এক বৃদ্ধের গল্প
আমরা জানি অতীতকালে মানুষের ঘরবাড়ি কম ছিল, জনবসতি কম ছিল। আর এদিকে রাতে আলো জ্বালানোর মত বিশেষ কোনো ব্যবস্থা ছিল না, ভরোসা ছিল ল্যাম্পো,হারিকেন অথবা চেরাগ। তবে প্রচন্ড ঝড় মেঘের মুহূর্তে এই সমস্ত আলো গুলো জ্বালিয়ে রাখা যেত না যখন তখন নিভে যেত। আর সে সময় দোকানপাট খুবই কম ছিল। কেরোসিন তেল আর ম্যাচ বেশি একটা পাওয়া যেত না। বেশ দূর-দূরান্ত থেকে সংরক্ষণ করতে হতো। ঠিক তেমনি আমার এক আত্মীয়র মুখ থেকে শোনা অতীত ঘটনা। প্রচন্ড ঝড়ের রাতে আত্মীয়র এক আত্মীয়রা সবাই ঘর আটকে দিয়ে বসে রয়েছে। কোন রকমের হালকা পাতলা খাওয়া-দাওয়া করেছে। ঝড়ের মুহূর্তে তো আর ভাঙ্গা বাড়িতে ঘুমানো যায় না। তাই সবাই বাঁশের খুটির সাথে হেলান দিয়ে বসে রয়েছে। বাড়ির ছোট বাচ্চারা শুয়ে পড়েছে। কারণ তারা আর কতক্ষণই বা জেগে থাকবে এমন প্রচন্ড ঝড় মেঘ বৃষ্টির রাতে।
তবে মাঝেমধ্যে প্রচন্ড জোরে মেঘ ডেকে উঠছে। সবাই আতঙ্কে ভয়ে কেঁপে উঠছে। এমন করতে করতে রাত গভীর হয়ে গেল। বৃষ্টি থামে আবার বৃদ্ধি পায় সেইসাথে ঝড়ো হাওয়া আর মেঘ ঝিলকানো। এমন মুহূর্তে বাতাসের বেগে যেন মনে হলো কেউ নাম ধরে ডাকছেন। তখন উনি ভাবলেন এত রাতে তার নাম ধরে কে ডাকবে? আমাদের সেই আত্মীয় পরিবার বললেন যে যেখানে ডাকে ডাকুক ঘর খোলার দরকার নেই। দূর থেকে ভেসে আসছে মানুষের কন্ঠ। তবে কন্ঠটা কেমন ভাঙ্গা ভাঙ্গা। তাই তারা মনে করেছিল হয়তো প্রচণ্ড ঝড় মেঘের রাত, এই রাতে ভূতে ভয় দেখাচ্ছে। এমন চিন্তা ভাবনা করে তারা আরো ভয় পেয়ে গেল। তারা ভাবতে থাকল রাতের অন্ধকার ল্যাম্পো ও চেরাগ জ্বলছে না। কোনরকম হারিকেনের আলো অল্প দেওয়া রয়েছে। এ মুহূর্তে যদি ভূতে এমন এসে ডাকাডাকি করে বা ভয় দেখায় তাহলে তো তাদের কথা না শুনলে কোন ক্ষতি করে বসতে পারে। এদিকে বাইরে পশুপাখি রয়েছে সেগুলো না জানি খেয়ে যায়। মাথার মধ্যে যেন বিভিন্ন চিন্তা আসতে থাকল, আর তাই নিয়ে তারা আরো অস্থির হয়ে পরলো।
কিন্তু এদিকে দেখা যাচ্ছে নাম ধরে বাইরে থেকে এখনো ডাক চলছে। শুধু একটি মানুষের কন্ঠ আসছে এছাড়া কোন কন্ঠ নাই। আশেপাশের কোন বাড়ির মানুষজন সাড়া দিচ্ছে না। যেহেতু গভীর রাত হয়ে গেছে আর ঝড় বৃষ্টি সময়। তারা নিচুপ রয়ে গেল। এরপর মাঝেমধ্যে নাম ধরে ডাকার শব্দ। তবে শব্দ যেন কেমন মলিন হয়ে যাচ্ছে। এরপর ওনারা একটু দরজা খুলে বারান্দায় আসলো। আশেপাশে কোন মানুষজন নেই। ঘন অন্ধকার হারিকেনের আলোয় শুধু চোখের সামনে দেখা যাচ্ছে বাইরে কিছু দেখা যাচ্ছে না। আর বাইরে তো এক হাঁটু কাদা পানি। চলার কোন উপায় নেই দেখার কোন পরিবেশ নাই। আস্তে আস্তে শব্দ কমে যেতে থাকলো। তখন তারা নিশ্চিত হলো নিশ্চয়ই ভুতের কারসাজি। তাই তারা আবার ঘরের মধ্যে চলে গেল। এরপর ভাবলো আবার যদি জোরে জোরে ডাকা শুরু করে আমরা আর খেয়াল করবো না। কারণ এমন ঝড়ের রাতে ভূত পেত এসে ক্ষতি করে।
কোনরকম রাত চলে গেল। সকাল হলো। কাদা পানির জন্য ঘর থেকে একটু দূরে যাওয়া কঠিন। তবুও জীবন জীবিকার তারকিদে বের হতে হবে। কাদা ভেঙে পাড়া গায়ের মানুষ যাওয়া আসা শুরু করল। পথ যেতে কাঁদার রাস্তায় লক্ষ্য করে দেখল একজন মানুষ পড়ে রয়েছে। যে সমস্ত মানুষগুলো তাকে দেখলো এরা বেশ চমকে গেল। এমন কাদা পানির মধ্যে মানুষ পড়ে রয়েছে কে উনি? তারা সেই মানুষটার কাছে এগিয়ে গেল, সমস্ত গায়ে কাঁদা মাখা। পড়ে রয়েছেন কাঁদার মধ্যে। দেখল অজ্ঞান হয়ে পড়ে রয়েছে। এরপর কোনরকম সবাই তাকে ধরে রাস্তা পার করে বাড়ির মধ্যে আনলো। দেখল আর কেউ নয়, তারি শশুর। অনেকদিন মেয়েকে দেখেনাই, মেয়ের টানে বাড়ি থেকে বের হয়েছে বিকেলে। হাট-বাজার থেকে মেয়ের জন্য প্রিয় খাবার কিছু সাথে এনেছিল। কিন্তু আসতে সন্ধ্যা হয়ে যায় এবং পথের মধ্যে ঝড় বৃষ্টির সম্মুখীন। পড়ে আত্মীয়র বাসাতে পৌঁছাতে রাত হয়ে গেছে। আর তাই তার এমন ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে মেয়ের গ্রামের পৌঁছাতে। এরপর তার মুখ থেকে আরো জানা গেল, প্রচন্ড ঝড় মেঘ আকাশে বিদ্যুৎ চমকানো এই সমস্ত অবস্থায় উনি ভয় পেয়ে গেছেন এবং রাতের অন্ধকারে পথ চলতে না পেরে অনুমান করতে করতে এগিয়ে এসেছেন বাগানের পাওটা পথ দিয়ে। যখন পথ চিনতে পারেন নি তখন বেয়াই ও জামাইয়ের নাম ধরে ডেকেছেন। কিন্তু এমন রাতে কেউ সাড়া দেয়নি। অতঃপর তিনি কখন খিদে পেটে আর কাদার মধ্যে চলতে দুর্বল হয়ে বেহুশ হয়ে গেছেন নিজেও জানেন না।
যাই হোক আত্মীয়সহ পাড়া প্রতিবেশী মানুষেরা তার প্রতি অনেক দয়াবান হল। খাবারদাবারের ব্যবস্থা করলো, জামা কাপড়ের ব্যবস্থা করল, গোসল করিয়ে দিল। বাবার এমন অবস্থা দেখে মেয়ে তো হাউমাউ করে কান্না করতে থাকলো। সে নিজেই তার স্বামীকে মানা করেছিল যে ডাকে ডাকুক হয়তো ভুতে ভয় দেখাচ্ছে। কিন্তু সে একটিবারের জন্য ভাবে নি তার বাবা তাকে দেখার উদ্দেশ্যে পথে বের হয়ে এমন ঝড় মেঘের সম্মুখীন হয়েছে। এরপর সেখানে উপস্থিত জ্ঞানীগুণী মানুষ বলল এমন ঝড় মেঘের মুহূর্তে কেউ যেন কান বুঝে ঘরের মধ্যে না থাকে, ভূতের ভয়ে ঘর আটকে না বসে থাকে। কারণ নিজের আত্মীয় হোক আর পাড়া-প্রতিবেশী হোক যে কোন বিপদের সম্মুখীন হলে তাদের দেখা শোনাতো করতেই হবে। এ মানুষটা যদি আজকে ভয় পেয়ে মরে পড়ে থাকত তাহলে তো আমরা কেউ বুঝতে পারতাম না কেন মারা গেছে। আর সেই থেকে সবাই শিক্ষা নিল সত্যিই তো এমন ঝড়-বৃষ্টির রাতে আমাদের চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। আত্মীয়র লোকজন ভুল স্বীকার করলো। তারা যদি দূর থেকে নিজের নাম ধরে ডাকার শব্দটা আমলে নিতো, ভূতের ভয় মনে না করে পাড়াগাঁয়ের কোন মানুষের সাথে সামনের দিকে এগিয়ে যেত তাহলে শশুরের মানুষটার এত কষ্ট হতো না। সে মানুষটা তো দূর গ্রাম থেকেই আত্মীয়তা বজায় রাখতে, দেখা করতে আসছিল। আজ তিনি প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার, পাশাপাশি আত্মীয়দের অবহেলার শিকার। অতঃপর জামাই মেয়ে তার কাছে মাফ চেয়ে নিল। তখন মেয়ের বাবা বলল আমারই ভুল হয়েছে বিকেল মুহুর্তে বের হয়ে কিন্তু মন মানছিল না। বারবার শুধু মনে পড়ছিল আমার মেয়ে এটা খেতে পছন্দ করে ওটা খেতে পছন্দ করে, তাই হাট থেকে কিনে মেয়ের বাড়িতে যাব। মেয়েকে নিজে হাতে খাইয়ে দেবো। মাঝে মাঝে ভয় লাগে হয়তো কখনো আমি মরে যেতে পারি। তাই মেয়ের মুখটা একটু দেখে আসি আর নিজ হাতে তার প্রিয় খাবার খাওয়াবো। বাজার থেকে বৃদ্ধ লোকটা অনেক কিছু কিনেছিল কিন্তু পানি কাদাতে সব নষ্ট হয়ে গেছে। পাড়াগাঁয়ের একজন পয়সাওয়ালা মানুষ বৃদ্ধির কথায় মর্মাহত হল। এবং বললেন বাজার থেকে উনি যা কিনে এনেছিলেন সে সমস্ত জিনিসগুলো বেশি বেশি করে নিজ হাতে কিনে এনে তার বাবা মেয়ের হাতে তুলে দিবেন। এই নিয়ে যেন তারা আফসোস না করে। কারণ বৃদ্ধ বাবার শখ অবশ্যই পূরণ হবে। মহান ব্যক্তির কথা শুনে অনেকে খুশি হয়ে গেলেন।
পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ
বিষয় | অতীত ঘটনা |
---|---|
ফটোগ্রাফি ডিভাইস | Huawei P30 Pro-40mp |
ক্রেডিট | @jannatul01 |
দেশ | বাংলাদেশ |
ব্লগার | আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি |
আমার পরিচয়
আমার নাম মোছাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস শশী। আমার বাসা গাংনী মেহেরপুর, বাংলাদেশ। আমি আপনাদের সুপ্রিয় বিদ্যুৎ জিরো ওয়ান এর পরিবার। আমি একজন গৃহিণী। স্বামী সন্তান সহ আমাদের যৌথ পরিবার। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির চারজন সদস্য রয়েছে আমাদের পরিবারে, তার মধ্যে আমি একজন। এইচএসসি পাশ করার পর বিয়ে হওয়ার মধ্য দিয়ে আমার লেখাপড়া স্থগিত হয়। আমার ইচ্ছে আমি এই কমিউনিটিতে দীর্ঘদিন ব্লগ করব। পাশাপাশি আমার নিকটস্থ প্রিয়জনদের সহায়তা করব এই কমিউনিটিতে কাজ করার জন্য।
আসলে এই ঝড়ের রাতে গ্রামের মানুষেরা বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কার মেনে চলে। আসলে এতে তাদের কোন দোষ নেই। যাই হোক লোকটি বেঁচে আছেন এই পুরো ঝড়টিকে উপেক্ষা করে তাই কিন্তু আপনাদের জন্য অনেক সৌভাগ্য। যাই হোক যখন লেখাটি পড়েছিলাম তখন আমার গায়ের মধ্যে শিশিরে উঠছিল।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলে এমনটাই হওয়ার কথা
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
এরকম ঝড়-বৃষ্টির রাতে ঘরের ভিতরেই থাকা কষ্টকর হয়ে যায় তারপরে বৃদ্ধ লোক কত কষ্ট করে কত দূর থেকে এসেছে অথচ সবাই ভুতের ভয় মনে করে বাইরে বের হয়ে দেখতে পারেনি । আগেকার দিনে এরকম ভূতের কাহিনী অনেক শুনেছি আসলে ভুল বলতে বাস্তবে কিছু আছে কিনা জানিনা । তবে ভূতের ভয়তো আমাদের সব সময় থাকে। ভালো লাগলো আপু আপনার গল্পটি পড়ে । আর মানুষের বিপদ আপদে তো নিজেদের এগিয়ে আসতে হয় ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ভূত বলে কিছুই নেই তবে ভয় বলে আছে অনেক
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ভূত প্রেত বলে কিছু হয় কি জানিনা।তবে জ্বীন আছে।বৃদ্ধ লোকটি ঝড় উপেক্ষা করে অবশেষে বেচে ফিরেছেন এটাই অনেক।গল্পটি বেশ ভালো লাগলো,বৃদ্ধ লোকটি অনেকটা কষ্ট করে গিয়েছিলেন।ধন্যবাদ সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হ্যাঁ সেটাই
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আগের দিনে এমন অনেক ঘটনা ঘটত।আগের দিন মানুষ ঝড় বৃষ্টি হলে ঘর বন্ধি হয়ে বসে থাকতো। বৃদ্ধ লোকটি মেয়েকে দেখতে এসে এমন বিপদে পড়েছিল।অন্ধকারের জন্য তিনি রাস্তা চিনতে পারেনি।তাই নাম ধরে ডেকেছিল। কিন্তু ভূতের ভয়ে কেউ সারা দেয় নি।অবশেষে তিনি বেঁচে ছিলেন জেনে ভালো লাগলো।ধন্যবাদ আপু পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনি ঠিক বলেছেন
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit