আমাদের ফেমিলি ও মোবাইল ফোন - দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব // [১০% লাজুক খ্যাঁকের জন্য] //

in hive-129948 •  2 years ago 
আসসালামু-আলাইকুম। আদাব - নমস্কার।

💖সবাইকে স্বাগতম 💖

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগ বাসি.. সবাই কেমন আছেন? আশা করছি সবাই খুব ভালো আছেন,আমিও আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। আমি আজকে আপনাদের সামনে হাজির হয়ে গেলাম আরো একটি পোষ্ট নিয়ে। আজকে আমাদের ফেমিলি ও মোবাইল ফোন নিয়ে দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব লেখবো। চলোন তাহলে শুরু করা যাক।

pexels-pixabay-209716.jpg

source

সকাল বেলা আমি খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে গেলাম। আমি অবশ্য প্রতিদিনই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়ি। কারন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে পারলে আমাদের এবং চাচার কুল বা বড়ই গাছের বড়ই পাওয়া যেত। রাতের বেলা গাছ থেকে পাকা পাকা পরতো নিচে। আমি এবং আমার ভাই কে তারাতারি উঠতে পারে তা নিয়ে রীতিমত যুদ্ধ করতাম। আমার ভাই অবশ্য রাতের বেলার মোবাইলের কাহিনী জানে না। জানলে ঐ সবার আগে মোবাইরের মালিক বনে যেত। সকাল হওয়ার অনেক পরে আমার হাতে নতুন মোবইল দেখে সে বিচলিত হয়ে গেল, নতুন মোবাইল কোথায় থেকে আসলো। আমি সব ঘটনা খুলে বলে দিলাম। ঘরের মধ্যে আগের যে নোকেয়া মোবাইলটি ছিল সেটা অবশ্য সে আর আম্মুর কাছেই বেশি থাকতো। এখন নতুন লাল মোবাইলটি কে চালাবে, কার হাতে থাকবে, সেটা নিয়ে শুরু হয়ে গেল তুমুল কান্ড।

আমি বললাম আগের মোবাইলটি আপনারা চালান এটি আমি চালাবো। ভাইয়া বললো আগেরটা আম্মু চালাবে আর লালটি সে চালাবে। আমরা দুই ভাইয়ের মধ্যে শুরু হয়ে গেল তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ, অবশ্য এই যুদ্ধকে কোন দেশ স্বীকৃতি দেয়নি হা.. হা.. হা..। মা জাতিসংঘের মহাসচিব হয়ে যুদ্ধের বিরুতি টেনে একটা সমাধান দিলেন। সমাধান টা হলো নোকিয়া মোবাইটি ঘরে থাকবে আম্মু চালাবে। আর নতুন লাল মোবাইলটি আমারা দুই ভাই মিলে চালাবো। মানে কারো মালিকানায় থাকবে না। যে যখন ইচ্ছা চালাবে। যায় হোক মোটামুটি একটি সমাধান পাওয়া গেল। আমার ভাইতো আর একক ভাবে মালিক হতে পারে নাই, এই জন্য আমি খুশি মনে বিচার মেনে নিলাম।

দিনের বেলা পড়া শুনো আর বিভিন্ন কাজের জন্য মোবাইল তেমন কেউ হাতে নেওয়ার সময় পায় না। ঘরের মধ্যেই পরে থাকে সবসময়। রাতের বেলা একটু জামেলা হয়। ভাইয়া চাই তার হাতে আমি চাই আমার হাতে। অবশেষে মায়ের মোবাইলটি দিয়ে সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। তখন মোবাইলে গেইম খেলার প্রচলনটা তেমন চিল না। আমরা বাহিরেই বিভিন্ন খেলাধুলা করতাম। আর মোবাইলের বিষয়ে তেমন বেশি কিছু বুঝতামও না। যায়হোক এই মোবাইল নিয়ে আমি অনেক জাগায় ঘুরতেও চলে গেছিলাম। ছবি তুলেছি ভালই সময় কাটতে ছিল।

আমাদের ঘরে আর বেশিদিন মোবাইলটা থাকতে পারলো না। পনের থেকে বিশ দিন পর হঠাৎ রাতের বেলা সেই মামা এসে হাজির। এসে মাকে বললো মোবইলটি কোথায়..? মোবাইলটি সে নিতে এসেছে। মামা দুই হাজার টাকা দিয়ে মোবাইলটি নিয়ে গেল। আর আমরা দুই ভাই মন খারাপ করে বসে রইলাম। মা মোবাইলটি দিয়ে হাফ ছেড়ে বাচলেন। এই মোবাইলের জন্য প্রতিদিন আমরা দুই জনের বিচার করতে হতো। এখন জামেলা চলে গেছে।

যায়হোক তার কয়েক বছর পর ধীরে ধীরে প্রত্যেকের হাতে হাতে মোবাইল আসতে শুরু করলো। একসময় আমাদের ফুল ফ্যামিলির জন্য একটি মোবাইল ছিল আর এখন মায়ের হাতে মোবাইল,বাবার হাতে মোবাইল,আমার হাতে মোবাইল,বোনের হাতে মোবাইল। প্রত্যেকের হাতে হাতে মোবাইল। শুধু মোবাইল বললে ভুল হবে এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন।

আমার হাতে মোবাইল একক ভাবে ফোন এসেছিল ২০১২ সালে এসএসসি পরিক্ষা দেওয়ার কয়েকদিন আগে। আমাদের উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় পরিক্ষা দিতে যাবো তাই ছোট মামা একটি চায়না মোবাইল ফোন দিয়েছিলেন। সেটি অবশ্য বেশি দিন ব্যবহার করতে পারিনি,পরিক্ষার পরে মায়ের সাথে রাগ করে ভেঙ্গে ফেলেছিলাম। পরে মোবাইল হস্পিটালে নিয়ে মেরামত করার চেষ্টা করেছি কিন্তুু চায়না তো তাই আর কাজ করেনি।

তারপর আমি যখন ইন্টার ফাষ্ট ইয়ারে পড়ি, আমার এক চাচাতো কাকা একটি স্যামসাং বাটন মোবাইল ফোন দিয়ে ছিল। সেটি নিয়ে আমি কলেজে যাওয়া আসা করতাম। ভালই লাগছিল তখন। তার বেশ কিছুদিন পর বাবাকে মামা একটি দামি নোকিয়া মোবাইল ফোন দিয়েছিল। আমি টাকা জমিয়ে একটি চায়না মোবাইল কিনে বাবাকে দিয়ে সেই নোকিয়া মোবাইলটি আমি দখল করে ফেলিছিলাম। সেটি আমার কাছে প্রায় চার বছর ছিল। সেটি দিয়েই আমি প্রথম ফেসবুক একাউন্ট খুলেছিলাম। ঐ মোবাইলটি দিয়েই আমি অনলাইন জগতে প্রবেশ করেছিলাম।

ইন্টার পাশ করার এক বছর পর আমি একটি চাকরি নিয়েছিলাম। চাকরি নেওয়ার এক বছর পর টাকা জমিয়ে একটি সিম্ফনি এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন কিনেছিলাম। যেটা দিয়ে আমি প্রথম ইমু,হোট্সাআপ চালিয়েছিলাম। এখন আমার কয়েকটি ডিভাইস আছে। ল্যাপটপ, কম্পিউটার আছে।

pexels-jessica-lewis-creative-4200824.jpg
source

সব থেকে আশ্চর্যের বিষয় হলো আমি কোন ডিভাইস দিয়েই গেম খেলতে পারি না। গেইম খেলতে গেলেই আমার মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যায়। পাচঁ থেখে দশ মিনিটের বেশি গেইম খেলতে পারি না। যেটা আমার একটি কঠিন সমস্যা। শুধু তাই না আমি গাড়িতে বসে মোবাইল চালাতে পারি না। মানুষ গাড়িতে বসে গেইম খেলে,ফেসবুক চালাই অনলাইনে কাজ করে কিন্তুু আমি সেটা পারি না। এমনকি কেউ গেইম খেললে আমি দেখলেও আমার মাথা ব্যথা করে।

বর্তমানে বাচ্ছা এবং যুবক ছেলেদের সব থেকে বড় সমস্যা হলো মোবাইল গেইম। মোবাইলে গেইম খেলার জন্য তাদের পড়া শুনা গোল্লাই গেছে। বিশেষ করে পাবজি আর ফ্রিরিফাইয়ার নামে গেইম গুলো বর্তমান ছেলে মেয়েদের অনেক ক্ষতি করতেছে। গেইম খেলতে খেলতে প্রায় ৮০% ছেলে মেয়েদের চশমার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। চোখে কম দেখে। মাথার মধ্যে প্রবলেম হচ্ছে। মিজাজ খিটখিটে হযে যাচ্ছে। সর্বপরি তাদের মোবাইল গেইম তাদের নেশার মত হয়ে গেছে। এভাবে চললে আমাদের পরবর্তি জেনারেশনের ধ্বংসের মুখে পড়ে যাবে।

আমি যখন মোটামুটি বুঝতাম তখনও ফোনে কথা বলতে লজ্জা পেতাম। আর এখন বাচ্ছাদের কে মোবাইল ফোন দিয়ে কান্না থামাতে হয়, মোবাইল দিয়ে খাবার খাওয়াতে হয়, মোবাইলকে খেলনা হিসাবে দিয়ে বাচ্ছাকে শান্ত রাখতে হয়,মোবাইল দিয়ে বাচ্ছাকে ঘরে বন্ধি করে রাখে। ঘুমানোর জন্য বাচ্ছাকে মোবাইল দিতে হয়। চিন্তা করা যায় ব্যপারটা।

109.png

বন্ধুরা আজ এখানেই বিদায় নিচ্ছি, দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব কেমন হলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। দেখা হবে আবার নতুন বিষয় নিয়ে ততদিন পর্যন্ত ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন, নিজের প্রতি খেয়াল রাখবেন। অপচয় রোধ করবেন। নিজের শহর নিজে পরিষ্কার রাখবেন। আল্লাহ হাফেজ।

108.png

111.png

D5zH9SyxCKd9GJ4T6rkBdeqZw1coQAaQyCUzUF4FozBvW7jpbMNKdA1Swxiey857mvDu4v9YQGGGa7u8o3aSuH2T9hohoCpGA4xjXECnmqJUuaGBR4n9tutUQsJX8FzZckBvZL.png


112.gif

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

মোবাইল ফোনের সহজলভ্যতা দিন এর পর দিন বেড়েই যাচ্ছে , এতে আমার কাছে মনে হয় ভালোর চেয়ে খারাপ টাই বেশী হচ্ছে,বাচ্চা, বয়স্ক সবাই এখন ফোন আসক্তি তে ভূগশে, এর প্রতিকার অনেক কস্টসাধ্য

আপনার লিখা অনেক সুন্দর হয়েছে, অন্য লিখার অপেক্ষায় রইলাম, ভালো থাকবেণ, সুস্থ থাকবেন

জী ভাইয়া বর্তমানে মোবাইল ফোন রুগটা বেশি বেড়ে যাচ্ছে। ধন্যবাদ ভাইয়া।

আসলেই বিষয়টি অন্যরকম যদি আপনি ফোন ইউজ করেন কোন সমস্যা নেই। কিন্তু ফোনে যদি আপনাকে ইউজ করে তাহলে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হবেন আপনি। তাই আমাদের ফোন সম্পর্কে আসক্ত হওয়া যাবে না। ধন্যবাদ সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

ঠিক বলছেন ভাই,আপনার কমেন্টটি অনেক ভাল লাগলো।