দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা [১০% লাজুক খ্যাঁকের জন্য]

in hive-129948 •  2 years ago 

হ্যালো আমার প্রাণপ্রিয় কমিউনিটির সদস্যগন
আমি @joniprins বাংলাদেশ থেকে সুখে দুঃখে সব সময় আছি আপনাদের পাশে।

আশা করি সবাই অনেক অনেক ভাল আছেন ,আর আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে অনেক ভাল আছি আলহামদুলিল্লাহ। আজ আমি আপনাদের মাঝে প্রতিদিনের মতো আবারো একটি নতুন পোস্ট শেয়ার করতে চলে এসেছি। আজ আমি আপনাদের মাঝে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা শেয়ার করব।

worker-3853779_1920.jpg

Source

106.png

বর্তমানে পত্রপত্রিকায় ও ফেসবুকে একটি বিষয় খুব আলোচনা হচ্ছে। আর সেটা হলো চা শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে। এত দিন চা শ্রমিকরা দৈনিক ১২০ টা মজুরিতে কাজ করে আসতেছিল। কিন্তুু এখন দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে কর্মবিরতি দিয়ে আন্দোলন করতেছে। মালিক পক্ষ ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে প্রথমে ১৪০ তারপর পাচঁ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা দিতে রাজি হয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে ১৬৭টি নিবন্ধিত চা বাগান রয়েছে। চা উৎপাদনে বাংলাদেশ ১০ম অবস্থানে রয়েছে। ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে ৯৬.৫ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। যা ২০২১ সালে সর্বউচ্চ রেকড গড়েছে। এবছর ও লক্ষ মাত্রা পেরিড়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে।

সকাল বেলা এক কাপ চা দিয়ে আমরা দিন শুরু করি। কাজের ফাকে ক্লান্তি দুর করার জন্য এক কাপ চায়ের তুলনা হয় না। ছোট থেকে বড়, গরীব ধনী সবাই চা পান করে থাকে। পাড়ার চায়ের দোকানদার ও দৈকিন এক হাজার কাপ চা বিক্রয় করে। পাচঁ টাকা থেকে ধরে ১০ টকা,২০ টাকা এমন কি জায়গা বেধে ৫০ টাকা ১০০ টাকাও এক কাপ চা বিক্রয় করা হয়।

কিন্তুু যে শ্রমিকরা রোধে পুরে, বৃষ্টিতে ভিজে, সাপ বিচ্ছু,বাঘ,ভাল্লূকের সাথে লড়াই করে চা উৎপাদন করে তাদের মজুরি মাত্র ১২০ টাকা। কাজে আসলে টাকা পাবে নয়তো টাকা পাবে না। অসুস্থতার কারনে না আসলেও টাকা পাবে না। নৈমিত্তিক বা মেডিকেলএমন কোন ছুটির ব্যবস্থা নেই তাদের। প্রতিদিন ২৩ কেজি চা-পাতা সংগ্রহ করতে পারলেই ১২০ টাকা মজুরি পাবে, বৃষ্টি বা অন্য কোন কারনে ২৩ কেজি চা-পাতা পূর্ন না হলে টাকা পাবে না। পরিবারের কেউ মারা গেলে বা অসুস্থ হলে অন্য সদস্য সেই স্থানে কাজে যোগ দিতে হয়, তা না হলে থাকার আবাসনটা হারাতে হয়।

দৈনিক ১২০ টাকা হলে মাসে ৩৬০০ টাকা। বর্তমানে পৃথিবীর কোন দেশে এত কম দামে শ্রম বিক্রয় হয় কিনা সেটা আমার জানা নেই। বর্তমানে চাল ডাল সহ নিত্য পন্যের যে দাম সে অনুযায়ী তারা বেচে আছে কিভাবে সেটাই আমার বুঝে আসে না।চা-বাগানের মালিকরা কোনদিন দেখতেও আসেনা যাদের রক্ত চুষে কানাডা,আমেরিকায় বাড়ি নির্মান করছে তারা কিভাবে আছে,কোন অবস্তায় আছে। দেশের শ্রম আইনের কোন ধারায় চা-শ্রমিকদের উপর কার্যকার করা হয় না। মালিক পক্ষ বলে তাদের মজুরি কম হলে তাদের অন্য অনেক সুবিধা রয়েছে। কিন্তুু অন্য অনেক কি কি সুবিধা সেটা কেউ জানে না।

অন্যান্য শ্রমিকরা বাৎসরিক ১০ দিন সিএল,১৪ দিন মেডিকেল, ও প্রত্যেক ১৮ কার্য দিবস পরে একদিন রেস্ট পায়। ইহার কোন সুযোগই চা-শ্রমিকরা পায় না। শ্রমিক আইন অনুযায়ী কাজের তিন মাস পর কার্ড দিতে হয় এবং ২ বৎসর কাজ করার পরে কোন শ্রমিক সেচ্ছায় চাকরি থেকে অব্যহতি দিলে তিন মাস তের দিনের টাকা পায়,যেটা চা-শ্রমিকরা পায় না। সরকারি হিসাব অনুযায়ী প্রত্যেক চা বাগানে শ্রমিকদের ছেলে মেয়েদের পড়া শোনার জন্য একটি করে প্রথমিক বিদ্যালয় থাকার কথা। কিন্তুু ১৬৭ টি চা-বাগানের মধ্যে মাত্র ৬৪টি বাগানে স্কুল পাওয়া যায়। প্রত্যেক চা-বাগানে একটি করে মেডিকেল সেন্টার থাকার কথা। কিন্তুু মাত্র তিনটি বাগানে মেডিকেল সেন্টার পাওয়া যায়। মহিলা শ্রমিকরা মাতৃত্বকালীন ছুটির পাওয়ার কথা থাকলেও ছুটি কাটালে কেউ টাকা পায় না।

2bP4pJr4wVimqCWjYimXJe2cnCgn9T8yR8xAxr6yYTx.png

tea-1519701_1920.jpg
Source

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক শ্রমিককে একটি করে ঘর দেওয়ার কথা কিন্তুু সরজমিনে দেখা যায়, বাবা-মা, ছেলে-ছেলের বউ, বিবাহিত,অবিবাহিত ছেলে মেয়ে,গরু ছাগল একসাথে এক ঘরে বসবাস করতেছে। এগুলো দেখার কেউ নেই। বছরের পর বছর শ্রমিকদের শোষন করে এক শ্রেনীর মানুষ কোটি কোটি মিলিয়ন ডলারের মালিক হয়ে যাচ্ছে। অথচ শ্রমিকদের পক্ষে কথা বলার কেউ নেই।

সাধারনত ইউরোপ সপ্তাহে ২৭৬ ইউরো ইনকাম করতে না পারলে তাকে দরিদ্র বলে। ২৭৬ ইউরো বাংলাদেশি টাকায় ৩০,৯১২ টাকা হয়। এমন সময় বাংলাদেশে দৈনক ৩০০ টাকা মজুরির জন্য আন্দোলন করতে হয়। অথচ হুট করে নিত্য পন্যের দাম বাড়িয়ে নিজেদের পকেট বাড়ি করে, বলে ইউরোপ আমেরিকায় নাকি নিত্য পন্যের দাম বেড়েছে। দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরি দিতে পারে না, আবার ইউরোপ আমেরিকার সাথে তুলনা করে। দেশ নাকি ইউরোপ আমেরিকা হয়ে গেছে। বাংলাদেশ না কি ঋণ নেয় না, ঋণ দেয়। এমন কথা শুনলে নিজেই নিজেকে মারতে মন চাই।

এতদিন ধরে আন্দোলন করতেছে,মালিক পক্ষ বা উপর মহলের কোন খবরই নাই। আন্দোলন করতে করতে মরে গেলেও তাদের কিছু যায় আসে না। তোমরা শ্রমিক শ্রেনী তোমরা জিম্মি,তোমাদের কথা কেউ শুনবেনা। তোমাদের কষ্ট কেউ দেখবে না। দিন শেষে রায় আসবে সেই শোষক শ্রেনীদের পক্ষেই।

বন্ধুরা মনের ভিতরে অনেক কষ্ট নিয়ে আপনাদের সাথে কথা গুলো সেয়ার করলাম। যদি কোন ভুল হয়ে থাকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাই ভাল থাকবেন। সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।

108.png

111.png

D5zH9SyxCKd9GJ4T6rkBdeqZw1coQAaQyCUzUF4FozBvW7jpbMNKdA1Swxiey857mvDu4v9YQGGGa7u8o3aSuH2T9hohoCpGA4xjXECnmqJUuaGBR4n9tutUQsJX8FzZckBvZL.png

RGgukq5E6HBM2jscGd4Sszpv94XxHH2uqxMY9z21vaqHt1rDaeRdtDvsXGmDbuRg1s1soomTEddbTFxfMMYzob4oRFK8fTZQyYP8LbQ4tbMTAd2enV3Wq9Ze3N8TTU2.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Hello friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.

I have little voting completed for you.. I support you^^

আপনি যুগোপযোগী একটি পোস্ট আজকে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি চা কর্মীদের ঠকানো হচ্ছে এবং তাদের সাথে অমানবিক কাজ করা হচ্ছে।

এই নিয়ে আন্দোলনটা শুরু হয়েছে। আমি চাইবো আন্দোলনটা জোরালো হোক। ফেসবুক একটা বড় লেখা পড়লাম এই বিষয়ে। সত্যই ১২০ টাকাটা খুবই কম।

দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা, টাইটেলটি পড়ে পুরোটা পড়ার জন্য মনটা কৌতুহল হয়ে উঠলো। অবশেষে পড়লাম। অসম্ভব ভালো লেগেছে ভাইয়া।আপনার এই লেখার মাধ্যমে কিছু চিরন্তন সত্য কথা ফুটে উঠেছে। আসলে ভাইয়া আগে যখন আলিফ লায়লা দেখতাম, তখন একেক জনের কথা শুনলে হাসি পেত।অমুক করবে, তমুক করবে।আসলে কিছুই না।শুধু কথার কথা। আর আমাদের এখানকার অবস্থা ও একই ইউরোপ আমেরিকা সাথে তুলনা আসলে এসব তো শুধু মাত্র শান্তনা বা ব্রেন ওয়াস।আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ এত সুন্দর করে কিছু সত্য কথা আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য।

আপনি সময়োপযোগী একটা পোস্ট করেছেন। আসলে বর্তমানে চার্জ শ্রমিকরা বঞ্চিত তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে। আমাদের সবার উচিত হবে যাতে আমরা এইসব চা শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ায়।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

আপনি এই সভ্য সমাজের অসভ্যতা রীতি নিয়ে পোস্ট করেছেন ভাই। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আসলেই এটি একটি অমানবিক কাজ। মাত্র ১২০ টাকাই মজুরি আমি তো শুনেই চমকে উঠেছিলাম। বর্তমান বাজারে এটা কিছুই না। অথচ ৩০০ টাকার মজুরির দাবিতে শ্রমিকদের আন্দোলন করতে হচ্ছে। আমরা কোথায় আছি ? আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই।