শৈশবের স্মৃতি ভুলা যায় না || ব্যাঙের ছাতা

in hive-129948 •  last month 


আসসালামু আলাইকুম
আমার বাংলা ব্লগে সকলকে স্বাগতম

জেনারেল রাইটিং: মাশরুম


কেমন আছেন আপনারা? আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার সহায়তায় ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিকে ভালোবেসে উপস্থিত হলাম সুন্দর একটি পোস্ট উপস্থাপন করার জন্য। আজকে আমি আপনাদের মাঝে তুলে ধরবো বেশ কিছু মাশরুমের ফটোগ্রাফি। একই মাশরুম কে খুব সুন্দর ভাবে ফটো ধারণ করার চেষ্টা করেছিলাম। আশা করবো আমার এই ফটোগুলো আপনাদের ভালো লাগবে।

IMG_20240705_185201_998.jpg

Photography device: Infinix hot 11s-50mp


ব্যাঙের ছাতা বা মাশরুম। ছোটবেলায় আমরা এক নামেই জানতাম এই জিনিসগুলোকে। তাই মনের মধ্যে কতই কৌতুহল ছিল আমাদের। বর্ষার সময় আসলেই বেশি লক্ষ্য করতাম এই জাতীয় ব্যাঙের ছাতা বাড়ির এখানে সেখানে হয়ে উঠেছে। কখন কিভাবে হয় সেটা জানিনা। শুধু এটাই জানতাম বর্ষার সময় বৃষ্টির পানি পুকুরে ভর্তি হয়ে যায়। তাই পুকুরের মধ্যে ব্যাঙের ঘরগুলো ডুবে যাই বলেই ব্যাঙগুলো উপরে চলে আসে। আর তারা তাদের সুবিধামতো এভাবে ছাতা তৈরি করে সেখানে আশ্রয় গ্রহণ করে। কিন্তু কোনদিন দেখি নাই এর নিচে ব্যাঙ বসে থাকতে। ছোট মনের ছোট ছোট কতই প্রশ্ন জমে থাকতো। অনেকে বলাবলি করতাম দিনের বেলায় মানুষের ভয়ে তারা ছাতার নিচে বসে থাকে না। সুযোগ পেলে রাতের বেলায় এসে এর নিচে বসে থাকে। সন্ধ্যার পর প্রায় লক্ষ্য করতাম বড় বড় ব্যাংক মাটির উপরে লাফিয়ে বেড়াচ্ছে। তাই বিশ্বাস করে নিতাম হয়তো একথাই সত্য। তবে অনেক চেষ্টা করে দেখেছি এর নিচে ব্যাঙ বসে থাকে কিনা। কিন্তু কখনোই চোখে বাঁধলো না। আর ঠিক এমন আশা নিয়ে দীর্ঘ কয়েক বছর তাকিয়ে থেকেছি কারণ তখন তো ছিলাম অনেক ছোট এবং জ্ঞান সম্পন্ন নয়।

IMG_20240705_185258_023.jpg


যখন আমরা এগুলো ধরতে যেতাম। অনেক বড়রা রয়েছে মানা করতো। বলতো ব্যাঙের বিষ লাগবে। আবার আমাদের মধ্যে থাকা কয়েকজন দুষ্টু বন্ধুরা এগুলো ছিড়ে ফেলতো, লাথি মেরে ভেঙে ফেলত। আমি ছোট থেকেই কোন কিছু অপচয় পছন্দ করি না আবার নষ্ট করা পছন্দ করি না। ভয়তে ভয়তে তাদেরকে বলতাম, ব্যাঙের ঘর ভেঙে দিলে কিন্তু তারা অভিশাপ দিবে। এতে তোদেরও ঘরবাড়ি ভেঙে যাবে। তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে দিলে পাপ হবে। ছোট মনে কত কিছু ভয় ভিত্তি আসতো। মাঝে মাঝে আমাদের ঘরের মেঝেতে এ জাতীয় ব্যাঙের ছাতা হতে দেখতাম। তখন মনের মধ্যে চিন্তা আসতো পুকুরের ব্যাঙ আমাদের ঘরে এসেছে নাকি। কারণ বর্ষার সময় প্রায় লক্ষ্য করে দেখেছি ঘরের মেঝেতে এই জাতীয় ছাতা বের হতে। আমরা বন্ধুরা মিলেই বলাবলি করতাম মনে হয় রাত্রে বেলায় কুনো ব্যাঙগুলো এভাবে তাদের ঘর তৈরি করে। তবে চিন্তাভাবনা থাকতো একটাই। পুকুরের কোলা ব্যাঙগুলোর না হয় ঘর ডুবে যায় তাই তারা উপরে ব্যাঙের ছাতা তৈরি করে আশ্রয় নিয়ে থাকে কিন্তু ঘরে থাকা কুনো ব্যাঙগুলোর তো সমস্যা নেই, তারা কেন ছাতা তৈরি করে। অনেকেই বলাবলি করতাম হয়তো তাদের দেখাদেখি এরাও ছাতা তৈরি করছে। আবার অনেকেই বলতো বর্ষার সময় তারা বাচ্চা তোলে তো,তাই ছাতা তৈরি করে বাচ্চাদের থাকার ব্যবস্থা করে।

IMG_20240705_185239_903.jpg


মনে মনে ভাবতাম এ কথা হয়তো সত্য। ব্যাঙের বাচ্চা গুলোকে রেখে বড়রা হয়তো চড়াই করতে যায়। তাই নির্দিষ্ট একটি জায়গা তৈরি করে দিয়ে যায় তার বাচ্চারা যেন এর নিচে বসে থাকে। তারা যেন এসে তাদের বাচ্চাদের খুঁজে পায় ছাতার নিচে বসে আছে। কিন্তু আবারো কনফিউশন শুরু হয়ে যেত। বাচ্চারা যদি ছাতার নিচে আশ্রয় নিয়ে থাকবে তাহলে কউ ছাতার নিচে কখনো তো বাচ্চাদের দেখিনা? আসলে এই ব্যাঙে এই ছাতা তৈরি করে কখন? আমাদের মধ্যে থাকা কয়েকজন পন্ডিত আবার বলে বসতো মাটির নিচ থেকে তারা ছাতা তৈরি করে তারা ছাতার মাটির নিচে অবস্থান করে। লে হালুয়া! কত না সুন্দর গবেষক থাকতো আমাদের মাঝে। আজ যে যার মত বিয়ে হয়ে কোথায় চলে গেছে, আগের মত আর দেখা হয় না। আগের মত সারাদিনের খেলাধুলার কথা তো দূরেই থাক চোখের দেখাটা হয়না বছরে বছরে। হারিয়ে ফেলেছি সেই ছোটবেলার অবুঝ মনের ভাষা, অকথ্য কত কথা, অবুঝের মত বকবক করা, শৈশবের আনন্দঘন মুহূর্ত। ইদানিং শুনছি সাথে খেলাধুলা করা অনেক বন্ধু-বান্ধবীর বিভিন্ন রোগে ধরে গেছে। অনেকের জীবন যুদ্ধে এমনভাবে পদার্পণ করেছে ইচ্ছে থাকলেও একজন আরেকজনের সাথে দেখা করার সুযোগ পায় না। কিন্তু আজও আগের মত ব্যাঙের ছাতা চোখে পড়ে। সে অবুঝ মনের চিন্তাভাবনা হঠাৎ মনের মধ্যে ভেসে আসে। কখন কোথায় খেলতে খেলতে একসাথে কত কথা বলাবলি করতাম, শুধু মনে পড়ে সেগুলো কিন্তু সেভাবে আর চোখে ভাসে না। তবে আগের মতো ব্যাঙের ছাতা এখনো বিভিন্ন রূপে চোখে বাদে বর্ষার সময়।

IMG_20240705_185218_702.jpg


অতঃপর যখন বড় হতে থাকলাম তখন জানতে পারলাম এগুলো ব্যাঙের ছাতা নয়। ছোটবেলায় যে ধারণা করতাম যা ভাবতাম পুরোটাই ভুল। তবুও সেই ভুল ধারণা ভুল ভাবার মধ্যে ছিল আগাধ আনন্দ, সীমাহীন মনের খুশি। যে ভালোলাগা লাখ টাকা দিয়েও কেনা যায় না। হয়তো বিভিন্ন আবর্জনা থেকে এর সৃষ্টি হয়। গাছের কাঠ পাতা ইত্যাদি মাটির নিচে থেকে পোঁচে গিয়ে সেখান থেকে এগুলো উৎপন্ন হয়। আবার অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে। মোটামুটি এই সম্পর্কে ক্লিয়ার হয়েছি এগুলো ব্যাঙে ছাতা নয়। তবে যদি সেই সময় এই বিষয়ে ধারণা পেতাম, তাহলে অবশ্যই যে আগে জানত সে বন্ধুদের মাঝে ডাটের সাথে বলার চেষ্টা করত। কারণ ছোটবেলায় আমরা যে বিষয়টা জানতাম সেগুলো আনন্দের সাথে বলে বড় হওয়ার চেষ্টা করতাম। কোথায় হারিয়ে ফেলেছি সেই ফিলিংস। হারিয়ে গেছে সোনালী দিনগুলো। পড়ে রয়েছে স্মৃতির পাতায়, মনে হলেই হয় শুধু আফসোস!

IMG_20240705_185204_017.jpg


PB8ro82ZpZP35bVGjGoE93K3E4U5KX8KtMBJ2rhmkyLqtRRZvVw9YH8hEBg7DJQKSJLWf7VJRhnjGRYSDmuGDMSHAPBRbiRis5HV4ATHTF7QvLHc.png


ডিভাইসInfinix Hot 11s
বিষয়ব্যাঙের ছাতা
লোকেশনগাংনী- মেহেরপুর
ক্রেডিট@jannatul01
দেশবাংলাদেশ ‌


পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

received_434859771523295.gif


আমার পরিচয়

আমার নাম মোছাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস শশী। আমার বাসা গাংনী মেহেরপুর, বাংলাদেশ। আমি আপনাদের সুপ্রিয় বিদ্যুৎ জিরো ওয়ান এর পরিবার। আমি একজন গৃহিণী। স্বামী সন্তান সহ আমাদের যৌথ পরিবার। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির চারজন সদস্য রয়েছে আমাদের পরিবারে, তার মধ্যে আমি একজন। এইচএসসি পাশ করার পর বিয়ে হওয়ার মধ্য দিয়ে আমার লেখাপড়া স্থগিত হয়। আমার ইচ্ছে আমি এই কমিউনিটিতে দীর্ঘদিন ব্লগ করব। পাশাপাশি আমার নিকটস্থ প্রিয়জনদের সহায়তা করব এই কমিউনিটিতে কাজ করার জন্য।


2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif

6VvuHGsoU2QBt9MXeXNdDuyd4Bmd63j7zJymDTWgdcJjo1NfxyQcRUrHnbvGAuDxuMioMRjoG74XpZyTRDsUp566Bu2ZZHRsryAWmeAqnTe9T6zT4X1bZ8DTXHHYrr.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আপনার মত আমরাও ভাবতাম আপু যখন বৃষ্টি হয় আর পুকুর ডুবে যায় তখন ব্যাঙ এই ছাতা বা মাশরুমের নিচে আশ্রয় নিতো। কিন্তু সত্যি কথা বলতে আমিও কোনদিনও এই ছাতার নিচে ব্যাঙ দেখি নাই। ছোটবেলায় ব্যাঙের ছাতা নিয়ে অনেক খেলাধুলা করেছেন সেই বিষয়ে অনেক সুন্দর একটি পোস্ট আজকে শেয়ার করছেন। আপনার সম্পূর্ণ পোস্ট করে খুবই ভালো লাগলো আপু ধন্যবাদ।

আমার কিন্তু কনফিউশন হতো ব্যাঙ কেন দেখি না ছাতার নিচে।

ব্যাঙের ছাতা বা ব্যাঙ্গাচি ছোটবেলার কৌতূহল ও ভালো লাগার একটা জিনিস ছিলো।আপনার ব্যাঙের ছাতালে নিয়ে ভাবনা গুলোর সাথে আমার ভাবনা মিলে গেছে।আমার মনে হয় এই কথা গুলো সবার কথা সবাই ছোটবেলায় এরকমই ভাবতেন ব্যাঙের ছাতা নিয়ে। ধন্যবাদ আপু সুন্দর পোস্ট টি ভাগ করে নেয়ার জন্য।

একদম ঠিক বলেছেন আপু।

আপু আপনি শৈশবের সেই স্মৃতি কথা থেকে একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন দেখে ভালো লাগলো। আসলে এগুলো দেখলেই সে ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায়। তাছাড়া সে সময় এগুলো দেখে আমরা অনেকটা আনন্দ পেতাম। সেই সাথেই ব্যাঙের ছাতা দিয়ে অনেক খেলা খেলেছি। যা আজকে আপনার পোস্ট দেখে মনে হয়ে গেল। ধন্যবাদ আপু সেই শৈশবের স্মৃতি আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য ।

ধন্যবাদ ভাই, বেশ সুন্দর মন্তব্য করেছেন।