হ্যালো বন্ধুরা!
আসসালামু আলাইকুম।
কেমন আছেন সবাই? আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ মেহেরবানীতে আপনারা অনেক অনেক ভাল রয়েছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের দোয়ায় বেশ ভালো আছি। আজকে আমি আপনাদের মাঝে নজরুলের জীবন কাহিনী নামক গল্পের তৃতীয় পর্ব শেয়ার করতে চলেছি। এই গল্পের মূল কাহিনী লোকের মুখ থেকে শোনা। আমি আমার মতো করে একটু সুন্দর রূপ দিয়ে সাজিয়ে গুছিয়ে উপস্থাপন করার চেষ্টা করব।
বিয়ের পর মাত্র কয়েকটা দিন বাবার বাড়িতে থেকেছে আলেয়া। শ্বশুরবাড়িতে তাকে রাজরানীর মত সাজিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আলেয়া অলংকার ও শাড়িতে সেজেগুজে থাকতে পছন্দ করত না। সে অনুভব করত অলংকার সাজসজ্জার মধ্যে কোন প্রশান্তি নেই। সে ছোট থেকে যেভাবে বেড়ে উঠেছে এর মধ্যেই রয়েছে অনেক শান্তি। কিন্তু স্বামীর মেজো ভাই বাসায় আসার পর আলেয়াকে দাসীর মত খাটিয়ে নেওয়া শুরু হয়েছে। এরপর মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বাপের বাড়ি বিদায় করে দেওয়া হয়েছে। এভাবেই কেটে গেল বেশ কিছুদিন। তাকে বাড়িতে আনার কোন নাম গন্ধ নেই। আলিয়া মনে মনে অনেক কষ্ট পেতে থাকে এবং ভাবতে থাকে হঠাৎ কেন এমনটা হল। তার স্বামী কেন চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে। বিয়ের পর তাকে এতটা ভালোবাসতো, এখন কেন দিনে দিনে তার প্রতি ভালোবাসা কম হয়ে যাচ্ছে। সত্যি তো নজরুল তাকে কখনো গরিবের মেয়ে মনে করত না, তাকে স্নেহের ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে রাখত। একটু সময়ের জন্য চোখের আড়াল হতে দিত না। আলেয়া বাপের বাড়িতে যাওয়ার কথা বললে সাথে নিয়ে আসতে আবার সাথে করে নিয়ে চলে যেত। এক পলক চোখের সামনে থেকে রাখা কঠিন ছিল নজরুলের। সেই নজরুল এখন কিভাবে বাড়ছে আলিয়াকে দূরে সরিয়ে একা থাকতে। আলেয়ার কিছুতেই বুঝে আসছে না নজরুলের এমন আচরণ। সে তো অনেক ভালোবাসতো। মেয়েটা কিছুতেই বুঝতে পারল না। এদিকে মেজ ভাই নজরুলকে ভাঙ্গাতে থাকে ইচ্ছেমতো।
খায়রুল নজরুলকে বোঝাতে চেষ্টা করে। জীবনে যদি চাকরি নাও পাওয়া যায় তাহলে শশুরের সম্পত্তি পেলে অনেক কিছু করে বড় হওয়া যাবে। একদিকে বাবার সম্পত্তি আরেকদিকে শ্বশুরের সম্পত্তি। তাহলে তার জমিদারিত্ব তাকে সব সময় সম্মানের আসনে রেখে দিবে। গ্রামের গরিব বাড়ির মূর্খ মেয়ের সাথে সংসার করে সে জীবনে বড় হতে পারবে না। এদিকে তার শালী সাথে যদি সে বিয়ে করে তাহলে দেখা যাচ্ছে দুই ভাই শশুরের সম্পত্তি সব নিজের হাতের মুঠোর মধ্যে নিয়ে রাখতে পারবে। শালীর যদি অন্য কোন ছেলের সাথে বিয়ে হয়ে যায়, তাহলে জমির অর্ধেক অন্য ঘরের ছেলে পেয়ে যাবে। এছাড়াও শ্বশুরের অন্যান্য ইনকাম পরের ছেলের হাতে চলে যাবে। এভাবে তার ভাই ভুলিয়ে ভুলিয়ে বোঝাতে থাকে। আরো চাপ সৃষ্টি করে যদি সে তার কথা না শোনে তাহলে তাকে আলাদা করে দেওয়া হবে। একদিকে বেকার জীবন। আরেক দিকে সে মাঠে কাজ করতে শেখেনি, ফসলের মাঠ পরিচালনা করতেও জানেনা। তাই নজরুল বাড়ির ভয়েতে আলাদা করে দেওয়ার ভয়তে ভাইয়ের কথায় সম্মতি না দিলেও থেমে যায়।
একটি পর্যায়ে মেজ ভাই খাইরুল তার শালীকাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসে। ছোট বোন রিনা বড় বোনের হাত ধরে মানুষ হয়েছে। যখন তাকে এই বিষয়টা নিয়ে বলা হয়েছে। রিনা প্রথম মন থেকে মানতে পারছিল না। একজনকে তালাক করিয়ে দেওয়া হবে এরপর তার সাথে বিয়ে করাটা কেমন দেখায়। সে এমন একটা সুন্দরী মেয়ে, তার পিছে কত ছেলেরা ঘোরে। সে কিনা একজন মেয়ের সংসার ভেঙে তার স্বামীর সাথে বিয়ে করবে। সে প্রথমে নিজের মন থেকে এটা মেনে নিতে পারে না। বড় বোন ছোট বোনের উপর সেভাবে জুলুম করতে পারে না। তাই মিনা তার স্বামীকে বুঝাতে থাকে, এটা না হয় বাদ যাক। মিনা তার স্বামী খায়রুলকে আরো সুন্দর করে বলার চেষ্টা করে, আলেয়া তো অনেক ভালো মেয়ে। তোমার মনে হয় কোথাও ভুল হচ্ছে। হয়তো আলিয়া ঘরের স্বর্ণ অলংকার চুরি করেনি। বাড়িতে অনেক মানুষের আসা যাওয়া দাস-দাসী রয়েছে তারাও তো চুরি করতে পারে। কিন্তু খাইরুল তার বউকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দেয়। সে তার বউকে বলে তোমার অত বেশি মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই। তারপরেও মিনা আপনার স্বামীকে বলে এ কাজ করা ঠিক হবে না। একটা সহজ সরল মেয়ের সংসার ভেঙে দেওয়া তো মোটেও ঠিক নয়। কিন্তু খাইরুল কিছুতেই কারোর বুঝ নিল না। পাড়া গায়ে অনেক কথা সৃষ্টি হয়। তাই আলেয়াকে বাসায় ফিরিয়ে আনে।
আলেয়াকে দিয়ে দাসীর মত কাজ করে নেওয়া হয়। এদিকে মিনা আর রিনা পায়ের উপর পা তুলে বসে থাকে। বিষয়টা খায়রুলের বাবা জমিদার আশরাফুল মেনে নিতে পারে না। বাড়ির ছোট ব্যাটার বউ হবে আল্লাদের পাত্রী। এতদিন আলেয়া অনেক ভালোভাবে আনন্দ ছিল। আজকে কেন তার সাথে এমন আচরণ হচ্ছে। আশরাফুল জমিদার মেজো ছেলে এবং বউয়ের সাথে এই নিয়ে প্রতিবাদ করে। ইতোমধ্যে আশরাফুল জমিদার অনেকটা অসুস্থ। তাই সেভাবে বেশি কিছু বলতে পারেনা মেজো ছেলের বিপক্ষে। তবে তার দৃষ্টিতে যেটা অন্যায় সেটা অন্যায়। কিন্তু জমিদারের দৃষ্টির আড়ালে আলেয়ার প্রতি নির্যাতন চলতে থাকে। যাবতীয় কাজ ও হুকুম আলেয়ার উপর চালাতে থাকে। একদিন এমন ঘটনা নজরুল ও খায়রুলের বড় ভাবি জানতে পারে। তারা বাড়ি থেকে অনেক আগে পৃথক হয়ে গেছে। তবুও যখন শুনতে পারে ছোট জায়ের সাথে এমন অমানবিক কাজ করা হচ্ছে, সে কিছুতেই মন থেকে মেনে নিতে পারে না। সে একদিন আসলো এবং মেজো জায়ের সাথে প্রতিবাদ করল। শশুর প্রতিবাদ করায় মিনা কিছুটা মনোভাব চেঞ্জ করে ফেলেছে। তাই বড় জা এর সাথে মিনা ঝগড়ায় লিপ্ত হল। মেজ জা মিনা বলল আমি জমিদারের মেয়ে। এমন দাসী কাজ আমি কোনদিন করেছি না করব। আমার স্বামী চাকরি করে। তোমরা চাষী ঘরের মেয়ে, তোমরা এসব কাজ ভালো জানো। ঠিক এভাবে মেলা কথা কাটাকাটি হতে থাকে। এক পর্যায়ে বড় জাকে অপমান করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। খায়রুলের খারাপ বুদ্ধি যেন সাফল্য তার দিকে যাচ্ছে, এদিকে তার বউ মিনা তার পক্ষ নেওয়া শুরু করে দিয়েছে। নজরুল ভীষণ আকারে কনফিউশন এর মধ্যে। সে তার বউকে অনেক ভালোবাসে কিন্তু কিছুদিন রিনার চলাফেরা ও কথার স্টাইল দেখে মনের মধ্যে এক প্রকার ঘুন সৃষ্টি হয়ে গেছে নজরুলের।(চলবে)
বিষয় | গল্প পোস্ট |
---|---|
গল্পের বিষয় | নজরুল এর জীবন কাহিনী |
ফটোগ্রাফি ডিভাইস | Huawei mobile |
ফটো এডিটিং | মোবাইল গ্যালারি সফটওয়্যার |
আমার ঠিকানা | গাংনী-মেহেরপুর |
ফটোগ্রাফার ও ব্লগার | @helal-uddin |
ধর্ম | ইসলাম |
দেশ | বাংলাদেশ |
পাশে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমার সংক্ষিপ্ত পরিচয়

Twitter-promotion
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমার আজকের টাস্ক
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বেশ ভালো লাগলো ভাই নজরুলের জীবন কাহিনী গল্পটা পড়ে। মানুষের জীবন ঠিক এমনইব চিত্র ময়। যেখানে একজন মানুষের স্বাধীনতা আরেকজন মানুষ নষ্ট করে দেয়। স্বার্থের লোভে ক্ষতিগ্রস্ত হয় অনেক মানুষের জীবন। নজরুলের এমন মুহূর্তটা অনেক টেনশনের বিষয় তবুও চেষ্টা করতে হবে বউকে নিজের করে রাখার। পরবর্তী জন যে ভালো হবে তার কোন গ্যারান্টি নেই।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
গল্পটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit