বাংলা ভাষাকে ছড়িয়ে দাও সবার মাঝে-
প্রতিবছর জুলাই মাসে আমাদের অফিসে সবাইকে বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হয়। এই বছর জুলাই মাসে এসে কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আমাদের দেশের পরিস্থিতি কিছুটা খারাপ হয়ে যায়। গত পাঁচই জুলাই থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন জরুরী অবস্থার মাধ্যমে কিছুটা শান্ত হয়েছিল। তারপর আবার সব কিছু স্বাভাবিক ভাবে চলতে থাকে। পঁচিশ তারিখ থেকে সুন্দর ভাবেই অফিসের কাজকর্ম চলতেছে। জুলাই মাসে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারনে এমডি স্যারের কাছে আমাদের বাৎসরিক ইনক্রিমেন্টের কথা কেউ উল্লেখ করে নি। সবাই ধারনা করেছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ইনক্রিমেন্ট এর বিষয়ে আলাপ আলোচনা করবে। দেখতে দেখতে জুলাই মাস কেটে গেলো। কিন্তুু দেশের পরিস্থিতি তেমন স্বাভাবিক হয়নি। দেশে এখনো জরুরী অবস্থা আছে। মাঠে এখনো সেনাবাহিনী, বিজিবির কর্মীরা রয়েছে। তারপরও প্রতিদিনই পত্রপত্রিকায় আন্দোলনের চিত্র দেখা যায়।
জরুরী অবস্থায় সব কিছু বন্ধ থাকলেও সরকার আদলাত বসিয়ে আন্দোলন কারীদের প্রথম দাবীও মেনে নিয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম সব কিছু হয়তো স্বাভাবিক হয়ে গেছে। কিন্তুু ইদানিং কালে আন্দোলনের সময় সহিংসতায় জড়িত থাকার কারনে বেশ কিছু স্টুডেন্টকে পুলিশ গ্রেফতার করে। যাদের মাঝে অনেক এইচ এসসি পরিক্ষার্থীও রয়েছে। অভিভাবকরা সর্বচ্চ চেষ্টা করছে পরিক্ষার আগে তাদের সন্তানদের কারাগার থেকে মুক্ত করতে। অন্যদিকে আন্দোলন পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও রংপুরে নিহত হওয়া বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ সহ যারা নিহত হয়েছে তাদের হত্যা কারীদের গ্রেফতার, ন্যায় বিচার সহ নয় দফা দাবিতে আবার আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। যার ফলে সব কিছু আমরা স্বাভাবিক মনে করলে আসলে আসলে সব কিছু স্বাভাবিক নেই। গত বৃহস্পবারে আমাদের অফিসের উপর লেভেলের কর্মকর্তারা মিটিং করতে বসে। সেখানে এইচআর এডমিনের এজিএম স্যার অনেক সাহস নিয়ে আমাদের বাৎসরিক ইনক্রিমেন্টি এর বিষয়টা এমডি স্যারের নিকট প্রকাশ করেন। কারন সবারই ফেমিলি আছে, পরিবার আছে। সবাই একটি প্লান প্রোগ্রাম থাকে। তাছাড়া যে হারে নিত্যপন্যের দাম বাড়ছে কোনরকম খেয়ে বেঁচে থাকা বড় দায় হয়ে দাড়িয়েছে। দুর্নীতির কারনে দেশের অবস্থা খুবই খারাপ। কেউ কোন নিয়ম নীতি মানছে না। যে যেভাবে ইচ্ছা দ্রব্য মূল্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে,ঘর ভাড়া বাড়িয়ে দিচ্ছে, কারেন্ট বিল, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানির বিল বাড়ছেই। যে সেলারি পায় সেটা ছিড়ে টুকরো টুকরো করে দিলেও পরিশোধ হয় না। বিশ তারিখের আগেই টাকা শেষ। বাকি আরো দশ বারোদিন দুইটি কিডনি জরুরী কিনা সেটাই চিন্তা করি,হা হা হা।
এই অবস্থায় আমাদের বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট দেওয়াটা খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে। সেই জন্যই দেশের এই পরিস্থিতেও বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট এর বিষয়টা উল্লেখ করা হয়। এমডি স্যারও সবার মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে চিফ একাউন্টস কে বাৎসরিক ইনক্রিমেন্টের সীট তৈরী করার আদেশ দেন। আমরা সবাই খুশি মনে বৃহস্পতিবারে অফিস শেষ করে বাসায় গেলাম। শুক্রবারে সারাদিন টিপ টিপ বৃষ্টি পড়েছে। বাসায় থেকে শুয়ে বসে ভালোই দিনটি অতিক্রম হয়েছে। শনিবারে সকাল বেলা যথা সময়ে অফিসে আসলাম। সুন্দর ভাবেই কাজ করছিলাম। দুপুর বারোটার দিকে আমাদের অফিসের পিসি সদস্যদেরকে কনফারেন্স রুমে ডেকে পাঠালো। কনফারেন্স রুমে কি কথা হলো সেটা আমি জানতে পারি নাই। আমি দুপুর একটার সময় লাঞ্চে চলে গেলাম।
আড়াইটার দিকে লাঞ্চ থেকে ফেরত এসে জানতে পারলাম সব ম্যানাজার এজিএম সহ উপর লেভেলের কর্মকর্তাদের এমডি স্যারের রুমে মিটিং ডেকেছে। কি বিষয়ে মিটিং হচ্ছে তখনও আমি বুঝতে পারি নাই। ডেস্কে বসে পত্রিকায় চোখ বুলাতে লাগলাম। দেখলাম শিক্ষার্থীরা আবার সর্বাত্বক আন্দোলেনে নেমেছে। আগামীকাল রবিবারে সারা বাংলাদেশে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। এর মধ্যে আজকে বাংলাদেশের বিভিন্ন জাগায় শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সাথে সংঘর্ষ হয়েছে। কয়েক জন মারা গেছে। নারায়ণগঞ্জ, সাইনবোর্ড, যাত্রাবাড়ী, সনির আখড়া সহ বিভিন্ন জাগায় আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ করছে। আগামীকালকের অবস্থা এখনই টের পাচ্ছি।
অফিসের মিটিং শেষে জানতে পারলাম আমাদের অফিসের ক্যামিকেলের অনেক গাড়ী আটকা পড়েছে। গাজিপুরে আসা যাওয়া করতে পারছে না। চট্রগ্রাম থেকে এক্সপোর্টের মালামাল আসার কথা ছিল, সে গুলো আসছে না। অর্থাৎ দেশের অবস্থার সাথে আমাদের অফিসের অবস্থাও খারাপ। আর আমাদের অফিসের অবস্থা খারাপ হলে আমাদের অবস্থাও খারাপ। সেই সাথে আমাদের বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট ও সাময়িক ভাবে বন্ধ আছে। দেশের অবস্থা স্বাভাবিক হলে বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট হবে। সব মিলিয়ে একটু টেনশনে আছি। চিন্তা করেছিলাম ইনক্রিমেন্ট হলে বাসা চেইন্জ করবো, সেটা আর তারাতারি হচ্ছে না।
কার উপর রাগ করবো বুঝতেছি না। ক্ষমতাসীনরা যদি ছাত্রদের সাথে কথা বলে তাদের দাবী দাওয়া মেনে নিতো তাহলে আর এই অবস্থায় পড়তে হয় না। শিক্ষার্থীদের বন্ধু বান্ধব পুলিশের গুলিতে মারা যাচ্ছে,কাউকে জেলে নিয়ে যাচ্ছে তাই তাদের ভিতরে রাগ ক্ষোভ রয়েছে। অন্য দিকে দুর্নীতির কারনে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও খারাপ। বাজারে গেলে দ্রব্য মুল্যের দাম শুনলে মাথা নষ্ট হয়ে যায়। যারা বাজারে যায় তারা হয়তো বিষয়টা বুঝতে পারেন। চাউল কিনলে পছন্দ মত তরকারি কেনার টাকা থাকে না, তরকারি কিনলে মাছ কেনার টাকা থাকে না। আলু, পেঁয়াজ, মরিচ মসলা সে গুলো তো আছেই। এর মধ্যে যদি শুনি দেশের কর্তারা বসে বসে আমাদের নিয়ে মশকরা করে তাহলে কেমন লাগে চিন্তা করেন।
যায়হোক আমরা চাই সব কিছুর যেন একটি সঠিক সমাধান হয়। দেশের দুর্নীতি বন্ধ হোক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক- স্বৈরাচার নিপাত যাক, অত্যাচার নিপীড়ন বন্ধ হোক, দেশের শিক্ষা পতিষ্ঠানে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বন্ধ হোক। দেশের মানুষ ভোটের অধিকার ফিরে পাক,বাক স্বাধীনতা ফিরে পাক। পরিবার নিয়ে সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার অধিকার পাক। সত্যের জয় হোক,আমাদের ভাগ্যকাশ থেকে কালো মেঘ দুর হয়ে যাক।
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
ফটোগ্রাফির বিবরণ:
ডিভাইস | মোবাইল |
---|---|
মডেল | realme-53 |
শিরোনাম | আমাদের ভাগ্যকাশ থেকে কালো মেঘ দূর হোক।।। |
স্থান | নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, বাংলাদেশ। |
তারিখ | ০৩/০৮/২০২৪ |
কমিউনিটি | আমার বাংলা ব্লগ |
ফটোগ্রাফার | @joniprins |
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
@joniprins, [8/3/2024 5:58 PM]
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP