পীর ও চোরের গল্প
আমার শ্বশুরের গ্রামের নাম জুগীরগোফা। বর্তমান আমার এই গ্রামে বসবাস। এই গ্রামটা একটা পীরের কবর রয়েছে। পীরকে এযুগের কেউ কখনো দেখেনি। তবে পূর্বের পুরুষরা সে পীর সম্পর্কে গল্প করত। আর সে গল্প মুখে মুখে উঠে এসেছে। একদিন বিভিন্ন গল্পে গল্পে সে পীর সম্পর্কে জানতে পারলাম পীরের একটা গল্পের কথা।
আগেকার সময় অনেক ধার্মিক ব্যক্তিরা ইসলাম প্রচার করতে বিভিন্ন স্থানে আসতো। আমরা জানি ইসলাম প্রচার করার জন্য আমাদের দেশে অনেক পীর সুফি-দুরবেশ ধর্মীয় অনুভূতির মানুষ বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন এবং ইসলাম প্রচার করেছেন। ঠিক তেমনি আমাদের গ্রামের সেই পীর সাহেব কোন এক দেশ থেকে এসেছিল নির্দিষ্ট কেউ জানে না। তবে তার গোরস্থানটা রয়ে গেছে আমাদের গ্রামের পশ্চিম পাশে। যার বর্তমান নাম পীরতলা গোরস্থান ময়দান।
ঘটনাটা পীরের সময়ে এক ব্যক্তির কলার বাগান ছিল আমাদের এই গ্রামে। সেই কলাবাগানে প্রায় কলার কাইন ধরে চুরি করে নিয়ে যেত চোরে। সেই চোরের চুরি করার কারণে কলার বাগানওয়ালা বেশ অতিষ্ঠ হয়ে পড়ল। প্রায় দিন এভাবে চুরি করতেই থাকলো তার বাগান থেকে। একটা দুইটা নয় যেমন সুযোগ পেতো সেভাবেই অনেকগুলো কাইন চুরি করে নিয়ে যেত। তাই তার এই দুঃখের কথা পাড়াগাঁয়ে কোন এক ব্যক্তির কাছে বলেছিল। সে ব্যক্তি তাকে বলে দিয়েছিল আমাদের কাছে বলেই কি বা হবে, গ্রামের যারা মন্ডল মাতব্বর রয়েছে তোর তাদের দলেরই লোক। আগে নাকি মন্ডল মাতব্বররা চোর পুষে রাখতো তাদের দিয়েই চুরি করা তো। তাই সে মহান ব্যক্তিটা ভুক্তভোগী কলাবাগান আলাকে বলে দিল পীর সাহেবের কাছে বিষয়টা জানাতে।
সে কলার মালিক পীর সাহেবের কাছে বিস্তারিত সব খুলে বলল। সে বলল খুব শখ করে কলার বাগান তৈরি করেছে সেখান থেকে যদি তার কিছুর আর্থিক ইনকাম হয় তার পরিবারের জন্য ভালো হয় কিন্তু চোরে এমন ভাবে লেগেছে, কলা পুষ্ট হওয়ার পূর্বেই তারা চুরি করে নিয়ে যায়। এখন কে চুরি করে সেটাও ঠিক জানিনা কেন যে আমাকে এভাবে ক্ষতি করছে সেটাও বুঝি না। আগের গ্রামে মানুষ সংখ্যা ঘরবাড়ি খুব কম ছিল আর ছিল অতিরিক্ত জঙ্গল। লাইটের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় কষ্ট করে কলার বাগান পাহারা দিতে আসার সম্ভব ছিল না চোর ডাকাতের ভয়ে। পীর সাহেব সেই ব্যক্তির কথাগুলো সব শুনলেন এবং বলে দিলেন আপনি আপনার কলাবাগান নিয়ে আর কোন চিন্তা করেন না। আমি আমার মত ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব।
এরপর পীর সাহেব সেই কলাবাগানে গেলেন এবং কি কমনি পাঠ করে কলাবাগানে আশেপাশে ফু দিয়ে আসলেন। এক প্রকার দায়িত্ব নিয়ে নিলেন চোর ধরে দেওয়ার জন্য। কলাবাগান এর মালিক একটু স্বস্তি পেলেন। বেশ কয়েকদিন পরে লক্ষ্য করা গেল কলাবাগানের মালিক সকালে তার কলাবাগানে এসে উপস্থিত হয়েছে কলা চুরি হলো নাকি দেখার জন্য। এসে দেখতে পারলেন একজন চোর কলার কাইন এক হাতে ধরেছেন, আরেক হাতে কাটারি বাঁধিয়ে রেখেছে কাইনের উপর কাটার জন্য। কিন্তু ওই অবস্থায় চোর দাঁড়িয়ে গেছে আর নড়াচড়া নেই তার। এমন দৃশ্য দেখে মানুষটা এসে গ্রামে বলল চোর ধরতে পেরেছি। গ্রামের লোকজন সেখানে ছুটে যায় দেখে কে সেই ব্যক্তি যে প্রতিনিয়ত চুরি করে থাকে এভাবে। লোকজন অনেক আসলো কিন্তু চোরের ক্ষমতা হলো না সেখান থেকে এক পা নড়াচড়া করার যেমন অবস্থায় কলাতে হাত লাগিয়েছিল সে অবস্থায় দাঁড়িয়ে গেছে। সে কখন এসেছে কেউ জানে না ওভাবেই দাঁড়িয়ে রয়েছে নড়ার ক্ষমতা নেই। অতঃপর সবাই পীর সাহেবকে বিষয়টা জানালেন। পীর সাহেব গন্তব্য স্থলে আছেন। এরপর চোরকে বললেন কি বাবা তুমি চুরি করতে এসেছ চুরি করে নিয়ে যাও দাঁড়িয়ে আছো কেন। তোর কোন কথা বলতে পারছি না শুধু কোনরকম এদিকে ওদিকে তাকাতে পারছে কিছুই বলার সাধ্য নেই।
এরপর পীর সাহেব তার গায়ে হাত লাগালেন। তারপরে চোর ধান্ধি লেগে পড়ে গেল। তারপর পীর সাহেব তার গায়ে হাত বুলিয়ে বললেন তুমি আর কখনো এমন কাজ করো না যাতে অন্যের ক্ষতি হয় মনে কষ্ট লাগে। চোর তার ভুল বুঝতে পারলো, ভুল স্বীকার করল। সে কেন কাদের প্রশ্রয়ে চুরি করে সেটাও বলে দিল। সবকিছু শোনার পর পীর সাহেব তাকে বলে দিল তুমি এবার যেতে পারো। আর এভাবেই পীর সাহেব অনেক মানুষকে সহায়তা প্রদান করতেন।
পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ
বিষয় | অতীত ঘটনা |
---|---|
ফটোগ্রাফি ডিভাইস | Infinix Hot 11s-50mp |
ক্রেডিট | @jannatul01 |
দেশ | বাংলাদেশ |
ব্লগার | আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি |
আমার পরিচয়
আমার নাম মোছাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস শশী। আমার বাসা গাংনী মেহেরপুর, বাংলাদেশ। আমি আপনাদের সুপ্রিয় বিদ্যুৎ জিরো ওয়ান এর পরিবার। আমি একজন গৃহিণী। স্বামী সন্তান সহ আমাদের যৌথ পরিবার। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির চারজন সদস্য রয়েছে আমাদের পরিবারে, তার মধ্যে আমি একজন। এইচএসসি পাশ করার পর বিয়ে হওয়ার মধ্য দিয়ে আমার লেখাপড়া স্থগিত হয়। আমার ইচ্ছে আমি এই কমিউনিটিতে দীর্ঘদিন ব্লগ করব। পাশাপাশি আমার নিকটস্থ প্রিয়জনদের সহায়তা করব এই কমিউনিটিতে কাজ করার জন্য।
গল্পটা আপনি কার থেকে শুনেছেন সে সম্পর্কে কিছু বলেন নাই সেটা বলা উচিত ছিলো, এছাড়াও বানান ভুল রয়েছে বেশ কিছু।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit