লাল বুল্লার গল্প
আমি তখন অনেক ছোট ছিলাম। ছোটবেলায় আমাদের পাড়াগাঁয়ে বিভিন্ন প্রকার খেলাধুলা হতো। বিশেষ করে ধুলোবালির মধ্যে আমরা অনেক খেলাধুলা করেছি। আগেকার সময় মোবাইল ফোন ছিল না। ইন্টারনেট ছিল না। তাই সবাই বিকেল হওয়ার সাথে সাথে খেলাধুলা করার জন্য আমাদের খোলাই উপস্থিত হয়ে যেতাম। যে যখন যে খেলার ইচ্ছা পোষণ করত আমরা মেতে উঠতাম খেলাধুলায়। ঠিক এমনই একটা দিন আমরা খেলাধুলা করব। তাই আমার সমবয়সী বন্ধু বান্ধবীরা যখন উপস্থিত হলো পলানো খেলা করার জন্য। ঠিক এমন মুহূর্তে পাটের খড়ি শুকাতে দেওয়া রয়েছে আমাদের বাড়ির একটি কর্নারে। সেখানে একটি কুলের গাছ রয়েছে। কুলের গাছে কখন যে লাল বোল্লা বাসা বেধেছে তা আমার জানা ছিল না। যাইহোক আমার খেলাধুলা শুরু করে দিয়েছি। পলানো খেলার বিষয়টা ছিল দুই দল বিশিষ্ট। একদল চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকবে কিছুক্ষণ। আর একদল পালিয়ে যাবে। যে যার মত লুকাবে যে কোন জায়গায়। একজন ব্যক্তি থাকবে যে নির্দিষ্ট সময়ে তাদেরকে জানিয়ে দেবে আমাদের খোঁজার জন্য। নির্দিষ্ট টাইম এর মধ্যে আমাদের খুঁজে না পেলে আমরা জয়ী হব।
যাইহোক আমাদের পালিয়ে যাওয়ার বিষয় ছিল। আমাদের দলের সব সদস্য পালিয়ে লুকিয়ে পড়ল। কেউ পাটখড়ির পালার নিচে। অনেকে ঘরের মধ্যে। কেউ বন জঙ্গলের আড়ালে। এভাবে লুকিয়ে পড়ল। তারপর যে রেফারি হিসেবে কাজ করতো সে জানালো আমাদের খুঁজতে হবে। আমরা লুকিয়ে থাকলাম। এবার হঠাৎ করে দেখলাম আমার এক বান্ধবী আমার দিকে আসছে। আমি কোন কিছুর মধ্যে লুকাতে যাইনি। পাটের খড়ি পালা দেওয়া রয়েছে তার পাশে ছোট কুলগাছ। আমি সেখানটাতে লুকিয়ে ছিলাম। ঠিক এমন মুহূর্তে কুলগাছে একটি পাখি বসে ছিল। কোন গাছের আড়ালে আমার লুকিয়ে থাকতে দেখে পাখিটা হঠাৎ করে উড়ে গেল। এরপর দেখলাম বল্লার চাকের চারিপাশে লাল বোল্লা গুলো উড়তে থাকল। দু একটা এদিকে ওদিকে উড়ে চলে গেল।
এরপর আমি আমার মত আবার একটু সাইড করে লুকিয়ে পড়লাম। আমাদের সে বান্ধবী আমাদের খুঁজতে এসে আরেক দিকে চলে গেল। দুই পাশে ঘর। জায়গায় জায়গায় খড়ি পালা দেওয়া। বুঝতে পারছেন ছোট মানুষ ছোটবেলার খেলা। এরপর হঠাৎ বাড়ির লোকজন খড়ি পালা দেওয়ার জন্য পাটখড়ি গুছানো শুরু করেছে। সারাদিন রোদে শুকানোর পর বিকেল মুহুর্তে অনেকেই পাটের খড়ি গুছাতে থাকে। ঠিক তেমনি আমার সামনের যে সমস্ত কুড়িগুলো ছিল সেগুলো গুছিয়ে নিয়ে চলে যাচ্ছে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়। আমাদের লুকিয়ে থাকার জায়গা কমতে থাকলো। এবার কুল গাছের পাশে হেলান দেওয়া পাটের খড়ি যখন নিয়ে যাচ্ছিল, ওই মুহূর্তে বল্লার চাক থাকা ডালে বাড়ির লাগে। আর আমি সেই পাটের বোঝা বহনকারী পিছনে ছিলাম। এই জায়গা থেকে আরেক জায়গায় লুকাবো বলে। কারণ আমার লুকিয়ে থাকার জায়গা তো ফাঁকাই হয়ে যাচ্ছে প্রায়, আমাকে দেখে ফেলবে বিপরীত দলরা। কিন্তু উপরে বোল্লা গুলো যে লাফিয়ে উঠেছে সেদিকে আমার খেয়াল ছিল না।
আমি পিছন থেকে একটু দৌড়ে আড়াল হতে গিয়েই, কোথা থেকে বোল্লা এসে আমার কানে কামড় দিয়ে বসলো। আমি তো ভয়তে লাফাতে চিল্লাতে থাকলাম। কিন্তু আমাদের বিপরীত দলের তারা বুঝতে পারল না। তারা দৌড়াতে দৌড়াতে আসলো আমাকে দেখে ফেলেছে আমাকে ছুয়ে দিবে বা মোর দিয়ে খেলার কেন্দ্রস্থলে নিয়ে যাবে। একজন আরেকজনকে বলল এই অমুক জন কে দেখে ফেলেছি তোরা দৌড়ে আয়। এরপর আমার কাছে দৌড়াতে দৌড়াতে এসে আমাকে ধরলো। দিকে তো আমি অস্থির। এরপর আরো কয়েকটা বোল্লা তাদের কামড় দিয়ে বসলো। তারা আতঙ্কে ভয় তে চেচিয়ে উঠলো। এরপর বড়রা জারা কাজ করছিল তারা আমাদেরকে সেখান থেকে নিয়ে গেল। আমরা চার পাঁচজন বোল্লার কামড় খেয়ে কান্না করছিলাম। এমন মুহূর্তে একজন মানুষ রেগে গেল বল্লার উপর। এরপর সেই পাড়ার চাচা টা পাঠ খোড়ির আগায় আগুন দিয়ে, বোল্লার চাক ভেঙ্গে দিল। আমরা যারা কান্না করছিলাম আমাদের ভেতরে একটু হলে আনন্দ হচ্ছিল এবং কান্না থেমে গেছিল। আর যারা বোল্লার কামড় খায়নি, আমাদের সাথে খেলা করছিল তারা অনেক আনন্দ করছিল ওই মুহূর্তে। কখন যে আমরা পলানো খেলা বন্ধ করে বোল্লা পোড়ানো দেখায় মেতে উঠেছিলাম তা কে জানে। আর এভাবেই একদিন এক বিকেলে আমরা খেলতে গিয়ে এভাবে বোল্লার আক্রমণের শিকার হয়েছিলাম।
পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ
বিষয় | অতীত ঘটনা |
---|---|
ফটোগ্রাফি ডিভাইস | Huawei P30 Pro-40mp |
ক্রেডিট | @jannatul01 |
দেশ | বাংলাদেশ |
ব্লগার | আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি |
আমার পরিচয়
আমার নাম মোছাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস শশী। আমার বাসা গাংনী মেহেরপুর, বাংলাদেশ। আমি আপনাদের সুপ্রিয় বিদ্যুৎ জিরো ওয়ান এর পরিবার। আমি একজন গৃহিণী। স্বামী সন্তান সহ আমাদের যৌথ পরিবার। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির চারজন সদস্য রয়েছে আমাদের পরিবারে, তার মধ্যে আমি একজন। এইচএসসি পাশ করার পর বিয়ে হওয়ার মধ্য দিয়ে আমার লেখাপড়া স্থগিত হয়। আমার ইচ্ছে আমি এই কমিউনিটিতে দীর্ঘদিন ব্লগ করব। পাশাপাশি আমার নিকটস্থ প্রিয়জনদের সহায়তা করব এই কমিউনিটিতে কাজ করার জন্য।
লাল বুল্লার কামড় খাওয়া ও চাক ভাঙ্গার গল্প কম বেশি সবার জীবনে রয়েছে। আমিও একবার বুল্লার কামড় খেয়েছিলাম ভীষণ ব্যথা লাগে। আপনার পোস্ট পড়ে ছোট বেলায় স্মৃতি মনে পড়ে গেলো
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলে এই পতঙ্গটির কামড় আমি ছোটবেলায় দুইবার খেয়েছি। একবার ঘরের ভিতরের পুরনো আসবাবপত্র সরাতে গিয়ে সেখানে এই পতঙ্গগুলো বাসা বেধেছিল। তখন আমাকে প্রায় তিনটি কামড় দিয়েছিল। এর ফলে পরবর্তীতে আমার জ্বর হয়েছিল। তাইতো আমি বুঝতে পারছি এই বল্লার কামড়ের বিষ কতটা বেশি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ভালো লাগলো ভাইয়া আপনার এটা জানতে পেরে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
লুকোচুরি খেলতে গিয়ে বোলতার কামড় খেয়েছে। আসলে গ্রামে বোলতার ভীষণ উপদ্রব। বোলতা খুব ভয়ংকর বিষাক্ত একটি পোকা।আপনাদের বেশ কয়েক জনকে কামড়েছ আর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে জন্য আপনাদের মনে একটু শান্তি এসেছে ও কান্না বন্ধ করেছেন।ভালো লাগলো পোস্ট টি পড়ে।ধন্যবাদ আপনাকে পোস্ট টি ভাগ করে নেয়ার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বর্ষার সময় এরা বাসা বাঁধে
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপু সে ছোটবেলায় ফিরে গিয়েছিলাম। সত্যিই এই লাল বুল্লার কামড় যে কত খেয়েছি আর এর ঘর যে কত ভেঙেছি তার হিসাব নেই। অসংখ্য ধন্যবাদ আপু ছোটবেলার স্মৃতিচারণ শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমি ভয় পেতাম তাই ভাঙতে পারিনি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit