বাবার তৈরী ফাইবার গ্লাসের প্রতিমা নিয়ে আলোচনা || ১০% বেনিফিট @shy-fox এর জন্য

in hive-129948 •  3 years ago  (edited)

নমস্কার বন্ধুরা ।আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন। দুর্গাপূজার বেশ অনেক দিন পেরিয়ে এসেছি। কারোর মনে হয় তো এখনো পুজোর রেস রয়ে গেছে। আবার অনেকেই নিজের ব্যস্ততার জীবনে ফিরে এসেছে। যেহেতু আমি এর আগেই বলেছি, কৃষ্ণনগরে পুজো সবে শুরু হলো, এখনো বাকি রয়েছে আসল পুজো গুলো ,মানে কৃষ্ণনগরের যে পুজো গুলো নিয়ে বেশি ধূমধাম হয়, এখনো কালীপুজো বাকি ,জগদ্ধাত্রী পুজো বাকি ।পুজো পুজো ভাব এখনো কিন্তু আমার ভেতরে রয়েছে ।

বাবার তৈরী ফাইবার এর প্রতিমা

20211006_183354.jpg

আমি ভাবলাম আজকে আপনাদের সাথে একটা সুন্দর পোষ্ট শেয়ার করে ফেলি। বাবার কথা আমি আপনাদের সাথে আগের পোস্টটি তে বলেছিলাম যে ,বাবা সাধারণত পূজামণ্ডপে যে দুর্গা ঠাকুর গুলো মাটির তৈরি হয়, সেগুলো তৈরি করেন না ।যদি প্রতিষ্ঠা করার মতো ঠাকুর হয়, সেই প্রস্তাব আসে, তবেই বাবা রাজি হয়। তাও যদি বাবার মনে চায় ।কারণ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন ধরনের কাজ এত পরিমাণে এসে আমাদের কারখানায় ভিড় করে, কারখানায় আরো যারা কাজ করে, প্রায় কুড়িজন দাদা এবং আমার বাবা সবাই মিলে চোখে অন্ধকার দেখার মত অবস্থা হয়ে যায়।

মাটি অবস্থায়

20211022_104811.jpg

সেই সকাল ন'টা নাগাদ বাবা বাড়ি থেকে চলে যান, ফিরতে ফিরতে রাত ন'টা দশটা বেজে যায় ।এর মধ্যে ঠাকুরের কাজ করা চাট্টিখানি কথা না। কারণ ঠাকুরের কাছে প্রচুর খাটনি হয় ।আর যেহেতু একটা প্রেসার কাজ করে ,পুজোর আগে ডেলিভারি দেওয়ার একটা বড় প্রেসার থেকেই যায়।

মাটি দিয়ে সাজের কাজ

IMG-20211022-WA0010.jpg

তাই এর মধ্যে বাবার খুব ঘনিষ্ঠ কেউ না হলে অথবা খুবই অসুবিধায় না পড়লে বাবা ঠাকুর করতে চান না ।এবারে ভগবানের কি লীলা ,সবই তো মা র ইচ্ছা ।বাবার এক অত্যন্ত কাছের একজন মানুষ, আমি ওনাকে জেঠু বলে ডাকি, ওনারই পরিচিত একটি বাড়ির পুজোর ঠাকুর করার অনুরোধ বারবার করতে থাকে ।

IMG-20211022-WA0012.jpg

ওনাদের বাড়িটি বলতে গেলে বনেদি বাড়ির মতো ।বহু যুগ যুগ ধরে পুজোটা হয়ে আসছে। বাড়িটার বর্ণনা আমি কিছুটা পরিমাণ দিতেই পারি ,কারণ আমি দশমীর দিন সেখানে গিয়েছিলাম ।বাড়িতে ঢুকতেই বড় গেট। সামনে রাস্তা ।রাস্তা শেষ হচ্ছে বাড়ির পূজা মন্ডপ এ, যেখানে মা দুর্গার আসন ।বনেদি বাড়ির মন্ডপ সাজানো আর বাঁদিকে একটা পুকুর। ডানদিকে এবং বাড়ির আশেপাশে জুড়ে শুধু গাছ। বেশ বড় একটা বাড়ি ।দেখতে খুবই সুন্দর জায়গা ।শোনা যায় বাড়ির পূজা টা বেশ ধূমধাম হয় এবং খুবই জাগ্রত মন্দির। সেই জায়গার লোকালয়ের আশেপাশের সকলেই ওদের মন্দিরে পূজা অর্চনা করেন।

ফাইবার করার পর রঙের পথে

20211022_104707.jpg

ওনারা এবারে চেয়ে ছিলেন যে বাবার হাত দিয়ে একটি দুর্গা মূর্তি তৈরি করে নেবেন। একদম বহু বছর যেন থাকে সেরকম ।তাই ফাইবার গ্লাসের মূর্তি তৈরি করার প্রস্তাব দেন। বাবা ভীষণ কাজের মধ্যে ব্যস্ত ছিলেন।এখনো ব্যস্ত আছেন ।কিছুদিন পরেই বাবা কাশ্মীরে যাচ্ছেন একটি মিটিংয়ে। তার সত্বেও বাবা অনুরোধ ফেলতে পারেনি, কাজটি করেন এবং সত্যি বলছি যখন ঠাকুর সাজানো হয়েছিল তখন আমি বাবার কারখানায় গিয়ে দেখতে গিয়েছিলাম ।এতই অপূর্ব লাগছিল ঠাকুরের মুখটা, আপনাদের বলে বুঝাতে পারব না। আমার খুব পছন্দ হয়েছে ঠাকুরটা।

রং করা শুরু সাথে সাজুগুজু

20211022_104239.jpg

আমি বাবার হাতের কাজ আরও মূর্তি সম্পর্কে পরবর্তী পোষ্ট গুলোতে অবশ্যই আলোচনা করব মাঝেমধ্যেই। এই নিয়ে আমি সাধারণত স্টিমিট এ খুব একটা কাউকে জানায়নি ।তবে এবার আমি অবশ্যই আমার এই আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সাথে শিল্প সম্পর্কে অবশ্যই আলোচনা করব।

মা এর প্রতিমা সেজে উঠছে

20211006_164831.jpg

তো সেই ঠাকুরের ছবি আমি আপনাদের পরপর শেয়ার করে যাচ্ছি। স্টেপ বাই স্টেপ ফাইবার গ্লাস এর মূর্তি কিভাবে তৈরি করে ,সেই নিয়ে আমি আলোচনা অবশ্যই পরবর্তীকালে দেব। তবে আমি কিছুটা পরিমাণ বলছি ,প্রথমে বিচুলি দিয়ে একটা কাঠামো তৈরি করে মাটির কাজ শুরু হয় ।প্রতিমা মাটির তৈরী হয়ে গেলে ,তার ওপর ঢেলে দেয়া হয় ফাইবার গুলে। তারপরে কিভাবে ওরা কাজ করে সেগুলো আমি মুখে বলে বোঝাতে পারবো না ।সেগুলোর ছবি আপনাদের দেখাতে হবে। তারপরেই অনেক মাজা ঘষা করা হয় ।রংয়ের অনেকগুলো কাজ রয়েছে ।আর এইভাবে আস্তে আস্তে একটা ফাইবার গ্লাসের মূর্তি দাড়িয়ে যায় ।

20211006_164211.jpg

ফাইবারের মূর্তি জল দিয়ে ধোয়া যায় আর একটু হালকা হয়। পাথর যেমন লং লাস্টিং ,তেমন ফাইবার ও। তাই কম খরচে যেহেতু ফাইবার গ্লাসের মূর্তি তৈরি হয় ।তাই সকলেই ফাইবার বেছে নেন ।আমি একটু আশ্বাস দিয়ে রাখছি এই মূর্তি গুলির দাম সম্পর্কে ।হতে পারে আপনাদের জানার ইচ্ছা থাকতে পারে। তাই আমি বলে রাখছি এই দুর্গামূর্তি টির হাইট আমি ঠিকঠাক বলতে পারবোনা ।ছবিতে হয়তো ছোট দেখতে লাগতে পারে ।বাট বেশ বড়সড়ই । ওনাদের মন্দিরের মাপ অনুযায়ী বানানো । এটা পুরোপুরি একদম কাঠামোসহ ফাইবারের।

দশভূজা

20211006_183316.jpg

বাবা এখানে বাজেট নিয়েছিলেন প্রায় আড়াই অর্থাৎ ২লাখ ৫০ হাজারের ওপরে ।আমি যথাযথ দামটা জানিনা ।দুর্গাপুজোর দুর্গা প্রতিমার কাজের প্রচণ্ড খাটনি হয় ।সেটা আপনারা সবাই জানেন ।সেক্ষেত্রে দামটা ঠিকঠাক রয়েছে ।তবে আমি এরপরেও কিছু কিছু মূর্তি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। যেগুলো দেখে আপনারা বুঝতে পারবেন যে কিভাবে কি তৈরি হয় এবং কেন এর দাম এরকম। আর অথবা আপনারা যদি চান আমাকে মন্তব্যে কমেন্ট বক্সে কোশ্চেন করতে পারেন ।আশা করছি এই দুর্গা ঠাকুরের মূর্তি আপনাদের সকলের ভালো লাগলো ।

ভারী মিষ্টি

20211006_183342.jpg
আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করবো বলেই বেশ কয়েকটা ছবি তুলে রেখেছিলাম। আর এই ঠাকুরের ছবি ও খবরের কাগজে বেরিয়েছিল। বর্তমান পেপারে বেরিয়েছিল ।কবে বেরিয়েছিল তার ডেটটা আমার ঠিক মনে পড়ছে না। এখন সবাই এই কাজে খুবই আনন্দিত ।বাবা নিজেও খুব স্যাটিস্ফাইড।

বর্তমান পেপারে

IMG-20211022-WA0002.jpg

আসলে আমরা যে কাজটাই করি ,যত সময়ই লাগুক না কেন সেই কাজে যদি আমরা স্যাটিসফাইড না হতে পারি সেই কাজের কোন মূল্য নেই। এটা আশা করি সবার ক্ষেত্রে ।তো আমার দিক থেকে আমি যতক্ষণ না স্যাটিসফাইড হই, আমি কাজটা আরও নিখুঁত ভাবে করার চেষ্টা করি। বাবাও তাই করে এসেছেন। বাবাই আমাকে তাই শিখিয়ে এসেছেন ।
আপনাদের মন্তব্যের অপেক্ষায় থাকলাম। আশা করছি এই পোস্টটি আপনাদের সকলের ভাল লেগেছে। নমস্কার।

@isha.ish

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

।তো আমার দিক থেকে আমি যতক্ষণ না স্যাটিসফাইড হই, আমি কাজটা আরও নিখুঁত ভাবে করার চেষ্টা করি। বাবাও তাই করে এসেছেন।

আমার জন্য ও এটাই প্রযোজ্য। যতক্ষণ আমি কোনোকাজ একদম আমার মনের মতো করে করতে পারিনা ততোক্ষণ আমার ওই কাজের পিছনেই লেগে থাকতে হয়। আপনার বাবার কাজ এক কথায় অসাধারণ লেগেছে।

কাজের প্রতি এই ভালোবাসাটা অবশ্যই সকলেরই থাকা দরকার ।আমার পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ দিদি। ভাল থাকুন।

খুব সুন্দর করে বর্ননা করেছেন আপু স্টেপ বাই স্টেপ। চমৎকার পোস্ট। আর আপনার বাবার কাজ দেখে মুগ্ধ হয়ে গেছি।

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে দিদি

আপনাকেও ধন্যবাদ

বাবার কারুকার্যে প্রমান হিসাবে সুন্দর একটি পোস্ট লেখার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আপু শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

এত সুন্দর মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ

আপনার বাবা একজন গুণী মানুষ। তার দক্ষতা দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গেছি। আপনি অনেক সুন্দর ভাবে প্রতিটি ধাপ উপস্থাপনা করেছেন। সব মিলিয়ে অসাধারণ হয়েছে।

অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে পোস্টটি পড়ার জন্য এবং সুন্দর করে মন্তব্য করার জন্য।

আপনার বাবা অনেক বড় মাপের শিল্পী। হাতের কাজ আশ্চর্যজনক একদম। এতো সুন্দর হাতের কাজ ভাবা যায়না। আপনার বাবার প্রশংসা আমি যতই করি ততই যেনো কম হয়ে যাবে।

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে দাদা নিজের অনুভূতি মন্তব্যের মাধ্যমে শেয়ার করার জন্য।

যতই আপনার লেখা গুলো পড়ছিলাম আর মায়ের ছবি গুলো দেখছিলাম ততই অবাক হচ্ছিলাম। সত্যিই খুব অসাধারন এই প্রতিমা গুলো। উনি একজন বড় মাপের শিল্পী ।আশাকরি অন্যান্য পূজার প্রতিমা গুলো সেয়ার করবেন। ভাল থাকবেন।

প্রতিমার মুখ আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে, ভগবানের আশীর্বাদ যে উনি এত সুন্দর কাজ করে যাচ্ছেন, অনেক ধন্যবাদ দাদা পোস্টটি পড়ার জন্য।

দিদি আপনার বাবার কাজ দেখে চোখ ফেরাতে পারছি না। আমার ইচ্ছা করে আপনার বাবার কাছে দাঁড়িয়ে থেকে তার মূর্তি বানানো দেখি। আপনার বাবা একজন গুণী মানুষ। এমন গুণী মানুষের কাজ কাছ না দেখে আনন্দ পাই না। বাধ্য হয়ে দূর থেকে দেখে চোক কে সার্থক করছি। আপনার বাবাকে আমার প্রণাম জানাবেন। আর আপনার জন্য শুভকামনা রইলো।