ভূতের গল্প
তখন গ্রামে ঘরবাড়ি খুব কম ছিল। হাট বাজার কম বস্তু আশেপাশে। আমার দাদা শশুর আমাদের গ্রাম থেকে পায়ে হেঁটে ৮ কিলো দূরে হাট বোয়ালিয়াতে হাট করতে যেত। ঠিক তেমনি একদিন বর্ষার সময় ঘন কালো আঁধার রাতে বাজার করে বাড়ি ফিরছে। বাজারের ব্যাগ তার ঘাড়ে ছিল। ব্যাগের মধ্যে বেশ প্রয়োজনীয় অনেক কিছু কেনাকাটা করছে পাশাপাশি মাছ ছিল। হাট বোয়ালিয়া থেকে হাঁটতে হাঁটতে রাত হয়ে গেছে। বর্ষার সময় রাস্তাঘাট কাঁচা কাদায় পরিপূর্ণ। বুঝতে পারছেন তাহলে কতটা কষ্ট করে উনি কাঁধে ব্যগ বহন করে বাড়ি ফিরছেন। যা শুনেছিলাম এশার আজান পার হয়ে আরও দেড় দুই ঘন্টা হবে অর্থাৎ বলতে গেলে প্রায় নয়টা দশটায় এমন টাইম। আসতে আসতে আমাদের গ্রামে একটা বড় বাঁশ বাগান ছিল। বর্তমান যেখানে পার্ক হয়েছে তার অপজিট পাশে। এখন তো ঘনবসতি, তখন ঘরবাড়ি ছিল না। এখনো সেই জায়গায় ঘর বাড়ি খুবই কম রয়েছে যেহেতু একজন ব্যক্তির জমি জায়গা।
তবে সেই বাঁশ বাগানের পূর্বেই ছিল দাস ব্যক্তিদের মাটির ঘর, এরপর দীর্ঘ পথ কোন ঘরবাড়ি ছিল না, বাঁশ বাগান পার হলে আমাদের গ্রামের স্কুল পাড়ায় কয়েকটা ঘরবাড়ি। দাদার হাতে কোন আলো জ্বালানোর জিনিস ছিল না। শুধু উনি বিড়ি টানতেন তাই ম্যাচ ছিল কাছে। কিন্তু বর্ষার দিনে ম্যাচ নষ্ট হয়ে গেছে এমনটা শুনেছি। যাইহোক দাসদের বাড়ি পার হয়ে এসেই বাঁশ বাগানের নিচ দিয়ে পথ চলতে অন্ধকারে কিছুই ভালো করে দেখতে পাচ্ছেন না উনি। শুধু চলাচলের পথ তাই অনুমানস্বরূপ ঝাপসা যা বুঝতে পারছেন সেভাবেই বাগানের নিচ দিয়ে চলে আসছেন। পায়ের নিচে পানি কাদা। উনি আসতে আসতে হঠাৎ দেখলেন চোখের সামনে একটি বাঁশ রাস্তার উপর দিয়ে এক পাশ থেকে আরেক পাশে সাঁটিয়ে পড়ে গেল বিকট শব্দ হয়ে। হঠাৎ দাদা চমকিয়ে গেলেন। এরপর উনি অনুমান করতে পারলেন যেহেতু বর্ষার দিন হয়তো জিন ভুত পেতে সমস্যা। উনি আর বাস ক্রস করলেন না। নিজেকে নিয়ন্ত্রণে আনলেন। লক্ষ্য করলেন বাসটা শুধু চোখের সামনে পড়ে কাঁপছে। কারণ একটি গাছ যদি হঠাৎ চোখের সামনে পড়ে সে তো কাঁপবে না। আর বাঁশঝাড় থেকে বাস বিনা বাতাসে হঠাৎ করে চোখের সামনে পড়ে যাবে এটা কোন কথা।
আগের সময় নাকি জিন ভুতে এভাবেই রাস্তার উপর বাঁশ ফেলে দিত ঝাড় থেকে। কেউ যদি নিচ দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করত সে বাঁশ তাকে চাপা দিয়ে মাটির সাথে ঠেসে ধরতো মেরে ফেলত। কেউ যদি উপর দিয়ে পার হতে যেত তাদের কে নাকি বাঁশের ঝাড়ের উঠিয়ে ফেলত। আর এমন ঘটনা আমার দাদার জানা ছিল। আজকার সময় এমন ঘটনা প্রায় ঘরে থাকতো। তাই মনের মধ্যে সাহস আনার চেষ্টা করলেন উনি। উনি বুঝতে পারলেন আমার ব্যাগের মধ্যে মাছ রয়েছে রাত করে মাছ নিয়ে এভাবে আসাটা ঠিক হয়নি।
আশেপাশে কোন লোকজন নেই। চিৎকার চেঁচামেচি করতে পারছেন না। নিজেকে বেশ শক্ত করে কন্ট্রোল করলেন দাদা। এরপর পিছু হেঁটে আসলেন। যেখানে কাদার মধ্যে আমরা ঘর থেকে রাস্তায় যেতে পারি না সেখানে দীর্ঘ এই পথে তার চলাচল এবং এই অবস্থা হওয়া। কতটা ভয়ংকর আর আতঙ্কের তাহলে বুঝতে পারছেন। দাদা পিছু হাঁটা শুরু করলেন ধীরে ধীরে, কারণ ভয় পেয়ে দৌড়াতে নাই। দৌড়ালে নিজের মধ্যে আরও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এরপর মনবল রেখে হাঁটতে হাঁটতে দাস বাড়িতে চলে আসলেন। দাস বাড়ির এক ব্যক্তির নাম ছিল মন-মতন। দাদা মন-মতনদের বাড়িতে এসে ডাকা শুরু করলেন। ততক্ষণে ওনারা ঘুমিয়ে পড়েছে। উনি ঘরের মধ্য থেকে জানতে চাইলেন কে ডাকছে, দাদা বললেন আমি। কিছুক্ষণ পর হারিকেন জ্বালিয়ে বাইরে আসলেন মন-মতন। যদি দাদা না হয়ে ভূত হতো তাহলে হারিকেনের আলো দেখে ভয়ে পালিয়ে যে। তখন উনি নিশ্চিত হলেন আমার দাদা।
এরপর দাদা মন-মতনকে বিস্তারিত খুলে বললেন। দাদার কাছে বাজার করা ব্যাগের মধ্যে মাছ রয়েছে সেটাও জানালেন। তখন মন-মতন হারিকেন হাতে দাদাকে এগিয়ে নিয়ে আসলো বাঁশ বাগানের দিকে। আর বলল আপনি বুদ্ধিমানের কাজ করেছেন বাঁশ পার না করে। ওই মুহূর্তে উনিও দাদার কাছে এমন ঘটনা অনেকগুলো খুলে বলতে থাকলেন। দাদা বললেন রাত করে এসব গল্প বাদ রাখো ভাই। কোনরকম বাড়ি পৌঁছে যেতে পারলে জানে বাচি। এখানে বাঁশবাগান এরপরে পথে নাকি রয়েছে আরও বড় বন জঙ্গল ওয়ালা বিভিন্ন গাছের বাগান। তবে মন-মতন দাস দাদার সাথে ঘটনাস্থল পর্যন্ত আসলো। সেখানে এসে কোন কিছুই পেল না। দেখলো উপরের বাঁশ যেমন ছিল তেমনি আছে। তবে কি ভয়ানক ঘন অন্ধকার কোনো মানুষজন নেই। যেন দুজনার গায় শিউরিয়ে উঠছে। এরপর উনি দাদাকে আরো কিছুটা পথ এগিয়ে দিলেন। তারপর দাদার গা হারিকেন দিয়ে তাতিয়ে দিলেন। এরপর কিছুটা সময় ধরে উনি হারিকেন হাতে জায়গা মত দাঁড়িয়েই থাকলেন যতদূর আলো লক্ষ্য করা যায়। তারপর দাদা সে অন্ধকার দিয়ে আস্তে আস্তে হাঁটতে হাঁটতে এদিকে ফলের বাগান পেরিয়ে বাড়ির দিকে চলে আসলেন। ইতোমধ্যে দাদীরা দাদার জন্য টেনশন করছিল, পথের মধ্যে কোন বিপদ হলো নাকি, চোর ডাকাতে মেরে ফেললো নাকি। যায়হোক দাদা বাড়িতে এসে কলসির পানিতে হাত পা ধুয়ে তারপর বিস্তারিত জানালো। এরপর থেকে সাবধান হয়ে গেল। তারপর অনেক মানুষকে এই বিষয়টা জানিয়ে সচেতন করলো।
পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ
বিষয় | অতীত ঘটনা |
---|---|
ফটোগ্রাফি ডিভাইস | Huawei P30 Pro-40mp |
ক্রেডিট | @jannatul01 |
দেশ | বাংলাদেশ |
ব্লগার | আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি |
আমার পরিচয়
আমার নাম মোছাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস শশী। আমার বাসা গাংনী মেহেরপুর, বাংলাদেশ। আমি আপনাদের সুপ্রিয় বিদ্যুৎ জিরো ওয়ান এর পরিবার। আমি একজন গৃহিণী। স্বামী সন্তান সহ আমাদের যৌথ পরিবার। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির চারজন সদস্য রয়েছে আমাদের পরিবারে, তার মধ্যে আমি একজন। এইচএসসি পাশ করার পর বিয়ে হওয়ার মধ্য দিয়ে আমার লেখাপড়া স্থগিত হয়। আমার ইচ্ছে আমি এই কমিউনিটিতে দীর্ঘদিন ব্লগ করব। পাশাপাশি আমার নিকটস্থ প্রিয়জনদের সহায়তা করব এই কমিউনিটিতে কাজ করার জন্য।