আত্নহত্যা একটি সমস্যার সাময়িক সমাধান-পর্ব ০১ ।। 10% beneficiary to @shy-fox।।

in hive-129948 •  2 years ago 

ব্লগ লেখা শুরু করার প্রথমে আমার বাংলা ব্লগ সহ বিশ্বের সকল স্টিমিট মেম্বারদের প্রতি রইল আমার অন্তরের অন্তস্থল থেকে সালাম,আদাব, নমস্কার।।

আসসালামুআলাইকুম / আদাব / নমস্কার

হ্যালো বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই। আশা করি আমার বাংলা ব্লগের সাথে সবাই অনেক ভাল আছেন। প্রতিদিনের মত আজও আপনাদের সামনে হাজির হলাম নতুন একটি পোষ্ট নিয়ে। আমি যখন প্রথম ঢাকায় আসি তখন রাহাত নামের একটি ছেলের সাথে আমার খুব ভাল একটি সম্পর্ক হয়। আজ আমি তার কিছু কথা আপনাদের সাথে সেয়ার করবো। আমি যে কথা গুলো আপনাদের সাথে বলতে যাচ্ছি, সে গুলো এখনও আমার চোখের সামনে ভাসতেছে। চলোন শুরু করা যাক।

08.09.2022.png

ছেলেটির নাম রাহাত। বাড়ি ময়মনসিংহ বিভাগের কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে,বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদের বাড়ির পাশে। আমার যখন ঢাকায় প্রথম চাকরী হয়। তখন আমার চাচতো ভাই আমাকে রাহাতের সাথে রাতে থাকতে দিয়েছিল। তখন থেকেই রাহাতের সাথে আমার পরিচয়। রাহাতের তেমন কোন পড়া শোনা ছিল না। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে রাহাত ছিল সবার ছোট। মাত্র পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করে ছিল। রাহাত একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে ডাইং সেকশনে ফিনিশিং অপারেটর হিসাবে চাকরী করতো।

আমি তাকে একদিন জিঙ্গেস করেছিলাম যে ভাইয়া,আপনি কত বছর ধরে চাকরি করেন। তিনি বড় একটি নিঃশ্বাস নিয়ে বলেছিল ১৮ বছর। আমি আশ্চর্য হয়ে আবার জিঙ্গেস করলাম আপনি আঠারো বছর ধরে জব করতেছিন,সেলারি কত..? তিনি তখন বলেন পঞ্চম শ্রেণী পাস করে ১৯৯৭ সালে মাসিক ৮০০ টাকা বেতনে প্রথম চাকরিতে জয়েন করি। এখন বেতন এগারো হাজার টাকা। মানে ২০১৫ সালে বেতন ছিল এগারো হাজার টাকা।

আমি বললাম এত অল্প বয়সে চাকরি করতে চলে এসেছিলেন,তখন তো অনেক ছোট ছিলেন। তিনি বলেন আমি ছোট ছিলাম সে জন্য আমাকে সর্বপ্রথম রাতের ডিউটি দিয়ে চাকরীতে জয়েন দেওয়া হয়েছিল। রাতের বেলা তো বড় কোন স্যার থাকে না, সে জন্য কোন সমস্যা হয়নি। দিনের বেলা হলে আমার চাকরি হতো না। তারপরও যখন কোম্পানির মালিক আসতো তখন আমি ওয়াশরুমে লুকিয়ে থাকতাম। কারন সেখানে ১৮ বছরের নিচে কোন শ্রমিক চাকরি করার অনুমতি ছিল না। আমার দুলাভাই আমার চাকরিটি পেতে সাহায্য করেছিল। ১৮ বছর দিয়ে নকল জন্মনিবন্ধন তৈরী করলেও মানুষ আমাকে দেখেই বুঝতে পারতো আমার বয়স তখন ১৩/১৪ বছর হবে।

তার জীবনের কাহিনীটা শুনে আমার ভালই লাগছিলো,তাই আমি তাকে খুটিয়ে খুটিয়ে সব কিছু জানার চেষ্টা করলাম। আবার জিঙ্গেস করলাম ভাইয়া.. পড়াশোনা ছেড়ে এত অল্প বয়সে চাকরি করতে আসার কারন কি..? তিনি বলেন তার জীবনের আরো করুন কাহিনী।

১৯৯২ সালে তার বাবা একলাখ টাকা ঘুষ দিয়ে চট্র্রগ্রাম বন্দরে চাকরি নিয়েছিল। সরকারি চাকরির কথা বলা হলেও সেটা সরকারি চাকরি ছিল না। কোনে এজেন্সির আন্ডারে থেকে চট্রগ্রাম বন্দর থেকে মালামাল খালাস করা। নাম মাত্র কিছু টাকা বেতনে তার বাবাকে চাকরি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটাও বেশিদিন স্থায়ী হলো না। যে লোক ঘুষ নিয়েছিল সে অন্যজনের সাথে ঘুসের টাকা ভাগাভাগি করতে গিয়ে মারামারি করে। আর তখন এজেন্সির উপরের কর্মকর্তারা ঘুষের বিষয়টি জেনে ফেলে। যার কারনে তার বাবা ও ঐলোক গুলো সহ তিন জনের চাকরি চলে যায়। এক লাখ টাকা তার বাবা সুদের উপর নিয়েছিল। দিনে দিনে সুদ আর আসল মিলে টাকার অংক বড় হতে লাগলো।

তারপর ১৯৯৩ এবং ১৯৯৪ তে তাদের একটি জমি বিক্রয় করে আরো কিছু টাকা ঋণ নিয়ে তাদের দুই বোন কে বিয়ে দেয়। তারপর ১৯৯৫ সালে সর্বশেষ জমিটি বিক্রয় করে আরো কিছু টাকা সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে তার বড় ভাই কে বিদেশ পাঠায়। অনেক আশা ভরসা নিয়ে তার বড় ভাই সৌদিআরব যায়। কথায় আছে “অভাগা যেদিকে যায় সাগরও নাকি শুকিয়ে যায়”। সৌদিআরবের গরম সহ্য করতে না পেরে তিন মাস পর তার বড় ভাই দেশে চলে আসে। তার বাবার,তার বোনদেরর বিয়ের,আর তার বড় ভাইয়ের বিদেশে যাওয়ার টাকা মিলে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা ঋণ হয়ে যায়। এসব টাকার টেনশনে সে পড়াশোনা ছেড়ে এই বয়সে চাকরিতে জয়েন দিয়েছিল।

২০১০ সালের দিকে সে চাকরী করার সময় তার শরীরে একটি মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয়। সব কিছু পরিক্ষা নিরীক্ষা করে ডাক্তার তাকে যত তারাতারি সম্ভব বিয়ে করার পরামর্শ দেয় আর এটাও বলে যে বিয়ে করতে দেরি হলে অপারেশন করাতে হবে। কিন্তুু তখন তার বড় ভাই বিয়ে করে নাই। তার বড় ভাই এবং তার বাবা মিলে একটি টেইলার্সের দোকান চালাতো। বাপ-বেটা দুইজনই টেইলার্স। কিন্তুু ঋণের টাকার কারনে তার বড় ভাইকেই তার বাবা মা বিয়ে করাচ্ছে না। রাহাতকে তো বিয়ে করানোর ভুলেও কথা চিন্তাও করবে না। সে তার বিয়ের কথা পরিবারের কাছে বলেছিল কিন্তুু তার পরিবার তেমন কোন গুরুত্ব দিলনা বরং হেসেঁ উড়িয়ে দিলো। বিশেষ করে তার বোনেরা বিয়ে করানোর কথা শুনতেই পারে না। ফেমিলির সবাই বলে ঔষধ খেলে ভাল হয়ে যাবে। কেউ তার কথা শুনতে রাজি হয় না।

অনেক চেষ্টা করে যখন বিয়ে করতে পারলো না তখন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ২০১২ সালে ফেমিলিকে না জানিয়ে অপারেশন করানোর সিধান্ত নেই। সে যেখানে চাকরি করে সেখানে ডাক্তারের সব কাগজপত্র দেখিয়ে সাত দিনের ছুটি নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়। ডাক্তার রাহাতের কাছে তার গার্জিয়ানের সিগনেচার চাই। তখন আমার চাচাতো ভাই তার বড় ভাই সেজে কাগজে সিগনেচার দেয়। যথা সময়ে অপারেশন হলো। অপারেশনের পরেরদিন ফেমিলির মানুষ জানতে পেরে তার আপন বড় ভাই এসে দেখে আবার ঐদিনই চলে গেল। আমার চাচাতো ভাই তার খাওয়া দাওয়া সব কিছুর ব্যবস্থা করলো। সাতদিন পরে সুস্থ হয়ে রাহাত আবার কাজে জয়েন দিলো।

পরের কথা গুলো শুনলে চোখে জল চলে আসবে...দেখা হবে দ্বিতীয় পর্বে....

2bP4pJr4wVimqCWjYimXJe2cnCgn99njcohq4r9LUHc.png

gPCasciUWmEwHnsXKML7.png

2r8F9rTBenJQfQgENfxADE6EVYabczqmSF5KeWefV5WL9WP87ckB6VoL3UD42BtkosJzLXYjuCC4ws3sxuihZ3nhDfd815qMJiiETpWAiutfN7bjurhaBbivMFVTYEDiv.png

2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif

4789.gif

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
Loading...

খুবই দুঃখ জনক ভাইয়া।এরকম হাজারো রাহাত আমাদের মাঝে আছে।আমার নিজেরই কত বন্ধু এভাবে পরিবারের হাল ধরতে হাইস্কুল থেকেই ঝরে গেছে।পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

জী ভাইয়া রাহাতের ঘটনাটা লিখতে গিয়ে আমার অনেক কষ্ট লাগছে।

আসলে ভাইয়া আপনি রাহাতকে নিয়ে যে ঘটনাগুলো বলেছেন আমাদের চারপাশে কিছু কিছু ফ্যামিলিতে এইরকম ঘটনা অনেক শুনতে পাই কিংবা দেখতেও পেয়েছি। আর একটা কথা ঠিকই বলেছেন “অভাগা যেদিকে যায় সাগরও নাকি শুকিয়ে যায়”। রাহাতের বাবার চাকরির জন্য ঘুষের ১ লাখ টাকা, বোনদের বিয়ের জন্য জমি বিক্রি করা, বড় ভাইয়ের বিদেশ যাওয়ার জন্য জমি বিক্রি করা সবকিছুই যেন এক করুন কাহিনী। শেষমেষ বিয়ের কথা কেউ বিশ্বাস না করতে পেরে অপারেশন করেন কাউকে না জানিয়ে। পরবর্তীতে কি হবে জানার আগ্রহ রইল।

জী আপু আমি প্রথম রাহাতের কাহিনী শুনে আশ্চর্য হয়ে গেছি।

অত্যন্ত দুঃখজনক। সকালে পড়তে গিয়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল। যাই হোক, লেখাটা ভাল লিখেছেন। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

সত্যি ভাইয়া রাহাতের গল্পটা পড়ে অনেক খারাপ লেগেছে। কতটা সমস্যায় থাকলে মানুষ এতো অল্প বয়সে চাকরি করে আপনার গল্পের মাধ্যমে অনুভব করা যায়।এ রকম অনেক রাহাত রয়েছে।দ্বিতীয় পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।

জী আপু রাহাতের জীবনের কাহিনীটা অনেক কষ্টের। ধন্যবাদ।

ভাই যতই পড়ছি তত
ততই মানুষের জীবন সম্পর্কে জানতেছি। সত্যি রাহাতের জীবনটা বেশ সংগ্রামের। প্রথম পর্বটা ভালো লেগেছে। এভাবেই দারিদ্রতার কষাঘাতে কত রাহাত যোগ দেয় শিশুশ্রমে।।

জী ভাইয়া আপনি সত্যি বলছেন। বাংলাদেশে শিশুশ্রম অনেক আছে।

বর্তমান সময়ে এমন অনেক ছেলে আছে যারা কিনা নিজের ফ্যামিলির দিকে তাকিয়ে অনেক রকম কষ্ট সহ্য করে যায় কিন্তু এই কষ্টের কথা তারা কখনোই কাউকে বলতে পারেনা। রিহাতের জীবনে ঠিক এমনই ঘটনা ছিল ফ্যামিলির দিকে তাকিয়ে সে সবকিছু সহ্য করছে। দ্বিতীয় পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।

জী ভাইয়া রাহাতের কাহিনী শুনে আমার অনেক কষ্ট লাগছে।

একটি অত্যন্ত জটিল কাহিনী তথা বিষয় নিয়ে আপনি লিখেছেন। খুবই প্রয়োজনীয় এ ধরনের লেখা আমাদের সমাজে, যেভাবে দিন দিন সমাজ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে মানুষ। আজকের এই লেখাটি পড়লাম। এবং পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

ভাই আপনি যে রাহাতের ঘটনাটি আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন শুনে আমার কাছে খুবই খারাপ লাগলো। আমাদের চারপাশে এমন হাজারো ফ্যামিলি আছে যাদের ঘটনায় এরকম। এই কথাটা একদম ঠিকই বলেছেন যে অভাগা যেদিকে যায় সাগরে ও শুকিয়ে যায়। ফ্যামিলিকে না জানিয়ে যে অপারেশনটা করিয়েছে এবং জমি বিক্রি করে বোনদের বিয়ে দেওয়া ও ছোট দোকান থেকে ঋণ দেওয়া এগুলা শুনে আসলে খুবই খারাপ লেগেছে। এরকম হাজারো রাহাত আমাদের চারপাশে ঘুরে বেড়ায়। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।