জীবনের প্রথম ঘুষ দেওয়ার অভিজ্ঞতা।।10% beneficary for @shyfox

in hive-129948 •  2 years ago 

আসসালামুআলাইকু/ নমস্কার/ আদাব।

হ্যালো @amrbanglablog বাসি আমি @joniprins
আজকে আপনাদের সাথে একটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো।

bribe-6971579_1920.jpg
Source

২০১৫ সালে আমি মাত্র অনার্স এডমিশন টেষ্ট পরিক্ষা দিয়ে বাসায় গেলাম। বিকালে খাওয়া দাওয়া করে শুয়ে আছি, এমন সময় আমার চার নাম্বার মামা আমার মোবাইলে কল দিয়ে জানালো যে আগামী কাল তিনির ফ্লাইট,আমাকে তিনির সাথে ঢাকা যেতে হবে। আমি যেন রাতে বা সকালে তারাতারি মামার বাড়িতে চলে যায়। মামার সাথে কথা বলে ফোন রেখে আমি বিকালে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম । তাই রাতে আর মামার বাড়িতে যাওয়া হয়নি। সকালে বেলা ঘুম থেকে উঠে মামার বাড়ি যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। একটি অটো নিয়ে সোজা আমাদের গ্রামের বাস স্টেশন চলে গেলাম। আমার আম্মুু আগের দিন চলে গেছিলো তাই আমি একাই রওয়ানা হলাম।

অনেক্ষন দাড়িয়ে আছি সিএনজি পাচ্ছি না। যদিও আমাদের স্টেশনে সব সময় সিএনজি পাওয়া যায়। তবে আজকে সিএনজি পেতে দেরি হচ্ছে। অনেক্ষণ দাড়িয়ে থেকে একটি সিএনজি পেলাম। সিএজিতে উঠে আমাদের গ্রামের স্টেশন থেকে দুই স্টেশন যাওয়ার পরই জীবনের প্রথম এক্সিডেন্ট করলাম। মোটামুটি হাত পায়ে ভালই ব্যথা পেলাম। রাস্তায় বালু থাকার কারনে সিএনজিটি উল্টিয়ে গেছিলো। আমার ভাগ্য ভাল যে আমি আগেই সিএনজি থেকে পড়ে গেছিলাম। সিএনজির নিচ থেকে সবাইকে টেনে বের করে পাশে একটি পুকুর থেকে হাত মুখ ধুয়ে আবার আরেকটি সিএনজিতে উঠলাম। আমার হাতের একটি একটি আঙ্গুল কেটে গেছিলো। মামা বার বার ফোন দিতেছিলো। মামাকে এক্সিডেন্টের কথা কিছু বলি নাই। মামার বাড়িতে গিয়ে খাওয়া দাওয়া করে মামার সাথে সিএনজি করে ঢাকার উদ্যেশ্যে রওয়ানা দিলাম।

আমার মামা পাচঁজন। চার নাম্বার মামা বিদেশ যাচ্ছে আমি আর ছোট মামা সাথে যাচ্ছি। বাস স্টেশনে এসে বাসে উঠে বসে আছি,যাত্রির অভাবে বাস ছাড়তেছে না। প্রায় পনের বিশ মিনিট পরে বাস ছাড়লো। সরাইল বিশ্বরোড অতিক্রম করার পরে ভৈরব যাওয়ার আগেই বাসটি নষ্ট হয়ে গেল। বাস থেকে নেমে আমি মনে মনে চিন্তা করলাম আজকে কপালে যে কি আছে আল্লাহই জানে। তারপর ত্রিশ মিনিট পরে সোহাগ কোম্পানির আরেকটি বাস এসে আমাদেরকে নিয়ে ঢাকার উদ্যেশ্যে রওয়ানা হলো।

ঢাকা যেতে যেতে আমাদের প্রায় বিকাল হয়ে গেল। মামা যেই লোকের মাধ্যমে বিদেশ যাবে তার অফিস ছিল বনানীতে। আমারা বনানীতে যাওয়ার পর দালাল বললো আপনারা লাঞ্চ করে আসুন। আমারা ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ করে বসে রইলাম। সময় অতিক্রম হয়ে সন্ধা হয়ে গেল। মাগরীবের নামাযের মামার হাতে পাচপোর্ট দিয়ে বললো তোমরা বসো আমার লোক এসে তোমাদেরকে নিয়ে যাবে। আমরা অনেক্ষন বসে রইলাম। প্রায় নয়টার সময় একটি লোক এসে আমাদের সহ ঐ দালাল যাদেরকে বিদেশ পাঠাবে সবাইকে নিয়ে গেল গুলশান-০১ নাম্বারে। সেখানে গিয়ে দেখলাম প্রায় চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ জন লোক,সবাই মামার সাথে বিদেশ যাবে।

রাত দশটার সময় যারা বিদেশ যাবে তাদের সবাইকে বিরিয়ানীর প্যাকেট দিলো। খাওয়া দাওয়া শেষ করে আনুসাঙ্গিক সমস্ত কাজ শেষ করে রাত ১১ টার সময় তিনটি হাইস গাড়ি এসে বললো সবাই গাড়িতে উঠো তোমাদের সবার ফ্লাইট হবে আগামীকাল সকাল সাতটার সময় চট্রগ্রাম থেকে। এ কথা শুনে আমরা তো অভাক হয়ে গেলাম। আবার কোন জামেলা হবে না তো। ছোট মামা বললো চট্রগ্রাম নিয়ে আবার সবাইকে রাস্তায় ফেলে চলে আসবে না তো। আমি বললাম মামা এত নেগেটিভ চিন্তা করিয়েন না। ঢাকা থেকে হয়তো ফ্লাইট দিতে সমস্যা হচ্ছে তাই চট্টগ্রাম থেকে দিচ্ছে। সাড়ে এগারোটার দিকে সবাইকে নিয়ে চলে গেলো। আমি আর ছোট মামা এত রাতে বাড়িতে যাবো কিভাবে সেই চিন্তা করতে করতে বিমনাবন্দর রেলস্টেশনে আসলাম।

বিমনাবন্দরে রেলস্টেশনে এসে আমরা হোটেলে গিয়ে আগে পেট ভরে খেলাম। তারপর অনেক্ষন অপেক্ষা করার পর আমরা একটি লোকাল ট্রেনে উঠে ভৈরব এসে নামলাম। ট্রেনটি ভৈরব যেতে যেতে রাত তখন তিনটা বেজে গেছিলো। আমরা ভৈরব থেকে মটর সাইকেলে করে বিশ্বরোড গেলাম। বিশ্বরোড গিয়েই আমরা জামেলার মধ্যে পড়লাম। বিশ্বরোড গিয়ে আমাদের চোখে তেমন কোন মানুষ পড়লো না। এখন কিভাবে বাড়ি যাবো সেই চিন্তা করতে করতে এদিক থেকে সেদিক যাচ্ছি। এমন সময় আমাদের পুলিশ বন্ধুদের একটি গাড়ি এসে আমাদের সামনে থামলো। গাড়ি থেকে একজন নেমে আমাদের অনেক কিছু জিঙ্গেস করলেন। আমরা সবকিছু সত্য সত্যই বললাম। কিন্তুু পুলিশ ভাই আমাদের কোন কথা বিশ্বাস করলেন না।

গাড়ি থেকে আরেকজন নেমে এসে আমাদের সাথে উল্টা পাল্টা বলতে লাগলো তারপর বলতে লাগলো গাড়িতে উঠো এত রাতে তোমরা কি করার জন্য ঘুরাঘুরি করছো সেটা আমরা বুঝি। প্রথম জন বললো তোমাদের পকেটে কি কি আছে বের করো, আমি তখন কিছুটা বুঝতে পারলাম। আমার কাছে সব মিলিয়ে এক হাজার টাকার মত ছিল সেটা দিয়ে দিলাম। তারপর মামার কাছে কিছু টাকা ছিল সেটাও দিয়ে দিলো। তারপর প্রথম জন বললো এত রাতে হাটাহাটি করো না কোন দোকানে বসে থাকো, সকাল হলে চলে যেও। আমি মনে মনে বললাম সেটা আপনার আর কষ্ট করে বলতে হবে না। সকাল বেলা বিকাশে বাড়ি থেকে টাকা এনে তারপর বাড়ি গেছিলাম। এটাই ছিল জীবনের প্রথম ঘুষ দেওয়ার অভিজ্ঞতা।

আল্লাহ হাফেজ
ধন্যবাদ।।


FrDSZio5ZCzUamf35asauSgs1tnNGCc8exBrDii52qi3Jpx7VBdpwVc4VapjSy3JtXCK3dEJDS8jYnZijAxW2t36oFhopCnVsFrGtMDi8FAe1h1c7ZBBXCHkMoE1Ntj54H77X8LydomuTDnXZgGT6yxu8a7AvgLuxo2mUFPx5zhMq98BpXpELpaBjKAziJVshFg2UaXbNtpqTXrxHy.png

JvFFVmatwWHRfvmtd53nmEJ94xpKydwmbSC5H5svBACH7xbS7ungTbMjNMsQ7fPnm8uUBT2bU8Azf8zCDQrq3tkzHjjCFyraxJQeY79tPTN45w8XxU9wtvaFmWRaLhgHSy5GYKQ6bg.png

IMG_20190907_175336_618.JPG

আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।

FNeY1coMNUL9WkErUPeUKmtGszS37qoEdLJEhh8bj8LkMZg4ZnLbSCPtsqdFwbPFaU6vxamfJRhKsAXwWBZmAwtf2KFjktn9asDsnKpUF6cbBcNYFzwcTbFb5dfFf7N5Lt5j8KUqpB64Bhu5yFCR9Qn5uG4sQo8t4PYbc7VJq37PW7258mLRbFTrsBTtbAnos9AJnU46Lv3HqXsN7s.gif

45GhBmKYa8LQ7FKvbgfn8zqd6W2YEX34pMmaoxBszxVcFaFYLUUkHV6dSwLV7zz7zNE5rVJ5qtN3Zm6SdmcqGFekXXVnJVmd6y7N12FUdQdbdzipDFEFaWmdmFe1K9CCqMuRmX9o7cDLXe7oZxUwNZXbSxanRUefX7PYzUbi2zovtPsG5QcGuGgiyhkJur9LnLhaBtL31haW2181Ss.png

KNoz79cGRt58XHcjM3shjWsSEtKgRtxoVdChppmw4FvW2CQtZxVJGen4yBCeRMj2Y2h9ttHevCs9rtWncvn3FXAHo5MrkNBCbLay5LtH7wgCA27mBRvWM5GDKNQKzJk62Dz8KRvqdiFsZ66guzvyhyBYqJu6KB21dLiPDmtFGR2yvqBCtUPp3Rscm37PwtDEWYMtuKM5v3qhNod24L.png

7258xSVeJbKkzXhyseBP4PYz11eBDT8sW2oR1a4vfVFS6JTrGU8e1FPUaNdHG5vjXyg2xthV78bDEmEVvKCQpyzX1kq8gAVzGsPp9GqJVRWxb6T9y35PZmQehnLjELdKKmnhdxQjDuny4.png

Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন

HNWT6DgoBc14riaEeLCzGYopkqYBKxpGKqfNWfgr368M9VRjuxKSTKuNvqEk1nfiYiKKnHbcTuABq9Fu2qE77V9BjGsoqkb23ngKUAk2mCBmjpG3wz3go7Vd2YW.png

2r8F9rTBenJQfQgENfxADE6EVYabczqmSF5KeWefV5WL9WP87ckB6VoL3UD42BtkosJzLXYjuCC4ws3sxuihZ3nhDfd815qMJiiETpWAiutfN7bjurhaBbivMFVTYEDiv.png

download-03.png

2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif

এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য

download-044.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP

RGgukq5E6HBM2jscGd4Sszpv94XxHH2uqxMY9z21vaqHt1rDaeRdtDvsXGmDbuRg1s1soomTEddbTFxfMMYzob4oRFK8fTZQyYP8LbQ4tbMTAd2enV3Wq9Ze3N8TTU2.png

Click Here For Join Heroism Discord Server

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

প্রথমে শুকরিয়া যে সেদিন দুর্ঘটনায় আপনার তেমন বড় কোন ক্ষতি হয় নাই। কিন্তু ভাইয়া জানার খুব ইচ্ছে আপনার মামা কি সত্যি সেদিন বিদেশ যেতে পেরেছিলো। আর রইলো ঘুষ দেওয়ার বিষয়টি। কি আর বলবো এটা তো ২০১৫ এর ঘটনা এখন তো আরও ভয়াবহ অবস্থা।

জী আপু পরেরদিন সকাল সাতটার সময় ফ্লাইট হয়েছিলো। আর ঘুষের কথা কি বলবো, এটা আর বলে লাভ নেই, ধন্যবাদ আপু।

প্রথমে শুকরিয়া জানাচ্ছি যে বড় এক্সিডেন্ট থেকে আল্লাহ আপনাকে রক্ষা করলেন। আর কি বলবো এ ধরনের ঘটনাগুলো ফ্লাই ঘটে থাকে। রাতে পুলিশ আপনাদেরকে চার্জ করলেন। আপনাদের পকেটের টাকাগুলো দিয়ে কোন মতে রক্ষা পেলেন। এখন তো আরো ভয়াবহ অবস্থা। তবে আপনার জীবনে প্রথম ঘুষ দেওয়ার অভিজ্ঞতা আমাদের মাঝে অনেক সুন্দর করে শেয়ার করলেন। শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

জী আপু ঐদিন আল্লাহ আমাকে বাচাইছে। আর ঘুষের কথা কি বলবো, বর্তমানে এমন চিত্র প্রায় সময় দেখা যায়। ধন্যবাদ আপু।

আল্লাহকে অনেক শুকরিয়া জানান সেদিন কোন ক্ষতি আপনার হয়নি। আল্লাহর অশেষ রহমতে আপনি সেদিন সেভ ছিলেন।আর আপনার মামা কি বিদেশ যেতে পেরেছিল? আর ঘুষ দেয়ার ব্যাপারো কি আর বলব,পুলিশ মানেই হল ঘুষ। ঘুষ ছাড়া তাদের জীবন অচল। বাংলাদেশ ঘুষ দেয়া ও ঘুষ নেয়াতে ফার্স্ট। আপনি খুব সুন্দর ভাবে আপনার জীবনের প্রথম ঘুষ দেয়ার অনুভূতি শেয়ার করেছেন, পড়ে সবটাই জানতে পারলাম।অনেক ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য। অনেক অভিনন্দন আপনাকে।

জী আপু ঐদিন ঘুষ দিতে গিয়ে পকেট খালি হয়ে গেছিলো। পরে তো অনেক কষ্ট করে বাড়ি এসেছিলাম। ধন্যবাদ আপু।