জীবনের গল্পঃ ইনসিকিউরিটি

in hive-129948 •  last year 

13-09-2023

২৯ ভাদ্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ


আসসালামুআলাইকুম সবাইকে


couple-7836148_1280.webp

copyright free image from pixabay

কেমন আছেন সবাই? আশা করছি বরাবরের মতো ভালো থাকার চেষ্টা করছেন । তবে আমরা কিন্তু সেই ভালো থাকার চেষ্টাটাও করি না। আর চেষ্টা করেই বা কি হবে! আমরা জীবনে তো অনেক সমস্যা! তার চেয়ে বরং চেষ্টা না করাই ভালো! এমন চিন্তা আসতেই পারে । যেটাকে বলে ইনসিকিউর ফিল করা। আসলে বর্তমান দুনিয়াতে যত সমস্যা আছে তার প্রধান কারণ ইনসিকিউরিটি। এর মতো বিধ্বংসী আর কিছু হতে পারে না। এই ইনসিকিউরিটির জন্যই দেখবেন হার মেনে যায় আমাদের সকল ভালো দিক! আর জিতে যায় খারাপ দিকগুলো। এই ইনসিকিউরিটি এর জন্য একই ক্লাসে সহপাঠীদের মাঝে তৈরি হয় প্রতিযোগিতা আর সেই প্রতিযোগিতা একটা সময় রূপ নেয় রেষারেষিতে, আর কর্মক্ষেত্রের কথাই যদি বলি, কর্মীদের মাঝে সম্পর্ক হয়ে যায় বিষাক্ত।

কারো সাফল্য হয়ে যায় অসহনীয়। একটা সময় সেটা রূপ নেয় ভয়াবহ আকৃতিতে। অনৈতিক কাজ করতেও তখন দ্বিধাবোধ করে না। উচ্চ পদের আশায় সবকিছুই করতে পারে। ভালো-মন্দ, হিতাহিত জ্ঞান সব যেন শূন্য হয়ে পরে। মানুষ স্বভাবতই কিন্তু ইনসিকিউর তাই তো কোনো জায়গায় কাজ করলে শতভাগ আত্নবিশ্বাসী নয়। এটা আমার মাঝেও আছে। যার ফলটাও যে ভালো আসে না তা আমি নিজেই বুঝতে পেরেছি। এই ইনসিকিউর এর ফলে মনে ভয় হয় চাকরি হারানোর, এই বুঝি আমার চাকরি গেল! আর তখন মনে জন্ম হয় ঈর্ষা! অন্যের ভালো দেখতে না পারা! যে করে হোক সেই পদে তাকে যেতেই হয়। তার জন্য অনৈতিক কাজ করতেও যে মানুষ দ্বিধাবোধ করে না।

তবে আমার প্রশ্ন হলো এই যে মানুষ ইনসিকিউর তারা কি জন্মগতভাবেই? আপনাদের কি মনে হয়? আমার তো তা মনে হয় না। কারণ শৈশব থেকেই একটা শিশুর মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দেয়া হয় ইনসিকিউর নামের বিষয়টি। তবে এর দায় সবচেয়ে বেশি কার জানেন?? শিশুর বাবা মার! শুনে অবাক হচ্ছেন! অবাক হওয়ার কিছু নেই। শিশুর বাবা-মা ই প্রথম শিশুদের মনোজগতে ঢুকিয়ে দেয় ইনসিকিউর এর বিষয়টি। নিছক মজার চলে শিশুর বাবা মা বলেই ফেলে, তোমাকে তো আমরা কিনে এনেছি অথবা তোমাকে আমরা রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পেয়েছি আরও কতো কি!! এর ফলে শিশুর সরল মস্তিষ্ক কিন্তু বিষয়টি সহজভাবে নিতে পারে না। শিশুদের মনে তৈরি হয় ভয়। আর সেই ভয়ই হলো নিরাপত্তাহীনতার!

অর্থাৎ আপনি দেখেন, আমরা ছোট বেলা থেকেই শিশুদের মস্তিষ্কে ইনসিকিউর এর ব্যাপারটা ঢুকিয়ে দিচ্ছি। হয়তো বাবা-মা নিছক মজার চলে কথাগুলো বলেছে কিন্তু শিশুরা তো আর অতশত বুঝে না। আবার দেখেন শিশুদের মাঝে আরেকধপা ইনসিকিউরিটি বাড়িয়ে দেয় যখন তার মায়ের গর্ভে অন্য কেউ আসছে। খুশির ছলে বলেই ফেলে অনেক মা, "এবার তোমার খেলনায় ভাগ বসাতে আরেকজন আসছে অথবা এবার আর তোমাকে এতো আদর করা হবে না! " এর ফলে শিশুর মনেও কিন্তু ঈর্ষার রেখা তৈরি হয়। কেন আরেকজন এসে তার খেলনায় ভাগ বসাবে আর কেন-ই না বা আদর কমে যাবে তার। এসব ভাবনা তখন বুঝতে না পারলেও ঐ যে ইনসিকিউর ব্যাপারটা ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে সেটা কিন্তু একটা সময় এসে বুঝতে পারে।

আবার দেখেন, যখন শিশুদের স্কুলে ভর্তি করানো হয় তখন মা তো সোজা বলেই দেয়, " তোমাকে একশোতে একশো পেতে হবে! নইলে তোমার সাথে কথা বলবো না! " যার ফলে সমবয়সী শিশুদের সাথে কিন্তু একটা প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরি হয়। বর কোনোভাবে যদি একশোতে একশো না পায় তাহলেই সে শিশু ভেঙে পরে, মনের মাঝে ইনসিকিউর কাজ করে। কিন্তু একটা ক্লাসে ৩০ জন শিক্ষার্থীর মাঝে সবাই কি আর প্রথম হবে! বাকিদের যে তলানিতে ডুবিয়ে দেয়া হলো অনেক মা-বাবা ই সেটা বুঝতে চায় না। আসলে আমি আপনি একটা ইনসিকিউর এর মধ্যে দিয়েই বড় হয়েছি। আপনাকেও নিশ্চয় মা-বাবা হয়তো বলেছিল ভালো করতে হবে, এ+ পেতে হবে অথবা ভালো ভার্সিটিতে চান্স পেতে হবে। এর ফলে যে আপনি ইনসিকিউর অবস্থায় ভুগছেন আপনার মা কিন্তু সেটা বুঝতে চাইবে না।

আমরা আসলে ইনসিকিউর এর মধ্যে দিয়েই বড় হয়েছি! আমার বেস্ট ফ্রেন্ড যখন অন্য কারো সাথে কথা বলে অথবা গার্লফ্রেন্ড যখন অন্য কোনো ছেলের সাথে কথা বলে তখন মনে হয় এই বুঝি তাকে আমি হারালাম। এখন কথা হচ্ছে আদৌ কি তাকে হারালাম! কিন্তু ঐ যে বলে আসলাম মনের মাঝে ছোট থেকেই ইনসিকিউর এর ব্যাপারটা ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে এজন্য মনে এমন চিন্তা অনুভব হয়। তবে আমি আশা করি বর্তমান বাবা-মা তাদের সন্তানদের এ বিষয়ে সচেতন থাকবে। একটু হলেও চেষ্টা করবে শিশুদের মস্তিষ্কে পজিটিভ চিন্তাভাবনা ঢুকানোর।

যাক, আর বেশি কথা বাড়ালাম না। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মতো এখানেই বিদায় নিচ্ছি। আল্লাহ হাফেজ 🦋☘️



10% beneficary for @shyfox ❤️

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNzq2MSXKSji21JRspt4nqpkXPR5ea7deLzvmJtuzVBwdLJUpBqtgAZ5gHtHPbayD2jR3CWqjkJ.png

ধন্যবাদ সবাইকে



WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg


VOTE @bangla.witness as witness

witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


witness_vote.png

আমি কে?

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। সম্প্রতি আমি ইলেকট্রিক্যাল থেকে ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেছি। এখন বিএসসি এর জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছি। পাশাপাশি লেখালেখি করে আসছি গত দু বছর ধরে। ভালো লাগার জায়গা হলো নিজের অনুভূতি শেয়ার করা, আর সেটা আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। যাক,
নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Posted using SteemPro Mobile

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
  ·  last year (edited)

কথাগুলো হক বলেছেন। তবে এটাই বাস্তবতা এবং এভাবেই কিন্তু চলছে চলবে। এখনকার বাচ্চাদেরকে যদি প্রশ্রয় দিয়ে, বা যদি প্রতিযোগিতায় না নামানো হয় তাহলে তারা পড়াশোনাও করবে না। আর তারা ভালো কিছুও করতে পারবে না।আবার একদিক থেকে তারা যখন বড় হবে তখন তারা বিষয়গুলো বুঝে নিতে পারবে। যদিও ছোটবেলা কিছুটা ইনসিকিউর থাকবে। আর বড় হলে সব বিষয় সে বুঝে ফেলবে। যেমনটা আমরা অনেক কিছু এখন বুঝি। আমাদেরকে একটা সময় বলা হতো লেখাপড়া করে যে গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে। এটা কিন্তু ইউনিভার্সাল ট্রুথ না। এটা জাস্ট তখনকার সময়ে আমাদেরকে পড়ানোর জন্য একটি উৎসাহ মূলক বাণী ছিল। যদিও সেটি তখন বুঝতে পারতাম না,তবে এখন বুঝতে পারি।এরকম বাঁচ্চারাও ছোট থেকে বড় হতে হতে অনেক কিছু শিখে ফেললে বুঝে ফেলবে। যাই হোক অনেক ভালো ছিল বিষয়বস্তু। আর আপনি আপনার মত করে খুব সুন্দর ভাবে গুছিয়ে লিখেছেন। আমার অ্যাঙ্গেল থেকে আমি দুটো কথা বললাম ধন্যবাদ আপনাকে।

জি ভাইয়া এটা ঠিক বলেছেন। তবে বড় হওয়ার পরেও কিন্তু ইনসিকিউর ব্যাপারটা থেকেই যায়। কর্মক্ষেত্রে হোক আর শিক্ষাক্ষেত্রে হোক। যাক, ধন্যবাদ ভাইয়া 🌼

ওই যে বললাম বাস্তবতাই এমন, দিন দিন বাংলাদেশের যে অবস্থা হচ্ছে, বিশ্ব রাষ্ট্র ব্যবস্থার যে অধঃপতন হচ্ছে।যার ফলে প্রত্যেকটা মানবজীবন ইনসিকিউরিটির মধ্যে রয়েছে।আর এনসিকিউরিটির মধ্যে থেকে নিজেকে তো আর ফ্রেশ মাইন্ড এ রাখা সম্ভব নয় । যতদিন না মানবতার বিশ্ব রাষ্ট্রব্যবস্থা না ঘড়বে, ততদিনে এমনই থাকবে। ধন্যবাদ ভাই

ভাই জীবনে চলতে গেলে সব মানুষেই কোনো না কোনো সময়, বিভিন্ন কিছু নিয়ে ইনসিকিউরিটি বা অনিশ্চয়তায় ভুগে। কারণ আমাদের জীবনটা তো অনিশ্চয়তার ই। জীবনে কখন কি ঘটবে সেটা কেউ বলতে পারে না। আর চাকরির ক্ষেত্রে ইনসিকিউরিটি ফিল না করে, নিজের অবস্থান শক্ত করা উচিত। তাহলে চাকরি হারানোর সম্ভাবনা একেবারেই কমে যায়। কারণ কোয়ালিফাইড মানুষ সবাই পছন্দ করে। আর সেই লেভেলের যোগ্যতা থাকলে, একটি চাকরি চলে গেলে দশটি চাকরি হাজির হয়ে যাবে। তাই ইনসিকিউরিটির কথা না ভেবে অবশ্যই নিজের অবস্থান মজবুত করা দরকার।

জি ভাইয়া আপনি একদম ঠিক বলেছেন। নিজের অবস্থান মজবুত করতে পারলেই সব ঠিক

আসলে এমন কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের কাছে নিজের সিকিউরের কোনো নিশ্চয়তা থাকে না। তারা সুযোগ নিয়ে মানুষের ক্ষতি করতে পারে। তাই সকলকে বিশ্বাস করা উচিত নয়। যার কারণে জীবনটা একদম ধ্বংস হতে পারে। তাই জীবন চলার পথে সিকিউর এবং ইনসিকিউর আমাদেরকে অবশ্যই দেখে চলতে হবে।

জি আপু! এজন্য কাউকে বিশ্বাস করাও ঠিক না। আর ছোট থেকেই আসলে শিশুদেরকে ব্যাপারটা শেখানো