ভয়ংকর গল্প
আমার দাদার বন্ধুর জীবনে ঘটে যাওয়া একটি ঘটে। দাদার বন্ধুর নাম শাহিন। সে খুব চালাক চতুর ও ভালো ছিল। শাহিনের বাড়ির পাশে ছিল একটি পুরাতন বটগাছ। একটু সন্ধ্যা হলেই তারা কেউ সেই বটগাছের কাছে যেত না। কারণ অনেকেই বলাবলি করত এই বটগাছটা ভয়ানক এবং ক্ষতিকারক। রাত হলে নাকি এই বটগাছের বিভিন্ন শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। অনেকেই ধারণা করে জিন পরীরা এই গাছে বিভিন্ন শব্দ করে থাকে। বট গাছের পাশ দিয়ে গ্রামের মাটির রাস্তা। একটু সন্ধ্যা হলেই এই রাস্তা দিয়ে মানুষ চলাচল কমে যেত। যে মানুষের চলাচল করতে যেত সাহস করে, কালো বিড়াল দেখতে পারতো এবং সেই বিড়াল মানুষদের পান চোখ রাঙিয়ে তাকাতো, আচমকা বিকট শব্দ করে উঠতো। এরপরেও যদি কেউ সাহস করে পাশ দিয়ে চলে যেত তার কোন ক্ষতি করত না। তবে রাত হলে কেউ যাওয়া আসার চিন্তা করত না। আর কেউ যদি সেই বিড়ালের পান হাত তুলতো মারার উদ্দেশ্যে, তারা যে কোন প্রকার একটা ক্ষতি করে বসতো, হয় উপস্থিত না হয় অন্য কোন মুহূর্তে।
ঠিক এমনই একটা দিনের ঘটনা। সেই শাহীন একদিন সন্ধ্যাবেলায় বটগাছটার পাশ দিয়ে বাড়িতে যাচ্ছেন। হঠাৎ তার চোখের সামনে বাধলো কালো বিড়াল। দুইটা কালো বিড়াল খেলা করছে। সে বিড়াল দুইটার খেলা করা দেখে না বুঝে না শুনে ঢেলা মেরেছে। এরপর বিড়াল দুইটা তার পানে আক্রমণ করবে এমন দৃষ্টিতে তাকিয়ে এগিয়ে আসতে থাকলো। সে স্বাভাবিকভাবে ভেবেছিল পাড়াগাঁয়ের বিড়াল। কারণ বটগাছ ছেড়ে বেশ তাদের বাড়ির নিকটেই খেলছিল বিড়াল দুইটা। এরপর সে একটি লাঠি দিয়ে বিড়ালের আঘাত করতে যায়। অতঃপর বিড়াল দুইটা গর্জন করতে করতে বটগাছ পানে দোড় দিয়ে হারিয়ে গেল। সে শুধু এতোটুকুই লক্ষ্য করল বটগাছের গোড়ায় গিয়ে বিড়াল দুইটা উধাও হয়ে গেল। এদিকে সেদিকে কোন দিকেই আর লক্ষ্য করল না। এই বিষয়টা সে খুব স্বাভাবিকভাবে সাধারণ মাইন্ডে নিয়েছিল। তাই বাড়িতে কাউকে এ বিষয়ে বলার প্রয়োজন মনে করে নাই। যদিও তার বয়স খুবই কম ছিল তবে বুদ্ধি জ্ঞান হয়েছিল। সম্ভবত ক্লাস থ্রি ফোর এর স্টুডেন্ট শাহিন দাদু।
এরপর ফজরের আজান হওয়ার পূর্বেই তার ঘুম ভেঙে যায়। অন্যান্য দিনের মতো সে ঘুম থেকে উঠে। ফ্রেশ হওয়ার জন্য বাইরে আসে। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে একটু পড়তে বসে এরপর আযান হলে নামাজ পড়ে। তবে ওই মুহূর্তে বাড়ির আশেপাশে কোন মানুষজনো ঘর থেকে এখনো বের হয়নি। বর্ষার সময় ফজরের আযানের মুহূর্ত, ঘন অন্ধকার। সেখানে বেশ তেমন কোনো ঘরবাড়ি নেই, আশেপাশে শুধু জঙ্গল। আর আগের মানুষ বেশিরভাগ বাড়ি থেকে দূরে টয়লেট তৈরি করতে অথবা বন জঙ্গলে যেত। ঠিক সেই দাদাদের টয়লেট টা ছিল বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে। তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে টয়লেটের দিকে যেতে হঠাৎ লক্ষ্য করে দেখে সেই কালো বিড়াল দুইটা। তারপানে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সন্ধ্যা রাতের মত বিড়াল দুইটাকে তাড়ানোর জন্য লাঠি খুঁজছে। কিন্তু বিড়াল দুইটা তার কাছ থেকে দূরে যাচ্ছে না। সে বদনা দেখে একটু আনমনা হয়ে লাঠি খুঁজতেই লক্ষ্য করে দেখে সে কেমন জানি শূন্যে উঠে যাচ্ছে। এরপর তার গা ছমছম করে উঠলো। জোরে চিৎকার করার চেষ্টা করল কিন্তু মুখ যে কোন শব্দ বের করতে পারলো না। যেন বাকশক্তি বন্ধ হয়ে গেছে। এরপর সে লক্ষ্য করল তার মাথার চুল কান হাত গলা গালের চামড়া কেউ জানি খামচিয়ে ধরে বটগাছের পান টেনে হিচড়ে উপরের তোলার চেষ্টা করছে। আর ঠিক এভাবে তাকেই হাচড়িয়ে বটগাছা টেনে তোলা হলো, এই মুহূর্তে সে প্রচন্ড ভয় বারবার অজ্ঞান হয়ে যেতে থাকলো।
সে প্রথমত খুবই চেষ্টা করেছিল ছুটে বাড়িতে পালিয়ে যাওয়ার কিন্তু পারিনি। গাছের মোটা মোটা ডাল বেয়ে যখন তাকে তোলা হয়েছিল সে খুব চেষ্টা করছিল ছিটকে যাওয়া, কিন্তু কিছুতেই পারেনি। সে শুধু লক্ষ্য করেছিল সে বিড়াল দুইটাকে। সন্ধ্যার সময় বিড়াল দুইটা যেভাবেই খেলা খেলছিল তাদের বাড়ির নিকটে সে বিড়াল দুইটা খেলা করছে গাছের নিচে। মাঝেমধ্যে বিড়াল দুইটা চোখে বাদছে মাঝেমধ্যে বাদছে না, শুধু বিড়ালের চোখ জ্বলে উঠছে। সে আরো অনুভব করতে পারছিল যে গেছে তাকে টেনে তোলা হচ্ছে সেই বটগাছের মধ্যে অনেক আলো আর ভয়ংকর কিছু কুৎসিত আকৃতির মানুষ। এমন সব কুৎসিত জিনিস দেখে সে ভয়ে যখন তখন অজ্ঞান হয়ে পড়ার মতো হয়ে যাচ্ছিল। পরবর্তীতে তার সাথে কি করা হয়েছিল সে আর বলতে পারেনা। বাড়ির লোকজন তাকে খোঁজ করে সে এত সকালে গেল কোথায়। সকালে একটু আকাশ পরিষ্কার হতেই লক্ষ্য করা গেল বট গাছের নিচে সে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে রয়েছে। শুধু এতটুকুই দেখা গেছে তার গায়ের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে হাচড়ানো দাগ। তাকে প্রচন্ড মারধর করা হয়েছে। তার চোখ মুখ সহ পিঠে অনেক মাইরের আঘাত চিহ্ন। বাড়িতে আনার পর তার মাথায় প্রচুর পরিমান পানি ঢেলে জ্ঞান ফেরানো হয়। অতঃপর তার মুখ থেকে বিস্তারিত সবকিছু জানতে পারে। পরবর্তীতে খুব অসুস্থ হয়েছিলেন। বিভিন্ন কবিরাজের মাধ্যমে ঝাড়ফুঁক করে পরবর্তীতে সুস্থ হন।
পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ
বিষয় | অতীত ঘটনা |
---|---|
ফটোগ্রাফি ডিভাইস | Infinix Hot 11s-50mp |
ক্রেডিট | @jannatul01 |
দেশ | বাংলাদেশ |
ব্লগার | আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি |
আমার পরিচয়
আমার নাম মোছাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস শশী। আমার বাসা গাংনী মেহেরপুর, বাংলাদেশ। আমি আপনাদের সুপ্রিয় বিদ্যুৎ জিরো ওয়ান এর পরিবার। আমি একজন গৃহিণী। স্বামী সন্তান সহ আমাদের যৌথ পরিবার। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির চারজন সদস্য রয়েছে আমাদের পরিবারে, তার মধ্যে আমি একজন। এইচএসসি পাশ করার পর বিয়ে হওয়ার মধ্য দিয়ে আমার লেখাপড়া স্থগিত হয়। আমার ইচ্ছে আমি এই কমিউনিটিতে দীর্ঘদিন ব্লগ করব। পাশাপাশি আমার নিকটস্থ প্রিয়জনদের সহায়তা করব এই কমিউনিটিতে কাজ করার জন্য।
আপু আপনি আজকে আমাদের মাঝে খুবই সুন্দর একটি ভয়ংকর গল্প শেয়ার করেছেন। আর এটা বাস্তবে ঘটে যাওয়া গল্প। আসলে আপু অনেক সময় এই বিড়াল গুলো হয়ে ওইসব খারাপ জিনিস গুলো আমাদের সামনে আসে। আপনার দাদা ফজরের নামাজ আদায় করার জন্য ভোররাতে ঘুম থেকে উঠেছিল এবং এর পরের দিনের টয়লেটে যাওয়ার সময় ওই বিড়াল দুটো আবার দেখতে পাই। তিনি বিড়াল গুলো তাড়ানোর চেষ্টা করেছিল এতে করে সে এই ভয়াবহের সম্মুখীন হয়েছিল। যাইহোক পরবর্তীতে কবিরাজের বাড়িতে গিয়ে তাকে সুস্থ করা হয়েছে বিষয়টা জানতে পেরে খুশি হলাম। ধন্যবাদ আপু পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
গল্পটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপু আপনার দাদার বন্ধুর সাথে খুবই ভয়ংকর ঘটনা ঘটেছে। আমার তো শুনেই ভয় লাগছে। এমন পরিস্থিতিতে পড়লে হয়তো আমি মরেই যেতাম। তবে শাহীন বিড়ালকে আঘাত না করলেই পারতো। বিনা কারণে কোনো প্রাণীকে আঘাত করা ঠিক নয়। সে যাই হোক না কেন। বিড়াল তাদের মতো খেলছিলো সে পাশ দিয়ে চলে আসতে পারতো। হয়তো তার সাথে এমন হবে বলেই আঘাত করেছিল। যাই হোক অবশেষে তিনি সুস্থ হয়েছেন জেনে ভালো লাগলো।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হ্যাঁ আপু এমন ঘটনা প্রায় শোনা যায়
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার দাদার বন্ধুর সাথে তো দেখছি অনেক ভয় আমাকে একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছিল। আগের দিনে এই ধরনের ঘটনাগুলো অনেক বেশি ঘটে থাকতো। আর এগুলো আগে অনেক বেশি শোনা যেতো। তবে উনার কোনো বড়সড়ো ক্ষতি করেনি শুনে একটু ভালো লেগেছে। ওই বিড়াল দুইটা অন্য কিছু হবে। তাইতো তারা চোখের পলকেই উধাও হয়ে যেতো। শেষ পর্যন্ত উনাকে সুস্থ করা গিয়েছে দেখে ভালো লাগলো।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ছোটবেলায় দাদাদের মুখে শুনতাম
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
এই ধরনের ভূতের গল্প গুলো শুনতে এবং পড়তে দুটোই আমি পছন্দ করি। আপনি তো দেখছি অনেক পুরনো একটা ঘটনা আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। যেটা খুব ভালো লাগলো। আপনার দাদার বন্ধুর সাথে ভয়ানক একটা ঘটনা ঘটেছে। যেটা পড়ার সময় আমি তো ভাবছিলাম উনার সাথে খারাপ কিছু ঘটে যায়নি তো। কিন্তু পরে বুঝতে পেরেছি বেশি কিছু হয়নি। শেষ পর্যন্ত তিনি ভালো এবং সুস্থ আছেন এটা দেখে ভালো লাগলো।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনি পছন্দ করেন কিন্তু লেখার সময় যেন নিজের মধ্যে কেমন ভয় লেগে ওঠে
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
এরকম পরিস্থিতিতে পড়লে নিজেকে সামলে রাখা সত্যিই অনেক কঠিন। সত্যি আপু আপনার লেখাগুলো পড়ে তো আমার নিজেরই কেমন জানি লাগছিল। মাঝে মাঝে আমরা অনেক অভিজ্ঞতার কথা শুনি এবং নতুন কিছু জানতে পারি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আগেকার মানুষের সাহস ছিল
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আজ আপনার পোস্টের মাধ্যমে ভংঙ্কর একটি ঘটনা জানতে পারলাম। আসলে আগের দিনে শুনেছি এইরকম অনেক ঘটনা ঘটতো। আর অনেক ভেশ ধরে অনেক কিছু ঘোরাঘুড়ি করতো। আমিও আমাদের পরিবারের মুখে শুনেছি যে, আগে আমরা যেখানে ছিলাম অনেক ভংঙ্কর জিনিস দেখা যেত। এমন কি অনেকের ক্ষতিও করেছে। যাইহোক আপনার দাদার ভাইয়ের কিছু হয়নি যেনে ভালো লাগলো।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হ্যাঁ আপু এই জাতীয় গল্পগুলো শুনতে আমারও ভালো লাগতো তাই শেয়ার করি
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit