বারদী লোকনাথ বাবা বা শ্রী লোকনাথ বাবা (Lokenath Brahmachari) হলেন একজন ধর্মিক ও আধ্যাত্মিক পরিচর্যক। তিনি একজন হিন্দু সাধু ছিলেন। পশ্চিম বঙ্গের ২৪ পরগনা জেলার বারাসাত থানার অন্তর্গত কচুয়া গ্রামে ১৭৩০ সালের ৩১ আগষ্ট তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পুঁথি বিদ্যা ত্যাগ করে সন্ন্যাস ব্রত গ্রহণ করে হিমালয়ে চলে যায় এবং কঠোর যোগ সাধনা করেন। পরবর্তীতে তার জ্ঞান মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য লোকালয়ে বের হয়ে আসেন।
১৮৬৩ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা থেকে ৩৪ কিঃমিঃ দূরে সোনারগাঁও উপজেলার বারদী বাজারের পশ্চিমে শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম বা বারদী লোকনাথ আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকা থেকে ঢাকা-চট্রগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক পথ ধরে মোগরাপাড়া চৌরাস্তা থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। এটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থভূমি হিসেবে পরিচিত এবং বাঙালি হিন্দুদের কাছে এটি একটি জনপ্রিয় তীর্থস্থান।
বাবা তার জীবনের অধিকাংশ সময় বারদী গ্রামে কাটিয়েছিলেন এবং তার আশ্রম স্থাপন করেছিলেন। যা তার ধার্মিক কাজ ও সেবা কাজের জন্য প্রসিদ্ধ হয়েছিল। তার আশ্রমে মানবিক মূল্য, শান্তি, ও ধার্মিক চিন্তার প্রচারণে তিনি মূলধারা ছিলেন। বাবা অধ্যাত্মিক শিক্ষা, উদারতা, ও সাধুত্বের মাধ্যমে মানবজীবন উন্নত করার কথা বলেছিলেন।
প্রায় ২২ বছর আরাধনা শেষে ১৮৯০ সালের ১ জুন লোকনাথ ব্রহ্মচারী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পরবর্তীতে জাতি ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সকল মানুষের জন্য এক মিলন মেলা হিসেবে পরিচিতি পায় এই তীর্থস্থান।
আশ্রমের বিবরণ:
শ্রী শ্রী বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রমের দক্ষিণের উঠানে তাঁর সমাধি। সমাধির পশ্চিমে শত বৎসর ধরে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল আকৃতির একটি বকুল গাছ । আশ্রমের ভেতরে আছে লোকনাথ ব্রহ্মচারীর বিশাল তৈলচিত্র। মূল আশ্রমের পেছনে খোলা উঠান পেরিয়ে বিশাল পাঁচতলা ভবন, যাতে রয়েছে রাত্রিযাপনের সুবিধা। পশ্চিমে আরও দুটি বিশালাকার যাত্রীনিবাস রয়েছে। ভক্ত ও দর্শণার্থীরা বিনা পয়সায় এখানে রাত্রিযাপন করতে পারে। সাধক পুরুষ লোকনাথ ব্রহ্মচারী জীবিত অবস্থায় আশ্রমের পাশে “কামনা সাগর” ও “জিয়স” নামের দুটি পুকুর খনন করে। এই পুকুরে আশ্রমে আগত ভক্তরা স্নান করেন।
মঙ্গল কামনায় ‘কার্তিকের রাখের উপবাস’
বিপদ-আপদ আর বিভিন্ন রোগব্যাধি থেকে রক্ষা পেতে কার্তিক মাসের শেষ ১৫ দিনে বিশেষ ব্রত পালন করেন বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারীর অনুসারীরা। একে কেউ বলেন ‘কার্তিক ব্রত’, কেউবা ‘রাখের উপবাস’।
প্রিয়জনের মঙ্গল কামনায় ও বিভিন্ন প্রাণঘাতী রোগ থেকে বাঁচতে উপবাস পালন করে আশ্রম প্রাঙ্গণে প্রদীপ ও ধূপ জ্বালান লোকনাথ ভক্ত অগুনতি সনাতন ধর্মাবলম্বী। কার্তিক মাসের শেষ ১৫ দিনের প্রতি শনি ও মঙ্গলবার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা উৎসবটি পালন করেন। প্রতিবছর ঘটা করে এ উৎসব পালিত হয়। দূরদূরান্ত থেকে ভক্তরা এখানে এসে জড়ো হন।
নারায়ণগঞ্জে সোনারগাঁয়ে বারদীতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রমের মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক হাজার নারী-পুরুষ প্রদীপ, ধুপ, ফল, ফুল, কলাপাতা, ধান-দূর্বা, ঘি, ডাব, দুধ ইত্যাদি সামনে নিয়ে সমবেত হয়ে পুণ্যার্থীরা লোকনাথের আরাধনায় নিমগ্ন হয়।
এই ব্রতের আগের দিন তারা সংযম করে। তারপর উপবাস থেকে বিকেলে ধুপ, প্রদীপ ইত্যাদি নিয়ে বসে। সকাল থেকেই সারি করে ইট বিছিয়ে রাখা হয় যাতে করে কেউ অগোছালোভাবে না বসে।
দুপুরের পর থেকে শুরু হয় প্রার্থনার প্রস্তুতি ।সন্ধ্যার আগে মন্দির থেকে ঘণ্টা বাজলে প্রদীপ জ্বালানো হয়। আরাধনায় বসে প্রদীপ জ্বালানোর পর সবাই কথা বলা বন্ধ করে দেয়। সংযম, মনোব্রত ও একাগ্রচিত্তে লোকনাথকে ডাকতে হয়। প্রদীপ যখন জ্বলা শেষ হবে তখন চালকলা দিয়ে পুণ্যার্থীরা খায়। অনেকে এই চাল রেখে দেয়, যখন বিপদ-আপদ আসে তখন খাওয়ার জন্য।
কিভাবে যাবেন?
ঢাকার গুলিস্থান থেকে নারায়ণগঞ্জের যেকোন বাসে (যেমন- দোয়েল, স্বদেশ, বোরাক) মোগড়াপাড়ায় নামতে হবে। মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা থেকে সিএনটি অথবা অটো রিকশায় বারদী লোকনাথ আশ্রমে পৌঁছাতে পারবেন।
কোথায় খাবেন?
সোনারগাঁও রোডে সুরিন্দ্র, ইত্যাদি, কাশফল, আবু বকর, নিউ স্টারের মত অনেক গুলো খাবেরের রেস্তোরা পাবেন।
কোথায় থাকবেন?
নারায়ণগঞ্জ শহরে হোটেল নারায়নগঞ্জ, হোটেল মিনা আবাসিক, হোটেন সোনালি ও হোটেল মজিবুরের মতো বেশ কিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে। তাছাড়াও অনুমতি সাপেক্ষে জেলা পরিষদের ডাক বাংলো কিংবা সার্কিট হাউজেও থাকতে পারবেন।
লোকনাথ বাবা সত্যি খুব জাগ্রত। আমার মেয়ের মুখে ভাত দেওয়ার সময় লোকনাথ বাবার আবির্ভবন তিথিতে গিয়েছিলাম ও প্রসাদ মুখে দিয়েছিলাম।খুব ভালো লেগেছিল আমার মন্দির ও মন্দিরের পরিবেশ। অনেক দূর দূরান্তের লোকজনেরা মানত করতে যান লোকনাথ বাবার আশ্রমে।ধন্যবাদ সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
রেপিটেড পোস্ট :
https://steemit.com/loknathbramhachariashram/@jamilrahat/rmxwj
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit