12-03-23
২৮ ফাল্গুন, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
আসসালামুআলাইকুম সবাইকে
কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই অনেক ভালো আছেন। যাক, ভালো থাকলেই ভালো। ইতোপূর্বে আপনাদের সাথে স্ট্যান্ডিং টিকেটের একটি পর্ব শেয়ার করেছিলাম। আজকে তৃতীয় ও শেষ পর্বটি শেয়ার করবো।
২য় পর্বের পর
ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে এসে প্লাটফর্ম এক এ এসে ট্রেন থামলো। ট্রেন এসে থামতেই আমি পিছনের বগীতে গিয়ে উঠে পড়ি। কিন্তু উঠে দেখি নিশাদ নেই! তখন ফোন দেয়। তখন জানতে পারি সে ঠিক সামনের বগীতে। একটু হেটেঁ সামনের বগীতে চলে যায়! সামনের বগীতে গিয়ে দেখি নিশাদ দাড়িঁয়ে আছে। কমলাপুর থেকেই স্ট্যান্ডিং টিকেট করে এসেছে। আমি করেছিলাম বিমান বন্দর স্টেশন থেকে। আসলে ট্রেন জার্নি একা করলে আপনি দেখবেন বোরিং ফিল করবেন। সাথে একজন থাকলে কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্যে যাওয়া যায়। আর লং জার্নির ক্ষেত্রে তো একা যাওয়াটাই জামেলার বিষয়। আর সেটা যদি হয় স্ট্যান্ডিং অবস্থায় তাহলে এর থেকে বিরক্তিকর আর কিছু হতে পারে বলে মনে হয় না! নিশাদের সাথে অনেকদিন পর দেখা হলো। বলতে গেলে আশুগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং শেষ করার থেকে। আসার পর আর দেখা হয়নি। ফেনীতেও একসাথে অবশ্য আমরা ছিলাম।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং শেষ করে আমি শুধু এডমিশনে এসেছি। আর বাকিরা সবাই বাড়িতে অবস্থান করছে। নিশাদের কাছে জানতে পারি সে ঢাকাতে এসেছে একটা চাকরির জন্য। তার দূর আত্নীয়ের এক মামা নাকি বলেছিল ঢাকা একটা জবের ব্যবস্থা করে দিবে। কিন্তু জব পাওয়াটা টাফ! আর মামা খালু থাকলেও অনেক সময় জব পাওয়া যায় না। যদি না আপনার স্কিল না থাকে। নিশাদকে বেশ কয়েকদিন ধরেই বলছে যাওয়ার জন্য। কিন্তু সে যায়নি। সময় ম্যানেজ করতে পারিনি। তার জন্য জবটা হতে হতেও হলো না। ফেনীতে না গেলে কাজটা হয়েই যেত। এদিকে ট্রেন চলছে। দুজনেই দাড়িঁয়ে আছি। আমি পাশের সিটের একজনের সিটের হাতলে বসার চেষ্টা করলাম। যাক, কিছুটা আরামছে যাওয়া যাবে। কিন্তু ভদ্রলোক দেখি আমার উপরেই শুয়ে পরছে। তাকে ডিস্টার্ভ না করে চুপ করে উঠে পড়ি। শুধু শুধু কষ্ট দেয়া কি দরকার। তবে মজার ব্যাপার হলো ট্রেন জার্নি আপনি দাড়িঁয়েও কম্পোর্ট ফিল করবেন। কারন বাস জার্নি থেকে ট্রেন জার্নি হাজারগুণে ভালো। যদিও ট্রেনে অনেক রকমের দুর্নীতি হয়ে থাকে।
ট্রেন দেখতে দেখতে নরসিংদী চলে আসলো। নিশাদ অবশ্য সকালে কিছু খেয়ে বের হয়নি। আমি সকালে মামার সাথে দেখা হওয়ার সময় অল্প নাস্তা করেছিলাম। নিশাদকে বলেছিলাম অবশ্য নরসিংদী স্টেশনে নেমে খেয়ে নিতে। কিন্তু এ স্টেশনে ট্রেন বেশিক্ষন দাঁড়াবে না। একেবারে ভৈরব স্টেশনে গিয়েই খাওয়া যাবে। ঢাকা থেকে ভৈরব যেতে দেড় ঘন্টার মতো সময় লাগে। নরসিংদী স্টেশন পার হতেই ট্রেনের টিটি এসে সবার টিকেট চেক করছে। আমরা যেহেতু স্ট্যান্ডিং টিকেট কেটেছিলাম আমাদের এতোকিছু জিজ্ঞেস করেনি। জাস্ট বলেছিল কোথায় যাবো আর টিকেট আছে কি না! আমাদের টিকে আছে এবং কোথায় আছে সেটা বলে দিয়েছিলাম! তখন মনে মনে ভাবছিলাম শুধু শুধু কেন যে টিকেট কাটলাম। নয়তো ফ্রিতেই যাওয়া যেত! এমন ঘটনা ঘটেছে যে, যখনই টিকেট ছাড়া ট্রেনে উঠি কেন জানি না সেদিনই ঝামেলায় পড়ে যায়। সেদিন টিটি এসে ঠিকই টিকেট দেখাতে বলে। এই জন্য ট্রেনে জার্নি করার সময় কোনো রিস্ক নিতে চায়না। টিকেট কেটেই ট্রেনে জার্নি করে থাকি।
দেখতে দেখতে ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনে চলে এলাম। মনে হচ্ছিল কতদিন পর ভৈরব স্টেশনে আসলাম। এখান থেকেই ট্রেনে করে বাড়ি যেতাম। ভৈরব এসে বেশিক্ষন দাড়ায়নি ট্রেন। নিশাদ আর খেতেও পারেনি। তবে ট্রেনের ভিতরে একটা সুবিধা হলো খাবারের ব্যবস্থা আছে। যদিও সেটার দাম একটু বেশি নিয়ে থাকে । ট্রেন ছাড়ার পর দেখলাম কিছু সিট ফাকাঁ রয়েছে। সেগুলোতে গিয়ে বসে পড়লাম। কিন্তু একটু পরেই দেখি এক ভদ্র মহিলা এসে বলা শুরু করে দিলো, "এটা আমার সিট! ৪৯ নাম্বার টা! " কি করা। উঠে মহিলাকে বসতে দিলাম। আবার দাড়িঁয়ে যেতে হচ্ছিল। ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া আসার পর অনেক সিটই খালি হয়ে গিয়েছিল। আমি আর নিশাদ আলাদা আলাদা সিটে বসে পড়লাম। নরমালি জানালার পাশেই বসে ভালো লাগে। জানালার পাশে একটি ফাকাঁ সিট পেয়েছিলাম সেখানেই গিয়ে বসে পড়লাম।
কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলাম খাবার বিক্রি করছে। যেহেতু দুপুর টাইম হয়ে গিয়েছিল আর পেটে ক্ষুধাও লেগে গেল। একশ টাকা দিয়ে একটা খাবারের প্যাকেট নিলাম ভিতরে সিজ, বার্গার আর চিকেন ফ্রাই! সিটের পাশে অবশ্য ছোট করে টেবিল ছিল। সেখানে রেখেই দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। তখন ট্রেন চলে এসেছিল কুমিল্লা পর্যন্ত! শরীর অনেক টায়ার্ডও লাগতেছিল। প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছিল। কিন্তু জানালা দিয়ে রোদ এসে একদম মুখের উপর পড়ছিল। জানালার পাশে বসে তাহলে সমস্যায় পরে গেলাম। জানালা লাগায় দিলে আবার বাতাস আসবে না। ট্রেনের উপরের ফ্যান দিয়ে কি আর চলে। জানালা কিছুক্ষণের জন্য লাগিয়ে দিলাম। ত্রিশ মিনিটের মতো ঘুমিয়ে নিলাম। তখন সম্ভবত লাকসাম পার হয়ে গিয়েছিলাম। লাকসামের পরে আর মাত্র দুটি স্টেশন। তারপরেই ফেনী। গোগল ম্যাপ অন করে বর্তমান লোকেশন কোথায় ছিল সেটা জেনে নিলাম। ঘড়িতে তখন সাড়ে বারোটার মতো বাজে। সিডিউল অনুযায়ী দুপুর ১২:৫০ এর দিকে ফেনী পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু এখনও গুনবতী স্টেনই পায় হয়নি তখনও। তার মানে একটার উপরে বেজে যাবে।
কিছুক্ষণ ফোন ইউজ করার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু আমার ফোনের বাংলালিংক সিম। নেটওয়ার্ক ই পাচ্ছিল না ঠিকমতো। তাই আর ফোন ইউজ করিনি। তবে দেখতে দেখতে গুনবতী স্টেশনে চলে এলাম। নিশাদ পাশের সিটেই ঘুমাচ্ছিল। নিশাদকে ডাক দিয়ে বললাম সামনের স্টেশন ফেনী। ব্যাগ সব ঘুছিয়ে নেয়ার জন্য। তবে গুনবতী থেকে এখনও ফেনী অনেকটা দূরের রাস্তা! চোখে তখন ঘুমও পাচ্ছিল। কিন্তু ট্রেন যদি চলে যায়, হাহা! কিছুক্ষণ ফোন ইউজ করলাম! ঘুমটাও চলে গিয়েছিল। সামনের স্টেশনই ফেনী! ফেনী স্টেশনে আসতেই ট্রেন সেখানে দাঁড়ালো। তারপর ব্যাগ নিয়ে সোজা নেমে পড়ি।
Device | Oppo A12 |
---|---|
Photographer | @haideremtiaz |
Location | w3w |
Date | 28 February, 2023 |
যাক, আশা করি আমার ট্রেন জার্নির পর্বগুলো পড়েছেন এবং কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছেন স্ট্যন্ডিং টিকেটে ট্রেন জার্নির অভিজ্ঞতাটা কেমন ছিল। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মতো এখানেই বিদায় নিচ্ছি। আল্লাহ হাফেজ 💟🍃
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ সবাইকে
VOTE @bangla.witness as witness
OR
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
twitter share link
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলেই টেন অথবা যে কোন জিনিসে একা একা জার্নি করতে ভীষণ খারাপ লাগে। আপনি আপনার বন্ধুকে কিছুটা পথ নিয়ে গিয়েছেন বোরিং ফিল্ড যাতে না হয়। বন্ধুরা তো এমনই হয় সব সময় নিজেদের পাশে থাকে। একশ টাকা দিয়ে মজা খাবারও কিনে নিলেন। ধীরে ধীরে স্টেশনে এসে পৌঁছেছেন সেটি দেখে আরো ভালো লাগবে। আসলেই আপনার অভিজ্ঞতাটা আমার কাছে অনেক ভালো লাগলো। অনেক সুন্দরভাবে শেয়ার করলেন আমাদের মাঝে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জি আপু! একা জার্নি করার চেয়ে দুজনে মিলে জার্নি করলে ভালো লাগে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আপু 🍃
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
স্ট্যান্ডিং টিকেটের আগের দুই পর্ব আমার অবশ্য পড়া হয়ে ওঠেনি।তবে এটা পড়ে বুঝতে পারলাম পোষ্টটি জার্নি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে।ট্রেন জার্নি করতে আমার বেশ লাগে।তবে ঠিকই বলেছেন একা সব জার্নিতেই বোরিং লাগে ,একজন থাকলে গল্পে গল্পে সময় কেটে যায়।যাইহোক আপনারা ভালোভাবে পৌঁছে গিয়েছেন গন্তব্যে জেনে ভালো লাগলো, ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জি দিদি। দাড়িঁয়ে দাড়িঁয়ে জার্নি করলে কিন্তু অনেক ধৈর্যের ব্যাপার থাকেই। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ দিদি 🍃🦋
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
যে কোন ভ্রমণের জন্য ট্রেনের ভ্রমন সত্যি অনেক আনন্দদায়ক। যদিও আপনার আগে দুই এপিসোড আমি দেখিনি, ট্রেনের জানি একা ভালো লাগেনা এই কথাটা আপনি একেবারেই ঠিক বলেছেন। আর আপনি এবং নিশাদ দুজনের ট্রেনে আসছিলেন। যদিও নিশাত চাকরির জন্য ঢাকায় আসছিল। দুপুরে খাবারের জন্য সিজ বার্গার আর চিকেন ফ্রাই কিনেছিলেন। ট্রেনে যাত্রা করে অনেক ভিন্ন ধরনের খাবার পাওয়া যায়। বিভিন্ন ধরনের পেশার মানুষ বিভিন্ন খাবার বিক্রি করে থাকে। অবশেষে আপনার পৌঁছালেন এবং আপনার বন্ধু নিশাদকে সবকিছু গুছিয়ে নিতে বললেন। সবকিছু মিলে অনেক ভালো একটা অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন আপনাকে ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জি ভাইয়া। দুজনে দাড়িঁয়ে দাড়িঁয়ে গল্প করতে করতে আশা গেল। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া 🦋🍃
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলে ঠিক বলেছেন ট্রেন জার্নির ক্ষেত্রে একা একা যেতে ভালো লাগেনা। সাথে কেউ থাকলেই ভালো লাগে। ভালোই হয়েছে আপনার নিশাদের সাথে দেখা হয়ে গেল। আর আমার কাছেও মনে হয় বাস জার্নি থেকে ট্রেন জার্নি বেশ ভালো। তবে ট্রেনে দাঁড়িয়ে যেতেও ভালো লাগে অবশ্য এটার অভিজ্ঞতা নেই। তবে বেশ ভালই অভিজ্ঞতা হয়েছে দেখছি আপনার। আপনারা ট্রেন জার্নির অভিজ্ঞতা গুলো পড়তে ভীষণ ভালো লাগে। কারণ অনেক কিছুই জানতে পারি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জি আপু! একা গেলে বোরিং লেগে যাবে একদম। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু 💟
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit