সুমন ভাইয়ার ইঁদুর মারার গল্প

in hive-129948 •  last month 


আসসালামু আলাইকুম
আমার বাংলা ব্লগে সকলকে স্বাগতম

গল্প


IMG_20240414_181645_300.jpg

Photography device: Infinix Hot 11s-50mp


২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনের একটি ঘটনা। তখন আমাদের শ্বশুরবাড়িতে দুইটা স্যালো মেশিন ছিল। একটা মাঠে ধানের জমিতে। আর একটা ছিল বাড়িতে পুকুরপাড়ে। এবার ভোটের দিন গ্রামের মানুষ বেশ লাফালাফি করে বেড়াচ্ছিল। অনেকেই চিন্তায় আছে কখন ভোটের রেজাল্ট প্রকাশ পাবে। তবে সবাই জানে ভোটের রেজাল্ট প্রকাশ পেতে সন্ধ্যা পার হয়ে যায়। অনুমানিক রাত আটটা বেজে যেতে পারে। তাই বিকেল মুহূর্তে সুমন ভাইয়া, আমার রাজের আব্বু আর তাদের চাচাতো বোনের ছেলে মিটু বেশ দারুন একটা উদ্যোগ নিল। বিষয় হচ্ছে ধানের জমির মোটা আইল কেটে ইঁদুর মারা ও ধান বের করে মিষ্টি খাওয়া। বুঝতে পারছেন আগেকার ছেলেরা বিভিন্ন খেলায় লিপ্ত থাকতো। আর এটাও তাদের এক প্রকার খেলা আনন্দ আর মিষ্টি খাওয়ার বিষয়। কারণ যে আইলের পাশে স্যালো মেশিন ছিল সেটা অনেক মোটা আইল। চলাচলের পথটা অনেক মোটা হওয়ায় ইঁদুরে ধানের জমি থেকে ধান কেটে ওই আইলের নিচে গর্তে বোঝাই করে। আর সে আইলের নিচে ইঁদুরের গর্ত ছিল একতলা দুই তালা তিন তলা পর্যন্ত।

এই সমস্ত গর্তগুলো ইদুরের ধানে বোঝাই করে ফেলত। মাঠের ধান কৃষকরা কাটার শেষে গ্রামের ছোট ছেলেরা এ সমস্ত আইল কেটে ধান বের করে সেগুলো দোকানে দিয়ে মিষ্টি খেতো। ঠিক এমনই একটা সময় ধান কাটা হয়ে গেছে প্রায়। সেই মুহূর্তে ভোট। ভোটের দিনের বিকালটা তো তাদের পার হচ্ছিল না। তারা বাড়ি থেকে কোদাল কয়েকটা লাঠি আর হাইসু নিয়ে মাঠে গিয়েছিল। এদের মধ্যে মিঠু ছিল যে শক্তিশালী। আর সুমন ভাইয়া দৌড়াতে বেশ ভালো করে। তাই মিঠু আইল কেটে চলতে থাকলো। যখনই আইলের মোটা মোটা মাটির বাবা তুলতে থাকল লক্ষ্য করে দেখল নিচে ইঁদুরের গর্ত এক দুই তালা ঘরের মতো করে একটার নিচে আরেকটা লম্বালম্বি বয়ে গেছে। আর ঘর গুলো কত ডিজাইনের আঁকাবাঁকা। আর কিছু কিছু গর্তের মধ্যে জায়গায় জায়গায় এত ধান রয়েছে। আবার এদিক সেদিক দিয়ে বের হওয়ার জন্য পথ তৈরি করে রেখেছে এই দূরে। কিছু কিছু জায়গায় ইঁদুরের মাটি বের হয়ে রয়েছে।

IMG_20240507_184100_239.jpg


প্রথম যখন কোদাল দিয়ে আইল কাটতে থাকলো, তখন বুঝতে পারল এর মধ্যে অনেকে ইঁদুর রয়েছে। তাই তারা তাদের মত সাবধান হয়ে নিল, ইঁদুর বের হলেই পিটানো শুরু করবে। তবে আরো সাবধান হলো যেন একজনার লাঠির আঘাত আর একজনের গায়ে না লাগে। ঠিক সে ভাবেই তারা প্রস্তুতি নিয়ে একজন কাটছে দুইজন লাঠি নিয়ে রেডি ইঁদুর বারানোর সাথে সাথে মারবে। যেমন কথা ঠিক তেমনি কাজ। আইল যখন কাটতে থাকলো, ইঁদুর ঠিক দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা। কিন্তু ফাঁকা ধানের মাঠ পালাবে কোথায়। তারা দৌড়ে গিয়ে যেভাবেই হোক দমদম পিটিয়ে সাটিয়ে দিতে লাগলো। আর এভাবে দীর্ঘ আইল-খানা থেকে ছোট-বড় মাঝারি মোট ২৩ টা ইদুর বের হয়েছে। তারা ২৩ টায় মেরেছে এবং একটি জায়গায় জমা করেছিল মানুষকে দেখানোর জন্য। আর সে সমস্ত গর্তের মধ্য থেকে প্রায় পাঁচ ছয় কেজি ধান পেয়েছিল। এতগুলো ধান এর শিষ কেটে কেটে গর্ত বোঝাই করেছে ইঁদুরে। এতে বেশ আনন্দিত হল তারা। একদিকে ইদুর মারা হলো আরেক দিকে দোকানে মিষ্টি খাওয়ার ধান পেয়ে গেল। এভাবে বেশ দীর্ঘ ৪০ হাত মোটা অইল সারা বিকালের মধ্যে তারা ইঁদুর মারতে গিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে নষ্ট করে ফেলল। পরবর্তীতে তারা ভয় পেয়েছিল, না জানি আমার শ্বশুর তাদেরকে বকাঝকা করে আইল টা নষ্ট করার জন্য।

IMG_20240507_184005_009.jpg


কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল সন্ধ্যা রাতে তারা ধানগুলো নিয়ে বাড়ি ফিরছে। আর তাদের মুখে ইঁদুর মারার গল্প। তারা বড় আইল কেটে ২৩ টা ইদুর মেরেছে এবং এমন পাঁচ ছয় কেজি ধান পেয়েছে। তাদের আনন্দে পরিবারের অনেকে আনন্দিত হলো। তারা যে ভয়টা করেছিল, আমার শশুর আইল নষ্ট করার জন্য কিছুই বলেনি। একদিকে অনেকগুলো ইঁদুর মারতে পেরেছে শুনে খুশি হয়েছে, আরেক দিকে এলাকার ভোটের অবস্থা বেশি শশুরদের দলের অনুকূলে ছিল। তবে তারা একটা বিষয়ে আফসোস করছিল। এই গ্রামে নাকি কোন কৃষি অফিসার ইদুরের লেজের বিনিময়ে গমদিতো ২০০২ সালের দিকে। তখন যদি দিত তাহলে তো অনেক ইদুরের লেজ ছিল। আর এই সমস্ত বিষয় নিয়ে তারা বেশ আনন্দে মেতে উঠেছিল সেই দিন। পরবর্তীতে সেই ধানগুলো দিয়ে পাশের দোকান থেকে মিষ্টি খেয়েছিল। আর এই সমস্ত অতীতের আনন্দঘন মুহূর্তের কথা গুলো, সুমন ভাইয়ার মুখ থেকে শুনেছিলাম। এ সমস্ত বিষয়গুলো শুনে আমিও বেশ আনন্দ পেয়েছিলাম।

PB8ro82ZpZP35bVGjGoE93K3E4U5KX8KtMBJ2rhmkyLqtRRZvVw9YH8hEBg7DJQKSJLWf7VJRhnjGRYSDmuGDMSHAPBRbiRis5HV4ATHTF7QvLHc.png


পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ



received_434859771523295.gif


পোস্ট এর বিবরণ


বিষয়অতীত ঘটনা
ফটোগ্রাফি ডিভাইসInfinix Hot 11s-50mp
ক্রেডিট@jannatul01
দেশবাংলাদেশ
ব্লগারআমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি


আমার পরিচয়


আমার নাম মোছাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস শশী। আমার বাসা গাংনী মেহেরপুর, বাংলাদেশ। আমি আপনাদের সুপ্রিয় বিদ্যুৎ জিরো ওয়ান এর পরিবার। আমি একজন গৃহিণী। স্বামী সন্তান সহ আমাদের যৌথ পরিবার। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির চারজন সদস্য রয়েছে আমাদের পরিবারে, তার মধ্যে আমি একজন। এইচএসসি পাশ করার পর বিয়ে হওয়ার মধ্য দিয়ে আমার লেখাপড়া স্থগিত হয়। আমার ইচ্ছে আমি এই কমিউনিটিতে দীর্ঘদিন ব্লগ করব। পাশাপাশি আমার নিকটস্থ প্রিয়জনদের সহায়তা করব এই কমিউনিটিতে কাজ করার জন্য।


2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif

6VvuHGsoU2QBt9MXeXNdDuyd4Bmd63j7zJymDTWgdcJjo1NfxyQcRUrHnbvGAuDxuMioMRjoG74XpZyTRDsUp566Bu2ZZHRsryAWmeAqnTe9T6zT4X1bZ8DTXHHYrr.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আসলে আমাদের জীবনের ফেলে আসা এমন অনেক গল্প আছে যা শুনলে অনেক ভালো লাগে। আপনার কাছে সুমন ভাইয়ার ইঁদুর মারার গল্প শুনে অনেক ভালো লেগেছে। আর সেই গল্পটি আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন আমারও পড়ে ভালো লাগলো।আমিতো শুনে অবাক। ইঁদুর ধান টেকে আইলের নিচে গর্তে বোঝাই করে। আর সে আইলের নিচে ইঁদুরের গর্ত তিন তলা পর্যন্ত করে। তাহলেতো ভারি সমস্যা।

কত চালাক ইঁদুর

ইঁদুরের কথা বলে আর লাভ নেই। যাদের বাড়িতে ধান রয়েছে তাদের বাড়িতে বেশি ইঁদুর থাকে। পাশাপাশি দানের জমিতেও প্রচুর ইদুর থাকে। আমরা যে সময় ছোট ছিলাম তখন এভাবে ধানের জমি থেকে ইঁদুর মারতাম। ধন্যবাদ

তাহলে বেশ ভালো কথা

আগে জমিতে ইঁদুরের গর্ত দেখলে আমরা মাটি ক্ষরণ করে ধান বের করতাম। তবে সুমন ভাইদের মাঠে ভালোই বুদ্ধি আসলো। ইঁদুরের গর্ত থেকে ধান নিয়ে সেই ধান বিক্রি করে মিষ্টি খাওয়াবে। তবে অবাক করার বিষয় হচ্ছে তারা ২৩টি ইঁদুর মেরেছে। এতে বুঝা গেল তারা অনেক সচেতন ছিল ইঁদুর মারার জন্য। এবং পাঁচ থেকে ছয় কেজি ধান ও পেয়েছে। সত্যি আপনার পোস্টটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো।

হ্যাঁ হবে মানুষ এভাবে ধান বের করে মিষ্টি খেতো

আমাদের সুমন ভাইয়ের অভিজ্ঞতা আছে বলতে হয়, সেটা না হলে একদিনে ২৩ টা ইঁদুর মারা খুব বেশি একটা সহজ নয়। আসলে গ্রামাঞ্চলের ধানের খেতে এরকম দেখা যায় যে, বড় বড় গর্ত এবং তার ভিতরে প্রচুর পরিমাণ ইঁদুর। সব থেকে বড় সমস্যা হলো এরা ধানের শীষ কেটে নিয়ে গর্তের ভিতর ঢুকে যায় তাই গর্ত ভালো করে খোঁজাখুঁজি করলে তার ভেতর প্রচুর ধান পাওয়া যায়। আমি যখন গ্রামে থাকতাম তখন ঠিক এই একইভাবে আল কেটে প্রচুর ইঁদুর তাড়িয়েছি। যাই হোক, সেই কথাগুলোই মনে পড়ছিল আপনার পোস্ট টি পড়তে পড়তে।

হ্যাঁ ভালো ফসলের মাঠে এমন হয়

বাহ সুমন ভাই দেখতেছি তো ইঁদুর মারতে পারফেক্ট। জমির ইঁদুর একসাথে ২৩ টি মারা এতটা সহজ নয়। বলতে হবে পারদর্শী সুমন ভাইয়েরা। অনেকে বলে জমির মধ্যে গর্ত থাকলে ইঁদুর সেখানে ধান কেটে রাখে। আর তারা ধান খুঁজতে গিয়ে ইঁদুরের বংশ খুঁজে পেল হা হা । আর ২৩ টি ইদুর মারার কারণে তাদের বিরুদ্ধে মনে হয় ইঁদুরে অ্যাকশন নেবে। ভালো লাগলো পোস্টটি পড়ে।

হ্যাঁ ঠিক বলেছেন আপনি

😊 হ্যালো! 🌸 বিদ্যুৎ জিরো ওয়ান এর পরিবারের আমি নতুনভাবে ধন্যবাদ, গ্রহন করছি! 🙏

আপনার সুন্দর লেখা শোনা গেছে আমাদের কমিউনিটিতে, যার জন্য আমি একটি বিশেষ ধন্যবাদ জানাই! 🙌

এখনো, আপনার স্তরীয় লেখা চালিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে এবং আমাদের কমিউনিটির সকল সদস্যদের সহায়তা করার জন্য, আপনাকে নিকটবর্তী কমিউনিটির একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে খ্যাত করা হবে! 👫

ভোট করুন xpilar.witness-এর জন্য: https://steemitwallet.com/~witnesses।

আমি আলাদিনের দৈত্য কে বলে দিলাম আপনাকে সহ্য করার জন্য, সে খুব শীঘ্রই আপনার তিনটি ইচ্ছে পূরণ করবে।