টাকার চেয়ে আত্মসম্মান বড়

in hive-129948 •  2 years ago 

30-05-2022

১৫ জৈষ্ঠ ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ


আসসালামু আলাইকুম সবাইকে


কেমন আছেন সবাই? আশা করছি ভালো আছেন। আজকে আপনাদের সাথে কিছু কথা শেয়ার করার জন্য চলে এলাম।

dawn-1840298_1280.webp

From pixabey

২০২০ সালের দিকের কথা। আমি তখন কিশোরগঞ্জ থেকে পড়াশোনা করতাম। কিশোরগঞ্জ একটি টেকনিক্যাল স্কুল থেকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং করার জন্য আসা। মা-বাবার ইচ্ছে ছিল ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুক। আমি জেনারেল থেকে পড়ার ইচ্ছে ছিল। রয়েল মিডিয়া কলেজে ভর্তিও হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু এদিকে শুনি আমার বাবা এপ্লাই করেছিল কয়েকটি পলিটেকনিক আর টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে। সাবজেক্ট হিসেবে আসলো ইলেকট্রিক্যাল। ডিপার্টমেন্ট এর বিষয়টা তখনও বুঝতাম না। অভিজ্ঞ কয়েকজন বড় ভাইদের সাথে কথা বলি এ বিষয়ে। তারা অবশ্য আমাকে সুপরামর্শই দিয়েছিল।

ভর্তি হয়ে গেলাম টেকনিক্যাল স্কুলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য। বাড়ি ছেড়ে কখনো কোথাও থাকা হয়নি। জীবনের প্রথমবার পড়াশোনার জন্য বাড়ির বাইরে এসেছি। যেদিন বাড়ি থেকে কিশোরগঞ্জ এসেছিলাম তখন কষ্ট হচ্ছিল। কি আর করা পড়াশোনার জন্য বাড়ির বাইরে তো থাকতে হবেই। আমার বাবার সাথে সেদিন বাড়ি থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে আসি। উঠলাম একটি ব্যাচেলর মেসে। মেসের এক মামা থাকে আমার সেই সুবাধে ভালোই ভালো মেসও পেয়ে যায়। আমার রুম গুছিয়ে সব ঠিক ঠাক করে বাবা বাড়িতে চলে যায়।

startup-593341_1280.webp

From pixabey

কিশোরগঞ্জ এ একটা সুবিধা ছিল আমার দুই মামার বাসা কাছেই ছিল। তো হেটেঁ গেল পাচঁ মিনিটের মতো লাগতো। মামার বাসায় দুপুরের খাবার সেখানে খেতাম। আমার এক মামাতো বোন ছিল নাম তার ত্বহা। তখন সে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়তো। বাসায় এসে এক বড় ভাই পড়াতো ত্বহাকে। মামা ও মামী দুজনেই সরকারী চাকরি করে এজন্য টিউশন শিক্ষককে ভালো এমাউন্ট এর টাকা দিতো। ত্বহার শিক্ষক অনার্সে এ পড়ালেখা করতো। তো করোনা বেড়ে যাওয়ার কারণে ত্বহার শিক্ষক ত্বহাকে আর পড়াতে পারবেনা বলে দেয়। আর এদিকে ত্বহাদেরও স্কুল বন্ধ করে দিবে। আর আমারও কলেজ বন্ধ করে দিবে। স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দিলে পড়ালেখার অনেক ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এজন্য মামী আমাকে বলে ত্বহাকে যেন আমি পড়াই । আমি প্রথমে রাজি হয়নি। কারণ ত্বহা এমনিতেই অনেক চালাক তার উপর আবার সে আমার মামাতো বোন। তবে মামীর আদেশ ছিল পড়ালেখার ব্যাপারে একদম স্ট্রিক্ট থাকতে হবে। আমি মানুষটাই অন্যরকম। বলতে পারেন সহজ-সরল। স্ট্রিক্ট থাকার চেষ্টা করেও পারতাম না। তবে খেয়াল করলাম ত্বহাকে যা পড়ায় সে সব বুঝে ফেলে এবং আমাকে পড়া দিয়ে দেয়।

poverty-4561704_1280.webp

From pixabey

আত্নীয় যেহেতু হয় তাই টিউশন ফি আমাকে কতো দিবে আর! আর জিজ্ঞেসও করার প্রয়োজন মনে করিনি। ভাবতাম ত্বহার শিক্ষককে যেখানে তিনহাজার টাকা দেয়, ভাবছিলাম আমাকেও হয়তো সে পরিমাণ টাকাই দিবে। মেসের খরচসহ পড়ালেখার খরচটাও মেটানো যাবে মনে মনে ভাবছিলাম। একমাস পড়ানোর পর টাকা দিবে পাচঁ বা দশতারিখের মধ্যে। আমি ত্বহাকে বলেছিলাম মামীকে যেন বলে মাস যেহেতু শেষ হয়েছে টাকা দেয়ার জন্য। আমার বাসা ভাড়াটাও দিতে হবে। এই বলে চলে এলাম বাসায়। পরদিন বাসায় যায় পড়াতে, ভাবছিলাম আজ হয়তো টাকাটা দিবে। কিন্তু সেদিনও টাকাটা পায়নি। এদিকে নয় তারিখে হয়ে গেল। মামী আমাকে বলে এখন একটু ঝামেলায় আছে কয়দিন পর দিবে। আমি তাতেও রাজি হলাম। চৌদ্দ তারিখ মামী আমাকে রুমে ডেকে নিয়ে এক হাজার টাকা দেয় টিউশন ফি হিসেবে! আমি রীতিমত অবাক হয়ে যায়। আমি তখন বললাম ত্বহার আগের শিক্ষককে যেখানে তিনহাজার দিতেন আর আপনি আমাকে সেখানে এক হাজার দিলেন। আমি অনেকটা সময় নিয়ে পড়াতাম ত্বহাকে। সেদিন মামীর দেয়া এক হাজার টাকা আর নেয়নি। মন হচ্ছিল টাকার চেয়ে আত্নসম্মানটাই বড়। জীবনে বেচেঁ থাকলে কতো টাকা আসবে আর যাবে।

পরিশেষে বলতে চাই, জীবনে আসলে টাকার থেকেও আত্নসম্মানটা বড়। যার আত্মসম্মান যত ভালো সে তত ভালো ব্যক্তিত্বসম্পন্ন আমি করি । যায়হোক, ধন্যবাদ সবাইকে পোস্টটি পড়ার জন্য। ভুল-ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।



10% beneficary for @shyfox ❤️



ধন্যবাদ

WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg



আমি কে?

IMG20210908180509.jpg

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

ভাই খুবই খারাপ লাগলো আপনার পোস্ট পড়ে। আমিও পোস্ট পড়ার সময় ভাবছিলাম আগের শিক্ষককে যা দিতো তার চেয়ে বেশি দিবে আপনাকে যেহেতু আপনা মামী হয়। তবে আমি রীতিমতো মতো অবাক যখন সে ১০০০ টাকা দিতে চায়। আসলে আপনি ঠিক কাজটাই করেছেন টাকা টা না নিয়ে। তবে এটার উচিত বিচার আল্লাহ করবেন। দোয়া রইলো আপনার জন্য।

হুম ভাই খারাপ আমার লেগেছিল খুব। ধন্যবাদ আপনাকে ভাই

আপনি একদম ঠিক বলেছেন টাকার চেয়ে অবশ্যই আত্মসম্মান বড় কিন্তু বর্তমানে আমরা টাকার কাছে আমাদের আত্মসম্মানকে বিসর্জন দিয়েছি ।আমাদের কাছে এখন টাকাই সব। টাকার জন্য নিজের আত্মমর্যাদা নিজের বিবেককে জলাঞ্জলি দিতে প্রস্তুত আমরা
যা মনুষ্যত্বকে বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত করে। এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে টাকাটাকেও বিসর্জন দিতে হয় আপু। আপনি একদম ঠিক কথা বলেছেন।

আপনার পড়ানোর বিষয়টি পড়ে এবং কম টাকা দেওয়ার ব্যাপারটি জেনে খারাপ লাগলো।তবে আমার মাথায় একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।হতে পারে আপনি যেহেতু মামার বাসায় খেতেন দুপুর বেলা এইজন্য বিল হিসেবে কেটেছেন আপনার মামী।কারণ এখন যুগটা খুবই সুবিধা আর সুযোগ খোঁজার ভাইয়া।কিছু মনে করবেন না আমার কথায় ,আমার মনে হয়েছে এটি।তবে আপনার পরিশ্রমের টাকাটা ঠিকমতো দেওয়াটা উচিত ছিল ওনাদের।ধন্যবাদ আপনাকে।

হতে পারে হয়তো দিদি। বাস্তবতা অনেক কঠিন দিদি। মন খারাপের কিছু নেই 🙂

অবশ্যই টাকার চেয়ে আত্মসম্মান বড়। টাকা দিয়ে সব কিছু কেনা সম্ভব নয় অনেক ভালো লিখেছেন পড়ে অনেক ভালো লাগলো।

আপনাকে ধন্যবাদ ভাইয়া

আপনার পুরো পোস্টটি পড়ে খুব ভালো লাগলো সত্যি ভাই টাকার চেয়ে আত্মসম্মান অনেক বড়। টাকা জীবনে অনেকবার আসবে কিন্তু আত্মসম্মান একবার লুণ্ঠিত হলে তার ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। এত দুর্দান্ত পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।

ঠিক বলেছেন ভাইয়া। টাকা জীবনে আসবে যাবে কিন্তু আত্মসম্মান একবার বিসর্জন দিলে সেটা আর ফেরত আসবেনা।

ভাইয়া আপনি ঠিক বলেছেন টাকার থেকে আসলে মানুষের আত্ম সম্মানটাই বড়। কিন্তু সমাজে এমন কিছু মানুষ আছে যারা নিজের সম্মানের দিকে তাকায় না টাকায় তাদের কাছে সব। টাকার জন্য তারা যেকোনো কিছু করতে পারে। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া এত মূল্যবান একটা পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ।আপনার জন্য শুভেচ্ছা রইল।

আসলেই আপু ঠিক বলেছেন আমাদের সমাজে এমন কিছু মানুষ আছে যারা এমনটাই করে। ধন্যবাদ আপনাকে।

আসলে আপনার পোষ্টের শেষ পর্যায়ে গিয়ে অনেক খারাপ লাগলো। আমি ভেবেছিলাম আপনি যেভাবে আশা করছিলেন হয়তোবা তার থেকেও বেশি কিছু পাবেন। কিন্তু এতদিন অপেক্ষা করার পর যে এইরকম একটা পরিস্থিতি হবে বুঝতে পারেনি। আপনি ঠিক করেছেন টাকাগুলো নেননি। সত্যি তো কত টাকা আসবে যাবে। আত্মসম্মান টাই বড় কথা।

একদম ঠিক বলেছেন আপু। ধন্যবাদ আপনাকে

আপনার পুরো গল্পটা পড়লাম, কিন্তু আপনাকে বলার মত বা কোনো পরামর্শ দেওয়ার মতো কোন ভাষা জানা নেই। আমি তবে আপনি টাকাটা না নিয়ে ভালোই করেছে। টাকার চেয়ে আত্মসম্মান বড়, টাকা জীবনে বেঁচে থাকলে অনেক উপার্জন করতে পারেন। আমাদের সাথে আপনার মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য, আপনার প্রতি রইল আন্তরিক অভিনন্দন।

আপনার মন্তব্য পড়ে ভালো লাগলো ভাই। টাকা আসলেই জীবনে অনেক আসবে যাবে তবে আত্মসম্মান একবার বিসর্জন হয়ে গেলে তা আর ফেরানো সম্ভব না

টাকার চেয়ে আসলে আত্মসম্মান অনেক বড়। আগের শিক্ষককে যেখানে তিন হাজার টাকা দিতো সেখানে আপনাকে 1000 টাকা দেয়ার ব্যাপারটি আসলেই অবাক করল আমাকে। আপনি টাকাটা না নিয়ে খুবই ভালো করেছেন। আপনার এই কাজের জন্য আপনাকে স্যালুট জানাচ্ছি। ভালো থাকবেন ভাইয়া।

আপনার মন্তব্য দেখে খুবই ভালো লাগলো আপু। টাকার কাছে কখনো আত্মসম্মান বিসর্জন দিতে নেই এই ব্যাপারটা শিখেছি।