প্রথম পূজা দেখতে যাওয়ার গল্প

in hive-129948 •  4 months ago  (edited)


আসসালামু আলাইকুম
আমার বাংলা ব্লগে সকলকে স্বাগতম


IMG_20240213_220258_304.jpg

Photography device: Infinix Hot 11s-50mp


প্রথম পূজা দেখার গল্প


ছোট থেকে আমরা জানি যখন পূজা হয় তখন বেশি বৃষ্টিপাত হয়। পূজা শুরু হওয়ার আগ থেকে মানুষে বলে বৃষ্টি আসার সময় হয়েছে। পূজা ডুববে, বৃষ্টি আসবে পূজা ডোবানোর জন্য। ঠিক তেমনি ছোটবেলায় আমাদের নিকটে কিছু হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষের বাড়ি যেয়েছে। তারা বাড়িতে পূজা তৈরি করেছে। তার অনেকটা গরিব,প্রত্যেক বছর সম্ভব হয়না পূজা তৈরি করার। কিন্তু সেইবার পূজা তৈরি করেছে তাই অনেক মানুষের ভিড় সৃষ্টি হয়েছে পূজা দেখার জন্য। প্রত্যেকদিন বিকেলে রান্নাবান্না শেষ করে অনেক মানুষ তাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে যায় পূজা দেখতে এবং তাদের নাচ গান দেখতে। কারণ তারা বিভিন্ন রকমের অনুষ্ঠান পালন করে থাকেন। যেগুলা মুসলমানরা জানে না বা অতটা ধারণা নেই। ঠিক তেমনি আমাদেরও বেশি ইচ্ছে হয়েছিল তারা কেমন করে পূজা পালন করে থাকে এগুলো দেখার। একদিন সময় করে আমরা তাদের বাড়িতে যাচ্ছিলাম। পথের মধ্যে লক্ষ্য করে দেখলাম সেই হিন্দু ভাইদের বাড়ির আশেপাশে প্রচুর মানুষের ভিড়। এদিকে ঢোল বাজছে। শুনছিলাম ঢোলের তালে তালে আর গানের তালে তালে মানুষ নাচানাচি করছে। নাচানাচি কথাটা শুনলেই যেন দেখতে ইচ্ছে করে। তাই আমাদের খুব ইচ্ছে হয়েছিল দ্রুত যেয়ে দেখি। কারণ যে কোন মুহূর্তে যদি নাচ গান বন্ধ হয়ে যায় তাহলে আফসোস। তাই আমরা এগিয়ে যেতে থাকলাম।

IMG_20241012_071250_559.jpg


এরপর শুনতে পারলাম বাইরের গ্রাম থেকে কিছু হিন্দু মানুষ এসেছেন তাদের বাড়িতে। আমাদের গ্রামের হিন্দুরা এবং সেই হিন্দুরা মিলে নাচগান করছে। আরো শুনতে পারলাম সুন্দর সুন্দর মেয়ে মানুষ এসেছে নাচ গান করার জন্য। এ সমস্ত কথা শুনে পথের মধ্যে যেন আরো দ্রুত আমরা চলছি। আর এভাবে অনেকে গল্প করতে থাকলো। তারা গতকাল দেখে এসেছে, আজকেও দেখতে আসছে নাচ গান। সবমিলে আমাদের বেশ উৎসাহ জাগলো মনে, সবকিছু দেখব। কিন্তু বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে হওয়ায় পায়ে হেঁটে সবার সাথে যাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য ছিল আমার কাছে। দীর্ঘ কাচা রাস্তা অতিক্রম করছি আমরা। কিন্তু দূর থেকে দেখতে পারলাম চারপাশ থেকে মানুষজন তাদের বাড়ির দিকে যাচ্ছে ব্যাক ঘুরছে। কারণ সে বাড়িগুলো আমাদের বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে এবং মুসলমান পরিবার থেকে একটু আলাদাভাবে মাঠের পাশে।

বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন কথা শুনতে শুনতে আমরা যে উপস্থিত হলাম হিন্দু ভাইদের বাড়িতে। সেখানে উপস্থিত হয়ে দেখলাম কি সুন্দর ভাবে গেট সাজিয়েছে। এরা কিন্তু অনেকটা গরীব মানুষ তারপরেও এত সুন্দর ভাবে তারা পূজা অনুষ্ঠান উপলক্ষে ডেকোরেশন করেছে, বাড়িঘর গুলো সুন্দরভাবে পরিপাটি করেছে। দেখে মনে হচ্ছিল যেন বিয়ে বাড়ি। মনে হচ্ছিল বিয়ে বাড়িতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন শুরু হয়ে গেছে। আর যেখানে তারা পূজা রেখেছিল সেই জায়গাটা নতুন করে বাঁশ দিয়ে ঘর তৈরি করেছে। এরপর সুন্দরভাবে ডেকোরেশন করে ঘরটাকে ঢেকে রেখেছে। তারা ভয়ে ছিল কেউ হামলা করে যেন তাদের পূজা ভেঙে না দেয়। তবে যাই হোক এখানকার মানুষেরা কেউ তাদের উপরে খারাপ আচরণ করেন নাই। তাই ভয়তে থাকলেও নিশ্চিত ছিল আশা করে কেউ তাদের ক্ষতি করবে না। বরঞ্চ দেখা গেছে অন্যান্য মুসলমানরা গ্রামে প্রথম পূজা হচ্ছে এতে আরো আনন্দিত। কারণ তারা কোনদিন এমন অনুষ্ঠান নিজের গ্রামে দেখেন। তাই মুসলমানরাই বলে দিয়েছিল তাদের কেউ ক্ষতি করবে না তারা পাহারা দিয়ে দিবে। গ্রামের ভালো গণ্যমান্য পর্যায়ে মানুষেরাও এই আশ্বাস দিয়েছিলেন তাদের।

IMG_20241012_075622_278.jpg


আমরা সেই বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করলাম। প্রবেশ করে ডান সাইডে ঘরে দেখতে পারলাম পূজা অনেক সুন্দর ভাবে তৈরি করেছে এবং সাজিয়ে গুজিয়ে রেখেছে সবকিছু। কত রকমের কত সৌন্দর্য করে তারা তাদের অনুষ্ঠান পালন করে এই প্রথম দেখলাম। তবে দুঃখের বিষয় ছিল সেইবার বৃষ্টি হয়নি। সবাই বলাবলি করছিল পূজা হওয়ার সময় বৃষ্টি হয়। আর এই বৃষ্টির পানিতে হিন্দু ভাইয়েরা অনেক নাচানাচি করে থাকেন। কিন্তু সেবার যেন বৃষ্টি হওয়ার কোন নাম গন্ধ নেই। তাই তারা তাদের বাড়ির মধ্যে পানি ঢেলেছে ইচ্ছে মত। উঠানে কাদা তৈরি করেছে। আর সেই কাঁদার মধ্যে আনন্দ সহকারে তারা নাচানাচি করছে ছেলে মানুষ মেয়ে মানুষ একসাথে। তাদের এই নাচানাচি দেখার জন্য বাড়ির মধ্যে মানুষের এতটাই উপস্থিতি যেন দাঁড়ানোর জায়গা নেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে রয়েছে অনেকেই। একদিকে পূজা দেখায় মানুষের যেমন ভিড় আরেক দিকে নাচ গান দেখাই তেমন ভিড়।

তবে আমি খেয়াল করে দেখলাম বেশ কয়েকজন মানুষ উঠানে কাদা তৈরি করে গড়াগড়ি করছে হিন্দি গানের তালে তালে। আর কয়েকজন মানুষ দাঁড়িয়ে নাচ-গান করছে। তবে নাচতে গিয়ে একজন ব্যক্তির নাক কেটে যায় বেড়া বাঁধা তারে বেঁধে। তারটা এমন ভাবে টাঙানো ছিল একটা ঘর থেকে আর একটা ঘর এর সোজা করে উঠানের মাঝখান দিয়ে। কারণ উঠান ফাঁকা জায়গা সেই তারে জামা কাপড় শুকাতে দেয়। মানুষটার যখন নাক কেটে অনেকটা রক্ত বের হচ্ছে সে নাচানাচির মধ্যে বুঝতে পারেনি, এতটাই বেতাল হয়ে গেছিল। পরবর্তীতে যখন নাকে যন্ত্রণা সৃষ্টি হয় তখন সে বুঝতে পারে। এরপর সে মানুষটাকে আমাদের গ্রামের মুসলমানরা বাইরে নিয়ে আসে, নিয়ে আসার পরে দেখে যথেষ্ট কেটে গেছে। উনি এতটাই মগ্ন হয়ে পড়েছিলেন শুধু নাক নয় দুই হাতের কয়েকটা অংশ কেটে গেছে। কিন্তু সে এতটা পাগলামি করে নাচলো কেন? এটাই মানুষের কথা। এরপর মুসলমানরা ডাক্তার ডেকে আনলো এবং তাকে ট্রিটমেন্ট করার ব্যবস্থা করে দিল। উনার নাক মুখে রক্ত দেখে আমার এতটা ভয় লাগছিল! আর নাচ গান দেখার ইচ্ছে ছিল না, পূজা দেখার ইচ্ছে ছিল না, দ্রুত কিভাবে বাড়িতে চলে আসবো সেই চিন্তা। আর এভাবেই জীবনে প্রথম পূজা ও নাচ গান দেখা হয়েছিল আমার।

PB8ro82ZpZP35bVGjGoE93K3E4U5KX8KtMBJ2rhmkyLqtRRZvVw9YH8hEBg7DJQKSJLWf7VJRhnjGRYSDmuGDMSHAPBRbiRis5HV4ATHTF7QvLHc.png


পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ



received_434859771523295.gif


পোস্ট এর বিবরণ


বিষয়অতীত ঘটনা
ফটোগ্রাফি ডিভাইসInfinix Hot 11s-50mp
ক্রেডিট@jannatul01
W3w locationsource
দেশবাংলাদেশ
ব্লগারআমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি


আমার পরিচয়


আমার নাম মোছাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস শশী। আমার বাসা গাংনী মেহেরপুর, বাংলাদেশ। আমি আপনাদের সুপ্রিয় বিদ্যুৎ জিরো ওয়ান এর পরিবার। আমি একজন গৃহিণী। স্বামী সন্তান সহ আমাদের যৌথ পরিবার। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির চারজন সদস্য রয়েছে আমাদের পরিবারে, তার মধ্যে আমি একজন। এইচএসসি পাশ করার পর বিয়ে হওয়ার মধ্য দিয়ে আমার লেখাপড়া স্থগিত হয়। আমার ইচ্ছে আমি এই কমিউনিটিতে দীর্ঘদিন ব্লগ করব। পাশাপাশি আমার নিকটস্থ প্রিয়জনদের সহায়তা করব এই কমিউনিটিতে কাজ করার জন্য।


2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif

6VvuHGsoU2QBt9MXeXNdDuyd4Bmd63j7zJymDTWgdcJjo1NfxyQcRUrHnbvGAuDxuMioMRjoG74XpZyTRDsUp566Bu2ZZHRsryAWmeAqnTe9T6zT4X1bZ8DTXHHYrr.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আপু আপনি পূজা দেখতে গিয়েছেন সেখানে গিয়ে আরো অনেক ছবি আমাদের সাথে শেয়ার করলে ভালো হতো। বেশ ভালো লাগলো আপু আপনার পোস্ট পড়ে। আমি অনেক ছোটবেলায় পুজো দেখতে গিয়েছিলাম। সেই স্মৃতি এখন তেমন একটা মনে নেই। তারপর আর দেখা হয়নি। তবে আপনি পুজো বা অন্যান্য কিছু ফটোগ্রাফি শেয়ার করলে একটু দেখতে পারতাম। ধন্যবাদ আপু।

আমি ছোটবেলায় দেখলেও একটু বড় হয়ে দেখেছি।

প্রথম পূজা দেখার অনুভূতি আমাদের মাঝে খুব সুন্দর ভাবে শেয়ার করেছেন। আপনার এই গল্পটা পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম। তবে একটা বিষয় ভালো লাগলো মুসলমানদের সহযোগিতায় এবং আন্তরিকতা দেখে। কারণ অনেক জায়গাতে শয়তানি করে অনেকেই ক্ষতি করার চেষ্টা করে। আমরা স্বাধীন জাতি হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিস্টান সবাই যেন একত্রে স্বাধীনভাবে শান্তিতে বাঁচতে পারি এবং নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারি এটাই কামনা করি।

মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ

পূজার মেলার খাবার দাবার গুলো আমার কাছে বেশি ভালো লাগে।আপনি পূজার মেলায় যাওয়ার অনুভূতি শেয়ার করেছেন বেশ ভালো লাগলো। আর মেলায় বাচ্চাদের খেলনা গুলো কিন্তু বেশ ভালো হয়। ধন্যবাদ আপু পূজোর মেলায় কাটানো সুন্দর মুহূর্ত আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ আপু