সখিনার সৎমা এদিকে সব খোঁজখবর নিয়ে কুদ্দুসের বাড়ির ঠিকানা বের করে তার বাবা-মাকে এক প্রকার ধমক দিয়ে সাবধান করে দিয়ে আসলো, এই বলে সাবধান করলো যে তার মেয়ের সাথে যাতে তাদের ছেলেকে আর না দেখি। তারা তেমন কিছু বলল না বরং ছেলেকে তারা ডেকে এ বিষয়টা জানালো এবং তাকে সাবধান করে দিল আবারো ও। এদিকে সৎ মার কারণে সকিনা ও কুদ্দুসের সাথে আর তেমন একটা দেখা করতে পারছে না। সখিনা অনেক কষ্ট পাচ্ছিল নিজে থেকে কিন্তু সে কোনভাবেই কুদ্দুসের সাথে দেখা করতে পারছে না। আর এদিকে কুদ্দুস ও সখিনার সাথে অনেকভাবে দেখা করার চেষ্টা করছে কিন্তু সখিনা সৎমার ভয়ে দেখাও দিচ্ছে না।
এভাবে বেশ কিছুদিন কেটে গেল। একদিন কুদ্দুস সখিনার সাথে দেখা করার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে রইলো। বেশ কিছুদিন হওয়াতে সখিনার সৎ মাও এখন আর তেমন একটা খোঁজখবর রাখছে না। এই সুযোগে সখিনা কুদ্দুস দুজনে একজনের সাথে দেখা করল কথা হলো। তারা দুজন ঠিক করল যে তারা আর এই গ্রামে থাকবে না অন্য কোথাও চলে যাবে, বিয়ে করে তাদের নতুন জীবন সংসার শুরু করবে। সখিনাও এতে রাজি হয়ে গেল। সেও আর এই সৎমার ঘরে থাকতে চায় না সেও চায় তার স্বাধীন একটা জীবন, তাই সে কুদ্দুসের সাথে চলে যাওয়ার জন্য রাজি হয়ে গেল। যেই সিদ্ধান্ত নিল সেই ভাবেই তারা একদিন হঠাৎ করে দুজনেই গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেল। পালিয়ে গিয়ে অনেক দূরে একটি শহরে তারা উঠলো। কিন্তু শহরে কোথায় তারা উঠবে কাউকে চেনে না, পথঘাট চেনেনা। এভাবে তারা রাস্তায় হাঁটতে শুরু করল হাঁটতে হাঁটতে অনেক ক্লান্ত হয়ে গেল দুজনেই। ক্লান্ত শরীর নিয়ে তারা একটি মাঠে প্রবেশ করল এবং সেখানে গাছ তলায় দুজনে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিল।
এমন সময় একটি ভিক্ষুক লোক এসে হাজির হলো লোকটি অনেকটা বয়স্ক। লোকটি তাদের এই অবস্থা দেখে জিজ্ঞাসা করল তোমরা কোথা থেকে এসেছো, আর কোথায় যাবা? দেখে মনে হয় অনেক সময় হল কিছু খাও নি। তখন তারা দুজনেই ভিক্ষুক লোকটিকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো। কারণ তারা বলল যে তারা এটা বিপদে পড়েছে তাদেরকে যদি একটু আশ্রয় দিতো বা কোথাও থাকার ব্যবস্থা করে দিতো। ভিক্ষুক লোকটির তাদের প্রতি অনেকটা মায়া হল। তখন তিনি বলল আমার তো ছেলে মেয়ে নেই আমি একটা বস্তিতে থাকি তোমরা আমার সাথে থাকতে পারো। তবে আমি কিন্তু খাওয়া দাওয়া দিতে পারবো না নিজের খাওয়া-দাওয়া নিজেই ব্যবস্থা করে নিতে হবে আমি শুধু একটু আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দিতে পারব। এই কথা শুনে তো তারা অনেক খুশি। এই খুশিতে তারা ভিক্ষুক লোকটিকে বাবা বলে ডাকা শুরু করলো। তারা লোকটির সাথে চলে গেল।
লোকটির বাড়িতে এসে তারা লোকটিকে বলল আমরা আমাদের গ্রাম থেকে পালিয়ে এসেছি আমরা একজন আরেকজনকে ভালোবাসি কিন্তু আমাদের এই ভালোবাসা কেউ মেনে নিতে পারছে না। তখন ভিক্ষুক লোকটি বলল তাহলে তো তোমাদের এইভাবে থাকাটা ঠিক হবে না আগে তোমাদেরকে বিয়ে করতে হবে তারপর বাকি কাজ। লোকটি তাদেরকে নিয়ে কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করিয়ে দিল নিজে সাক্ষী থেকে। তারপর তার সাথে রেখে দিল। এভাবেই তারা দুইজন তাদের কাজগুলো খুঁজে নিল কুদ্দুস সে দিনমজুরের কাজ নিলো আর সখিনা সে মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করা শুরু করলো। যদিও কুদ্দুস সখিনাকে কাজ না করতে বারণ করেছিল কিন্তু সকিনা তাকে বলল আমাদেরকে আরো সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের আর ও অনেক টাকা রোজগার করতে হবে তাই দু'জনকেই কাজ করতে হবে।
তাদের নতুন সংসার ভালই চলছিল, দুজনের ইনকামে তাদের দাম্পত্য জীবনে মোটামুটি সুখেই ছিল তারা। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তাদের একটা কন্যা সন্তান আসলো তাদের জীবনে। এই কন্যা সন্তান নিয়ে তারা খুবই সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে কাটাচ্ছিল। হঠাৎ একদিন খবর এলো সখিনার স্বামী কুদ্দুস একটি বিল্ডিং থেকে কাজ করতে গিয়ে পড়ে মারা গিয়েছে। এই কথা শুনে সখিনা নিজেও অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে। সুখ বুঝি আর কপালে সইল না। সকিনা হয়ে গেল বিধবা, জ্ঞান ফেরার পর সে এই মৃত্যুটা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না। সে অনেকটা পাগলের মত হয়ে গিয়েছে। এভাবেই দিন যাচ্ছে, আস্তে আস্তে মেয়েকে নিয়ে তার জীবন চালানোর চেষ্টা করছে। একমাত্র মেয়েকে সম্বল করে বেঁচে থাকার জন্য তারপর পরবর্তী সংগ্রামে সে নেমে পড়ল এভাবেই চলতে থাকলো সখিনার পরবর্তী জীবন।
-0-
গল্পটি এখানেই শেষ করলাম। আশা করি আমার এই গল্পটি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। গল্পটি কেমন হয়েছে ভালো মন্দ যাচাই করে অবশ্যই মন্তব্য করতে ভুলবেন না। আমার গল্পটি যারা মনোযোগ সহকারে পড়েছেন তাদেরকে আমার পক্ষ থেকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। তাহলে বন্ধুরা আজ এ পর্যন্তই পরবর্তীতে আরো একটি নতুন গল্প লিখে আপনাদের সামনে আসার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন আর আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন। |
---|
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
কুদ্দুস আর সখিনা পালিয়ে গিয়ে এক ভিক্ষুকের কাছে আশ্রয় নিয়ে বিয়ে করার পর তাদের জীবন সুখেই পার করছিল। একটা মেয়েও জন্মালো তাদের ঘরে। এভাবে যেহেতু সুখের সংসার চলছিল ভালোই তো ছিল। কিন্তু হঠাৎ কুদ্দুসের মৃত্যুর খবরটা সখিনার জীবনটাকে উলটপালট করে দিল। পূর্বের পর্ব না পড়লেও আজকের পর্বটা পড়ে ভালো লাগলো আপু। তবে অন্তিম টা ভালো বা সুখের হয়নি সেটা পড়েই দুঃখ পেলাম।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলে ভাইয়া এই ধরনের গল্পগুলো অন্তিম পর্বগুলো আমার মনে হয় এরকম হয়ে থাকে, কারণ যারা নিরক্ষর বা দরিদ্র তাদের কপালে চিরস্থায়ী সুখ হয় না কখনো। তাদের পুরো জীবনটাই দুঃখে দুঃখে চলে যায়।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
একটি বিয়োগান্ত ঘটনার মধ্য দিয়ে গল্পের পরিসমাপ্তি। গরীবের সুখ সহনা,এই গল্পে আবারও প্রমান হলো । অনেক ভাল লিখেছেন আপু,
গল্প নিরক্ষরতা ও দারিদ্রতার বেড়াজাল । শুভ কামনা আপনার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
গল্পটি আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুবই খুশি হলাম আপু। আপনি ঠিকই বলেছেন গরিবের কখনো কপালে সুখ সয়না। তবে আমি মনে হয় এটা একমাত্র নিরক্ষরতার কারণে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
সখিনা এবং কুদ্দুস সিদ্ধান্ত নিল তারা পালিয়ে বিয়ে করবে। এরপর তারা পালিয়ে যায় এবং একজন ভিক্ষুকের কাছে সাহায্য চায়। তারপরে দুজনে বিয়ে করে নেয়। দুজনের ইনকামে তাদের সংসার ভালোই যাচ্ছিলো এবং তারা অনেক সুখে ছিল। এরপর তাদের একটা কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। তারপরে সখিনার স্বামী কুদ্দুস একটা বিল্ডিং থেকে কাজ করতে গিয়ে পড়ে মারা যায়। এটা শুনে সত্যিই খারাপ লেগেছে। সখিনার কপালে সুখ বেশিদিন সইলো না। তাদের সুখের সংসারে অনেক কষ্ট চলে আসে। সখিনা এখন তার মেয়েকে নিয়ে আবারো সংগ্রামী নেমেছে। যাই হোক ভালোই লিখেছেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বাহ! পুরো গল্পটি শেষাংশের কি চমৎকারভাবে সারমর্ম উপস্থাপন করলেন পড়ে আমার কাছে ভালো লাগলো। অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া এত মনোযোগ সহকারে আমার গল্পটি পড়ে সুন্দর সারমর্ম তৈরি করে আমাকে উৎসাহ প্রদান করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
সত্যিই যার ভাগ্য খারাপ তার জীবনে প্রতিনিয়ত খারাপই যায় ৷যেটা ঘটেছে সখিনার জীবনে ৷ এক সময় সৎ মায়ের অত্যাচার কষ্ট ৷ যদিও একটু সুখের দেখা পেলো কুদ্দুস কে নিয়ে ৷ কিন্তু শেষ মেশ সুখী হওয়া আগেই তার জীবনে আবারও হতাশার ছাপ ৷ আসলে জীবনটা বড়ই কঠিন আর অদ্ভুত ৷
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
একদম ঠিক বলেছেন ভাইয়া জীবন মানেই যুদ্ধ আর এই যুদ্ধক্ষেত্রে অনেক কঠিন ভাবে বেঁচে থাকতে হয়। অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া আমার গল্পটি মনোযোগ সহকারে পড়ে খুবই গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
সখিনার কপালে সুখ শব্দটা মনে হয় নেই। যখনই সে তার স্বামী আর মেয়েকে নিয়ে সুখের শান্তিতে দিন পার করছিল তখনই তার স্বামীকে সে হারিয়ে ফেলে আর সেই সুখের দিনগুলো যেন মুহূর্তের মধ্যে তার জীবন থেকে বিদায় নেয়।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
একদম ঠিক বলেছেন ভাইয়া সখিনার জীবনে আর সুখ স্থায়ী হলো না। সংগ্রামী জীবন সংগ্রামে আবার ফিরে গেল। অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া গল্পটি মনোযোগ সহকারে পড়ে বিষয়টি বুঝে মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলেই কিছু কিছু মানুষের কপালে সুখ সয় না। তারা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে বেশ সুখেই দিন কাটাচ্ছিল এবং তাদের একটি কন্যা সন্তানও হলো। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, কুদ্দুস বিল্ডিং থেকে পড়ে গিয়ে মারা যায় এবং সখিনা বিধবা হয়ে যায়। তারপর সখিনার কষ্টের দিন আবারও শুরু হয়। আর এভাবেই চলতে থাকে। খুব ভালো লাগলো গল্পটি পড়ে। আশা করি সামনে নতুন গল্প নিয়ে হাজির হবেন। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন সবসময়। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit