আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে ভালই আছেন। আলহামদুলিল্লাহ, আমিও আল্লাহর রহমতে আপনাদের দোয়ায় বেশ ভাল আছি। প্রতিযোগিতাটি খুবই চমৎকার একটি প্রতিযোগিতার এই কারণেই যে এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমরা অনেকেরই অনলাইন থেকে প্রথম ইনকাম সম্পর্কে জানতে পারব এবং সে সাথে কিছু ধারণা ও পাব কি কি বা কোন কোন সাইট থেকে অনলাইনে ইনকাম করা সম্ভব বা সকলেই কম বেশি ইনকাম করার চেষ্টা করেছে। এরকম চমৎকার একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য আমি আরিফ ভাই সহ আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির ফাউন্ডার, কো ফাউন্ডার সহ সকল এডমিন মডারেটরদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে শুরু করছি আমার অনলাইন থেকে প্রথম ইনকাম করার অভিজ্ঞতা।
[ক্যানভাঁ দিয়ে তৈরি]
অনলাইনে ইনকামের সাথে আমাদের পরিবারের অনেকেরই সম্পর্ক রয়েছে। তবে আমি অনলাইনে ইনকাম সম্পর্কে সেভাবে কখনো ধারণা নেওয়ার চেষ্টাও করিনি বা বোঝার চেষ্টা করিনি। বলতে পারেন কখনো ইচ্ছা পোষণও করিনি যে অনলাইনে কাজ করে আমি ইনকাম করব। যদিও পরিবারের সকলেরই কোন না কোন ক্ষেত্রে অনলাইনে ইনকামের অভিজ্ঞতা আছে তবে সেটা বেশি দিনের নয় বা আমার পরিবারের যারা অনলাইনে ইনকাম করতো তারাও সেভাবে আমার সাথে কখনো শেয়ার করেনি কারণ তারাও অনলাইনে ইনকাম করতে গিয়ে সেভাবে ইনকাম করতে পারেনি। কারণ এখন যেটা বুঝেছি সেটা হল অনেক অনলাইন ইনকামের ওয়েবসাইট আছে যেগুলা ফেক এরকম অনেকগুলা অনলাইন ইনকামের ওয়েবসাইটের সাথে জড়িত হয়ে তারা শুধু ডলারই দেখে গেছে কিন্তু উঠাতে পারেনি কখনো, বরঞ্চ নিজের পকেট থেকে আরো কিছু টাকা খরচ করেছে। সেজন্য তারা এতটা হাইলাইটস আমাকে কখনো করেনি।
এরপর হঠাৎ একদিন আমার মেজো চাচার কাছে জানতে পারলাম স্টিমিট ওয়েবসাইটের সম্পর্কে, যদিও তার তখন স্টিমিট ওয়েবসাইট সম্পর্কে ততটা ধারণা ছিল না কিন্তু নিজে থেকে চেষ্টা করে এই স্টিমিট ওয়েবসাইট সম্পর্কে অনেক ধারণা নিয়েছিল এবং তিনি সেটা দেখতে পেয়েছে যে এখান থেকে কিছু ইনকাম করা সম্ভব হবে। এরপর তিনি বিষয়টি আমাকে বলেন এবং আমি তখনও স্টিমিটে কাজ করব সেরকম আগ্রহ প্রকাশ করিনি কারন আমার এই অনলাইনে ইনকাম সম্পর্কে কোন ধারণাই ছিল না। প্রায় এক বছর ধরে আমি এই অনলাইন ইনকামের ব্যাপারে কোনরকম আগ্রহ প্রকাশ করিনি। কিন্তু দেখতে দেখতে আমার মেজো চাচা এখান থেকে ভালো কিছু ডলার ইনকাম শুরু করলো এবং তিনি ডলার উইথড্রো করে আমাদেরকে জানালো তারপর আমরা বিষয়টি নিয়ে একটু চিন্তা করলাম। আমার আব্বু তখন স্টিমিট সম্পর্কে মেজো চাচার কাছ থেকে বিষয়টি বুঝে নেয় এবং তিনি আমাকে অবসর সময় কিছু কাজ করার জন্য বলে।
২০২০ সালে আমার আব্বু চাকরি ছেড়ে দিয়ে ছোটখাটো একটা ব্যবসা নিয়ে বসে। কিন্তু চাকরি ছেড়ে দেওয়ার বেশ কিছুদিন পর কি করবে কি না করবে চিন্তা ভাবনা করতে করতেই অনেকদিন ধরে ধার দেনা করে চলতে হয় আমাদের পরিবারকে, এতে করে আমাদের পরিবার অনেক ঋণগ্রস্ত হয়ে যায়। শহরের বাড়িতে এ সামান্য ব্যবসা দিয়ে বাসা ভাড়া দিয়ে সংসার খরচ চালিয়ে চলা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। এরপর পরিবারের বড় হওয়াতে ও পরিবারের অভাব অনটন গুলো কিছুটা অনুধাবন করার চেষ্টা করি এবং মাঝে মাঝে চিন্তা করতাম যে আমার কিছু একটা করা প্রয়োজন আমার এই পরিবারের জন্য। এদিকে ওই সময়ে মেজো চাচার স্টিমিটের বিষয়টা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল, ঘরে বসেই যদি কিছু একটা করা যায় পড়ালেখার পাশাপাশি তাহলে তো আরো ভালো হয়। তখনই ২০২০ সালের ডিসেম্বরের ১৭ তারিখ মেজ চাচাকে বলি আমাকে একটা স্টিমিটের একাউন্ট খুলে দেওয়ার জন্য। মেজো চাচা আমাকে একটি একাউন্ট খুলে দেয়, আমি সেটি নিয়ে দেখতে থাকি বুঝতে থাকি এবং আস্তে আস্তে কাজ শিখতে থাকি। যদিও মেজো চাচার অবদানে আমার এই স্টিমিটে পদযাত্রা তার উৎসাহ অনুপ্রেরণা এবং সহযোগিতায় আমি স্টিমিটে কাজ শুরু করি।
এরপর আমি ধীরে ধীরে স্টিমিটে কাজ করতে থাকি। আমি প্রথম পোস্ট করেছি ২০২১সালের জানুয়ারির ২ তারিখে নিউ-কামার্স কমিউনিটিতে আমার পরিচিতি নিয়ে। সেই পোস্ট করার পর আমি সেই পোস্টে ২.৮ ডলারের কিছু ভোট পাই। এটা পেয়ে আমি তো এত খুশি হয়েছিলাম এবং তারা আমাকে নিউ-কমার্স কমিউনিটিতে ভেরিফাইড মেম্বার করে নেয়। এই পোস্টে যখন আমি ডলার পাই তখন আমার উৎসাহ আরো বেড়ে যায়। আমি তখন প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কমিউনিটিতে কাজ করতে থাকি। কাজ করতে করতে আমি নিউ-কামার্স কমিউনিটিতে ৫.৩ পর্যন্ত তাদের দেওয়ার টাক্স গুলো সম্পন্ন করি। এমনকি আমি স্টিমিট ক্রিপ্টো একাডেমি কমিউনিটিতেও কাজ করি, তো সেখানে প্রথম পোস্টে আমি তাদের একটা শিক্ষামূলক পোস্ট করে সেই পোস্টেও আমি প্রায় ২৫ ডলারের আপভোট পাই। এ আপভোট পাওয়ার পর আমি অনেক খুশি হয়েছিলাম।
এরপর আমি আরও বিভিন্ন কমিউনিটি কাজ করি। তারপর স্টিমফুড কমিউনিটিতে আমি একটা পোস্ট করি চিংড়ি মাছ দিয়ে কচুর লতি রেসিপি এবং সেই রেসিপি পোস্টে আমাকে @tarafalger সহ আরো অনেকে মিলে ৭১ ডলারের আপভোট দেয়। বিশ্বাস যদি করেন আপনারা সেদিন আমি সহ আমার পরিবারের সবাই এত খুশি হয়েছিল, আমার আব্বু খবরটা শুনে খুশিতে আমাদের পরিবারের সবার জন্য মিষ্টি কিনে নিয়ে আসে। যেহেতু মেজো চাচা এখান থেকে টাকা উইথড্র করতে পেরেছে সেজন্য আরও নিশ্চিন্ত যে আমরা এখান থেকে টাকাটা উইড্র করতে পারবো, সেজন্যই আমরা বেশি উৎসাহিত আনন্দিত হয়েছি। আর তাছাড়া ওই মুহূর্তে আমাদের পরিবারের জন্য এরকম একটি পাওয়া সেটা সত্যি আমার সারা জীবনে আবিস্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে। এজন্যে আমি মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে শত কোটি শুকরিয়া জানাই তিনি হয়তো ওরকম একটি মুহূর্তে তার রহমতের ভান্ডার খুলে দিয়েছিলেন।
এতক্ষণ আমি আমার স্টিমিট প্ল্যাটফর্মে ইনকামের অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করলাম আসলে আমি কিন্তু তখনো এখান থেকে টাকা উইড্রো করে হাতে পায়নি যেহেতু টাকা উইথড্র করা যাবে তাই নিশ্চিন্তে কাজ করে যাচ্ছি। কিছুদিন পরে যখন বেশ কিছু স্টিম এবং এস বি ডি আমার একাউন্টে এসে জমা হলো তখন আমার মেজো চাচ্চু আমার স্টিমিট অ্যাকাউন্ট থেকে স্টিম এবং এস বি ডি গুলো নিয়ে বাইন্যান্স এর মাধ্যমে উইথড্র করে টাকাগুলো আমার আব্বুর কাছে দিয়ে দেয়। ঐই মুহূর্তে স্টিমিট এবং এস বি ডির অনেক দাম ছিল। সবমিলিয়ে সেদিন আমার মেজো চাচ্চু প্রায় ২২ হাজার টাকা আমার আব্বুর হাতে দেয়। আসলে বাইনান্স সম্পর্কে তখন সেরকম কোন ধারণাই ছিল না। আমি শুধু এক স্টিমিট ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানি তার বাইরে আর তেমন কিছু নলেজে আমার নেই। কিন্তু এখন আল্লার রহমতে ধীরে ধীরে সবকিছু জানা হয়ে গেছে এখন নিজেই নিজের টাকা উইড্রো করতে পারি তবে এটা সম্পূর্ণ সম্ভব হয়েছে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির এবিবি স্কুলের জন্য। এজন্য আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির কর্তৃপক্ষের জন্য আমার মনের অন্তরের অন্তস্থল থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
সেদিন সেই ২২ হাজার টাকা আব্বু সরাসরি এসে আমার হাতে দিয়ে দেয় আর বলে নেও মা তোমার জীবনের এবং অনলাইন থেকে প্রথম ইনকাম। তখন আমি চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারিনি সেই টাকাটা হাতে নিয়ে হাউমাউ করে কান্না করতে ইচ্ছে করছিল কারণ এই কান্না দুঃখের কান্না নয় এই কান্না সুখের কান্না। আমার চোখে পানি দেখে সবার চোখ দিয়ে পানি ঝরঝর করে ঝরতে লাগলো। কারণ ওই মুহূর্তে ওই টাকাটা আমাদের জন্য অনেক বিশাল পাওয়া ছিল। এরপর আমি পুরো টাকাটা আব্বুর হাতে আবার দিয়ে দিলাম বললাম আমি আমার প্রথম ইনকামের টাকা তোমার হাতে তুলে দিলাম আমার এই পরিবারের জন্য আর আমি এইভাবে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাব এই পরিবারকে নিজের চেষ্টায় সামনে এগিয়ে নিতে আমি তোমাদের পাশে থাকবো ইনশাল্লাহ।
তো আমার প্রিয় স্টিমিট প্ল্যাটফর্মের বন্ধুরা এই ছিল আমার জীবনের প্রথম ও অনলাইন থেকে প্রথম ইনকামের অনুভূতি গুলো আমার বিশ্বাস আমার এই ইনকামের অনুভূতিগুলো পড়ে আপনাদের অনেক ভালো লাগবে। অবশ্যই মনোযোগ দিয়ে পড়ে আমার এই অনুভূতিগুলো আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে মন্তব্যের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না। তো আজ এই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আমার জন্য এবং আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন। আমিও আপনাদের জন্য প্রাণ ভরে দোয়া করি। সকলের জন্য শুভকামনা অবিরাম।
[আমার প্রথম ইনকামের ওয়েবসাইট লিংক](https://steemit.com/@isratmim)
ধন্যবাদান্ত
@isratmim
প্রথমে আপনাকে ধন্যবাদ জানাই এই কনটেস্ট অংশগ্রহণ করার জন্য। স্টিমে আসার গল্প আপনার লেখা পড়ে বুঝতে পারলাম আপনি আপনার চাচার কাছ থেকে এই স্টিমিটের ধারণা পেয়েছেন। আপনি প্রথমের দিকে তো অনেক ভোট পেয়েছিলেন এবং স্টিমফুডে কাজ করেছেন দেখছি। সব মিলিয়ে আপনার এই জগতে শুরুটা বেশ ভালই হয়েছিল। সামনের দিনগুলো ভালো হবে আশা করি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
সুন্দর ও গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার জন্য শুভকামনা রইল ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন দেখে খুব খুশি হলাম আপু। আপনার প্রথম অনলাইন ইনকাম অভিজ্ঞতা পোস্ট পড়ে বেশ ভালো লাগলো। এখানে আপনি অনেক আগে থেকেই কাজ করেন জেনে বেশ খুশি হলাম। এভাবেই সামনের দিকে এগিয়ে যান শুভকামনা রইল আপু।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমার পোস্ট পড়ে আপনার ভালো লেগেছে জেনে আমিও খুবই আনন্দিত হলাম। সুন্দরও গঠনমূলক মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন দেখে ভীষণ ভালো লাগলো আপু। আপনাকে অভিনন্দন জানাই। আপনার অনুভূতি গুলো পড়ে খুব ভালো লাগলো। অনলাইন ইনকাম বেশ ভালোই করেছেন।চাচা ছিল বলে সবকিছু আপনার জন্য সহজ হয়েছে।এগিয়ে যান আরও এটাই চাই।ধন্যবাদ আপু।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ঠিকই বলেছেন আপনি। আমার চাচা ছিল বিদায় আমি এই সব কিছু খুব সহজেই জানতে পেরেছি। সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার অনলাইন ইনকামের প্রথম অভিজ্ঞতা পড়ে খুব ভালো লাগলো। আপনি পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আপনার চাচার মাধ্যমে অনলাইন ইনকামের পথ বেছে নিয়েছিলেন। খুব ভালো আইডিয়া ছিল এটা। আপনি তো প্রথম দিকে অনেক ভোট পেয়েছিলেন।প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য আপনার প্রতি অনেক শুভকামনা রইল আপু।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে জানতে পারলাম আপনার লাইফে প্রথম অনলাইন থেকে উপার্জিত কিছু তথ্য।স্টিমিট থেকে ২০২১ সালে বেশ বড় ধরনের ভোট পেয়েছিলেন।আপনার অনুভুতি গুলো পোস্টের মাধ্যমে প্রকাশ করার জন্য ধন্যবাদ আপু।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার স্টিমিটের জার্নিটা যতই পড়ছিলাম ততোই ডিপে চলে যাচ্ছলাম। আসলে আপনার বাবার চাকরি যাওয়ার পর ফ্যামিলির বড় মেয়ে হওয়ায় আপনারও দায়িত্ব এসে পরে। ভালো লাগার বিষয় হলো আপনি পেরেছেন আমি বলবো। তবে আপনার মেজো চাচা কিন্তু অনেক সাহায্য করেছে বলতেই হয়। ঐ সময় রাইট ওয়েতে পেমেন্ট পাওয়াটাই টাফ ছিল
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit