মৃত প্রায় বুড়িগঙ্গা

in hive-129948 •  2 months ago 

কেমন আছেন বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


ইউটিউব চ্যানেলে একটি খবর দেখে খুবই খারাপ লাগলো। খবরটা ছিল ঢাকার একসময়ের প্রাণ বুড়িগঙ্গা নদীকে নিয়ে। আসলে এক সময়ের প্রাণ বলাটা বোধ হয় ঠিক হয় না। ঢাকার প্রাণ বলতে বুড়ি গঙ্গাকেই বোঝায়। কারণ এই ঢাকা শহরটা গড়ে উঠেছে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে। অথচ এই নদীটাকে তিলে তিলে ধ্বংস করে দিয়েছে ঢাকা এবং এর আশেপাশের লোকজন। এই ধ্বংসযজ্ঞে সরকারি সংস্থাগুলোও সামিল হয়েছে। অন্যভাবে বলতে গেলে সকলে মিলে এই নদীটাকে হত্যা করা হয়েছে। বেসরকারি এক টিভি চ্যানেলের একটি প্রতিবেদন দেখছিলাম। সেখানে বুড়িগঙ্গা নিয়ে বেশ কিছু ভয়াবহ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বুড়িগঙ্গার বর্তমানের নিকষ কালো পানি যে কোন প্রাণীর জন্য অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। বুড়িগঙ্গার নিচে আবর্জনার মোটা স্তর পড়েছে। যেই বুড়িগঙ্গা থেকে এক সময় মাছ ধরে প্রচুর মানুষ তাদের জীবিকা নির্বাহ করতো এখন সেই বুড়িগঙ্গা মৎস্যবিহীন হয়ে পড়েছে।

Black Modern Minimalist Reminder Instagram Post_20240419_113107_0000.png

ক্যানভা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।

সেই প্রতিবেদনে যে শুধু বুড়িগঙ্গার দূষিত পানি দেখিয়েছে তা নয়। বরং সেই পানি নিয়ে গিয়ে ল্যাবে টেস্ট করে সেটার রেজাল্ট ও তারা দেখিয়েছে। টেস্টের রেজাল্ট রীতিমতো শিউরে ওঠার মতো। প্রতি লিটার পানিতে মিলছে পাঁচ থেকে পাঁচ ৪০ পিস মাইক্রো প্লাস্টিকের টুকরো। প্রতি লিটারে আর্সেনিকের আদর্শমাত্রা ১০ মিলিগ্রাম হলেও বুড়িগঙ্গার পানিতে মিলেছে ৫৮ থেকে ৯৮ মিলিগ্রাম। প্রতি লিটারে যেখানে লেডের আদর্শমাত্রা ১০ মিলিগ্রাম সেখানে বুড়িগঙ্গার পানিতে মিলেছে ৫০ থেকে ৬৬ মিলিগ্রাম। এমনি করে ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়ামের সবকিছুরই মাত্রা পাওয়া গেছে অনেক বেশি। পানিতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকার জন্য সবচাইতে বেশি প্রয়োজন যেটার দ্রবীভূত অক্সিজেন সেটা থাকার কথা ছিলো প্রতি লিটারে ৫ মিলিগ্রাম। সেখানে মিলেছে মাত্র ০.২ থেকে ১ মিলিগ্রাম। যেটা সরাসরি নদীর জীববৈচিত্রের জন্য হুমকি।


বুড়িগঙ্গার তীর ধরে গড়ে ওঠা অসংখ্য কলকারখানার সমস্ত বর্জ্য ফেলা হয় বুড়িগঙ্গা নদীতে। সেই সাথে ঢাকা শহরের বাসাবাড়ির বর্জ্য ও শেষ পর্যন্ত এসে বুড়িগঙ্গার পানিতেই মেশে। যার ফলে দিন দিন বুড়িগঙ্গা নদীর পানি হয়ে উঠেছে বিষের থেকেও ভয়াবহ। এই নদীটা যদি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায় তখন পুরো ঢাকা শহরটা হুমকির সম্মুখীন হবে। এখনো সময় আছে যদি কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হয় তাহলে নদীটাকে বাঁচানো সম্ভব। কিন্তু এটা করতে হলে ঢাকার সমস্ত মানুষ সেই সাথে সমস্ত সরকারি দপ্তর গুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে। বুড়িগঙ্গাকে সমস্ত রকম দূষণ থেকে দূরে রাখতে হবে। যদি এটা করা সম্ভব হয় তাহলেই সম্ভব বুড়িগঙ্গা নদীকে আবার আগের চেহারায় ফিরিয়ে নেয়া। এখন দেখা যাক সরকারের এবং জনগণের শুভ বুদ্ধির উদয় হয় কিনা?

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।



ধন্যবাদ

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

বুড়িগঙ্গা নদীকে ঢাকা বসবাসরত মানুষই হত্যা করে ফেলেছে। বুড়িগঙ্গা নদীর পানি এত বেশি দূষিত হয়েছে যে দুর্গন্ধে আশেপাশে হাঁটা যায় না। আমরা যদি একটু সচেতন হতাম তাহলে এসব নদীগুলো মৃত হতো না। অসংখ্য ধন্যবাদ সময় উপযোগী একটি পোস্ট করার জন্য।

কয়েকমাস আগে আহসান মঞ্জিল ঘুরতে গিয়েছিলাম। তো একটু সামনে যেতেই দেখলাম যে বুড়িগঙ্গা নদীর পানি এতটাই দূষিত হয়ে গিয়েছে যে,নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না কারোরই। আমাদের নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর পানিও দূষিত হয়ে গিয়েছে। পানির কালার একেবারে কালো এবং পানি থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। কিন্তু এসবের দিকে আমাদের দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের কোনো খেয়াল নেই। যাইহোক পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।