একটি রোমান্টিক গল্প

in hive-129948 •  2 months ago 


আমার বাংলা ব্লগে সকলকে স্বাগতম


Picsart_24-12-16_18-34-19-283.jpg

Photography device: Huawei P30 Pro-40mp


গল্প


ঘটনাটি সুমন ভাইয়াকে কেন্দ্র করে। ভাইয়ার মুখ থেকে বিস্তারিত শোনা। ২০২২ সালের শেষের দিকের ঘটনা। সুমন ভাইয়া "গ্রীনরেইন ল্যাবরেটরি স্কুলে" শিক্ষকতা করতেন। ২০২৩ সালের স্কুলের ক্যালেন্ডার বিতরণ করতে গিয়েছিলেন ৮ কিলো দূরে কোদালকাঠি নামক গ্রামে। সুমন ভাইয়াকে মোটরসাইকেলে করে নিয়ে গেছিলেন মারুফ ভাইয়া। সুমন ভাইয়া, মারুফ ভাইয়া আর পলাশ ভাইয়া তিন বন্ধু। তবে কোন এক সম্পর্কে মারুফ ভাইয়া পলাশ ভাইয়ার ভাতিজা। তাই মারুফ ভাইয়া পলাশকে কাকু বলে ডাকে। সুমন ভাইয়াকে কোদালকাঠি নামক গ্রামে ক্যালেন্ডার বিতরণ করতে নিয়ে যাওয়ার পূর্বে পলাশ ভাইয়া মারুফ ভাইয়াকে দেখেছিলেন মোটরসাইকেল বের করে বাড়ি থেকে বের হচ্ছে। পিছন থেকে পলাশ ভাইয়া মারুফ ভাইয়াকে প্রশ্ন করেছিলেন কোথায় যাওয়া হচ্ছে কাকু। মারুফ ভাইয়া একটু ইয়ার্কি করতে পছন্দ করেন। সে ইয়ার্কি করে বলেছিল কাকু! সুমনের জন্য মেয়ে দেখতে যাচ্ছি। পলাশ প্রশ্ন করেছিলেন কোন গ্রামে। মারুফ বলেছিল কুমারীডাঙ্গা, কোদাল কাটি এলাকায়। পলাশ জিজ্ঞেস করেছিলাম মেয়ে দেখতে কেমন। মারুফ বলেছিল মেয়ে তো আগে দেখি তারপরে নাই বলি, আগে থেকে কিভাবে বলবো? এছাড়া মারুফ ভাই আরো বলেছিল, যদি মেয়ে দেখে পছন্দ হয়ে যায় তাহলে আজকেই বিয়ে। এই কথাটাই যেন সবকিছু সৃষ্টি করেছিল।

IMG_20240824_200621.jpg


মারুফ ভাইয়া রেডি হয়ে আমাদের বাড়িতে আসেন। এদিকে সুমন ভাইয়া ক্যালেন্ডার গুলো ঠিকভাবে রেডি করে ব্যাগের মধ্যে পুরে নেন। সুমন ভাই আর মারুফ ভাইয়া চলে গেলেন সেই গ্রামে ক্যালেন্ডার বিতরণ করতে। এদিকে পলাশ ভাইয়া তাদের দোকান চালানোর মুহূর্তে অলরেডি ছড়িয়ে দিয়েছে আজকের সুমন মেয়ে দেখতে গেছে। পছন্দ হয়ে গেলে বিয়ে হয়ে যাবে। তাদের সমবয়সী একসাথে চলা সোহেল রাকিব সাকিব আরো অনেকে পলাশের দোকানে বসে এই নিয়ে গল্প শুরু করে দিয়েছে। হঠাৎ মারুফ ভাইয়ের কাছে পলাশ আবার ফোন দিয়েছেন। কাকু মেয়ে দেখা কি হয়ে গেছে, কি অবস্থা? এদিকে মারুফ ভাইয়া ফান করে বলল মেয়ে দেখা সম্পন্ন, বিয়ে হতে বাকি। এ কথা শুনে তো পলাশ সাথে থাকা রাকিব সাকিব সোহেল কারো মাথায় কাজ করছে না। বন্ধুর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে আর একলা মারুফ বিয়ে খাবে আমরা দাওয়াত পাবো না এটা কেমনে হয়।

IMG_20240824_200824.jpg


এদিকে লিস্ট অনুসারে সেই গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে ক্যালেন্ডার বিতরণ করতে হচ্ছে সুমন ভাইয়া আর মারুফ ভাইয়ার। বেশ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা। কিন্তু পলাশ ভাইয়া তো আর সঠিক টা জানছে না, ইয়ার্কি করে যেটা বলা হয়েছে সেটাই তারা সত্যি ধরে নিয়েছে। ১০ মিনিট ১৫ মিনিট পরপর মারুফ ভাইয়াকে ফোন দিতে রয়েছে। মারুফ ভাইয়া মাঝেমধ্যে ফোন ধরছেনা, আবার অনেকক্ষণ পর ধরছে। আরো উৎসাহ উদ্দীপনা দিয়ে বলছে বিয়ের কাজ চলমান। তারা প্রশ্ন করছিল যদি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে ডাটা অন করে ফটো ভিডিও পাঠাতো মেয়ে কেমন দেখতে পারত। মারুফ ভাইয়াকে তখন আবারো প্রশ্ন করা হয়েছে মেয়ে দেখতে কেমন, লম্বা কেমন ইত্যাদি। তখন মারুফ ভাইয়া পলাশ ভাইয়াকে আবার বলেছে মেয়ে দেখতে তোমার শাশুড়ির চেয়েও মানান। পলাশ ভাইয়ার শাশুড়ি নাকি সাদা ফর্সা অনেক সুন্দর, কিন্তু পলাশ ভাইয়ার ওয়াইফ একটু শ্যামলা। বিষয়টা আরো রোমান্স করা হয়ে গেল। মেয়ের নাম জানতে চাওয়াই মারুফ ভাইয়া মিথ্যা বলে একটি সুন্দর মেয়ের নাম বলে দিয়েছিল। পলাশদের দোকানের মাচায় যারা বসেছিল সবাই এক প্রকার আনন্দ করতে থাকলো পলাশকে নিয়ে। বন্ধুর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে সে দাওয়াত পাচ্ছে না তাহলে কেমন বন্ধু ইত্যাদি ইত্যাদি।

IMG_20240824_200828.jpg


এদিকে পলাশ সহ তার বন্ধুদের দেরি সয়ছে না বউ দেখার জন্য। বারবার ফোন দিয়ে বলতে থাকলো কোন এক এন্ড্রয়েড মোবাইলে ফটো ধারণ করে imo, whatsapp এর মাধ্যমে ফটো দেখাও। মারুফ ভাইয়া আরও ইয়ার্কি করে বলতে থাকলো আমি এন্ড্রয়েড মোবাইল আনতে ভুলে গেছি, হাতে বাটন ফোন। বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে, আধা ঘন্টার মধ্যে সব বাড়ি চলে আসবে। তারপর তোরা ইচ্ছামত দেখিস। যায় হোক এভাবে মারুফ ভাইয়া ইয়ার্কির ছলে এমন মিথ্যা বলায় পলাশ ভাইয়ারা সত্যি ভেবে নিয়েছিল। পাড়ার মধ্যে জানাজানি হয়ে গেল, সত্যি বিয়ের কাজ হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে অনেক পাড়ার মহিলারা আমাদের বাড়িতে আসা যাওয়া শুরু করে দিয়েছে। আমি সঠিক জানি না ওই মুহূর্তে। অনেকে আসছে যাচ্ছে এবং প্রশ্ন করছে আজকে নাকি তোমার ছোট দেবরের বিয়ে। আবার অনেকে বলছেন দেবরের বিয়ের দিয়ে দিলে চুরি করে, তোরা তো যাস নাই, আমাদের বলিস নাই। এদিকে কিছুই জানছি না বুঝছি না। আমি শুধু মানুষকে এটাই বলছি ভাইয়া তো ক্যালেন্ডার বিতরণ করতে গেছে। আমার একমাত্র দেবরের বিয়ে, আর আমি জানব না। আমরা একবাড়ির মানুষ,আমরা তো আলাদা না। আমি জানবো না কেন? বেশ কনফিউশনে পড়ে গেলাম।

IMG_20240830_225223.jpg


অতঃপর সন্ধ্যার সময় সুমন ভাইয়া এবং মারুফ ভাইয়া ক্যালেন্ডার বিতরণ শেষ করে বাড়িতে ফিরে আসলো। ভাইয়া বাড়িতে প্রবেশ করলেন। ভাইয়াকে প্রশ্ন করলাম বাইরের মানুষ আসা-যাওয়া করেছি, আপনি নাকি বিয়ে করে বাড়ি আসছেন। তখন ভাইয়া হাসতে হাসতে বিস্তারিত খুলে বলল। বিষয়টা সত্যি খুব আনন্দদায়ক হয়ে উঠল এবং সারা বাড়িতে অন্যরকম হাসাহাসি সৃষ্টি হল। এদিকে মারুফ ভাইয়া তাদের বাড়িতে চলে যাই। ততক্ষণে পলাশ এবং তাদের দোকানে থাকা অপেক্ষাকৃত লোকজন মারুফ এর কাছে এগিয়ে আসে। তখন মারুফ ভাইয়া সত্যি কথা বলে। এই নিয়ে অনেক হাসাহাসি আর আনন্দ সৃষ্টি হয় তাদের বন্ধুদের মধ্যে। আর তখন মারুফ ভাইয়া তাদের খুলে বলে। বিষয়টা ছিল তারা দুজন নতুন বছরের স্কুলের পক্ষ থেকে ক্যালেন্ডার বিতরণ করতে গিয়েছিল। পলাশ একটু বেশি কথা বলে। কোন কিছু শুনলে সাথে সাথে দোকানে বসে রটিয়ে ফেলে। তাই মারুফ ভাইয়া এমন ইয়ার্কি করেছিল তার সাথে।

PB8ro82ZpZP35bVGjGoE93K3E4U5KX8KtMBJ2rhmkyLqtRRZvVw9YH8hEBg7DJQKSJLWf7VJRhnjGRYSDmuGDMSHAPBRbiRis5HV4ATHTF7QvLHc.png


পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ



received_434859771523295.gif


পোস্ট এর বিবরণ


বিষয়গল্প
ফটোগ্রাফি ডিভাইসHuawei P30 Pro-40mp
Photo editingPicsArt app
ক্রেডিট@jannatul01
W3w locationsource
দেশবাংলাদেশ
ব্লগারআমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি


আমার পরিচয়


আমার নাম মোছাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস শশী। আমার বাসা গাংনী মেহেরপুর, বাংলাদেশ। আমি আপনাদের সুপ্রিয় বিদ্যুৎ জিরো ওয়ান এর পরিবার। আমি একজন গৃহিণী। স্বামী সন্তান সহ আমাদের যৌথ পরিবার। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির চারজন সদস্য রয়েছে আমাদের পরিবারে, তার মধ্যে আমি একজন। এইচএসসি পাশ করার পর বিয়ে হওয়ার মধ্য দিয়ে আমার লেখাপড়া স্থগিত হয়। আমার ইচ্ছে আমি এই কমিউনিটিতে দীর্ঘদিন ব্লগ করব। পাশাপাশি আমার নিকটস্থ প্রিয়জনদের সহায়তা করব এই কমিউনিটিতে কাজ করার জন্য।


2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif



99pyU5Ga1kwqSXWA2evTexn6YzPHotJF8R85JZsErvtTWXkFkcDg5ibdZCen8p3uDxVoV5q1NZLwPPeBug1jepgK3e2Zdtv5gFKAP1J8S7nez1ced4GsXM4bVpnBb88Np6.png


Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আজকের কাজ সম্পন্ন

Screenshot_20241216_185919.jpg

Screenshot_20241216_185830.jpg

Screenshot_20241216_185745.jpg

অনেক ধন্যবাদ টাস্কগুলো সম্পন্ন করার জন্য, নতুন টাস্ক যোগ করা হয়েছে Super Walk এর, এখন হতে সেটাও সম্পন্ন করার অনুরোধ করা হলো।

হ্যাঁ ভাইয়া,আমি ওটা দেখেছি কিন্তু বেশ কিছুদিন ছেলের অসুস্থতায় এখনো সেভাবে সময় করতে পারিনি, ইনশাআল্লাহ শুরু করব।

আপু ঘটনাটি পড়ে হাসতে হাসতে আমার অবস্থা খারাপ। সত্যি এটি একটি রোমাঞ্চকর ঘটনা। মানে ছোট্ট একটা ইয়ার্কি কতদূর পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে। যাই হোক আপনাদের হয়তো বেশ বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়েছিল। বেশ ভালো লাগলো ঘটনাটি পড়ে।

আর বইলেন না আপু। ছেলেমানুষদের ফাজলামি সত্যিই অন্যরকম হয়।

আপনার গল্পটা যদিও খুব মজার ছিল বলে অনেক সময় ইয়ার্কি করতে গিয়ে অনেক বিপদ ও হতে পারে। তবে এই ইয়ার্কি কিন্তু খুবই ইন্টারেস্টিং ব্যাপার ছিল। বন্ধুবান্ধবের সাথে এমন ইয়ার্কি করতে খুব ভালো লাগে। যাই হোক ধন্যবাদ সুন্দর একটি হাসির গল্প শেয়ার করার জন্য।

হ্যাঁ বিষয়টা অন্যদিকে যেতে পারতো তবে তাদের বন্ধুত্বদের ইয়ার্কি তো। যাই হোক অনেক আনন্দ ছিল কিন্তু সেই ঘটনার সময়।