স্মৃতির পাতা থেকে: চাল কুমড়ার খোসার নৌকা

in hive-129948 •  16 days ago 


আসসালামু আলাইকুম
আমার বাংলা ব্লগে সকলকে স্বাগতম


Picsart_24-11-25_22-53-29-674.jpg

Photography device: Infinix


গল্প


শীতকাল আসলে চাল কুমড়ার বড়ি তৈরি করা শুরু হয় গ্রামগঞ্জে। শীতের সময় নতুন কলায়ের ডাল উঠে। মা চাচিদের সাথে ছোট থেকে আমিও কুমড়ার বড়ি দেওয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়ি। কবে কখন কিভাবে এই কুমড়ার বড়ি তৈরি করা শিখেছি মনে নাই। তবে ছোট থেকে প্রত্যেক বছর এখন পর্যন্ত অনেক অনেক কুমড়ার বড়ি দেওয়া হয়। ঠিক সময় উপযোগী একটা ঘটনা মনে পড়ল তাই আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। আমি তখন অনেক ছোট ছিলাম। আমার মা চাচীরা অনেকজন। সবাই মিলে কুমড়ার বড়ি তৈরি করার জন্য একসাথে বসে চাল কুমড়ো কুরে কুরে খোশাগুলো সাইডে রেখে দিচ্ছে। এই মুহূর্তে আমি এবং আমার চাচাতো ছোট ছোট ভাইবোনেরা সেই কুমড়ার খোসাই দড়ি বেঁধে নৌকা বানিয়ে ধুলার উপর দিয়ে টানা শুরু করলাম।

আর এভাবেই কুমড়ার খোসা দিয়ে নৌকা বানিয়ে খেলাধুলা শুরু করে দিয়েছি। আমরা যে যার মত বড় বড় খোসাগুলো নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। আমার মনে পড়ে আমি তিন থেকে চারটা পেয়েছিলাম। অন্যান্যরাও ঠিক এভাবে একাধিক খোসা সংরক্ষণ করেছিল। এরপর আমরা ঘর থেকে দড়ি সংরক্ষণ করে নিয়ে এসে তার সাথে বাধি। এবার খেলার জন্য যেখানে অনেক ধুলাবালি রয়েছে সবাই সেই জায়গায় উপস্থিত হই। কুমড়ার খোসা বুঝতে পারছেন ভেতরে অনেক ফাঁকা জায়গা। আমরা ইচ্ছে মত বালি আর ধুলি ভর্তি করেছি। আমরা কেউ তো কারোর তা কারো হাতে দেবো না। আমি চারটা খোসাই বালি একসাথে ভর্তি করে দুই হাত দিয়ে ধরে টানতেছি। আমার সাথের চাচাতো ভাইবোনরাও ঠিক একইভাবে খেলছে। আমার ইচ্ছে ছিল সেগুলো টানতে টানতে নিয়ে এসে মা চাচীরা যেখানে কুমড়ার বড়ি তৈরি করছে সেই জায়গায় এসে উপস্থিত হব। আর আমরা যেখান থেকে ধুলি বালি ভর্তি করেছিলাম সেটা ছিল আমাদের গেটের বাইরে একদম রাস্তার পাশে।

এবার যে যার মত দ্রুত চাল কুমড়ার খোসা ভর্তি করে বাড়ির দিকে আসা যায়। আমার হাতের চারটা ছিল এইজন্য টানা আমার জন্য বেশ কঠিন হয়েছিল। আরেকদিকে ভয় ছিল উল্টে গেলে ধুলি বালি পড়ে যাবে। তাই আমি একটু ধীরে ধীরে টানতে টানতে হাত ছিলাম। কতটা মনে আনন্দ আর ভালো লাগা নিয়ে খেলছিলাম আমরা সবাই। ঠিক এমন মুহূর্তে হঠাৎ পাড়ার একটি বড় গরু দড়ি থেকে খসে বের হয়ে পড়েছে রাস্তার দিকে। দূর থেকে দেখতে পারলাম সেই গরুটা আমাদের দিকে আসছে। আমাদের সবার তো ভয়ে গলা শুকিয়ে গেল। এই মুহূর্তে চাল কুমড়ার খোসার নৌকা থেকে ধুলিবালি ফেলে দেবো নাকি করব বুঝতে পারলাম না। গরুটা আনন্দের সাথে লাফাতে লাফাতে আমাদের দিকে চলে আসছে। যখন আমাদের নিকটে চলে আসা মতো হল। আমরা সবাই আমাদের চাল কুমড়ার ফসল নৌকা ফেলে দিয়ে দ্রুত আমাদের গেটের মধ্যে ঢুকে পড়লাম আর গেট ধরে টুকি মেরে দেখতে থাকলাম।

আমরা ততক্ষণে তাকিয়ে দেখতে থাকলাম গরুটা এমনই কান্ড করল লাফাতে লাফাতে এসে আমাদের সবার চাল কুমড়ার নৌকার উপরে তিড়িং বিড়িং করে নাচতে থাকল। ততক্ষণে আমাদের খুবই খারাপ লাগছিল। আমরা কত কষ্ট করে ধুলি বালি ভোরে বাড়ির দিকে আনছি। আর একটু হলে বাড়ির গেটের মধ্যে সবাই চলে আসব। কিন্তু তার আগেই গরুটা এসে আমাদের খেলাধুলা গুলো সব নষ্ট করে দিল। গরুতে এমন ভাবে আমাদের নৌকাগুলো ভেঙে দিল যেন মাটির সাথে সব ভেঙে ভেঙে পড়ে থাকলো, ধলি গুলো মাটির সাথে মিশে গেল। শুধু অবশিষ্ট হিসাবে আমাদের দড়িগুলো গরুর পায়ে পায়ে লেগে এদিকে ওদিকে পড়ে থাকলো। ততক্ষণে আমার মা চাচীরা সব জেনে ফেলেছে। তারা তাদের কাজ করছিল আর জোরে জোরে হাসাহাসি করছিল। তারা আমাদের ডেকে বলছিল এখানে আয় অনেকগুলো কুমড়ার খোসা হয়ে গেছে। অর্থাৎ ততক্ষণে আরো অনেকগুলো কুমড়া কুরা হয়েগেছে। দূর থেকে আমরা দেখে আবার দৌড়াতে দৌড়াতে গিয়ে যে যার মত কুমড়ার খোসা দখল করলাম। এরপর আবারো সেই দড়িগুলো এনে নতুন করে কুমড়ার খোসা দিয়ে নৌকা তৈরি করলাম।

PB8ro82ZpZP35bVGjGoE93K3E4U5KX8KtMBJ2rhmkyLqtRRZvVw9YH8hEBg7DJQKSJLWf7VJRhnjGRYSDmuGDMSHAPBRbiRis5HV4ATHTF7QvLHc.png


পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ



received_434859771523295.gif


পোস্ট এর বিবরণ


বিষয়গল্প
ফটোগ্রাফি ডিভাইসInfinix
Photo editingPicsArt app
ক্রেডিট@jannatul01
W3w locationsource
দেশবাংলাদেশ
ব্লগারআমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি


আমার পরিচয়


আমার নাম মোছাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস শশী। আমার বাসা গাংনী মেহেরপুর, বাংলাদেশ। আমি আপনাদের সুপ্রিয় বিদ্যুৎ জিরো ওয়ান এর পরিবার। আমি একজন গৃহিণী। স্বামী সন্তান সহ আমাদের যৌথ পরিবার। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির চারজন সদস্য রয়েছে আমাদের পরিবারে, তার মধ্যে আমি একজন। এইচএসসি পাশ করার পর বিয়ে হওয়ার মধ্য দিয়ে আমার লেখাপড়া স্থগিত হয়। আমার ইচ্ছে আমি এই কমিউনিটিতে দীর্ঘদিন ব্লগ করব। পাশাপাশি আমার নিকটস্থ প্রিয়জনদের সহায়তা করব এই কমিউনিটিতে কাজ করার জন্য।


2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif



99pyU5Ga1kwqSXWA2evTexn6YzPHotJF8R85JZsErvtTWXkFkcDg5ibdZCen8p3uDxVoV5q1NZLwPPeBug1jepgK3e2Zdtv5gFKAP1J8S7nez1ced4GsXM4bVpnBb88Np6.png


Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আজকের কাজ সম্পন্ন

Screenshot_20241125_231618.jpg

Screenshot_20241125_231751.jpg

Screenshot_20241125_231910.jpg

ছোটবেলায় আমরাও খেলেছি। আমরা যে সময় খেলতাম সেই সময় আমাদের গ্রামের রাস্তা ফাঁকা হয়েছিল না। আমারা রাস্তায় রাস্তায় টেনে বেড়াতাম। অনেকদিন পর সুন্দর স্মৃতি মনে হল পোস্ট করে।

জেনে অনেক খুশি হলাম ভাইয়া।

আহা রে, নৌকাগুলো শেষে গরুতে সব ধুলিস্যাৎ করে দিল! ইশ ভেবেই কষ্ট হচ্ছে৷

এমন অনেক খেলাই আমরা খেলতাম ছোট বেলায় যা বড় হওয়ার পর খুব মিস করি। বড় কিছু খেলনা হয়তো আমাদের সময় ছিল না কিন্তু এইগুলোর অনাবিল আনন্দের কোন দোসর নেই৷ ছিলও না৷

হ্যাঁ আপু অনেক আনন্দ করতাম এই সমস্ত খেলনা নিয়ে।