শেষ পর্বঃ ট্রেন জার্নি [ কমলাপুর টু ভৈরব ]

in hive-129948 •  2 years ago 

24-10-2022

০৯ কার্তিক ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ


আসসালামুআলাইকুম সবাইকে


কেমন আছেন সবাই? আশা করছি এই বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় আপনারা হয়তো ভালো আছেন। আজ সারাদিন বৃষ্টি হলো। এই বৃষ্টির মাঝেই ট্রেনিং করতে হলো। একদিন না করলেই যেন পিছিয়ে পরতে হয়। বৃষ্টির দিনে তেমন কিছু করাও যায় না। কয়েকদিন সারাদেশে এই বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। আপনারা হয়তো অবগত আছেন যেন "সিত্রাং" নামক ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে। বাংলাদেশের উপকূল সহ ১৩ টি জেলা বিপদসীমার মধ্যে রয়েছে। আপনারা যারা উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাস করেন, অবশ্যই অবশ্যই নিরাপদ স্থানে অবস্থান করবেন আশা করছি! যায়হোক,

১ম পর্বের পর

টিকেট নিয়ে বেরিয়ে হয়ে যাওয়ার সময় খেয়াল করলাম টিটি গেইটের সামনে দাড়িঁয়ে আছে। যারা কোন ট্রেন দিয়ে সেটা টিটি গেইটে দাড়িঁয়ে বলে দিচ্ছে এবং সে ট্রেনটি কোন প্লাটফর্ম এ দাড়িঁয়ে আছে সেটাও। আমি একটু আগ্রহ নিয়েই টিটির কাছ গেলাম কিন্তু তেমন পাত্তা পেলাম। দুবার বলার পরে আমাকে বলছে চার নাম্বার প্লাটফর্ম এ চট্রলা এক্সপ্রস ট্রেন দাড়িঁয়ে আছে। ঘড়িতে তখন বারোটা বেজে পঞ্চাশ মিনিট! আর দশ মিনিট আছে। চার নাম্বার প্লাটফর্মের একদম আগে ট্রেন দাড়িঁয়ে আছে। তাড়াতাড়ি করে ট্রেনের কাছে চলে গেলাম। যদিও স্ট্যান্ডিং টিকেট কেটেছি কিন্তু সিট খুজছিলাম কোথায় খালি আছে। মাঝের অনেকগুলা বগীতে সিট ফাকাঁ আছে। আর ভৈরব পর্যন্ত মোটামোটি ফাকাঁ থাকে সিট। মাঝের কোনো একটা বগীতে উঠে পড়লাম। মোটামোটি সব সিট ফাকাঁ! শুধু টিকেট কাটলাম মনে হচ্ছিল! যায়হোক, জানালার পাশে বসার ইচ্ছে ছিল কিন্তু বাহিরে প্রচন্ড রোদ! এজন্য ডান পাশে সিটে এসে বসলাম। ব্যাগটা উপরের তাকে রেখে দিলাম। কিছুক্ষণ পর ট্রেন ছেড়ে যাবে। এরই মাঝে ট্রেনের হর্ণ বেজে উঠলো। অনেকেই তা শুনে দৌড়েঁ ট্রেনে উঠছে।

IMG_20221024_191049.jpg

Location:

অতঃপর ১টা পাচঁ মিনিটে ট্রেল চলা শুরু করলো। আপুকে ফোন দিয়ে অবশ্য বললাম যে ট্রেনে উঠেছি। কিছুক্ষণ পর আমার পাশে একজন ভদ্রলোক এসে বসলো। টিকেট আগেই সংগ্রহ করা হয়তো। ট্রেনে চলাফেরা করে অনেক মানুষের সাথেই পরিচয় হয়। আমার ট্রেন জার্নির অভিজ্ঞতায় অনেক মানুষের সাথে পরিচিত হতে পেরেছি। হয়তো তাদেরকে বিভিন্ন স্টেশনে হারিয়ে ফেলি অথবা আমি আমার গন্তব্যে আগেই পৌঁছে যায়। যাক, যেটা বলতেছিলাম ঐ ভদ্রলোক ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম যাবে। কথা বলে মনে হলো এই প্রথমবার ট্রেন দিয়ে চট্রগ্রাম যাচ্ছে। নরমালি বাস দিয়ে যাওয়া আসা করে। আর চট্রগ্রামে যাচ্ছে বেড়াতে। ভদ্রলোকটি আমার কাছে জানতে চাইলো চট্রগ্রাম পোঁছাতে কতক্ষণ লাগবে? আমি এর আগেও চট্রলা দিয়ে ফেনী গিয়েছিলাম। আর ফেনী থেকে চট্রগ্রাম যেতে দুই ঘন্টা লাগে। তার মানে চট্রগ্রাম পৌছাঁতে রাত নয়টা বেজে যেতে পারে। যদি মাঝ রাস্তায় ক্রসিং পরে তাহলে আরও বেশিক্ষণ লাগতে পারে! ভৈরব পর্যন্ত ট্রেন খুব তাড়াতাড়ি চলে যায়। দেরিও করেনা বেশি। ভৈরবের পরে ট্রেন একটু ধীরে ধীরে চলে মনে হয়। ফেনী থেকে আসার সময় দেখেছিলাম ট্রেনের রাস্তার কাজ চলছে। মাঝে মাঝে ট্রেন মাঝ রাস্তায় থামাতে হতো। এখন হয়তো রাস্তা সংস্কার হয়ে গেছে।

IMG_20221024_191113.jpg

Location:

কমলাপুর থেকে ঢাকা এয়ারপোর্ট আসতে বেশিক্ষণ লাগে না। বড়জোর ত্রিশমিনিটের মতো লাগে। সেখান থেকে অনেকেই উঠবে। এয়ারপোর্ট থেকে কিছু স্টাফ আমি যে বগীতে ছিলাম সেখানে ছিল। স্টাফদের মধ্যে বেশিরভাগই মেয়ে! একটি আপুর কথা শুনে মনে হচ্ছিল কেন দেশ চালাচ্ছে একজন মহিলা। স্টাফদের জন্য আগেই নাকি সিট বরাদ্দ ছিল। এটা ভিডিও করে ভাইরাল করে দিবে। একজন আপু ট্রেনের জানালার মধ্যে এসে বসে পড়লো। সাথে স্টাফরাও ছিল। তাদের কথোপকথন এ মনে হচ্ছিল পুরা বগী উনাদের দখলে! সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম কেন মেয়েদের ক্ষমতা এতো, হাহাহা! আপুরা আবার কিছু মনে করবেন না। আগের তুলনায় মেয়েরা অনেক ফ্রিভাবে চলাচল করতে পারে। তাদের অধিকার নিয়ে মেয়েরা এখন যথেষ্ট সোচ্চার। একজন মেয়ে ডাক দিলে দশজন লোক এসে যাবে কিন্তু একজন পুরুষ ডাক দিলে দশজন তো কখনোই আসবে না। এই হলো দেশের অবস্থা! এটা ভালো বলবো কি না খারাপ বলবো এটা আপনারাই বলবেন!

IMG20221022150957.jpg

Location:

যাক, আপুদের কথা শুনতে শুনতে আমার অনেক ঘুম চলে আসছিল। আমার আবার গরম ও কথা বলার মাঝেও ঘুমানোর অভ্যাস আছে। মানে হচ্ছে যেখানে যে পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়া যায়, হাহাহা! কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিলাম। ঘড়িতে তখন আড়াইটা বাজে। নরসিংদী চলে এসেছি। আর বেশিক্ষণ লাগবে না ভৈরব পৌছাঁতে। নরসিংদী স্টেশনে দেখলাম কলা বিক্রি করছে। জানালার পাশ দিয়ে কলা বিক্রেতা ডাক দিয়েছিলাম। কলা বিক্রেতা আশ্বস্ত করেছিল যে ট্রেনে উঠবে। শুনেছিলাম নরসিংদী এর কলা বিখ্যাত! খেতেও ভীষণ মজার হয়। কিন্তু কথা হলো কলার দাম! কলার দাম আগের থেকে বেড়ে গিয়েছে। ভৈরব স্টেশনে ঘুরাঘুরি করেও কলা কিনতে পারিনি। যাক, লোকটি একটু পরেই আসলো কলা নিয়ে। পাচঁটি কলা ২০ টাকা করে! দাম শুনেই খুশি হলাম, হাহাহা! আজকে কয়েক হালি কলা কিনে নিয়ে যাবো। তারপর তিন হালি কলা ৪৫ টাকা দিয়ে নিলাম। ট্রেনে বসেই অবশ্য কিছু কলা খেয়েও নিলাম! আমার পাশে যে ভদ্রলোক বসা তাকেও সাগেস্ট করেছিলাম কলা কিনতে। আমি খেয়ে মজা পেয়েছিলাম। পরে দেখলাম উনি এক হালি কলা কিনল। আর এদিকে ভৈরব স্টেশনের কাছেও চলে এলাম। ঘড়িতে তখন তিনটা বেজে দশ মিনিটের মতো বাজে। ভৈরব স্টেশনে নেমে পড়লাম আমি। সেখান থেকে পিক আপ দিয়ে চলে গেলাম সোজা আশুগঞ্জ এ।

DeviceOppo A12
Photographer@haideremtiaz
Date22 October, 2022

আশা করি আমার ট্রেন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আপনারা উপভোগ করতে পেরেছেন। কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পেরেছেন আমার ট্রেন জার্নির মুহূর্তটা কেমন হয়েছিল। যায়হোক, আপনাদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মতো এখানেই বিদায় নিচ্ছি। আল্লাহ হাফেজ 🌼



10% beneficary for @shyfox ❤️

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNzq2MSXKSji21JRspt4nqpkXPR5ea7deLzvmJtuzVBwdLJUpBqtgAZ5gHtHPbayD2jR3CWqjkJ.png

ধন্যবাদ সবাইকে



WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg



আমি কে?

IMG20210908180509.jpg

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

আপনার ট্রেন জার্নি এর প্রথম পর্বটা আমি দেখেছিলাম। আসলে ঠিক বলেছেন ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর জন্য উপকূলীয় এলাকাগুলো বেশ ভয়ে ছিল। এমনকি আবহাওয়া বার্তা থেকে অনেক সতর্ক দিয়েছে। অনেক বেশি ঘূর্ণিঝড়ের কারণে প্রায় অনেক ক্ষয় ক্ষতিও হয়েছে। কিন্তু এখন পরিস্থিতিটা কিছুটা ঠিক হয়েছে। আপনি দেখছি এর আগেও চট্টগ্রাম থেকে ফেনী ট্রেন জার্নি করেছেন। এইজন্য পাশে বসা লোকটিকে বলে দিতে পেরেছেন কত ঘন্টা সময় লাগবে। আবার দেখছি একেবারে বিশ টাকায় ৫ টা কলা পেয়ে তিন হালি কলা কিনে নিয়েছেন। আমাদের এখানে কলার অনেক বেশি দাম। এজন্য আবার পাশের লোকটিকেও কলা কেনার জন্য সাজেস্ট করেছেন। যাক আপনার জার্নির কথাগুলো বেশ ভালোই লাগলো।

জি আপু অনেকদিন পর কলা স্বস্তা দামে কিনতে পারলাম 😁। ধন্যবাদ আপনাকে চমৎকার মন্তব্য করার জন্য।

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ভৈরবপুর ট্রেন জার্নি গল্পটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো ভাই । ট্রেন জার্নি আসলেই আমাদের সবার ভালো লাগে আবার কিছু মানুষের অনেক বিরক্ত র কারণ হয়ে যায়। তাছাড়া ভাই আপনার কলা কেনার ব্যাপারটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো।
আপনার জন্য শুভকামনা রইল

অনেকদিন পর কলা স্বস্তা দামে পেয়েছিলাম এজন্য কম দামে কয়েকহালি নিয়ে নিয়েছিলাম। ধন্যবাদ আপনাকে ❤️