৭ম পর্ব || জীবনের ব্যর্থতার গল্প

in hive-129948 •  7 months ago 

24-04-2024

১১ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ


🌼 আসসালামুআলাইকুম সবাইকে 🌼


sad-2635043_1280.jpg

copyright free image from pixabay

৬ষ্ঠ পর্বের পর

কিন্তু আমার রোল আর বলেনি! সত্তর জনের মধ্যে মেবি ৩৫ জন সিলেক্ট হয়েছিল। আমার মন তখন খুবই খারাপ হয়েছিল। আসলে জীবনে ব্যর্থতার স্বাদগুলো তিক্ত হলেও এর থেকে নতুন করে শেখার আছে। মাইকে এনাউন্স করে দিলো যাদের হয়নি পরের বারের জন্য প্রিপারেশন নিতে। বাড়িতে সবাই অবশ্য ভাবছিল আমি টিকে যাবো রিটেনে। বড় মামাও ভাবছিল যে টিকে যাবো। তারপরে কতো কথা শুনতে হলো! আসলে মাইরের থেকেও কথার আঘাত কঠিন। আপনার খারাপ সময়ে আপনি চুপ করে থাকা ছাড়া কিছুই করতে পারবেন না! প্রতিবছরই যেহেতু বিমান বাহিনীতে লোক নেয়া হয় আমি নিজেকে বুঝালাম যে আবার পরীক্ষা দিবো আমি। সম্ভবত ২০২১ সালের দিকের ঘটনা তখন। বিমান বাহিনীতে ব্যর্থ হওয়ার পর নৌবাহিনী আবেদন করেছিলাম মেডিকেল এসিসট্যান্ট পদে! মনে হয় জানুয়ারীর শুরু দিকেই আবেদন করেছিলাম। পরীক্ষা মার্চের দিকে হয়েছিল।

ময়মনসিংহ থেকে মেডিকেল এসিসট্যান্ট নিবে দুইজন!! কিন্তু আবেদন করেছে ৮০০ এর উপরে! বুঝতেই পারছেন সরকারি চাকরি পাওয়ার জন্য মানুষ কতটা মরিয়া হয়ে থাকে। আসলে সরকারি চাকরিতে পদসংখ্যা কম থাকে কিন্তু তার বিপরীতে প্রতিযোগী বেশি থাকে। তো নৌবাহিনীতে আমি আগে পরীক্ষা দেয়নি সে হিসেবে এটা আমার কাছে বিমান বাহিনীতে পরীক্ষা দেয়ার মতে নতুন এক অভিজ্ঞতা! নৌবাহিনীতেও কয়েকধাপে প্রার্থী সিলেক্ট করা হয়। প্রথমেই প্রাথমিক বাছাই পর্ব! তারপর আবার রিটেন পরীক্ষা। রিটেনে সিলেক্ট হলে তারপর আবার চূড়ান্ত মেডিকেল। আর চূড়ান্ত মেডিকেলে যারা সিলেক্ট হবে তাদেরকে আবার ভাইবার জন্য সিলেকশন করা হবে। তো আমার মাঠ ছিল ময়মনসিংহ জেলার রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে! সকাল আটটার ভিতরে মাঠের ভিতরে থাকতে হবে। এর আগেরদিন আমি অবশ্য ময়ননসিংহ আমার ফ্রেন্ডের মেসে চলে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়াম আবার কাছেই ছিল।

সকাল সকাল চরপাড়া মোড় থেকে গাড়ি করে সোজা চলে যায় রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে। স্টেডিয়ামের কাছে যেতেই দেখে হাজার হাজার ছেলে আমার মতো সবাই এখানে আসছে পরীক্ষা দিতে। তবে ভিতরে অবশ্য মাইকে এনাউন্স করে দিয়েছিল কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে হবে। আমি যেহেতু মেডিকেল এসিসট্যান্ট এ এপ্লাই করেছিলাম তো আমি সে লাইনে গিয়েই দাঁড়ালাম। সকাল সকাল রোদের তাপমাত্রাও ছিল বলতে গেলে। খোলা মাঠের নিচে সবাই দাঁড়িয়ে আছে! ঠিক কিছুক্ষণ পর এনাউন্স করলো সবার জামা কাপড় খুলে ফেলতে! গায়ে শুধু সাদা গেঞ্জি আর আন্ডারপ্যান্ট থাকবে। তাছাড়া আর কিছুই থাকবে না। বলার সাথে সাথে দেখি সবাই খুলে ফেলছে তাই আমিও সব খুলে ফেললাম। তারপর সবাইকে এক সিরিয়ালে বসে পরতে বললো! আমরা মেডিকেল এসিসট্যান্ট এ মনে হয় ৮০০ এর মতো লোক হয়েছিল! একজন অফিসার এসে একদম লাইনের শেষ থেকে প্রাথমিক বাছাই করতে থাকলো!

প্রথমে দেখলে কারো হাত পা ঘামে কি না! কারো শরীরে কোনো দাগ বা স্পট। তাছারা দুই পায়ের হাটুঁ লেগে যায় কি না এবং মুখের ভিতরের দাতঁ ও জিহব্বা সব চেক করতে থাকলো! যাদের এগুলো ঠিক ছিল সবাইকে রাখছিল। আর যাদের ঠিক নেই তাদের বুকে সিল মেরে দিচ্ছিল। অফিসার যতই আগাচ্ছিল ততই আমার ভয় হচ্ছিল। হাত বারবার ঘেমে যাচ্ছিল। বার বার মুছে চেষ্টা করলাম নিজেকে ঠান্ডা রাখার। রোদের মধ্যে নিজেকে ঠান্ডা রাখাটাও কঠিন একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। বেশ কিছু ছেলে সিলেক্ট হয়েছিল। কিছু ছেলেকে আবার বুক ডাউন দিতে বলেছিল বারোটা করে। যারা পেরেছিল তাদেরকে রেখেছিল। মোটামুটি আমার অবধি আসতে আসতে অনেক প্রার্থী বাদ হয়ে যায়। এজন্য ভয়টাও কাজ করছিল বেশি। অবশেষে আমার কাছে আসলো অফিসার! কাছে এসে বললো পা সোজা করে দাঁড়াতে। দেখে হাটুঁ লেগে যায় কি না!

চলবে,,,,,



10% beneficary for @shyfox ❤️

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNzq2MSXKSji21JRspt4nqpkXPR5ea7deLzvmJtuzVBwdLJUpBqtgAZ5gHtHPbayD2jR3CWqjkJ.png

ধন্যবাদ সবাইকে



WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg

আমি কে?

IMG-20211205-WA0092.jpg

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। সম্প্রতি আমি ইলেকট্রিক্যাল থেকে ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেছি। এখন বিএসসি এর জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছি। পাশাপাশি লেখালেখি করে আসছি গত দু বছর ধরে। ভালো লাগার জায়গা হলো নিজের অনুভূতি শেয়ার করা, আর সেটা আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। যাক,
নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

image.png

যেখানে দুইজন এসিস্টেন্ট নেবে সেখানে 800 জন প্রতিযোগী সেখানে অংশগ্রহণ না করাই উচিত ছিল। কারণ যেখানে এভেলেবেল পজিশন থাকে সেখানেই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা ভালো আমি মনে করি। যাক প্রথমত আপনি একটাতে ব্যর্থ হয়েছেন আবার দ্বিতীয়বার অংশগ্রহণ করলেন। আশা করি আপনার হাত দেখে আপনাকে বাদ পড়াই দেবে। যেহেতু আপনি নিজেই ভয় পেয়ে আপনার হাত ঘামা শুরু করে দিলেন হি হি হি। জীবনে ব্যর্থতার শেষ নেই আবার সফলতারও শেষ নেই। আপনার ব্যর্থতার গল্প গুলো যতই পড়ছি ততই মজা পাচ্ছি।

হাহাহা! দেখা যাক আপু কি করে। বাদ দেয় নাকি রাখে 😂