১ম পর্বঃ গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা [মার্বেল খেলা ]

in hive-129948 •  2 years ago 

07-01-23

২৪ পৌষ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ


আসসালামুআলাইকুম সবাইকে


children-1822688_1280.jpg

copyright free image from pixabay

কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই অনেক ভালো আছেন! সবাই সুস্থ্য আছেন! আচ্ছা, আপনারা নিশ্চয় গ্রামবাংলার জনপ্রিয় কিছু খেলার নাম শুনেছেন অথবা শৈশবে আপনারাও খেলেছেন। আমি আপনাদের সাথে গ্রাম বাংলার সেই বিখ্যাত খেলাগুলো পর্ব আকারে শেয়ার করবো! শেয়ার করবো সেই খেলাগুলো নিয়ে আমার মনের অনুভূতি! তাই আজকে চলে এলাম আপনাদের সাথে শৈশবের জনপ্রিয় একটি খেলা মার্বেল খেলা শেয়ার করতে।

যাক, আমি যদি আপনাকে বলি! মার্বেল খেলেছেন কখনো? বেশিরভাগ উত্তর আসবে! তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে ভিন্ন কথা! যদিও আমি মেয়েদের মার্বেল খেলাও দেখেছি! মজার ছলে হয়তো খেলেছিল হয়তোবা না!
যারা ২০০৪ বা ২০০৫ এর আগে জন্মগ্রহণ করেছে আমার মনে হয় সবাই এই মার্বেল খেলাটা পেয়েছে বা খেলেছে ! যদিও এটা এখন বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে বলা যায়! ছোট বেলার সময়টা খুব দূরন্তপনার মধ্যেই যেত! ডিসেম্বরের শেষ দিকে তখন ভালোই শীত থাকতো! স্কুল নেই, পড়ালেখার প্যারা নেই! সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই চলে যেতাম মার্বেল খেলতে! পাড়ার সমবয়সী সব ছেলে আমাদের বাড়ির উঠোনে এসে হাজির! মার্বেল খেলার আগে বাজার থেকে আমরা মার্বেল কিনে নিয়ে আসতাম। ১০ টাকা দিয়ে বিশটার মতো মার্বেল দিতো! কামরেঙ্গার মতো ভিতরে থাকতো! সবুজ,নীল, লাল কালারের কামরেঙ্গা মার্বেল!

দলবেঁধে খেলা হতো! সর্বোচ্চ তিনজন কি পাচঁ জন! উঠোনের ঠিক মাঝে তিনটি ছোট ছোট গর্ত করা হতো! যে আগে প্রথম গর্তের এক মাথা থেকে শুরু করে আবার শেষ গর্ত পর্যন্ত যেয়ে পুনরায় প্রথম গর্তে ফিরে আসতে পারবে সে আগে উঠে যেত! এক গর্ত থেকে আরেক গর্তে মার্বেল ফালানোর জন্য আবার বাধাঁ হয়ে থাকতো আরেকজন! যদি না ফালাতে পারতো তাহলে তার মার্বেলকে সোজা জুরে আঘাত করে পাঠিয়ে দেয়া হতো অনেক দূরে! সিকোয়েন্স অনুসারে একজনের পরে আরেকজন মার্বেল মারতো! আমি এতোটাও এক্সপার্ট ছিলাম না! আঙুলে মার্বেলে আঘাত করার মধ্যে একটি ছিল হিন্দি মাইর! আমাদের দিকে আঞ্চলিক ভাষায় তা বলতো! ডান হাতের দুই আঙুলের মাঝে মার্বেল বসিয়ে ডান হাতের মাঝখানের আঙুলের সাহায্যে মার্বেল মারা হতো! অনেকেই দূর থেকেই মার্বেল লাগিয়ে ফেলতো!

এতো গেলো মার্বেল খেলার সিস্টেম! তবে সব থেকে ভোগান্তি হতো! যে কাক হতো! মানে হলো যে একেবারে শেষে উঠতো সে কাক নির্বাচিত হতে হতো! কনুই দিয়ে মার্বেল আনতে হতো! এটা খুবই কষ্ট হতো! অনেক সময় কনুইয়ে দাগ হয়ে উপরে চামড়া উঠে যেত। কিন্তু খেলা শেষ করে যেতে হবে! একে একে সবাই যে কাক হয়েছে তাকে এভাবে শাস্তি দিতো! আবার অনেক সময় কান ধরিয়ে রাস্তা দিয়ে নিয়ে আসা হতো! গ্রামের ছেলেরা সবাই এসে হাজির হতো। কাকের পিছন পিছন সবাই চলে যেত! অনেক মজা নিতো সবাই!

ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত মনে হয় অনেক মার্বেল খেলেছি! একবার তো বাবার হাতে মাইর পর্যন্ত খেয়েছিলাম! শীতের সকালে চলে গিয়েছিলাম মার্বেল খেলার জন্য! পড়া না শিখেই চলে গিয়েছিলাম! যখন মার্বেল খেলছিলাম কিছুক্ষণ পরে এসে দেখি বাবা এসে হাজির! সুন্দর মতে কথা বলে আমাকে বাড়িতে নিয়ে গেল! নিয়ে আর কোনো কথা নেই! বাশেরঁ ছোট কঞ্চি দিয়ে একদম হাতে এমন মাইর দিল সাথে সাথে হাত লাল হয়ে গিয়েছিল! এরপর থেকে আর এতো মার্বেল খেলা হয়নি! তবে খেলেছি, সেটা আবার লুকিয়ে লুকিয়ে। বাবা দেখলে রক্ষে নেই!

মাঝে মাঝে স্কুলে মার্বেল নিয়ে চলে যেতাম। টিফিন আওয়ারে মার্বেল দিয়ে হাত গণনা খেলা হতো! মানে হচ্ছে বলতে হবে কোন হাতে কয়টা মার্বেল আছে! বলতে পারলে এক গোল্লা! আর না বলতে পারলে সে উল্টা গোল্লা খাবে! আপনারা আাবার বাজারে মিষ্ট মনে করিয়েন, হাহাহা! এই গোল্লা ছিল সম্পূর্ন কাল্পনিক! তবে টিফিন আওয়ারে বসে বসে খেলতে ভালোই লাগতো! ব্যাগে সবসময় এক বা দুইটা মার্বেল থাকতই! বাড়ি থেকে যখন মার্বেল পকেটে করে নিয়ে আসতাম তখন ঝনঝন শব্দ করতো! পকেটে হাত ধরে নিয়ে আসতাম! যাতে কেউ বুঝতে না পারে আমার কাছে মার্বেল আছে! ছোটবেলার মার্বেল খেলার সময়টা ভালোই ছিল। শৈশবের সেই দিনগুলে খুব মিস করি। চাইলেই তো আর ফিরে পাওয়া যাবে না সে দিনগুলি!

চলবে...



10% beneficary for @shyfox ❤️

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNzq2MSXKSji21JRspt4nqpkXPR5ea7deLzvmJtuzVBwdLJUpBqtgAZ5gHtHPbayD2jR3CWqjkJ.png

ধন্যবাদ সবাইকে



WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg


VOTE @bangla.witness as witness

OR

SET @rme as your proxy


witness_vote.png

আমি কে?

IMG20210908180509.jpg

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

সত্যি ভাইয়া আগে আমরা ও এই মার্বেল খেলা খেলতাম।এটা অনেক ভালো লাগত কিন্তু আমি মোটেও ভালো পারতাম না। এই জিনিসটা অনেক ভালো লাগতো কাক হওয়া। কাক হয়ে এলে পিছে পিছে লোক জন আসতো অনেক মজা। যাইহোক ভাইয়া কিছুক্ষণের জন্য ছোট বেলায় ফিরে গিয়েছিলাম।ধন্যবাদ

হাহাহা! মেয়েরা তেমন পারে না এটা 😁
শুধু পিছন পিছন দেখতো কে কাক হয়েছে!

আমি কিন্তু মার্বেল খেলেছি,ভালোই লাগতো যদিও আমি তেমন পারি না।ছোটবেলা থেকে মার্বেল খেলা থেকেও মার্বেল আমার বেশ ভালো লাগতো।অনেক সময় ছেলেদের মার্বেল খেলা দেখতাম।আমাদের বাসার গলিতে এখন ও দেখি বাচ্চারা খেলে,আমার ছেলে তো এগুলা দেখে মার্বলের জন্য পাগল হয়ে যায়।যাই হোক ছোট বেলার কথা মনে পরে গেলো।ধন্যবাদ

জি আপু! গ্রামের খুব কম মেয়েদের দেখতাম মার্বেল খেলতো, তবে এতোটাও পারতো না! আপনার ছেলে তাহলে মার্বেল চিনে 😁

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

আসলে ভাইয়া ২০০৪ কিংবা পাঁচ এর আগে যাদের শৈশব তারা খুবই দুরন্তপনায় কাটিয়েছে। তখন ছোটবেলায় দেখতাম ছেলেরা গ্রামে উঠোনে উঠোনে মার্বেল খেলা খেলতো ছেলেদের জন্য আমার মনে হয় এটা খুবই আনন্দের একটি খেলা ছিল তাদেরকে সারাদিনের জন্য যদি খেলায় রেখে দিত তারা খেলতেই থাকতো। আজ ছোটবেলার কথা মনে করিয়ে দিলেন আমিও হয়তো দুষ্টুমির ছলে মাঝে মাঝে খেলেছি।

মেয়েরা কিন্তু এই খেলাটা তেমন পারে না! অন্য খেলা মোটামোটি ভালোই পারে!

এটা তো দারুণ মজার খেলা ছিল যেটা এখন বিলুপ্তির পথে। ছোটবেলা অনেক ধরনের খেলায় খেলেছি বর্তমান আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্রযুক্তির ব্যবহারে স্মৃতি বিজড়িত খেলাধুলা গুলো এখন আর দেখতে পাওয়া যায় না । অনেক ভালো লাগলো আপনার মার্বেল খেলার গল্প পড়ে।

আসলেই ভাই! এখনকার জেনারেশন এ খেলা বুঝেও না!

কি বলেন আপনি মার্বেল খেলায় মেয়েরা কম খেলেছেন!আমি তো অনেক খেলেছি মার্বেল খেলা।ছোট বেলায় কত রকমের খেলা খেলেছি তার নাম কোন জানা নেই।তবে মার্বেল খেলার অনেক জনপ্রিয় ছিল রাস্তাঘাটে।তবে মার্বেল খেলায় আমি অনেক বেশি মার্বেল হারাতাম জিততে কম পারতাম।বেশ সুন্দর একটি অনুভূতি শেয়ার করেছেন আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

হাহাহা! বাপরে আপনিও তাহলে মার্বেল খেলেছেন আপু! মেয়েরা শুধু হারতোই!

আপনার পোস্টটি পড়ে অনেক দিন পর পুরনো কথা মনে হয়ে গেল। এক সময় স্কুল কামাই দিয়ে কাজ বন্ধ করে বইপত্র নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে কোথাও এক জায়গা বসে অথবা কোন এক বড় বাগানে গিয়ে এই মার্বেল খেলেছি বন্ধুদের সাথে।। বলতে পারেন এটি গ্রাম বাংলার এক ঐতিহ্যবাহী খেলা ছিল একসময় এখন অবশ্য এগুলো কালের বিবর্তনে আর চোখে দেখা মেলে না। ধন্যবাদ আপনাকে পুরাতন ঐতিহ্য নিয়ে পোস্ট করার জন্য।

জি ভাইয়া! গ্রামে যারা ছিল তারা সবাই বলতে গেলে এ খেলাটায় পারফেক্ট ছিল

ছোটবেলায় আমারও মার্বেল নিয়ে অনেক স্মৃতি আছে। তবে আমার আর এত মার্বেল খেলা নিয়ে কোন অতীত নেই তবে বড় ভাই খেলতো আর আমি সেখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতাম। তবে আপনার বাবা আপনাকে অনেক শাসন করতো কিন্তু এক্ষেত্রে আমার মা আমাকে অনেক শাসন করতো। একদিন মার্বেল খেলতে গিয়েছিলাম বলে আমাকে অনেক মার খেতে হয়েছিল। তবে সত্যি বলতে আমি মার্বেল খেলতে খুব একটা ভালো পারতাম না।

হাহাহা! ভাই মার্বেল খেলতে গিয়ে কত মাইর যে খেয়েছি! আমি এতটাও পারফেক্ট ছিলাম না খেলায়!

মার্বেল খেলার কথা বলে পুরনো কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। অনেক বকা শুনেছি আম্মার কাছে এই মার্বেল খেলার জন্য। আপনার শেয়ার খেলার পদ্ধতির মধ্যে গর্তের ভিতর মার্বেল ফেলা এটা আমাদের এদিকেও খেলা হত। তবে মার্বেল দিয়ে আমরা নিজেরাই খেলা বানিয়ে বানিয়ে খেলতাম। কার কত মার্বেল আছে তার প্রতিযোগিতাও হত। আপনি স্কুলেও মার্বেল নিয়ে যেতেন জেনে নিজের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠলো। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। ধন্যবাদ ভাইয়া।

হুমম ভাইয়া! সবই ছিল গ্রামের ঐতিহ্য! শৈশবটা কেটেছে এসব খেলা খেলে! আপনিও খেলেছেন জেনে ভালো লাগলো।

অনেক পুরোনো স্মৃতি তাজা হয়ে গেল ভাই।এখন কার ছেলেপুলের এই মার্বেল এর আবেগ বুঝবে না। বোতলের পর বোতল ভরিয়ে ফেলতাম বাজিতে জেতা মারবেল দিয়ে।খেলে শুরু করলে কখন যে সকাল থেকে বিকেল হয়ে যেত খেয়াল থাকত না।অসাধারণ লাগল আপনার এই ব্লগটি।ধন্যবাদ ভাই শৈশবের স্মৃতি তাজা করে দেওয়ার জন্য।

ভাই যেহেতু কলোনীতে বড় হয়েছি তাই হেন কোন খেলা নেই যে খেলিনি।সিগারেটের প্যাকেট দিয়ে তাস বানিয়েও খেলেছি।' আজকাল ছেলেমেয়েরা এসব খেলার নামই জানে না। ভাই আপনার পোস্ট পড়ে ছোট বেলার কথা মনে পড়ে গেল। ধন্যবাদ সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।

হাহাহা! আপু আপনি দেখছি পাক্কা একজন প্লেয়ার!