স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার! [১০% লাজুক খ্যাঁকের জন্য ♥]

in hive-129948 •  3 years ago 

26-04-2022

১৩ বৈশাখ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ


আসসালামুআলাইকুম সবাইকে



কেমন আছেন সবাই? আশা করি ভালোই আছেন। আমি আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি। তো সব জল্পনা কল্পনার পর আমাদের পরীক্ষা আজ শেষ হলো। বলতে পারেন ৬ষ্ঠ সেমিস্টার শেষ হয়ে গেল! এখন শুধু রিচাল্টের অপেক্ষা। আমি পড়াশোনার সুবাধে ফেনী থাকি, আপনারা হয়তো জানেন। কিন্তু আমার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইলে। বাড়িতে আসতে হলে ফেনী থেকে প্রায় অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হয়।

IMG20220425175250.jpg

w3w
Device:Oppo A12

প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা কবে শেষ হবে সেটা সিউর দিতে পারতেছিলাম না। কারণ রোযা রেখে স্যারেরা এক সাথে পরীক্ষা নিতে পারবেনা। কিন্তু অন্যান্য পলিটেকনিক ঠিকই একদিনে সব প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা নিয়ে নিল! আমাদেরকে এক সাথে নিলো না পরীক্ষাগুলো । না নিয়ে অবশ্য ভালোই হয়েছে, কারণ একসাথে পাচঁ বিষয়ের পরীক্ষা দিলে রোযা রেখে শরীর একদম দূর্বল হয়ে যেত। তার মধ্যে কয়েকদিন ধরে রোদের তাপমাত্রা বেড়েছে। বাহিরে গেলেই মাথা দিয়ে যেন ঘাম বের হয়ে যায়। আমাদের প্র্যাকটিক্যাল কবে শেষ হবে সেটার নিশ্চয়তা ছিল না ; এজন্য ট্রেনের টিকেটও কাটেনি। আর এই প্রথমবার বাড়ি থেকে এতোদূরে! তো টিকেট পায়নি কিন্তু একটি লোকাল ট্রেন আছে নাসিরাবাদ এক্সপ্রেস। লোকাল ট্রেনে আমার কিছু বন্ধু একবার বাড়িতে গিয়েছিল । টাইম একটু বেশি লাগে তবে ভাড়া কম লাগে বা অনেক সময় লাগেই না! তো কষ্ট হলেও আমরা স্থির করলাম এই লোকাল ট্রেন নাসিরাবাদ দিয়েই যাবো। সকাল নয়টাই প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা ছিল। তবে আজ একসাথে দুই সাবজেক্ট এর পরীক্ষা নিয়ে নিল। শুধু ভাইভা ধরেই পরীক্ষা শেষ হলো। নরমালি বিজয় এক্সপ্রেস একটি ট্রেন সকাল ৯:৩০ থেকে ফেনী হয়ে যায়। আমাদের পরীক্ষা বলতে গেলে খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল। ভাবলাম এই ট্রেন দিয়ে চলে যায় কিন্তু অনেক কাপড় চোপড় গোছাতে হবে এজন্য লেইট হয়ে যাবে। আমরা এই ট্রেনের আশা বাদ দিলাম। পরীক্ষা শেষ করে এসেই রুমের সব কাপড় চোপড় গুছিয়ে নিলাম। নাসিরাবাদ যেহেতো লোকাল ট্রেন আর ফেনীতে আসে সন্ধ্যায়। তো সারারাত সজাগ থাকতে হবে। এজন্য গোসল করে ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিলাম। ঘুম থেকে উঠতে উঠতে আসর হয়ে যায়। তারপর আসরের নামাজ পড়েই ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।

IMG20220425173622.jpg

w3w
Device:Oppo A12

ইফতার ট্রেনে বা স্টেশনে করতে হবে এজন্য মেসে থেকে ইফতার করার জন্য বুট সিদ্ধ করে নিয়ে আসলাম আর শরবত বানিয়ে নিয়ে আসলাম। ফেনী স্টেশন আমাদের মেস থেকে কাছেই এজন্য বেশি সময়ও লাগেনি আসতে। সাড়ে পাচঁটার দিকে ফেনী রেলওয়ে স্টেশনে চলে আসি। নাসিরাবাদ ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। ট্রেন সাড়ে ছয়টার দিকে আসার কথা কিন্তু তখনও ট্রেন আসেনি। তাই রেল স্টেশনে বসে ইফতার করে নিলাম। ইফতারের পরও ট্রেন আসেনা। তারপর রেলওয়ে একজন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করলাম যে নাসিরাবাদ ট্রেন কখন আসবে? উনি অবশ্য বললো ট্রেন আসতে সাড়ে সাতটা বা আটটা বেজে যাবে। তো কি আর করা! অপেক্ষা করতে থাকলাম ট্রেনের জন্য। সাতটা পঁয়তাল্লিশ এর দিকে আমাদের নাসিরাবাদ ট্রেন ফেনী স্টেশনে এসে হাজির হয়। তারপর আমরা ব্যাগ নিয়ে উঠে পড়ি ট্রেনে। ভেবেছিলাম ট্রেনের ভিতরে অনেক মানুষের সমাগম থাকবে। কিন্তু হলো তার বিপরীত! ট্রেনের ভিতরে অনেক সিট ফাকাঁ পড়ে আছে। যেটা সচরাচর খুব কম থাকে। তো আমি নরমালি জানালার পাশে বসতে বেশি আরাম অনুভব করি। তো জানালার পাশে সিটে গিয়ে বসে পড়ি। যেহেতো এটা লোকাল ট্রেন তাই সব স্টেশনেই এটা থামবে।

IMG20220426002403.jpg

ট্রেনের ভিতরে
w3w
Device:Oppo A12

ফেনী থেকে কিশোরগঞ্জ থেকে ৮-১০ ঘন্টা সময় লেগে যেতে পারে। ফেনীতে এসে ট্রেন প্রায় পনেরো মিনিটের মতো অপেক্ষা করলো। তারপর আটটা বাজার কিছুক্ষণ পরেই ট্রেন রওয়ানা দিয়ে দিলো। তারপর ব্যাগে কিছু খাবার নিয়ে আসছিলাম সেগুলো খেয়ে নিলাম। এদিকে মাগরিব ও এশা নামাজ মিস হয়ে গেল! কি আর করা যাত্রাপথে কিভাবে পরবো নামাজ। ট্রেন তার আপন গতিতে ছুটতে লাগলো। আর আমি জানালার পাশে বসে বাহিরে অন্ধকার প্রকৃতি উপভোগ করতে থাকলাম। সারাদিনের রোযা রাখার ক্লান্তি অনেকটাই দূর হয়ে গেল। বাহিরে প্রকৃতি উপভোগ করতে করতে বাড়ির কথাও ভাবতেছিলাম। সেই কবে বাড়ি থেকে ফেনীতে এসেছি! আর প্রায় আড়াই মাস পর বাড়িতে যাচ্ছি। ঈদটা অন্তত করা যাবে পরিবারের সাথে। এটা ভাবতেই সবথেকে বেশি ভালো লাগছিল। এরই মধ্যে তখন আম্মু ফোন দিয়ে বললো কোন পর্যন্ত এখন? আমি তখন লালমাই স্টেশন পাড় হয়েছি সবেমাত্র। আসতে আসতে সকাল হয়ে যেতে পারে এটা বলেই তখন ফোনটা রেখে দেয়। বিকালে যেহেতো ঘুমিয়েছি কিছুক্ষণ এজন্য ঘুম আসতেছিল না। আর ট্রেনের ভিতরে নেটওয়ার্ক পাইনা তেমন। ট্রেনের স্টেশনে নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় মোটামুটি। সারাদিন স্টিমিটে ডুকতে পারিনি এজন্য কিছুক্ষণ স্টিমিটে ডুকে কিছু পোস্ট পড়ি এবং আমার পোস্টে দেখলাম অনেকগুলো কমেন্ট জমে আছে সেগুলোর রিপ্লাই দিই। দেখতে দেখতে তখন কুমিল্লা চলে এলাম। ফেনী থেকে কুমিল্লাতে আসতে বেশিক্ষণ লাগেনি। বলতে গেলে বিজয় ট্রেনের থেকেও আরও স্পিডে নাসিরাবাদ ট্রেন টেনেছে। কুমিল্লাতে এসে কিছুক্ষণ দাড়াঁই ট্রেন। আর এ ফাকেঁ টিউবওয়েল থেকে পানি নিয়ে আসি। গলা প্রায় শুকিয়ে গিয়েছিল এজন্য পানি পান করে নিলাম। তারপর কানে হেডফোন লাগিয়ে গ্রামীণফোন প্রেজেন্টস স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার গানটা লাগিয়ে দিলাম। আহ! তখন মনে অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করতেছিল। গান শুনতে শুনতে চলে এলাম ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়াতে। তখনও সাড়ে বারোটা বাজেনি। এদিকে সেহরী কি করবো সেটা ভাবতেছিলাম। কিশোরগঞ্জ যেতে যেতে তিনটা বেজে গেলে সেখানেই সেহরী করা যাবে।

IMG20220426004747.jpg

w3w

Device:Oppo A12

ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়াতে তখন প্রায় পাচঁ মিনিটের মতো ট্রেন দাড়াঁয়। ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার কিছুক্ষন পরই দেখতে পায় লাল বাতি জ্বলছে। তারপর লক্ষ করতে পারলাম এটা আশুগঞ্জ পাওয়ার প্লান্ট। যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। রাতের বেলায় আশুগঞ্জ পাওয়ার প্লান্ট সুন্দর লাগছিল। ট্রেনে চলমান অবস্থায় থাকার জন্য ছবি তুলতে পারিনাই ভালো করে। তারপর চলে এলাম ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনে। সেখানে ট্রেন পনেরো মিনিটের মতো অপেক্ষা করে। তখন ঘড়িতে বাজে প্রায় ১ টা বেজে পাচঁ মিনিট। তারপর ট্রেন আবার চলতে শুরু করে তার আপন গতিতে। কিছুক্ষণ পর লক্ষ্য করতে পারলাম ভৈরব চলে এসেছে ট্রেন। এদিকে ট্রেনের কাটাঁতে তখন ৩টা বেজে ১০ মিনিট। ভৈরব ট্রেন অনেক্ষণ দাড়াঁলো। আর এদিকে সেহরীর সময়ও হয়ে গিয়েছিল। এজন্য কলা,বিস্কুট আর একটি পানির বোতল কিনে নিলাম। আশে পাশে তেমন ভালো কিছু পায়নি এজন্য এগুলো দিয়েই সেহরী করতে হবে। ট্রেনের ভিতরে লক্ষ্য করলাম অনেকেই সেহরীর খাবার নিয়ে এসেছে বাসা থেকে। কলা আর বিস্কুট খেয়ে সেহরী করে নিলাম। সেহরীর কিছু্ক্ষণ পরই আমাদের ট্রেন ছেড়ে দিলো।

IMG20220426044640.jpg

w3w
Device:Oppo A12

ভৈরব থেকে কিশোরগঞ্জ কাছেই। সামনে কয়েকটি স্টেশন পর কিশোরগঞ্জ। লোকান ট্রেন বলে কথা সবগুলো স্টেশনে কয়েক মিনিটের মতো দাঁড়িয়ে যায়। ট্রেন যখন বায়জীতপু এসে থামে। তখন দেখতে পেলাম অনেক যাত্রী উঠছে ট্রেনে। কিছুক্ষণ পর আবার চলতে শুরু করে। তারপর প্রায় সাড়ে চারটার দিকে আমাদের ট্রেন কিশোরগঞ্জ স্টেশনে এসে পৌঁছায়। তখনও অল্প অল্প আলো দেখা যাচ্ছিল। আটটা থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত ট্রেনের মধ্যেই বসে থাকতে হলো।

IMG20220426053301.jpg

w3w
Device:Oppo A12

ফাইনালি কিশোরগঞ্জ এসে পৌঁছাত পারলাম। তবে এ জার্নির বিশেষত্ব হচ্ছে ফেনী থেকে কিশোরগঞ্জ পর্যন্ত যে আসছি কোনো টাকা লাগেনি। বলতে পারেন বিনা পয়সায় আসতে পেরেছি। আমাদের কাছে অবশ্য টিকেট দেখতে এসেছিল টিটি আমরা তখন স্টুডেন্ট পরিচয় দেয়াতে আর কোনো সমস্যা হয়নি। তারপর কিশোরগঞ্জ থেকে অটো করে বাড়ির উদ্দেশ্য রওয়ানা দেয়। অটোতে বসে সকালের মনোমুগ্ধকর প্রকৃতি উপভোগ করতে বাড়িতে চলে আসি।

সবাইকে ধন্যবাদ আমার পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।

ধন্যবাদ


WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg



আমি কে?

IMG20210908180509.jpg

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

বাড়িতে চলে গেলেন ভাই। আমি আরো মনে করেছি ঈদের পর আপনার সাথে দেখা হবে। আপনার সুন্দর সময়টা কাটুক। ঈদ যেন হয় আনন্দময়। শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো আপনার জন্য।

ভাইয়া আপনার সাথে ঈদের পর ফেনীতে আসলে একদিন দেখা করবো ইনশাআল্লাহ 😍

এতো দূরে পড়ালেখা করতে আসেন? আপনিতো দেখছি আমাদের এ দিকেই পড়ালেখা করেন। ভাইয়া আপনার বাড়ি বললেন ময়মনসিংহ এ তাহলে কিশোরগঞ্জে গেলেন যে? যাইহোক বাড়িতে যাওয়ার পর বাড়ির সবাই নিশ্চয়ই অবেক খুশি ছিলো। আর সকালের ফটোগ্রাফি টি অনেক সুন্দর লাগছে।

শুভাকামনা রইলো ভাইয়া।

আপনাদের বাড়ি কি ফেনীতে তাহলে?

আমি কিশোরগঞ্জ নেমে পড়ি কারণ আমাদের বাড়ি কিশোরগঞ্জ থেকে নান্দাইলে যেতে সময় কম লাগে। ময়মনসিংহ নামলে আরও বেশি সময় লাগবে

ভাইয়া যত কষ্টই হোক ঈদের সময় বাড়ি যাওয়ার মজাটাই আলাদা। প্রিয় মানুষের মুখ গুলো দেখলেই আমরা সব কষ্ট ভুলে যায় । ধন্যবাদ ভাইয়া যাত্রপথের অভিজ্ঞতা সেয়ার করার জন্য।

আপনাকেও ধন্যবাদ পোস্টটি পড়ার জন্য।

বেশি কিছু বলার নেই, শুধু এটাই বলতে চাই,দোয়া করি যেন মায়ের ছেলে মায়ের বুকে সুস্থ-সবল শরীর নিয়ে ফিরে আসতে পারে। যেন ছেলেকে দেখে মায়ের মুখ হাসিতে ভরে যায়।

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই

বাহ,গানটি দারুণ।তাছাড়া পরীক্ষা শেষ হলে যেন আনন্দের সীমা থাকে না, পরীক্ষা মানেই সব ঝামেলার অবসান।আপনার বাড়ি আসার অনুভূতিটা ভালো ছিল, শুভকামনা রইলো ভাইয়া।

আসলে ভাই পরিবারের সাথে ঈদ করার মজাটাই আলাদা, যারা পরিবারের সাথে ঈদ করেছে শুধু তারাই বুঝতে পারবে তাই লেখাপড়ার জন্য আমরা যতই বাইরে থাকি না কেন ঈদের সময় সবারই মনে চায় পরিবারের কাছে যেতে অর্থাৎ
"স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার"🥰