গল্প
আমি তখন অনেক ছোট ছিলাম। আমার দাদু এক গল্প করছেন মাচায় বসে। তখন পাকিস্তান আমল। পাকিস্তানি মিলিটারিরা আমাদের এলাকায় ঘোরাঘুরি করতেন। এলাকার যে সমস্ত মানুষেরা একটু জমিদার, বেশি জমি জায়গা রয়েছে তাদের উপর নির্যাতন চালাতেন। ধনসম্পদ লুট করে নিতেন। তারা দেশের শাসন করার পাশাপাশি শোষণ করতেন গোপনে বা প্রকাশ্যে। জায়গায় জায়গায় তাদের ক্যাম্প তৈরি করেছিলেন। এলাকার মানুষদের শাসন করতেন। আর এভাবেই ভয়-ভীতি দেখিয়ে গ্রামের মানুষদেরকে নিয়ন্ত্রণে এবং অস্ত্রের ভয় রাখতেন। পাকিস্তানিরা ছিলেন পাঠান উচা লম্বা। তাদের পান তাকালেই নাকি ভয় লাগতো।
একদিন আমার আপন দাদু আমাদের বাড়ির কাজের এক লোকের মাধ্যমে বাজার থেকে বড় একটি ইলিশ মাছ কিনে পাঠিয়েছিলেন। আমাদের বাড়ির সেই কাজের মানুষটা মাছটা হাতে করে বামুন্দি বাজার থেকে পায়ে হেঁটে ভরাট গ্রামে দিকে অগ্রসর হয়েছেন। পথের মধ্যে বেশ কিছু কাঁচা রাস্তা পার হতে হয় মাঠ পার হতে হয়। তার মাঝখানেই রয়েছে এক স্থানে মিলিটারীদের ক্যাম। পথের মধ্যে এত বড় মাছ হাতে করে আনতে দেখে আমাদের সেই কাজের মানুষটাকে তারা দাঁড় করালেন। আমাদের কাজের মানুষটা খুবই সৎ সাহসী এবং ভালো মানুষ ছিলেন। তারা কিছুটা উর্দু এবং কিছুটা বাংলা ভাষায় তাকে প্রশ্ন করলেন এই মাছ কার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। উনি উত্তর দিলেন আমার দাদুর নাম বলে। ইতোমধ্যে তারা এলাকার জমিদার সম্পন্ন মানুষদের তালিকা করে ফেলেছেন। খুব সহজে চিনলেন আমার দাদুকে।
তারা বলল মাছটা আমাদের ক্যাম্পের রান্নাঘরে রেখে যাও। তখন আমাদের সেই কাজের মানুষটা বলেছিলেন আমি যদি এখানে রেখে যাই আমার গেরস্থ আমাকে ভুল ভাববে। তিনি বাজার থেকে মাছটা কিনে পাঠিয়েছেন আমি বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি। উনার ফিরতে দেরি হবে। জানো আগে থেকে রান্না করতে পারে। উনি এসে রাতে খেতে পারবেন। একটু সুন্দরভাবে কথাটা গুছিয়ে তিনি বলছিলেন তাদের কাছে। কিন্তু তারা কোন মতেই আমাদের কাজের লোকের কথা শুনলেন না। সজরে তার গালে একটি থাপ্পড় বসিয়ে দিয়েছিলেন। আর সেখানেই উনি মাথা ঘুরে পড়ে যান রাস্তার উপর। এরপরেও নাকি তার পিঠে পিছনে কয়েকটা লাথি মারেন তারা। আমাদের সেই কাজের মানুষটার একাধিক দাঁত ভেঙে যায়। পরবর্তীতে দীর্ঘদিন জ্বর এসে পড়ে থাকেন। এভাবেই তারা এলাকার মানুষকে শাসন দেখাতেন, যেন তাদের মুখের উপর কেউ কোন কথা বলতে না পারে। তারা যখন যেটাই বলবে তখন সেটাই যেন সবাই শুনে। এভাবে নাকি তারা আরও অনেক প্রকার খারাপ কাজ করতেন। মাঝেমধ্যে অনেক মানুষকে নির্যাতন করতেন। ক্যাম্পে আসা যে সমস্ত পাকিস্তানি মিলিটারি বা আর্মি ছিলেন তাদের অধিকাংশ এমন জানোয়ার।
আমাদের এলাকায় এককালে অতিরিক্ত চোর ডাকাত ছিল। অনেকেই এই সমস্ত মিলিটারিদের প্রশ্রয়ে খারাপ কাজ করতেন। বিশেষ করে জমিদার শ্রেণীর মানুষদের শোষণ করার সুযোগ তৈরি করে নিয়েছিলেন তারা। কিন্তু তাদের অত্যাচার এতটাই বেড়ে গেল এলাকার রাতবাহিনী আলোচনা করলেন কিভাবে এই মিলিটারিদের ধ্বংস করা যায়। কিন্তু তাতেও কোন ফল হলো না। তারা অনেক চেষ্টা করেছিল, বন্দুকের মুখে কেই বা যায়। শুনেছি এলাকার মধ্যে সবচেয়ে বড় একজন ডাকাত ছিলেন। সেই ডাকাতের স্ত্রী অনেক সুন্দর। উনি জোরপূর্বক সে মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন সুন্দরী বলে। ডাকাত সবার কাছে জোরদার থাকলেও বউয়ের কাছে ছিল মাথা নত। ডাকাতি করতো কিছুদিন কোথায় উধাও হয়ে যেত আবার বাড়ি ফিরত। একটা সময় জানতে পারলো মিলিটারীদের মধ্যে এক জানোয়ার তার স্ত্রীকে ক্ষতি করেছে। কথাটা শোনার পর সেই ডাকাতের মাথায় রক্ত চেপে বসলো। সে দুনিয়ার সবকিছু মেনে নিতে পারে কিন্তু এই বিষয়টা কোনভাবেই মানতে পারল না।
ডাকাতটা বড় একটি রামদা পিঠে কোমরে গুঁজে ক্যাম্পের দিকে অগ্রসর হয়েছিল। পথের মধ্যে বিভিন্ন সময়ের সেই মিলিটারিরা ব্যায়াম করতো ঘুরে বেড়াতো রাস্তাঘাট থেকে মানুষের অত্যাচার করে এটা সেটা নিয়ে নিত। ঠিক এমনই একটা মুহূর্তে ডাকাত তাদেরকে রাস্তায় দেখতে পান। মিলিটারিরা জানতো না কেউ তাদের ক্ষতি করবে তাই হাতে অস্ত্র ছিল না। ঠিক এমন এই মুহূর্তে সে ডাকাত তাদের পাশে যায় উপস্থিত হয় এবং রামদা বের করে ঘারে পিঠে গলায় কোপাতে শুরু করে দেয়। আর এভাবেই তিন চার জনকে হত্যা করে ফেলে। যিনি তার স্ত্রীকে ক্ষতি করেছিলেন তার চোখ মুখ হাত-পা এমন ভাবে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছিল, তাকে আর চেনা গেছিল না। এরপর শোনা যায় ডাকাতটা মিলিটারীদের হত্যা করে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। এলাকার মানুষ মহা খুশি হয়েছিল সে ডাকাতের উপর। একদিন যারা ডাকাতকে হত্যা করার জন্য ভাবতেন। ঐদিন তারা মহা খুশি হয়েছিলেন ডাকাতের উপর। এলাকার গণ্যমান্য ভালো মানুষেরা যা করতে পারেনি ডাকাত একলাই তা করে দেখিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় সেই যে ডাকাত পালিয়ে গেছে আর জীবিত ফিরে নাই। এরপর মিলিটারির লোকেরা তাকে তন্ন তন্ন করে খুঁজে একদিন এক রাস্তার উপর মেরে ফেলে রেখেছিল। জানা গেছিল ডাকাতের বিপক্ষে বেশ কিছু মানুষ ছিল এলাকার, তারাই ধরিয়ে দিয়েছিল। পরবর্তীতে নাকি শোনা যায় ডাকাতের স্ত্রীকে অন্যান্য মিলিটারিরা তুলে নিয়ে যায় এবং পরবর্তীতে হত্যা করে। জানোয়ার মিলিটারি রাম মারা পড়ল, এলাকার বড় ডাকাত মারা পড়ল। মাঝখানে বলি হয়েছিল সুন্দরী এক অবলা নারী।
পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ
বিষয় | গল্প |
---|---|
ফটোগ্রাফি ডিভাইস | Huawei P30 Pro-40mp |
Photo editing | PicsArt app |
ক্রেডিট | @jannatul01 |
W3w location | source |
দেশ | বাংলাদেশ |
ব্লগার | আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি |
আমার পরিচয়
আমার নাম মোছাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস শশী। আমার বাসা গাংনী মেহেরপুর, বাংলাদেশ। আমি আপনাদের সুপ্রিয় বিদ্যুৎ জিরো ওয়ান এর পরিবার। আমি একজন গৃহিণী। স্বামী সন্তান সহ আমাদের যৌথ পরিবার। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির চারজন সদস্য রয়েছে আমাদের পরিবারে, তার মধ্যে আমি একজন। এইচএসসি পাশ করার পর বিয়ে হওয়ার মধ্য দিয়ে আমার লেখাপড়া স্থগিত হয়। আমার ইচ্ছে আমি এই কমিউনিটিতে দীর্ঘদিন ব্লগ করব। পাশাপাশি আমার নিকটস্থ প্রিয়জনদের সহায়তা করব এই কমিউনিটিতে কাজ করার জন্য।
আসলে আগেকার সময় ব্রিটিশরা যেমন আমাদের দেশের মানুষের ক্ষতি করেছে, ঠিক তেমনি পশ্চিম পাকিস্তান এর শাসকগোষ্ঠী আমাদের দেশের মানুষের ক্ষতি করেছে। তারি দৃষ্টান্ত খুঁজে পেয়েছি এই গল্পের মধ্যে। আপনার গল্প করতে গিয়ে আমারও বেশ কয়েকটা শোনা ঘটনা মনে পড়েছে। আমিও চেষ্টা করব সেই সমস্ত বিষয়গুলো আপনাদের মাঝে তুলে ধরতে। তবে একটা বিষয় ভালো লাগলো ডাকাত মরে যাওয়ার আগে জনগণের জন্য ভালো কিছু একটা করে গেছে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
গল্পটি পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit