স্বপ্ন ছিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার, বুয়েটে পড়ার
যাইহোক, একদিন ক্যাম্পাসে হঠাৎ দেখি আনন্দ মিছিল! কারন ছিল পুরো পলিটেকনিকে শুধুমাত্র একজন সিনিয়র ভাই DUET এ চান্স পেয়েছেন! খুশি হলাম এই ভেবে যে, যাক BSc ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার পথ তাহলে এখনো খোলা আছে! কিন্তু ডুয়েট আমাদের কাছে একটি স্বপ্ন একই সাথে একটি আতঙ্কের নাম, কারন দেশের লক্ষ লক্ষ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা লড়বে এই একটি মাত্র বিশ্ববিদ্যলয়ের জন্য। আন্যদের মত আমিও সেই স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম এবং পাস করেই কোচিং এ ভর্তি হয়ে গেলাম। কিন্তু ইন্টারনাল ঝামেলার জন্য সেই বছর কোন এডমিশান টেস্টই হল না, ফলে অনেকই কোচিং ছেড়ে চলে গেল, ভর্তি হল প্রাইভেট ভার্সিটিতে। হাল ছাড়লাম না, চালিয়ে গেলাম পড়াশুনা। ভাগ্যক্রমে, চান্সও পেয়ে গেলাম CSE তে।
ডুয়েটে ৪র্থ বর্ষের শেষের দিকে, যখন থিসিস লিখছিলাম আর মাথায় টেনশন ছিল পাশ করার পর কি করব! অপশন ৩টিঃ সরকারী চাকুরী, প্রাইভেট কোম্পানিতে জব আর না হয় বিদেশে উচ্চশিক্ষা। আমার রুমমেটের জিআরই আর টোফেল পরা দেখে আমারও ইচ্ছা জাগত আম্যেরিকায় উচ্চশিক্ষার। তাই থিসিস লেখার সময়টা জিআরই তেই দিলাম। ফলে থিসিসে খারাপ করে ফাইনাল সিজিপিএ কমে গেল। দুঃখ এখানেই শেষ না, আমি ম্যাথ আর ইংলিশে এতটাই বাজে যে জিআরই তে পেলাম ১৬০০ তে মাত্র ৯৫০, যা দিয়ে কোথাও এপ্লাই করা সম্ভব না। দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে একটা সফটওয়্যার কোম্পানিতে স্বল্প বেতনে জয়েন করলাম কিন্তু হাল ছাড়লাম না, IELTS এর জন্য প্রিপারেশান নিলাম। কিন্তু মাত্র ৬.৫ পেতে আমাকে দুবার পরীক্ষা দিতে হল। ভাবলাম এখন এমন দেশের জন্য ট্রাই করি যেখানে জিআরই লাগে না।
অফারও পেয়ে গেলাম একটা জার্মান ইউনিভার্সিটি থেকে কিন্তু বাধা হয়ে দাড়াল টাকা, কারণ জার্মান ইউনিভার্সিটিতে এডমিশন নেয়ার জন্য প্রায় ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা শুধু দেখাতেই হয় না সাথেও নিয়ে যেতে হয়, পরে অবশ্য সব টাকা ফেরত দেয়। বাবা বললেন, সরকারি চাকুরী করি এত টাকা কই পাব! জমি বিক্রি কর। শুনে অনেক কষ্টে স্বপ্নটা দমিয়ে রাখলাম।
এর মধ্যে বিয়ে হল, সংসার হল। হঠাৎ একদিন ইমেইল পেলাম সৌদি আরবের কিং ফাহাদ ইউনিভার্সিটি থেকে যে “আপনি কন্ডিশ্নালি একসেপ্টেড” মানে আমাকে আবার জিআরই দিতে হবে। খুশিতে মুখটা কালো হয়ে গেল। কিছুদিন পর রিপ্লাই দিলাম “আমার পক্ষে পুনরায় জিআরই দেয়া সম্ভব না। এই স্কোরে পসিবল হলে আমি যেতে আগ্রহী” উত্তর আসল “ইয়েস” কিন্তু প্রথম সিমিস্টারে CGPA ৩.৫ এর উপরে পেতে হবে। আমার সুসংবাদ শুনে সবাই বলতে লাগল, কেউ সৌদিতে যায় ইঞ্জিয়ারিং পড়তে?!!! তুমি আরবি জান?! ইত্যাদি। কারো কথায় কান না দিয়ে চলে এলাম মরুর দেশে।
যাইহোক, ভালই চলছিল মাস্টার্স ...। কিন্তু শেষদিকে কাজের প্রেসার এত বেশি ছিল যে ল্যাবে ১০-১২ ঘণ্টা কাজ করা লাগত। সামার চলে আসল, দেশে যাওয়ার জন্য বছরে ছুটি এই একটাই। হাল ছাড়লাম না, দেশে না গিয়ে থিসিসের ব্যস্ততার মাঝেই আবারও জিআরই জন্য রেজিস্ট্রেশন করলাম। ছুটিতে সবাই দেশে চলে গেল, আমি হলের ৩য় তলায় আর নিচ তোলায় এক নাইজেরিয়ান সিনিয়র। ক্যাম্পাস এতটাই ফাকা যে রাতের বেলায় চিৎকার করে ডাক দিলেও কেউ সাড়া দিবে না। কথা বলার আর কেউ থাকলো না। আমার মাস্টার্স ছিল রোবটিক্স নিয়ে। কিছু দিন পর আমাকেও রোবট গোত্রের একজন ভাবতে শুরু করলাম আর মাঝে মাঝে আমার রোবটের সাথেই কথা বলতাম।
ছুটিতে ক্যফেও বন্ধ হয়ে গেল। তাই বাংলাদেশি হোটেল থেকে খাবার এনে ফ্রিজে রেখে দিতাম আর পুরো সপ্তাহ গরম করে খেতাম। এর মধ্যেই দিনে ল্যাবে থিসিস আর রাতে জিআরই চলতে থাকল। জিআরইর রেজাল্ট দিল, এইবার মোটামুটি এপ্লাই করার মত স্কোর পেলাম। MS শেষে কাতার ইউনিভার্সিটি থেকে জবের অফার পেলাম, জয়েন করে ওখান থেকেই প্রেফেসরদের ইমেইল করতাম। প্রোফাইল ভাল না হওয়ায় খুব একটা রিপ্লাই পেতাম না। তারপরও ডিসেম্বরের মধ্যে ৫টা ইউনিভার্সিটিতে এপ্লাই করে দিলাম। অবশেষে দীর্ঘ ৩ মাস অপেক্ষার পর দুটি ইউনিভার্সিটি থেকে ফুল ফান্ড স্কলারশিপের অফার পেলাম।
শুরু হয়ে গেল FIU তে PhD জার্নি। যাইহোক, পিএইচডিতে টিচিং এসিস্টান্ট এর দায়িত্ব পালনের সময়ই বুঝতে পারলাম যে, আমার ভেতরে টিচিং ম্যাটেরিয়াল নাই। তাই সবসময় মাথায় ঘুরপাক খেত যে, পাশ করে আমি কি করব! পথ একটাই তা হল ইন্ডাস্ট্রিতে জব করা। কিন্তু এই পথের সব চেয়ে বড় বাধা হলঃ কোডিং বা প্রোগ্রামিং কম্পিটিশান। সেই অভিজ্ঞতাতো আমার শূন্য!! জীবনে শুধুমাত্র একবারই প্রোগ্রামিং কম্পিটিশানে অংশগ্রহণ করছিলাম তাও আবার ফ্রিতে টি-শার্ট পাওয়ার জন্য।
যাইহোক হাল ছাড়লাম না, একে একে ডাক পেলাম Roku, FedEx, Nike, Stripe, LinkedIn, Tesla, Uber এর মত বড় বড় কোম্পানি থেকে। কিন্তু ফাইনাল সিমেস্টার, তাই একদিকে যেমন পিএইচডির কাজের প্রেসার অন্যদিকে ইন্টারভিউ। তারপরও সব ইন্টারভিউ ভালই দিলাম, আর মনে মনে আশা করতে থাকলাম যে, যদি মাল্টিপল অফার পাই, তাইলে কোনটাকে হ্যাঁ বলব!! কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস এই যে, সপ্তাহ না যেতেই একে একে সবগুলো কোম্পানি আমাকে রিজেক্ট করে দিল। শেষ বাতিটিও নিভে গেল, আশা করার মত আর কিছুই বাকি থাকল না। এতগুলা রেজেকশান খাওয়ার পর কিভাবে সোজা হয়ে দাঁড়াব! কিভাবে আবার নতুন করে প্রাকটিস শুরু করব! কিছুই মাথায় আসছিল না। ঠিক সেই মুহূর্তে পাশে দাঁড়ালেন আমার বউ। বললেন "দেখ, আমারা শুধু চেষ্টা করতে পারি, বাকিটা সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা, হালছেড় না"। আন্যদিকে আব্বু আম্মু সবসময় দোয়া করতেন এবং সাহস দিয়ে বলতেন, লেগে থাকো বাবা, তোমার জব হবেই ইনশাল্লাহ।
এইবার এপ্লাই করে দিলাম ছোটবড় সব কোম্পানিতে। ডাকও পেলাম। ইন্টারভিউ দিতাম ঠিকই কিন্তু মনে কোন আশা রাখতাম না। হতাশা যখন চরম পর্যায়ে আর মানসিক ভাবে ভেঙ্গে চুরমার, ঠিক তখনই একটা স্টার্টআপ কোম্পানি থেকে প্রথম জব অফার পেলাম। এটা যে কি আনন্দের তা ভাষায় প্রকাশ করার মত না।
এদিকে পিএইচডি ডিফেন্স দিয়ে দিলাম। এবং এর কিছুদিন পরপরই ফেসবুক থেকে ইন্টারভিউয়ের ডাক পেলাম, দীর্ঘ ৭ রাউন্ড রোলার কোস্টারের পর একদিন বিকেলে হঠাত ফেসবুক থেকে কল পেলাম! বলল "আপনার সবগুলো ইন্টারভিউ ভাল হওয়ায় মেটা আপনাকে হেড অফিসে E4 Software Engnieer (ML) হিসেবে অফার করতে চায়!!........."
আনন্দে আমরা শুধু বাকরুদ্ধ হয়ে শুনছিলাম, যা এখন শুধুই ইতিহাস......
কেউ আপনাকে অবহেলা করবে, কেউবা উপহাস, কারও কাছে হয়ত তুচ্ছ, কেউবা খাটো করে দেখবে, কিন্তু আপনি তাৎক্ষনিকভাবে কথার মাধ্যমে উত্তর দিতে পারেন, অথবা সেগুলোকে শক্তিতে পরিণত করে আপনার কাজের মাধ্যমে উত্তর দিতে পারেন। স্বপ্ন দেখতে ভয় পাবেন না, বড় বড় স্বপ্ন দেখুন, আপনার যোগ্যতা বা সামর্থ্যের বাইরে স্বপ্ন দেখুন। নিরাশ হবেন না, চেষ্টা চালিয়ে যান, অন্যের সাথে তুলনা করবেন না। মনে রাখবেন, যত বড় সফলতা আপনি অর্জন করতে চাচ্ছেন, তার চেয়েও বড় মাপের ব্যর্থতা হজম করার শক্তি আপনার থাকতে হবে। আপনার ঘড়িতে যখন সময় হবে তখন কেউ আপনাকে আটকাতে পারবে না। হাল ছাড়বেন না, একদিন আপনিও সফল হবেন।
Abdullah Al Mamun
Software Engineer (Machine Learning)
Meta (Facebook)
Menlo Park, California, USA
Abdullahs MAANG Journey
Post Collected
আপনার পোস্ট পড়ে আপনার দক্ষতা দেখে মুগ্ধ হলাম। কঠোর পরিশ্রম মানুষের জীবনের সফলতা আনবেই আনবে।
তবে
আমার বাংলা ব্লগে পোস্ট করতে হলে, সর্বপ্রথম একটি পরিচিতিমূলক পোস্ট লিখতে হবে।
আর অবশ্যই পোস্ট বাংলাতে হতে হবে।
পোস্টে অবশ্যই #abb-intro ট্যাগ ব্যাবহার করতে হবে। একটি পরিস্কার কাগজে আমার বাংলা ব্লগ, আপনার স্টিমিট আইডি এবং তারিখ লিখে সেই কাগজসহ আপনার ছবি তুলতে হবে। এই ছবির সাথে আরও নূন্যতম তিন চারটি ছবি এবং ২৫০ শব্দের একটি পরিচিতি মূলক পোস্ট লিখতে হবে। আপনার সম্পর্কে আরও তথ্য লিখতে হবে যেমন আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, পরিবার, জাতীয়তা, এলাকা সম্পর্কে সব তথ্য উল্লেখ করতে হবে। আপনাকে সঠিকভাবে ভেরিফিকেশন পোস্ট করতে হলে এই সকল নিয়ম মেনে আবার পোস্ট করতে হবে। আপনার পোস্টে রেফারার সম্পর্কে লিখতে হবে অথবা এই কমিউনিটির ব্যাপারে কোন 'মাধ্যম' থেকে জানতে পেরেছেন তা উল্লেখ করতে হবে অবশ্যই।
👇
আরও কিছু জানতে জয়েন করুন আমাদের discord server এ
Discord link : লিংক ঃhttps://discord.gg/esbZH6GU
নিচের লিংক টি ক্লিক করে দেখে নিতে পারেনঃ আমার বাংলা ব্লগ এর সর্বশেষ আপডেট নিয়মাবলী
👉 [লিংক] ঃ https://steemit.com/hive-129948/@rme/last-updated-rules-of-amar-bangla-blog-community-29-sep-21
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
@ayrinbd ম্যাডাম এইটা কপিরাইট পোস্ট। সবার নিচে খেয়াল করেন ,ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হা ভাইয়া জানি, কিন্তু সুমন ভাই এই পোস্ট গুলো কে আবার চেক করবে, তারপর কপি হলে মিউট করে দিবে। তাই আমি শুধু আমার গাইডলাইন দিয়ে যাই।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার পরিচিত মূলক পোষ্ট পড়ে খুবই ভালো লাগলো ।আপনার ভিতরে অনেক ক্রিয়েটিভিটি রয়েছে ।যেটা আপনি খুব সুন্দর করে আমাদের মাঝে তুলে ধরলেন আপনার এই প্লাটফর্মে পথে যাত্রা শুভ হোক সেটাই কামনা করি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনি নিজস্ব লেখা ব্যতীত অন্যের সামগ্রী এখানে শেয়ার করতে পারবেন না।
আপনার পোস্টের লেখাগুলো শতভাগই চৌর্যবৃত্তি করা।
এ ধরনের post আমাদের কমিটিতে রাখা হয় না। নতুন ইউজার হওয়ার কারণে শুধুমাত্র আপনার পোস্ট Mute করা হচ্ছে। পরবর্তীতে আবার একই ধরনের কাজ করলে আপনার একাউন্ট কমিউনিটি থেকে ব্যান করা হবে।
কমিউনিটির নিয়মাবলী ভালোভাবে পড়ে নিন
https://steemit.com/hive-129948/@rme/last-updated-rules-of-amar-bangla-blog-community-29-sep-21
যে কোন বিষয়ে জানার প্রয়োজন হলে আমাদের সাথে Discord এ যোগাযোগ করুন।
Discord server link: https://discord.gg/ettSreN493
SOURCE:
https://thedailycampus.com/tips-tutorial/93739/%E0%A6%AC%E0%A6%A1%E0%A6%BC-%E0%A6%AC%E0%A6%A1%E0%A6%BC-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%A8-%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%96%E0%A7%81%E0%A6%A8-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%A8-%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%96%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%AD%E0%A6%AF%E0%A6%BC-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%A8-%E0%A6%A8%E0%A6%BE
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit