10-10-2022
২৫ আশ্বিন ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ
আসসালামুআলাইকুম সবাইকে
কেমন আছেন সবাই? নিশ্চয় অনেক ভালো আছেন 🌼। আমি ভালো আছি। তো আজকে চলে এলাম আপনাদের সাথে বন্ধুত্বের ফেলে আসা কিছু মধুর স্মৃতি। আসলে বন্ধু আর বন্ধুত্ব যায় বলেন না কেন, কথাটির তাৎপর্য অনেক। একজন মা বা একজন বাবা অথবা একজন বন্ধুও কিন্তু ভালো বন্ধুত্ব হতে পারে। আমার কাছে বন্ধুত্ব মানে যার কাছে নির্দ্বিধায় সবকিছু শেয়ার করতে পারা, সুখে-দুঃখে পাশে থাকা। বন্ধুত্ব কথাটির মাঝে অনেক আবেগ, ভালোলাগা, খারাপ লাগা সবগুলো বিষয় যেন জড়িত। এবারের প্রতিযোগিতার বিষয়টি দারুণ। আমি যে কথাটা সবসময় বলে থাকি আমার বাংলা ব্লগ সবসময় ব্যবহারকারীদের সৃজনশীলতাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। এবারের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বন্ধুত্বের কিছু মধুর স্মৃতি শেয়ার করা যাবে। তাই তো আজ আমি লিখতে বসেছি, আমার জীবনে ফেলে আসা বন্ধুত্বের স্মৃতি।
ছোটবেলা থেকেই গ্রামে বড় হয়েছি। সে সুবাধে পাড়ার সমবয়সী ছেলেদের সাথে সারাদিন দূরন্তপনার মধ্যে চলে যেত। তখনও বন্ধু বা বন্ধুত্ব সম্পর্কে এতো কিছু বুঝতাম। শুধু বুঝতাম দূরন্তপনা আর খেলাধুলা। সমবয়সী ছেলেদের সাথে সারাদিন খেলায় মেতে থাকতাম। মনের কথাগুলো শেয়ার করা হতো না। পাড়ার কোনো খেলা হলে সেখানেই চলে যেতাম। তবে কি যেন একটা মিসিং ফিল হতো। প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর অনেক বন্ধুকেই পেয়েছিলাম। সময়ের পরিক্রমায় আজ তারা নিখোঁজ। হয়তোবা তাদের সাথে কথা হয়না। প্রাইমারি স্কুলে অনেক বন্ধু পেয়েছিলাম। তবে সেভাবে কারো সাথে সখ্যতা গড়ে উঠেনি। মনের গভীরতা যার সাথে সেই তো প্রকৃত বন্ধু্ত্ব হতে পারে। তখন ক্লাস চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ি সম্ভবত। ক্লাসে নতুন একটি ছেলে ভর্তি হয়েছে। ফর্শা করে ছেলেটা। প্রথম সারির বেঞ্চে বসে দেখতাম সবসময়। তার পরিচয়ে জানতে পারি তার নাম দস্তগীর। নান্দাইলে বাসা। বাবা এখানে উপজেলার নির্বাচন কমিশনার। বাবা বদলি হয়ে নান্দাইলে চলে এসেছে। যার কারণে চারিআনি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল।
শুরুর দিকে দেখতাম ছেলেটা খুব চুপচাপ থাকতো। কারো সাথে তেমন কথা বলতো না। আমি তার সাথে কথা বলে পরিচিত হলাম। নম্র,ভদ্র স্বভাবের সেই ছেলেটি কয়েকদিনেই যেন আমার সাথে ভালো বন্ধুত্ব তৈরি হয়ে গেল। প্রতিদিন দুজন একসাথে স্কুলে যাওয়া আসা করতাম। মাঝে মাঝে দস্তগীরের বাসায় গিয়ে নিয়ে আসতাম। পড়াশোনায় খুব ভালো ছিল। সত্যি বলতে তার পড়াশোনার স্টাইল আমি ফলো করতাম। পঞ্চম শ্রেণীতে সে টেলেন্টফুলে বৃত্তি পেয়েছিল। কিন্তু আমার রেজাল্ট খুব খারাপ হয়েছিল। সবাই আমাকে নিয়ে অনেক আশা করেছিল, আমি এ+ পাবো। কিন্তু এ+ পায়নি। একটা পর্যায়ে আমি খুব ভেঙে পড়েছিলাম। আমার খারাপ সময়ে দস্তগীর সবসময় আমাকে উৎসাহ দিতো। সামনে আরও অনেকটা পথ বাকি। এখন মন খারাপ করলে কি হবে! কিছুটা সাহস পেয়েছিলাম দস্তগীরের কাছ থেকে। তারপর আমাদের উপজেলায় একটি মাত্র সরকারি হাই স্কুল। ভর্তি হওয়ার আগে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয়। সেখানেও আমি ব্যর্থ! অনেক কান্না করেছিলাম সেদিন। চন্ডীপাশা স্কুলে পড়ার একটা স্বপ্নছিল সেটাও ভেঙে গেল। অনেকটা হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম। গ্রামের মানুষদের কাছ থেকে অনেক কথা শুনতে হতো। ভর্তি হলাম নাথপাড়া হাইস্কুলে। কেউ যখন জিজ্ঞেস করতো কোথায় পড়ি? তখন বলতাম নাথপাড়া স্কুলে। এ নিয়ে সবাই মজা নিতো। আমি কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছিলাম। কিন্তু সামনে আবার চন্ডীপাশা স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা দেয়া যাবে। দস্তগীর আমাকে সাহস দিয়েছিল। তুই এবার পারবি।
ক্লাস সেভেনে ভর্তি পরীক্ষা হবে। আমার কিছু ম্যাথে সমস্যা ছিল। সেগুলো নিয়ে চলে যেতাম দস্তগীরের কাছে। আমাকে খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে দিতো। বাংলা ব্যাকরণ থেকে কিছু বুঝিয়ে দিয়েছিল। বিশেষ করে বাগধারার কতগুলো টেকনিক শিখেয়েছিল আমার এখনও মনে আছে। দস্তগীর আমাকে সেবার খুব সাহায্য করেছিল। সেবার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলাম। পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলাম ৫০ জনের মধ্যে। আমার কি যে খুশি লাগছিল বলে বুঝানো যাবে না। একসাথে দুজন পড়াশোনা শুরু করি। জেএসসি পরীক্ষায় আবারও রেজাল্ট খারাপ হলো! কয়েক মার্কস এর জন্য এ+ মিস। ঐদিকে দস্তগীর টেলেন্টফুলে বৃত্তি পেল। তারপর দস্তগীর রাজউক উত্তরা কলেজে আবেদন করে। সেখানে সে চান্স পায়। কমার্স সাবজেক্ট পেয়েছিল। দস্তগীর নান্দাইল ছেড়ে চলে যাবে এটা ভেবে খুব খারাপ লাগছিল। কিন্তু কি আর করার! ভালো কিছু করতে হলে ভালো জায়গায় যেতেই হবে। আমি নবম শ্রেনীতে সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা শুরু করি। তখন আমার আরও বন্ধুত্ব হয় কয়েকজনের সাথে। তার মধ্যে পলাশ আর মেহেদী অন্যতম।
ক্লাসে আমরা তিনজন সবসময় একই বেঞ্চে বসতাম। কেউ দেরিতে আসলে আগেই সিট রেখে দিতাম তার জন্য। মেহেদীর বাসা একটু দূরে ছিল। এজন্য আমি আগে এসেই সিট রেখে দিতাম। এ সেকশনে ছিলাম আমরা তিনজন। রোল ছিল একজনের পর একজন। আমার রোল ছিল ২৬, মেহেদীর রোল ছিল ২৭ আর পলাশের ২৮। পরীক্ষায় আগেই টপিক ভাগ করে নিতাম। আমি রচনা, মেহেদী চিঠি আর পলাশ ভাবসম্প্রসারন পড়ে আসতো। তিন পাশাপাশি বসার কারণে দেখাদেখি করে লেখা যেত। আমি ম্যাথে ভালো ছিলাম। পরীক্ষার দিন সব ম্যাথ দেখাতে হতো। যখন রেজাল্ট দিতো তখন আবার আমাদের রেজাল্ট প্রায় সেইম আসতো। এইতো এভাবেই নবম শ্রেণী শেষ করলাম। তারপর দশম শ্রেণীতে পলাশ চলে যায় কিশোরগঞ্জ এ কোচিং করার জন্য। মেহেদীও বাড়ি থেকে কোচিং করে। আমি বাড়ি থেকেই পড়াশোনা করি। আমার তখন বাটন ফোন ছিল। মাঝে মাঝে ফোনে সব বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ হতো। কয়েকমাস পরে এসএসসি পরীক্ষা চলে আসে। পড়াশোনায় আরেকটু মনেযোগ বাড়ায়। মেহেদী ও পলাশ কোচিং শেষ করে বাড়িতে চলে আসে। তিন জন মিলে স্কুলে গিয়ে গ্রুপ স্টাডি করা হতো। যেগুলা প্রবলেম হতো বুঝতে ঐগুলো তিনজনে শেয়ার করে বুঝে নিতাম। বুঝতেও সহজ হতো।
এসএসসি পরীক্ষা চলে এলো। মোটামুটি সব পরীক্ষায় আশানুরূপ ছিল। ভেবেছিলাম এ+ এর কাছাকাছি রেজাল্ট থাকবে। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস রেজাল্ট যেরকম আশা করেছিলাম তার থেকেও খারাপ হয়েছিল।। মেহেদী আর পলাশের রেজাল্টের অবস্থা একই রকম ছিল। এদিকে জানতে পারি দস্তগীর রাজউক থেকে এ+ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। দস্তগীরের রেজাল্ট এর খবরটা শুনে ভালোই লাগছিল। যাক এভাবে এসএসসি শেষ করে ফেললাম। কিছুদিন পর আমি পলাশ, মেহেদী প্লেন করলাম ডিএসএলআর দিয়ে ছবি তুলবো। পরীক্ষা তো শেষ। এখন একটু ঘুরাঘুরি করা যায়। আমরা তিনজন ১০০ টাকা দিয়ে একটি ডিএসএলআর ভাড়া করে নিলাম। এটা ২০১৮ সালের দিককার কথা। দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত আমাদের ছবি তুলে দিবে। বাড়ি থেকে কয়েকসেট জামা নিয়েছিলাম। যেন পরিবর্তন করে বিভিন্ন পোজে ছবি তুলতে পারি। আমরা তিনজন চলে গেলাম নান্দাইল চৌরাস্তা একটি জায়গায়। রাস্তার পাশে লোকেশনটা সুন্দর। একে একে সবাই ছবি তুলে নিলাম। একসাথে তিনজনের অনেকগুলো ছবি তুলে নিলাম। সেসব স্মৃতিগুলো এখনও চোখের সামনে ভেসে উঠে। চাইলেও এখন আর ডিএসএলআর দিয়ে তিনজন একসাথে ছবি তোলা হয় না। ব্যস্ততার জন্য একেক জন একেক জায়গায়। আমার জীবনে এই তিনজন বন্ধুর সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো খুবই রঙিন ছিল। সবগুলো বন্ধু আমার আপনজন মনে হয়। একজনের নাম দিয়েই লিখতে পারতাম কিন্তু আমার লাইফে যারা জড়িয়ে আছে তাদের নাম না লিখলে কি হয়!
জীবনে আসলে অনেক বন্ধু পেয়েছি। কিন্তু উপরোক্ত তিনজন বন্ধুর মগো কাউকে পায়নি। একেকজন একেক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হলেও আমার জীবনের সাথে তারা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। হয়তো দূরত্ব বেড়ে গিয়েছে কিন্তু বন্ধু্ত্বটা এখনও ঠিক আগের মতোই আছে। বন্ধুদের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো কখনো ভুলে যাওয়ার মতো নয়। স্মৃতির পাতায় বেচেঁ থাকবে আজীবন। আমি চেষ্টা করেছি আমার জীবনের কয়েকজন বন্ধুত্বের স্মৃতি। বন্ধুত্বের এ স্মৃতিগুলো হয়তো কখনো ভুলতে পারবো না। তবে যে রঙিন সময়গুলো পার করেছি সেগুলো হয়তো আর ফিরে পাবো না। ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল বন্ধুত্ব, ভালো থাকুক প্রিয় মানুষগুলো।
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ সবাইকে
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
Hello friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Link
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনি প্রতিটা জায়গা রিচাল্ট লিখেছেন। এটা রেজাল্ট বা ফলাফল হবে। এটা খুবই বাজে লাগছিল পড়তে। সত্যি আপনার শিক্ষা জীবন টা বেশ কষ্টের। প্রায় সবসময়ই কাঙ্ক্ষিত জায়গা পাননি। তারপরও দস্তগীরের সঙ্গে আপনার বন্ধুত্বের বিষয়টি বেশ ভালো লাগল। এই স্মৃতিগুলো সারাজীবন থেকে যাবে।।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাই ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য 🙏
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জীবনে চলতে গেলে আমাদের বন্ধুর খুবই দরকার আছে। আর আপনার বন্ধু দস্তগির আসলেই খুব মেধাবী ছিলো। প্রতিবার ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি। আপনাকেও অনেক সাহায্য করেছে। আমারো ঠিক এমন একটি বন্ধু ছিলো।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হ্যা ভাই। আপনি ঠিক বলেছেন। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit