দিনটা ছিল মেঘলা দিন। বৈশাখ মাসে আকাশটা যেন কালো অন্ধকার হয়ে আছে। মনে হচ্ছে এখন অনেক বড় সড় একটা ঝড় হবে। সবাই বলে উত্তৰ এর আকাশে যদি মেঘ আসে তখন নাকি প্রচন্ত ঝড় হয়। জানিনা সঠিক কিনা , কিন্তু ছোট বেলা থেকেই গ্রামের মানুষের মুখে মুখে শুনে আসছি। সবই ঠিক আছে কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আজকে আমার মা নানুর বাড়ি থেকে বাসায় ফিরবে। কথা ছিল সকাল সকালই চলে আসবে কিন্তু কি আর বলবো। এখন প্রায় দুপুর এর ১২ টা বাজে। এখনো নাকি উনারা রওয়ানা দেয়নি। আর এইদিকে এখানে এই করুন অবস্থা। এমনটা মনে হচ্ছে যদি এখন যদি ঝড় শুরু হয় তাহলে আজকের মধ্যে আদেও থামবে।
তা প্রায় ১ টার মত বেজে গিয়েছে , এখনো আশারত ভাবে বৃষ্টি শুরু হয়নি। বাহিরে তাকালে বুঝা যাচ্ছ অল্প অল্প করে বৃষ্টি শুরু হচ্ছে। কিন্তু বৃষ্টির তুলনায় বাতাস অনেক বেশি ছিল। যেহেতো বৈশাখ মাস , আম গাছে প্রচুর আম হয়েছে এবার। বাহিরে এত জোরে বাতাস বইছে কারোর কোনো ভয় নেই। সব ছেলে মেয়েরা একসাথে আম কুড়াতে বেরিয়ে পড়ছে। হটাৎ আমার ছোট বেলার কথা মনে পরে গেলো। ওদের মতোই তো ছিল আমাদের শৈশব গুলো না ছিল কোনো ভয় আর না ছিল কোনো বিদ্বেষ। আমাদের একটা গ্যাংই ছিল। মানে , আমরা প্রায় ১৬ জনের মতো একসাথে , এক স্কুল এ , একই এলাকায় থাকি। আর সারাদিনই ওদের সাথে , ঝড় হোক বৃষ্টি হোক সবাই একসাথে।
ছোট বেলায় আমি ওখানেই বড় হয়েছি , গ্রামের সব কিছুই যেন পাল্টে গিয়েছে। এমনিতে প্রায় বছর খানেক পর পরই বাড়িতে যাওয়া হয়। প্রতিবারই মনে হয় আগের থেকে এখন আরো পাল্টে গিয়েছে। এখন যেন গ্রাম গুলোকে আর গ্রাম মনে হয়না। সব কিছুর মধ্যেই যেন আধুনিকতার ছোয়া পেয়ে গিয়েছে। আমার সেই ছোট বেলার বন্ধু গুলোর সাথে মাজে মধ্যেই দেখা হয়, সবাই এখন ব্যস্ত। কেউ কেউ তাদের পরিবার নিয়ে আবার কেউ কেউ তাদের জীবিকে নির্বাহে। মাঝে মধ্যে ইচ্ছা হয় সবার সাথে দেখা করে আবার একটু সময় কাটাই। আবার একটু বন্ধুদের আড্ডায় মগ্ন হই। কিন্তু তা কি আর সম্ভব হবে কখনো ?
এইসব ভাবতে ভাবতে দেখি মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে। এইদিকে মাকে ফোন দিয়ে দেখি উনারা নাকি এখন আর রওয়ানা দিবে না। সেখানেও নাকি প্রচন্ড ঝড় হচ্ছে। আজ মনেহয় তাদের আর আশা হবে। তবুও আজকের দিনটা অনেক সুন্দর ছিল। মাঝে মধ্যে মেঘলা দিন গুলোও অনেক সুন্দর হয়। বিশেষ করে বৈশাখের মেঘলা আকাশ গুলো। দক্ষিণের বাতাসে মন যেন উতালা হয়ে যায়। ইশ , যদি একবার ফিরে পেতাম ওই দিন গুলো।