জিএফআই এর একটি প্রতিবেদনের আলোকে কিছু কথা ।। 10% beneficary for @shyfox ❤️

in hive-129948 •  2 years ago  (edited)
আসসালামুআলাইকুম / আদাব / নমস্কার

ব্লগ লেখা শুরু করার প্রথমে আমার বাংলা ব্লগ সহ বিশ্বের সকল স্টিমিট মেম্বারদের প্রতি রইল আমার অন্তরের অন্তস্থল থেকে শুভকামনা। আমার বাংলা ব্লগ শুধু একটি কমিউনিটির নাম নয়। আমার বাংলা ব্লগ মানে একটি পরিবার, একটি দল,একটি সমাজ,একটি জাতি। যারা বাংলা ভাষাকে অন্তর থেকে ভালবাসে তাদেরকে আমরা আমাদের কমিউনিটিতে সাদরে আমন্ত্রন জানাই। বন্ধুরা অনেক কথা বলে ফেললাম। চলোন মূল পর্বটা শুরু করি।

composing-5121666_1920.jpg
Source

এক বাড়ির মালিক একটি গাধা আর একটি কুকুর পালন করতো। গাধা সারাদিন রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে পাহড় পর্বত পাড়ি দিয়ে মালিকের শষ্য আর মালামাল বাড়িতে নিয়ে আসতো। আর কুকুরকে রাখা হয়েছে সেই শষ্য আর মালামাল পাহারা দেওয়ার জন্য। গাধা আর কুকুর পাশাপাশি থাকতো। এক বাড়িতে পাশাপাশি দুই জন থাকায় তাদের মাঝে ভালই বন্ধুত্ব তৈরী হলো। গাধা সারাদিন বোঝা বহন করলেও খাবারের সময় গাদার কপালে খড় আর পানি ছাড়া আর কিছুই জুটে না। এদিক দিয়ে কুকুর আবার ভালই খাবার দাবার পায়। আরাম আয়েশ খাবার দাবার কোন দিক দিয়ে কুকুরের কোন কমতি নেই।

একদিন রাতের বেলা গাধা আর কুকুর কথা বলতেছে। হঠাৎ করে গাধা দেখতে পেল যে, বাড়িতে চোর ঢুকতেছে। গাধা তো চোরকে দেখে লাফালাফি শুরু করলো। কুকুরকে বার বার ডাকতেছে চোরকে আটকানোর জন্য,চোরকে কামাড় দেওয়ার জন্য। কুকুরের নাকের ডগা দিয়ে চোর বাড়িতে প্রবেশ করতেছে অথচ কুকুর কিছুই বলছে না। দেখেও না দেখার মত করে শুয়ে আছে।

গাদা হঠাৎ করে লক্ষ করে দেখলো কুকুরের সামনে মাংস সহ একটি হাড্ডি। কুকুর মনের মত করে হাড্ডি খাচ্ছে। গাধা কুকুরকে লক্ষ করে বললো তুমি একটা নিমুহারাম, তুমি ঘোষখোর তুমি মালিকের খাবার খেয়ে মালিকের সাথে বেইমানি করতেছো। বাড়িতে চোর ঢুকতেছে তুমি ঘুষ খেয়ে বসে আছো। একথা গুলো বলতেছে আর রাগে গাধা এদিক সেদিক ছোটাছুটি ফালালাফি চিৎকার চেঁচামেচি করতেছে।

গাধার চিৎকার চেঁচামেচির কারনে মালিকের ঘুম ভেঙ্গে গেল। মালিকে এসে দেখে কুকুর নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে আর গাধা লাফালাফি চেঁচামেচি করতেছে। মালিক মনে করলো গাধার তো কোন কাজ নেই,সারাদিন খায় আর ঘুমায়। এখন মনে হয় গাধাকে জ্বীনে ভর করেছে। মালিক একটি লাঠি নিয়ে গাধাকে চটাং চটাং করে কয়েকটা মেরে দিল। গাধা মনের মধ্যে দুঃখ কষ্ট নিয়ে বসে পড়লো। বসে বসে ভাবতেছে কুকুর ঘুষ খেয়ে বাড়িতে চোর ঢুকতে দিলো আর তার প্রতিবাদ করায় মালিক আমাকে মারলো আবার গালি গালাজও করলো, এটা কেন করলো। কুকুর হাড্ডি পেয়ে গেছে তার তো কোন চিন্তা নেই কিন্তুু চোর যদি মালিকের সব কিছু নিয়ে যায় তাহলে পরের দিন আমার কি হবে। গাধা বুঝতে পারলো বিপদের সময় দায়িত্বশীলারা যখন চুপ থাকে তখন অন্যান্যদের কান্না কাটি লাফালাফির দ্বারা কিছু আসে যায় না।

বাংলাদেশের গাধা নামক প্রবাসিরা ছেলে মেয়ে বউ, মা-বাবা আত্নীয়স্বজন সবাইকে ছেড়ে বিদেশে গিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশে রেমিটেন্স পাঠায়। আর বাংলাদেশের শিক্ষিত সমাজের লোকেরা, রাজনৈতিক নেতা-নেন্ত্রীরা পাহাদার দের হাড্ডি দিয়ে সেই টাকা বিদেশে পাচার করতেছে। আর জনগন নামক গাদারা সেই বিষয় নিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি আন্দোলন করলে সরকার বিভিন্ন কায়দায় লাঠি দিয়ে থামিয়ে দেয়। আমি এখানে কোন রাজনৈতিক আলোচনা বা কোন দল অথবা কোন ব্যাক্তিকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলছিনা। আমি প্রবাসি ভাইদের রেমিটেন্সের মূল্যায়ন করার চেষ্টা করতেছি। কারন বর্তমানে বাংলাদেশেটা টিকে আছে প্রবাসি ভাইদের রেমিটেন্সের মাধ্যমে।

tan-generator-4789656_1920.jpg
Source

যারা রক্ষক তারা যদি বক্ষক হয় তাহলে দেশ দেউলিয়া হতে বেশি দিন লাগবে না। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যানশিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) একটি প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে একটি তথ্য পাওয়া গেছে। দেখা যায় ২০০৫ সালে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে ৪২৬ কোটি মার্কিন ডলার। একই ধারায় ২০০৬ সালে ৩৩৭ কোটি, ২০০৭ সালে ৪০৯ কোটি, ২০০৮ সালে ৬৪৪ কোটি, ২০০৯ সালে ৫১০ কোটি, ২০১০ সালে ৫৪০ কোটি, ২০১১ সালে ৫৯২ কোটি, ২০১২ সালে ৭২২ কোটি, ২০১৩ সালে ৯৬৬ কোটি, ২০১৪ সালে ৯১১ কোটি এবং ২০১৫ সালে এক হাজার ১৫১ কোটি ডলার পাচার হয়। এরপর বাংলাদেশ থেকে আর কোনো তথ্য না পাওয়ার কথা জানিয়ে সংস্থাটি বলেছিল, বিগত বছরগুলোতে অর্থপাচারের ঘটনা অনেকাংশে বেড়েছে। আগের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ এবং অন্যান্য সংস্থার প্রতিবেদন আমলে নিয়ে সংস্থাটি জানিয়েছিল, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে ৬৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়। সে হিসাবে ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে পাচার হয়েছে তিন লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। গত ১৬ বছরে সর্বমোট দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে অন্তত ১১ লাখ কোটি টাকা। সুত্র কালের কণ্ঠ

বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রতিবেদন বলছে, প্রধানত ১০টি দেশ এই অর্থপাচারের বড় গন্তব্যস্থল। দেশগুলো হলো সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, অস্ট্রেলিয়া, হংকং ও থাইল্যান্ড। আর পাচার চলছে মূলত বাণিজ্য কারসাজি ও হুন্ডির মাধ্যমে।

উপরোক্ত রিপোর্টটি দেখে আমি রীতিমত অবাক হয়ে গেলাম। দেশের জনগন টাকার অভাবে বিদ্যুৎ পায় ন। জ্বালানী তেলের অভাবে গাড়ি চলে না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারনে দুবেলা দুমুঠো ভাত ক্ষেতে পারে না। সেই দেশ থেকে বছরে গড়ে পাচার হয় ৬৪ হাজার কোটি টাকা। আমার আর কিছু বলার নাই।

109.png

3YjRMKgsieLsXiWgm2BURfogkWe5CerTXVyUc6H4gicdRPjVagCKakAuSTsQyj2bkd5a1qGy627tazWyRR8KvSGF5XUzUYGAJxbEm1WagpCyidt3eCtv81zeLX27xCgJJcRrX6JcoixPY1ZYkTzZRvU4cg43nsPEvFsMrCx1qpdtvt7rn7wUCn6Q3hQL3sAJM.png

4gZTTLyoV1msFb1u1BdB14ZHSP5sNg8hbP9cbJyTmUqfzL1as2zt5nA5iP9iEBmXtJKZZD3SHGtdFKZ13Up5EmSAxpDYtwYvvxyhsR48F5wdZ6ZhgEKtW9w1csKVawJHrqc3fgSkcpz8WsTY1MvhswZsey8zNe3vkwTdKjCivA3Z6dpaPrexwcy6xHQHfFaMXGPra6UPL.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

ভাইয়া আপনাকে পোস্টের মাধ্যমে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। এবং গাধা ও কুকুরের গল্পটি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। ঠিক বলেছেন যারা দায়িত্বশীল তারাই যদি বিপদের সময় চুপ করে থাকে তখন অন্যরা চিল্লাচিল্লি করে কোন লাভ হয় না বরং আরো অপমানিত হয়,দোষী হয়। বাংলাদেশের এত টাকা পাচার সম্পর্কে জানতে পেরেছি, আপনি ঠিক বলেছেন ভাইয়া।

জী আপু বছরে বাংলাদেশের এতটাকা পাচার হয় আমি নিজেও জানতাম না। ধন্যবাদ।

অসাধারন বলেছেন।বিশেষ করে উদারাহরণ টা অসাধারণ হয়েছে।আসলেই আমাদের বাস্তব অবস্থা এমনই।তবে ভাইয়া যদি কিছু মনে না করেন তবে গাধা বানান টা ঠিক করুন।একটু দৃষ্টিকটু লাগছে।

ধন্যবাদ ভাইয়া । অনেক খুশি হলাম।