গল্প
একদিন আমাদের পাড়ায় একটি পাগল আসলো। পাগলটা তার আগেও বেশ কয়েকবার এসেছে। তবে সেই দিন সে আমাদের আম বাগানে এমন ভাবে বসেছে, মানুষজন তাকে ঘিরে বেশ আড্ডা জমিয়ে তুলেছে। আমরা শুনতে পারলাম সেই পাগলটা এসেছে। তাই পাড়ার ছোট ছোট ছেলে মেয়ে বন্ধুরা সবাই সেখানে চলে গেলাম। উপস্থিত হয়ে দেখতে পারলাম পাগলের সাথে অনেকেই আনন্দ করছে। আমারও বেশ ভয় ভয় লাগছিল। তবে পাগল টাকে দেখার আর পাগলের কার্যক্রম দেখার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল। আমরা সবাই দেখছিলাম এবং পাগলের পাগলামি বেশ কিছু কথা শুনছিলাম আর হাসাহাসি করছিলাম। পাগলকে নিয়ে অনেকে অনেক রকম প্রশ্ন করছে। পাগল পাগলের মত পাগলামি উত্তর দিচ্ছে। ঠিক এই মুহূর্তে পাগলকে পরীক্ষা করার জন্য আমাদের পাড়ার এক ব্যক্তি তার হাতে থাকা একটি বড় গামলার মধ্যে পানি পুরে আনলো। এরপর সেই পানি পাগলের সামনে রাখলো। পাড়া গা থেকে একটা নারিকেলের কানা মালা আনলো।
এর আগে কোনদিন শুনি নাই বা দেখি নাই পাগলকে পরীক্ষা করতে হয় বা পরীক্ষা করে। এই প্রথম দেখলাম পাগল কে পরীক্ষা করতে চলেছে। তাই বিষয়টা আমার কাছে খুবই ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছিল। এবার পাগলের হাতে কানা মালাটা দেওয়া হলো। আমরাও বেশ নজর করে দেখতে থাকলাম কি করে। পাগলের হাতে কানা মালাটা দিয়ে বলা হলো গামলার মধ্য থেকে পানিগুলো সব ছেঁকে দিতে। এবার পাগলটা সেই কানা মালা হাতে নিল। উপস্থিত মানুষ সবায় হাসাহাসি করছে, যে যার মত কথা বলছে। পাগলটা দর্শককে দেখে হাসছে, দর্শক পাগল কে দেখে হাসছে। এরই মধ্য থেকে পাগল হঠাৎ বলে থাকলো আমি কিন্তু অত পাগল না! এই কথা শুনে অনেকেই আরো জোরে জোরে হেসে উঠলো। কারণ পাগলের বলার ভঙ্গিটা ছিল অন্যরকম।
এবার পাগল বলল কয় মিনিটে পানিগুলো ছেঁকে দেখাতে হবে? যেহেতু গামলার মধ্যে পানি। গামলাটাও বেশ বড়সড়ো। সম্ভবত বালতি করে পানি ঢেলে গামলাটা আরো ভর্তি করা হয়েছিল। এরপর সবাই বলল ১০ মিনিটে পানি ছেঁকে দেখাতে। কেউ বলল আধা ঘন্টায়। তখন পাগল বলে বসলো আমি যদি গামলা থেকে সব পানি ফেলে দিতে পারি তাহলে আমাকে কি দেওয়া হবে? এ জায়গায় উপস্থিত চালাক চতুর মানুষেরা বুঝে উঠতে পারে নাই পাগলের কথা। যে সমস্ত মানুষগুলো পাগলের পিছু লাগছিল তারা বলেছিল ১০০ টাকা দেওয়া হবে, কেউ বলেছিল ৫০০ টাকা দেওয়া হবে। পাগল তখন আবারো সাক্ষী রেখে বলেছিল তাহলে আপনারা সাক্ষী থাকেন আমি কিন্তু গামলার পানি ফেলে দেখাবো। এবার সেই সমস্ত ব্যক্তিরা বলেছিল আচ্ছা ফেলে দেখাও। সবাই ভেবেছিল কানা মালা দিয়েই ফেলবে। হাসি আনন্দে আত্মহারা, পাগলের কথা সঠিকভাবে বোঝার চেষ্টা করল না কেউ।
পাগল বলেছিল আমার কাছে এই পানি ফেলতে পাঁচ মিনিট লাগবেনা। অনেকে উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করেছিল পাগলা কি জাদু জানে নাকি। পাগলা বলল হাত থাকতে জাদুর কি প্রয়োজন। সবাই তখন হাসাহাসি করতে থাকলো, ভাবলো সত্যিই নারিকেলের কানা মালা দিয়ে সে পানিগুলো সব ছেঁকে ফেলে দিবে। আমরা বলাবলি করছিলাম ওই পাগল কানা মালাই কোন দিন পানি ফেলা যায়। কিন্তু দেখা গেল পাগলা গামলাটা ধরে উল্টিয়ে পানি গুলো সব ফেলে দিল। এরপর তুমুল কান্ড শুরু হওয়ার মত। অনেকে বলাবলি করতে থাকলো শালা আসলেই পাগল, আবার অনেকেই বলল এত পাগল না চালাক। পাগল তখন কোন কথা শুনবে না বলল আমি পানি ফেলে দেখিয়েছি, টাকা আমাকে দাও। এবার সেই সমস্ত ব্যক্তিরা বলতে থাকলো আমরা তো বলেছি কানা মালায় পানি ছেঁকে ফেলে দিতে।
পাগল তখন বলল আমি সাক্ষী রেখেছি, আমি শুধু বলেছি ফেলে দিয়ে দেখাবো। তোমরা আমার কথায় রাজি হয়েছো। তখন সাক্ষীরা বলল হে আমারও তো সেটাই শুনেছি কিন্তু ভেবেছিলাম কানা মালা দিয়ে পানি ফেলে দেখাবে। তখন পাগল বলেছিল আমি পাগল না আপনারা পাগল। কানা মালা দিয়ে কোন দিন পানি ছ্যাঁকা যায়? উপস্থিত মানুষের মধ্যে ভালো কিছু মানুষ বলল না কখনোই যায় না। অনেকে পাগলের পক্ষ নিল এবং প্রশংসা করল। তখন পাগল বলল আমি প্রথমেই বলেছিলাম, আমি পাগল হতে পারি কিন্তু অত পাগল না। আমি তো দেখছি আমার চেয়ে এখানে রয়েছে বেশ কিছু গাছান্ত পাগল। এরা যদি গাছান পাগল না হয় তাহলে আমাকে কেউ কানা মালা দিয়ে পরীক্ষা করতে চাই। পাগলের এমন কথা বার্তায় অনেকে তার পক্ষ নিল এবং হাসাহাসি করতে থাকলো। পক্ষান্তরে চালাক চতুর মানুষগুলো হেরে গেল পাগলের কাছে। এরপর সবাই পাগলকে ১০০ টাকা সহ বেশ কিছু টাকা আদায় করে দিল। আর এভাবেই ছোটবেলায় একটা আনন্দঘন মুহূর্তে দেখেছিলাম পাগলের কাছ থেকে পাড়ার পন্ডিত মানুষের শিক্ষা নিতে।
পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ
বিষয় | গল্প |
---|---|
ফটোগ্রাফি ডিভাইস | Huawei P30 Pro-40mp |
Photo editing | PicsArt app |
ক্রেডিট | @jannatul01 |
W3w location | source |
দেশ | বাংলাদেশ |
ব্লগার | আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি |
আমার পরিচয়
আমার নাম মোছাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস শশী। আমার বাসা গাংনী মেহেরপুর, বাংলাদেশ। আমি আপনাদের সুপ্রিয় বিদ্যুৎ জিরো ওয়ান এর পরিবার। আমি একজন গৃহিণী। স্বামী সন্তান সহ আমাদের যৌথ পরিবার। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির চারজন সদস্য রয়েছে আমাদের পরিবারে, তার মধ্যে আমি একজন। এইচএসসি পাশ করার পর বিয়ে হওয়ার মধ্য দিয়ে আমার লেখাপড়া স্থগিত হয়। আমার ইচ্ছে আমি এই কমিউনিটিতে দীর্ঘদিন ব্লগ করব। পাশাপাশি আমার নিকটস্থ প্রিয়জনদের সহায়তা করব এই কমিউনিটিতে কাজ করার জন্য।