কেমন আছেন আপনারা? আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার সহায়তায় ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিকে ভালোবেসে উপস্থিত হলাম সুন্দর একটি পোস্ট উপস্থাপন করার জন্য। আজকে আমি আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি বাজার থেকে কেনাকাটার মুহূর্তে মোবাইল ফোনে ধারণ করা মৃৎশিল্পের লোকশিল্পের বেশ কিছু ফটোগ্রাফি। আশা করবো আমার এই অনুভূতিমূলক পোস্ট অনেক অনেক ভালো লাগবে।
রেনডম ফটোগ্রাফি
একটা সময় ছিল, বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকার শিল্প সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছিল। দীর্ঘ বছর ধরে এই সমস্ত শিল্প গুলো বাংলার ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। বিভিন্ন অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মানুষ ছিল। যেখানে লোকশিল্প,কারুশিল্প,মৃৎশিল্প সহ বিভিন্ন প্রকার জিনিসের দেখা মিলতো গ্রামে গ্রামে। আর এই সমস্ত শিল্প গুলো আধুনিকতার ছোঁয়ায় যেন দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় মানুষ খুবই এক্টিভ ছিল এই সমস্ত কাজের প্রতি। আমি মনে করি আধুনিকতার কারণেই দিন দিন এই সমস্ত শিল্প গুলো যেমন বিলুপ্ত হচ্ছে, তেমনি মানুষজন এই সমস্ত কাজ থেকে দূরে চলে আসছে। একটা সময় বংশ কর্মধারা বজায় রাখতে সবাই নির্দিষ্ট একটা শিল্পকে ধরে রাখত। যারা কুমার তারা হাড়ি পাতিল তৈরি করতো কাদামাটি দিয়ে। বাপ-দাদা দেখাদেখি নতুন প্রজন্মরাও বংশের কর্মধারাটা বজায় রাখতো। যারা কামার ছিল তারাও ঠিক একই ভাবে বংশের পরম্পরা বজায় রেখেছে কর্ম ধরে রেখে। কিন্তু বর্তমান সময়ে এমন চিন্তা ধারার মানুষ খুবই কমে গেছে। তাই মৃৎশিল্প লোকশিল্প জাতীয় জিনিসগুলো প্রয়োজনে কিনতে হলে বাজারের দিকে চোখ রাখতে হয়। যে জিনিসগুলো আগে গ্রামে বেশি বেশি পাওয়া যেত। যোগাযোগ ব্যবস্থা যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হওয়ার জন্য হয়তো তেমন কিছু মনে হয় না, বাজার থেকেই কিনে আনা সহজ হয়। তবুও বাজারে সব জিনিস সব সময় পাওয়া যায় না।
আমাদের অতি নিকটের একটি বাজারের নাম বামুন্দী বাজার। যেকোনো প্রয়োজনে পরিবারের সবাই কম বেশি এই বাজারে জিনিস কেনার জন্য উপস্থিত হয়। বিশেষ করে আমার বাবার বাড়ির পাশের গ্রাম তাই ছোট থেকেই আমার এখানে আসা-যাওয়া। এছাড়াও এই বাজারের পার্শ্ববর্তী তিনটা গ্রামেই আমার আত্মীয়র বাসা, নানি বাড়ি খালা বাড়ি পাশাপাশি থাকাই আরো যেন বেশি বেশি আসা হতো একসময়। এখন সংসার জীবনে চলাচলটা কমে গেলেও বিশেষ বিশেষ প্রয়োজনে উপস্থিত হতে হয় রাজের আব্বুর সাথে। বেশ কিছুদিন ধরে মনে করছিলাম শীতকাল চলে আসছে, আর এই সময়ে বিভিন্ন রকমের পিঠা তৈরি করা হয়। তাই ভেবেছিলাম ভাপা পিঠা তৈরি করার জন্য একটা ভালো মানের তাওয়া পাওয়া যায় কিনা দেখব এ বাজারে। আর এই জিনিস সম্পর্কে তো আমার রাজের আব্বুর কোন ধারণা নেই। তাই আমি ভেবেছিলাম আমি সাথে গিয়ে দেখেশুনে ভাপা পিঠা তৈরি করার তাওয়া কিনে নিয়ে আসবো। এ ছাড়া ভালোলাগার প্রয়োজনের অন্যান্য জিনিস কিনব।
আগে এই বাজারে মৃৎশিল্প বেচাকেনা হতো না, শুধুমাত্র হস্তশিল্প গুলোই বা লোক শিল্প গুলোর বেশি দেখতাম। তবে কয়েক বছর ধরে একটি দোকানে কাদা মাটিতে গড়া মৃৎশিল্প বিক্রয় করা শুরু করেছে। উদ্দেশ্য ছিল ওই দোকানটাতে যদি পাই তাহলে ভালো হয়। তাহলে আর অন্য কোন খানে খোঁজার চেষ্টা করা লাগবে না। অনেকেই লোহা টিনের পাত্র ব্যবহার করে কিন্তু কথায় আছে না যার যা কাজ তাছাড়া আলাদা জিনিস ব্যবহার করলে ভাল হয় না। ছোট থেকে দেখে আসছিলাম আম্মা মাটির পাত্র দিয়ে তৈরি করতেন আর সেগুলোর বেশি সাধের হয়। যেমন চিন্তা ঠিক তেমনি সেই দোকানে এসে পৌঁছালাম। দোকানটাতে এসে বিভিন্ন প্রকার মৃৎশিল্পের জিনিস দেখতে থাকলাম। আমার কাছে বেশ আশ্চর্য লেগেছিল যে এই দোকানের লোকজন কিভাবে এত জিনিস সামলায়। কারণ এই দোকানটাতে প্লাস্টিকের জিনিস রয়েছে ঝাঁটা বারুনের জিনিস রয়েছে, বিভিন্ন রকমের বিস্কুট খাবার যাতে জিনিস রয়েছে। এর পাশাপাশি মৃৎশিল্প লোকশিল্প হস্তশিল্প রয়েছে অনেক। আমি তখন বললাম এমন ভাপা পিঠা তৈরি করার তাওয়া আছে কিনা। উনারা দেখতে বললেন। আমি বিভিন্ন সাইজের বিভিন্ন রকমের জিনিসই দেখলাম তবে যেমনটা আশা করছিলাম তেমনটা এখানে নাই।
অনেক রকমের অনেক জিনিস দেখতে পাওয়ায় প্রশ্ন করেছিলাম এত কালেকশন করলেন কিভাবে। উনারা বলেছিলেন পূজার অনুষ্ঠানে গিয়েছে। এর সময়টা আসলে বিভিন্ন মৃৎশিল্প বেশি পাওয়া যায়। আর এখন তো বৃষ্টির দিন কমে যাচ্ছে শীতের সময় আসছে এখন থেকে এই সমস্ত জিনিসগুলো একটু বেশি বেশি পাওয়া যাবে। আরো প্রশ্ন করেছিলাম এখন এই সমস্ত জিনিস গুলো কি বেচাকেনা হয়। বলেছিলেন হয় টুকটাক। আরো জানতে চেয়েছিলাম দোকানে বিভিন্ন রকমের জিনিস। এত কিছু সামলায় কি করে তিনি। বললেন তারা পরিবারের দুই তিনজন মানুষ এই দোকানটা চালান। আর এই সমস্ত জিনিসগুলো সামলানো কঠিন হলেও সহজ হয়ে গেছে। তবে সারাদিন শেষে নির্দিষ্ট জায়গায় ম্যানেজ করে রাখতে রাত বারোটা বেজে যায়। আর তারা এই জিনিসটা বংশের কর্মধারা বজায় রাখতে অন্যান্য জিনিসের পাশাপাশি বিক্রয় করে থাকেন। তাদের বংশের মানুষের মৃৎশিল্প বিক্রয় করে বেড়াতেন গ্রামে গ্রামে। এখনতো আর গ্রামে গ্রামে বিক্রয় করার প্রচলন নেই। তাই অন্যান্য জিনিসের পাশাপাশি মৃৎশিল্পটাও বিক্রয় করে থাকেন। তবে যাই হোক অনেক কিছু জানতে পারলাম দোকান থেকে। আর তাদের কথায় বুঝতে পারলাম তাদের মধ্যে এক প্রকার দেশ প্রেম ও ঐতিহ্য ধরে রাখার মন-মানসিকতা রয়েছে। আর এই জন্যই এত বড় একটি বাজারে একজন ব্যক্তির কাছে মৃৎশিল্পের জিনিস পাওয়া সম্ভব। প্রয়োজনীয় তাওয়া না পাওয়া গেলেও এই দোকানে সোনামুখী সুচ সহ বিভিন্ন কালারের সুতা ও বোতাম পাওয়া গেল। উনারা বললেন আগামী সাতদিন এর মধ্যে আরও কালেকশন আসবে। যদি বাজারে আসেন দেখা করে যাবেন। এখন শীতের সময় আসছে অনেকে খেজুরের রস এর জন্য ঠিলি বা কলস সংরক্ষণ করতে আসবে তাই এই জাতীয় জিনিসগুলোও কালেকশন করব। নিকটে এমন প্রয়োজনীয় কোন ব্যক্তি থাকলে তাদের জানাবেন আমার দোকানের কথা।
ডিভাইস | Infinix Hot 11s |
---|---|
বিষয় | মৃৎশিল্প ফটোগ্রাফি |
লোকেশন | গাংনী- মেহেরপুর |
ক্রেডিট | @jannatul01 |
দেশ | বাংলাদেশ |
পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমার নাম মোছাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস শশী। আমার বাসা গাংনী মেহেরপুর, বাংলাদেশ। আমি আপনাদের সুপ্রিয় বিদ্যুৎ জিরো ওয়ান এর পরিবার। আমি একজন গৃহিণী। স্বামী সন্তান সহ আমাদের যৌথ পরিবার। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির চারজন সদস্য রয়েছে আমাদের পরিবারে, তার মধ্যে আমি একজন। এইচএসসি পাশ করার পর বিয়ে হওয়ার মধ্য দিয়ে আমার লেখাপড়া স্থগিত হয়। আমার ইচ্ছে আমি এই কমিউনিটিতে দীর্ঘদিন ব্লগ করব। পাশাপাশি আমার নিকটস্থ প্রিয়জনদের সহায়তা করব এই কমিউনিটিতে কাজ করার জন্য।
মাটির জিনিসপত্র গুলির সুন্দর সব ছবি তুলে পোস্ট করলেন। আপনি ঠিকই বলেছেন। মৃৎশিল্পের চাহিদা দিনে দিনে কমে যাচ্ছে বলে এইসব দোকান বিপন্ন হয়ে উঠছে। আসলে লোকশিল্প বা মৃৎশিল্প মানুষের আগ্রহের বাইরে চলে যাচ্ছে। এখন সবকিছুই ধাতুর ব্যবহৃত হয়। আপনার পোস্টটি খুব সঙ্গত। অচিরেই বাংলা রিমিক্স শিল্পকে আমাদের বাঁচিয়ে রাখা উচিত।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হ্যাঁ ভাইয়া এই সমস্ত জিনিস তৈরি কারীদের উৎসাহ দিতে হবে এবং মূল্যায়ন করতে হবে
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বাঙ্গালীদের ঐতিহ্যবাহী শিল্প গুলো সত্যি এখন হারিয়ে যাচ্ছে। লোক শিল্প এবং মৃৎ শিল্প এগুলো এখন দেখাই যায় না। তবে আমাদের উচিত আমাদের এই ঐতিহ্যগুলোকে ধরে রাখা। মাটির জিনিসগুলো আমার বেশ ভালো লাগে। তবে এখন প্লাস্টিকের জিনিস সবকিছু চলে আসার কারণে এগুলো কমে যাচ্ছে। খুব সুন্দর একটা পোস্ট শেয়ার করেছেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
খুব কমে গেছে
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
মৃৎশিল্পের চাহিদা আপাতদৃষ্টিতে কমলেও অন্যভাবে কিন্তু বেড়েছে৷ আজকাল এ দেশে পথে ঘাটে দেখি মাটির বোতল থেকে শুরু করে রুটি ভাজা তাওয়া, কড়াই হাঁড়ি সবই বিক্রি হয়। হার লোকজনই সেসব কিনেও থাকেন। আসলে সময়ের সাথে সাথে সব কিছুতেই আপগ্রেডেশন দরকার৷ তবে অউরনো দিনের জিনিসগুলো আজকাল একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে যেন।
আপনার আজকের পোস্ট আমার কাছে সেরা লাগল।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ধন্যবাদ আপু, অনেক ভালো লাগলো সুন্দর বক্তব্য দেখে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit