photographer | @haideremtiaz |
Date | 27 October, 2022 |
যাক, আজ এই পর্যন্তই থাক! আশা করি আজকের ট্রেন জার্নির অভিজ্ঞতা আপনারা কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছেন। সামনে হাজির হবো নতুন কোনো পোস্ট বা নতুন কোনো অভিজ্ঞতা নিয়ে। সেই পর্যন্ত ভালো থাকবেন, সুস্থ্য থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ 🌼
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ সবাইকে
VOTE @bangla.witness as witness
OR
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ভৈরব বলে একটা জায়গা আমাদের এখানেও আছে। মনে পড়ল আপনার পোস্ট দেখে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
যাক জেনে ভালো লাগল আপনাদের এখানেও এমন একটি জায়গা আছে!
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit