রহিম মিয়া খুব পরিশ্রমি মানুষ। অন্যের বাড়িতে কাজ করে তার দিন কাটে, সেই সকালে আসে আর রাতে বাড়ি ফেরে।রহিম মিয়ার স্ত্রী কিছুটা স্বার্থপর সে রহিম মিয়ার কষ্টটা বুঝেও না বুঝার মত করে থাকে। রহিম মিয়ার ছোট একটি ছেলে আছে তাকে নিয়েই তাদের স্বপ্ন কোন একদিন ছেলে বড় হবে ভাল চাকরী করবে রহিম মিয়ার কষ্ট দূর হবে এই আশায় ।
রহিম মিয়ার স্ত্রী রহিম মিয়াকে ভুলিয়ে বালিয়ে তার বাপের বাড়িতে তারা জমি কিনে থাকতে শুরু করে। রহিম মিয়া সারা দিন কাজ করে আর তার ছেলের জন্য টাকা পয়সা রোজগার করে, ছেলের যত চাওয়া পাওয়া সে কোন রকম কমতি রাখেনা, যত কষ্টই হোক রহিম মিয়ার। এভাবেই রহিম মিয়া ছেলে বড় হচ্ছে, তার সাথে রহিম মিয়ার স্বপ্ন ও।এক সময় ছেলে বড় হয়ে ভাল চাকরী করে অনেক টাকা বেতন। ছেলে টাই কোড পরে অফিসে যাই। এ যেন রহিম মিয়ার স্বপ্নের মত। কিন্তু রহিম মিয়ার ছেলে নিজের স্বার্থে ব্যাস্ত সারাক্ষণ, টাকা পয়সা যা পাই সব টাকায় তার কাছে রেখে দেয়, সংসারে যত টাকার দরকার তার এক কড়ি টাকা ও বেশি দেয়না ।
এ নিয়ে রহিম মিয়ার মন কিছুটা খারাপ যাদের জন্য রহিম মিয়া নিজের বাপের বাড়ি ছেড়ে নিজ স্বার্থে জীবনের প্রতিটা দিন অন্যের বাড়ি কাজ করে ছেলে কে মানুষ করেছে, আজ তার ছেলে তাকে হিসেব করে টাকা দেয়, কিন্তু কই রহিম মিয়াতো কখনো হিসেব করে ছেলেকে মানুষ করেনি, কখনো কিছু খাইতে মন চাইলে খাইনি ছেলের চাওয়া পাওয়া কোন হিসেব সে কোন দিনই করেনি, কিন্তু আজ কেন তার ছেলে তার সাথে হিসেব করে টাকা দেয়। আজও রহিম মিয়ার কিছু খাইতে মন চাইলেই খাইতে পারেনা টাকার অভাবে, কোন একদিন খাইনি ছেলের জন্য আর আজ খাইনি টাকা নাই বলে।
রহিম মিয়া অসুস্থ হয়ে পরেছে তাকে ডাক্তার দেখানোর মত সময় এবং টাকা কারো নেই, রহিম মিয়া কোন এক সময় বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখতো আর আজ প্রতি মূহুর্তে নিজের মৃত্যু কামনা করছে, রহিম মিয়া জীবনে একটা বড় ভুল করেছে, তার ছেলেকে ভবিষ্যৎ মনে করে, যদি ছেলেকে ভবিষ্যৎ মনে না করে,তার রোজগারের কিছু টাকা যদি সে জমিয়ে রাখতো তাহলে হয়তো আজ এমনটা হতনা।
রহিম মিয়া আজ পৃথিবীর সকল মায়া ত্যাগ করে পরপাড়ে পাড়ি দিয়েছে তাকে দাপন করা হল তার বাবার বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে , রহিম মিয়া মারা যাওয়ার পাঁচ দিন পর, তার ছেলে অনেক টাকা খরচ করে পাড়ার লোক ডেকে তাদেরকে খাওয়া দাওয়া করালো।তারপর কেটে গেল একটি বছর তার ছেলে একটি বারের জন্য ও তার কবরে পাশে গেলনা, হায়রে নিষ্ঠুর পৃথিবী যাদের জন্য এত কিছু করল তারাই তো আজ মনে রাখলনা।
পরিশেষে এটাই বলতে চাই বাবা মা বেঁচে থাকতে তাদের মূল্যায়ন করুন তাদের চাওয়া পাওয়াকে সামর্থ্য অনুযায়ী প্রধান্য দিন, মরার পরে লাখ টাকা খরচ করে পাড়ার লোক ডেকে লোক দেখানো খাওয়া বন্ধ করুন, বেঁচে থাকতে একশত টাকা দিতে কষ্ট লাগে মরার পরে লাখ টাকা খরচ করে পাড়ার লোক ডেকে এনে খাওয়া এ কোন পৃথিবীর নিয়ম।