জীবনে প্রথমবার স্কুল পালিয়ে মায়ের হাতে কি মাইরটা খেলাম 10% beneficary for @shyfox ❤️

in hive-129948 •  2 years ago 

হ্যালো বন্ধুরা, কি খবর সবার

কেমন যাচ্ছে আপনাদের দিন কাল। কিভাবে আপনাদের সময়কে উপভোগ করছেন। আজ সারাদিন বৃষ্টি হচ্ছে, আমি যখন পোষ্ট লিখতেছি তখনও বৃষ্টি হচ্ছিলো। আশা করি আপনারা বৃষ্টিকে সুন্দর ভাবেই উপভোগ করছেন। বৃষ্টির দিনে খিচুরি রান্না করে বৃষ্টির সময়টাকে উপভোগ করতে পারেন। একা বা দুুই জনে বৃষ্টিতে ভিজে বৃষ্টিকে উপভোগ করতে পারেন। বৃষ্টি দেখে বৃষ্টিকে উপভোগ করতে পারেন। বৃষ্টির দিনে জানালার পাশে দাড়িয়ে চা কফি খেতে খেতে বৃষ্টিকে উপভোগ করতে পারেন। বিভিন্ন ভাবে বৃষ্টিকে উপভোগ করতে পারেন। তবে তার জন্য আগে আপনার মনকে স্থীর করতে হবে। কি ভাবে বৃষ্টিকে উপভোগ করবেন।

প্রতিদিনের নিয়ম অনুযায়ী আজকেও আপনাদের সামনে হাজির হয়েছে সুন্দর একটি পোষ্ট নিয়ে। আজকে আমি আপনাদের সাথে আমার স্কুল জীবনে প্রথম স্কুল পালানোর গল্প সেয়ার করবো। প্রথমবার স্কুল পালিয়ে মায়ের হাতে যে কেলানি খেয়েছি তা জীবনেও ভুলবোনা। চলোন গল্পটা শুরু করি।

children-5833719_1920.jpg
Source

আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে,আমি যখন প্রথমবার স্কুলে প্রথম শ্রেনীতে ভর্তি হয় তখন আমার রোল নাম্বার ছিল ৩৭। আমার সাথে একটি মেয়ে ভর্তি হয়েছিল তার রোল নাম্বার ছিল ৩৮। দুরের কোন মেয়ে নয় আমাদের পাড়া প্রতিবেশিই, চাচাতো বোন লাগে। তার নাম ছিল রাকিবা। রাকিবা সহ আমার ক্লাসে যেসকল মেয়ে ছিল তাদের বর্তমানে কারোর তিনটা বাচ্ছা আবার কারো চারটা বাচ্ছা আছে। তাদের মধ্যে কারো কারো ছেলে মেয়ে নবম বা দশম শ্রেণীতেও পড়ে। আমার স্কুল লাইফের কোন মেয়ে বন্ধুর সাথে আমার এখন কোন যোগাযোগ নেই। তবে রাকিবার বাড়ি আমাদের পাড়ায় হওয়ার কারনে স্বামীর বাড়ি থেকে আসলে মাঝে মাঝে রাস্তা ঘাটে দেখা হয় কিন্তুু কোন কথা হয় না।

আমি যখন প্রথম শ্রেণীতে পড়ি আমার বড় ভাই তখন দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে। আমি যখন দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ি বড় ভাইয়া তখন দ্বিতীয় শ্রেণীর ফাইনাল পরিক্ষায় ফেল করে আমার সাথে দ্বিতীয় শ্রেণীতেই থেকে যায়। তারপর দুইভাই এক সাথে তৃতীয় শ্রেণীতে উঠি। তৃতীয় শ্রেণীতে উঠে আমার রোল ১০ এর নিচে চলে আসে। কিন্তুু ভাইয়ার রোল নাম্বার ২০ এর উপরে থেকে যায়। তৃতীয় শ্রেণীতে উঠে বড় ভাইয়া আর আমার এক মামা ছিল, আমাদের সাথেই পড়তো, তারা দুইজন মাঝে মাঝে স্কুল ফাকি দিতো। মানে অনিয়মিত হয়ে গেল, প্রতিদিন স্কুলে আসতো না। এর মাঝে আবার বড় ভাইয়া আরো বেশি অনিয়মিত হতে লাগলো। মামার কথা আগে একবার পোষ্টে বলেছিলাম,তার নাম রুবেল বর্তমানে সে লেবাননে থাকে।

আমি প্রায় সময় একা একা স্কুলে আসা যাওয়া করতাম। আমি সব সময় শান্ত থাকতাম। কারো সাথে তেমন মিশতাম না, কথা বার্তাও বলতাম না। স্কুলের আশে পাশে বাড়ি এমন কিছু ছেলে পেলে আমার সাথে দুষ্টামি করার চেষ্টা করতো, কিন্তুু আমি তাদের নামে স্যার ম্যাডামের কাছে নালিশ করতাম। ক্লাসে তাদেরকে স্যার ম্যাডামরা মারতো। তখন ঐ ছেলেপেলেরা ক্লাসের মধ্যে আমার দিকে রাগ ক্ষোভ নিয়ে তাকাতো। আর হাতের ইশারায় আমাকে বলতো যে ছুটির পরে বাড়ি যাওয়ার সময় আমাকে রাস্তায় মারবে। আমি তখন একটু ভয়ে ভয়ে গেলাম। কি করা যায় চিন্তা করতে লাগলাম। তারা কয়েকজন ছেলে পেলে আর আমি একা, তাদের সবার সাথে তো একা মারপিট করে পারা যাবে না। আমার সাথে আমার বড় ভাই আর মামা যদি থাকতো তাহলে তো কোন টেনশন ছিল না।

পঞ্চম শ্রেণীতে আমার পাড়ার এক বড় আপু পড়তো। তার নাম চিল রুমা। ক্লাস ছুটি হওয়ার পর সাথে সাথে এক দৌড় দিয়ে আমি আপুর কাছে চলে যেতাম। আপু যদিও বড় তারপরও তো সে একজন মেয়ে মানুষ, তারা আমাকে মারার জন্য অনেক চেষ্টা করতো কিন্তুু আপু আর আপুর কিছু ফ্রেন্ডের কারনে মারতে পারতো না, বেচে যেতাম। কিন্তুু এভাবে কত দিন তারা আমাকে বাচাবে। আমি বুদ্ধি করে ঔ ছেলেদের সাথে মিশতে শুরু করলাম।তাদের সাথে বন্ধুত্ব করার চেষ্টা করলাম। তাদেরকে আইসক্রিম খাইয়ে বন্ধুত্বটা পাকা পোক্ত করে ফেললাম। এখন তাদের সাথে এমন বন্ধুত্ব হলো যে আমি একদিন স্কুলে না আসলে তারা আমাকে ভালই খুজা খুজি করে এমনকি খুজতে খুজতে বাড়ি পযর্ন্ত চলে যায়।

এমন ভাবে ভালই চলছিলো আমার তৃতীয় শ্রেণীর স্কুল লাইফ। স্কুলে আসার সময় একা একা আসতে কি আর ভাল লাগে। ভাইয়াকে স্কুলে আসার জন্য অনেক বার বলতাম,ভাইয়া না আসলে আমি মামার বাড়ি যেতাম। মামাকে অনেক বুঝিয়ে স্কুলে নিয়ে আসতাম। মামা স্কুলে এসে এক দুইটি ক্লাস করেই বাড়ি যাওয়ার চিন্তা করতো। বার বার বলতো চল বাড়ি চলে যায়,চল বাড়ি চলে যায়। আমি বললাম এখন ক্লাস না করে বাড়ি চলে গেলে আম্মা আমার খাবার বন্ধ করে দিবে। মামা বলে আমরা তো
এখন বাড়িতে যাবো না, এখন স্কুল থেকে বের হয়ে রাস্তায়, বাজারে ঘুরে চারটার সময় বাড়ি যাবো। তাহলে আর তর আম্মু বুঝবে না। আমারা যে স্কুল পালিয়েছি। মামার একথা শুনার পর আমি কিছুটা সাহস পেলাম।

একদিন লাঞ্চের সময় আমরা দুই জন স্কুল থেকে পালিয়ে গেলাম। আমরা পালিয়ে বাস স্ট্যন্ডে গিয়ে বসে থাকলাম। রাস্তার পাশে বসে আমরা দুইদিক থেকে আসা গাড়ি গুনা গুনি করলাম। তারপর চারটার সময় অন্যান্য স্টুডেন্টদের সাথে বাড়ি ফিরলাম। বাড়ি ফিরার সাথে সাথে মা আমাকে সুন্দর ভাবে ভাত খাওয়ালেন। তারপর বাশঁঝাড় থেকে একটি কাচা বেত এনে এমন মার মারলেন,জীবনে আর স্কুল পালানোর কথা ভুলে গেলাম। ছোট থেকে আজ পর্যন্ত মায়ের হাতে যত মার খেয়েছি,ঐদিন তার থেকে বেশি মার খেয়েছি। মার খেয়ে রাতের বেলা বিছানায় শুয়ে শুয়ে চিন্তা করি,মামার জন্য আজ এত মার খেলাম। কিন্তুু স্কুল পালানোর খবরটা মায়ের কাছে কে দিল...?

পরেরদিন স্কুলে যাওয়ার পর আমার বন্ধুরা আমাকে দেখে হাসিহাসি করতে লাগলো। আমার তখন তাদেরকে দেখে সন্দেহ হতে লাগলো,যে তারাই মায়ের কাছে গতকালকের স্কুল পালানোর খবরটি দিয়েছে । অবশেষে সব খবর নিয়ে জানতে পারি যে,আমার বন্ধুরা আমরা স্কুল পালানোর সময় দেখে ফেলে। আর এটাও তারা দেখে ফেলে যে আমরা স্কুল পালিয়ে বাড়িতে না গিয়ে বাস ট্যান্ডে বসে সময় অতিবাহিত করেছি। আর তারা তো আমাদের বাড়ি চিনে। মায়ের কাছি গিয়ে আরো বাড়িয়ে বলে এসেছে। যে আমরা প্রায় সময় স্কুল থেকে পালিয়ে যায়। যার জন্য মা এমন মারটা মারলো । মার খেয়ে ব্যাকা হয়ে গেছিলাম। পরে মনে মনে ভাবলাম তারা তো আমাকে মেরে প্রতিশোধ নিতে পারে নাই, সুযোগ বুঝে কোপ দিলো। মায়ের মাধ্যমে কেলানি দিয়ে প্রতিশোধটা নিলো। তারপর থেকে জীবনে আর কোনদিন স্কুল পালায়নি। কারন মারের কথা ভুলতে পারলে তো স্কুল পালাবো হা হা হ।

2bP4pJr4wVimqCWjYimXJe2cnCgn99njcohq4r9LUHc.png

2bP4pJr4wVimqCWjYimXJe2cnCgn9hyaM12S9qnYQP7.gif

2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif

4789.gif

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
  ·  2 years ago (edited)

হাহাহা আপনার বন্ধুরা বেশ চালাক ছিলো😆। যতদোষ মামার ছিলো। বাস স্ট্যন্ডে গাড়ি গুনতে গেছেন । আপনার ভাই পড়ালেখায় বেশ কাঁচা ছিলে বুজাই যাচ্ছে। আর হ্যাঁ এমন ঘটনা চারিদিকে ছেলেরা বিয়ের আশে পাশেও নেই আর মেয়েদের ৩-৪টা বাচ্চা পালতে হয়😆😆

আপনার কমেন্ট পড়ে ভাল লাগলো, হাসিঁ পেল। ধন্যবাদ আপু।

আপনার স্মৃতি বিজড়িত স্কুল পালানো এবং মায়ের হাতে মাইর খাওয়া ও বাস গুণাগুনি,ওভারল যত কিছু উল্লেখ করেছেন স্মৃতিময় সবগুলো লিখতে গেলে এরকম একটি পোস্ট আমিও লিখতে পারবো, আপনার এই মন্তব্যের মাধ্যমে। যাই হোক এক কথায় অনেক ভালো লাগলো আপনার গল্পটি পড়ে। আসলে কিছু বন্ধু এরকম দুষ্ট থাকে, আর সেটাই আপনার ভাগে জুটেছে। ধন্যবাদ আপনাকে নিজের জীবন থেকে নেয়া এত মজার একটি গল্প শেয়ার করার জন্য।

জী ভাইয়া মনে পড়ে সেই দিন গুলো । ধন্যবাদ আপনিও লিখে ফেলুন।

দেখি চেষ্টা করে মনে করে লিখে ফেলতে পারি কিনা ধন্যবাদ আপনাকে।

হা হা আপনি স্কুল পলাতো পার্টি।। জীবনে অনেকবার স্কুল পালিয়েছি অনেকবার মার খেয়েছি আপনার গল্পের সাথে আমার গল্পের প্রায়ই মিল রয়েছে।। তবে আমার একটা সুবিধা ছিল বাড়ির কাছে নানি বাড়ি এজন্য যেদিন স্কুল পলাতাম সেদিনের বাড়ি ফিরতাম না নানা বাড়িতেই থেকে যেতাম।।

ভাইয়া আমার নানা বাড়ি অনেক দুরে,যার কারনে কেলানি খেলাম।

হাহাহা আমি তো তাহলে খুব ভালোভাবে বেঁচে গেছি বাড়ির কাছে নানুবাড়ি হওয়াতে মারগুলা খেতে হয় নি।। যাইহোক ভাইয়া দিনগুলো অনেক মধুময় ছিল যা কখনোই ভোলার নয়

আপনার স্কুল পালানোর এবং আপনার মার হাতে মাইর খাওয়ার ঘটনা পড়ে খুব মজাই পেলাম। এই স্কুল পালানো নিয়ে সবার ই কোন না কোন ঘটনা আছে। আপনি পুরনো স্মৃতি মনে করিয়ে দিলেন। আপনি ত স্কুল পালাতে চাননি, আপনার মামার কারনে স্কুল পালিয়ে মার খেয়েছেন। যাই হোক আশা করি সেই মারের পর আর স্কুল পালাননি। হা হা হা। ধন্যবাদ ভাইয়া।

জী ভাইয়া সব দুষ মামার ছিল।

ওয়াও অসাধারন একটি গল্প জামানদের মাঝে শেয়ার করেছেন ভাইয়া ছোটবেলায় এমন কম বেশি সবাই দুষ্টামি করতো স্কুল পালিয়ে বাড়ি যেত। আপনার গল্পটি সাথে আমার গল্পটিও মিলে গেল হুবহু কিন্তু আমি স্কুল পালাতাম টিফিনের সময় যেন আম্মু না বুঝতে পারে বলতাম আজ একটি মিটিং আছে তাই আমাদের ছুটি দিয়ে দিয়েছে। ধন্যবাদ ভাইয়া স্কুল জীবনের কথা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

ভাইয়া আপনার মত এত বুদ্ধি ছিলনা আমার। ধন্যবাদ।

আপনার বড় ভাই মনে হচ্ছে পড়ালেখায় আপনার কাছ থেকে একটু কাঁচা। আর আমি আপনার মামা যিনি লেবাননে থাকে এখন উনাকে আপনার আরো একটা পোস্টে দেখেছি। কিন্তু মামার কারণে স্কুল পালাতে গিয়ে মার খেয়েছেন। মনে হয় এরপর থেকে আর কখনো স্কুল পালাননি। আর আপনাকে মেয়ে বন্ধুদের এখন তিন-চারটা বাচ্চা আছে এটা বেশ মজা পেলাম।

জী আপু ভাইয়া পরে পড়া শোনা ছেড়ে দিয়েছেল। ধন্যবাদ।

আপনার স্কুল পালানোর গল্পটি পড়ে আমার কাছে খুবই ভালো লাগছে। আপনার ভাইয়া মনে হয় পড়াতে ফাঁকিবাজি করত। আর আপনার বন্ধুরা ছিল খুবই চালাক। তারা চালাকি করে নিজেরা মাইর না দিয়ে আপনার স্কুল পালানোর কথাটি আপনার আম্মার কাছে বলে দিয়েছিল। এভাবেই তারা প্রতিশোধটা নিয়েছে আসলে। তবে আপনি একা থাকলে স্কুল পালাতেন না এবং মাইর টাও খেতেন না। কিন্তু আপনার মামার জন্য এই মাইরটা আপনি খেয়েছেন। যা আপনার এখনো মনে পড়ে দিনটির কথা। আপনার গল্পটি পড়ে আমার খুবই ভালো লেগেছে ধন্যবাদ আপনাকে মজার একটি গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

জী আপু সব দুষ মামার। ধন্যবাদ।

Congratulations, your post has been upvoted by @dsc-r2cornell, which is the curating account for @R2cornell's Discord Community.

Manually curated by @jasonmunapasee

r2cornell_curation_banner.png