হ্যালো বন্ধুরা,
আশা করছি সবাই ভালো আছেন। আমিও বেশ ভালো আছি। আজকে নতুন একটি প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহন করতেছি। এটি আমার বাংলা ব্লগের ২৩ তম প্রতিযোগিতা । আর এবারের বিষয় রাখা হয়েছে স্কুল জীবন নিয়ে। কারণ আমাদের জীবনে স্কুলকে কেন্দ্র করে ভালো কিংবা মন্দ অনেক স্মরণীয় ঘটনা থাকে । কিছু যেমন ভালো থাকে ঠিক তেমনি কিছু খারাপও থাকে । তবে এবারের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমাদের সেই খারাপ অভিজ্ঞতার অনুভূতি প্রকাশ করার সুযোগ দিয়েছে।
যে অনুভূতিটা আজও আমাদের মনে গেঁথে রয়েছে। মাঝে মাঝে আমাদেরকে যন্ত্রনা দেয় কিংবা চাইলেও সেটা মুছে ফেলতে পারি না। হতে পারে সেটা আমাদের ক্লাসরুমে ঘটা শিক্ষকদের সাথে কোন ঘটনা বা স্কুলের মাঝে বন্ধুদের সাথে গন্ডগোল পাকানোর কোন ঘটনা অথবা স্কুলে যাওয়া কিংবা আসার সময়ে ঘটা সহপাঠীদের সাথে কোন ঘটনা। এই রকম অনেক কিছু আছে যা অনাকাংখিত ভাবে হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে নানা কারনে সেটার অনুভূতিগুলো ভুলা যায় না। আমার স্কুল জীবনে ঘটে যাওয়া এই রকম তিক্ত একটি অভিজ্ঞতার অনুভূতি আপনাদের সাথে সেয়ার করতেছি।
আমি তখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ি। আমি গণিতে তেমন ভাল ছাত্র ছিলাম না আবার এত খারাপও ছিলাম না। মোটামুটি ধরনের ছিলাম। আমাদের গণিত স্যারের নাম ছিল ফরহাদ। অংক না পারলে স্যার এমন মার মারতো যে সাতদিন পর্যন্ত স্কুলে যাওয়ার নাম ভুলে যেতাম। স্কুলের সবাই স্যারকে খুব ভয় পেত। আপনারা হয়তো জানেন প্রত্যেকটি স্কুলে কিছু কিছু স্টুডেন্টরা কিছু স্যারকে এক্সটা নাম ধরে ডাকতো। মানে স্টুডেন্টরা স্যারদের একটি উপাধি দিয়ে দিতো। যেমন বর্তমানে আমাদের স্কুলের স্টুডেন্টরা একজন স্যারকে ফাটাকেষ্ট স্যার ,আরেক জন স্যারকে কম্পিউটার স্যার বলে ডাকে। আমরা তখন ফরহাদ স্যারকে ডিপজল স্যার বলে ডাকতাম।
একদিন স্যার আমাদের কে দশটি অংক সলভ করতে দিয়েছিল। আর বললো এগুলো তোমরা বাড়ি থেকে রিভিশন দিয়ে আসবা। আমি আগামিকাল তোমাদের একজনকে একটি করে অংক দিবো। তবে কাকে কোন অংকটি দিবো সেটা আগামীকাল বলবো। কেউ যদি অংক না পারো তাহলে পিঠের মধ্যে পাটের বস্তা বেধে এসো।
স্যারের লাষ্ট একথাটা শুনে আমার কলিজা শুকিয়ে গেল। আমি বাড়িতে গিয়ে খেলাধুলা বাদ দিয়ে অংক করতে বসে গেলাম। রাত বারোটা পর্যন্ত অনেক চেষ্টা করে আমি ৭টি অংক সলভ করতে পারলাম। অংক গুলো যদিও স্যার আমাদেরকে আগে করিয়ে ছিল তবে এখন আমার মাত্র সাতটি অংকই মনে আছে। সকাল বেলাও অনেক চেষ্টা করে সাতটির বেশি অংক সলভ করতে পারি নাই। এখন আমি আজকে স্কুলে যাবো কিনা সেটা নিয়ে চিন্তা করতেছি। কারন আমি জানি আমি যেই তিনটি অংক পারি না সেই তিনটি অংকের মধ্যেই যে কোন একটি অংক স্যার আমাকে করতে দিবে। আর আমি যখন পারবো না তখন আমার উপর দিয়ে আজকে জড়-তুফান যাবে। এদিকে আজকে বৃষ্টিও আসতেছে না আবার স্কুলে না যাওয়ার মত কোন কাজও খুজে পাচ্ছি না।
আমাদের স্কুল ছিল ১২টার সময়। বারোটা বাজার আগেই মা বারবার বলতেছে স্কুলে কখন যাবি, স্কুলে কখন যাবি টিফিন রেডি করা আছে। অবশেষে আর কোন উপায় না পেয়ে স্যারের কথটা কাজে লাগানোর চিন্তা করলাম। আর নাহ পিঠে পাটের বস্তা বাধার কথা বলতেছি না। অন্য কিছু করলাম । ঐদিন আমি তিনটি টি-শার্ট আর দু্টি শার্ট পড়লাম। যেন ঝড়-তুফান আমার শরীরে না লাগে,আমার কাপড়ের উপড় দিয়ে যায়। এখন আপনারা হাসতেছেন তো.... হাসেন। আমি তো আর দেখতেছি না। আমি অবস্থা বুঝে ব্যবস্তা নিয়েছি।
আমাকে সাধারন ভাবে দেখলে বুঝা যাবে না যে আমি পাচঁটি কাপড় পড়ছি। আমার দিকে গভীর ভাবে মনযোগ দিলে তখন বুঝা যায় যে আমাকে আজকে একটু মোটা মোটা লাগেতেছে। যায়হোক আল্লাহকে ডাকাডাকি করে সমস্ত প্রস্তুুতি সম্পূর্ণ করে স্কুলের দিকে হাটতে লাগলাম।
স্কুলে যেতে যেতে রাস্তায় কয়েক হাজার বার আল্লাহকে ডাকলাম। আর মনে মনে বলতে লাগলাম আল্লাহ আজকে যেন স্যারের কোন রিলেটিভ অসুস্থ হয়ে যায় বা মারা যায়। তাহলে স্যার আর আজকে স্কুলে আসবে না। একটি প্রবাদ আছে “শুকনের দোয়ায় যদি গরু মরতো তাহলে পৃথিবীতে কোন গরু থাকতো না, সব মরে যেত”। স্কুলে গিয়ে দেখি স্যার লাইব্রেরীতে বসে বই পড়তেছে। মনটা খারপ করে ক্লাসে চলে গেলাম।
আমাদের প্রথম ক্লাস বাংলা। সেটা সুন্দর ভাবেই শেষ হলো দ্বিতীয় ক্লাসের ঘন্টা দেওয়ার সাথে সাথে ফরহাদ স্যার ক্লাসে এসে হাজির। ক্লাস খুবই নিরব নিস্তবদ্ধ। কারো মুখে কোন কথা নেই। সবার চেহেরায় চিন্তার ভাব। সবার মন খারাপ। স্যার হাজিরা ডাকার পর সবাইকে খাতা কলম রেডি করতে বললেন। সব কিছু রেডি করার পর স্যার সবাইকে একটি করে অংক করতে দিলেন। আমার ভাগ্যটা অনেক ভাল আমি যে সাতটি অংক পারি সে গুলোর মধ্যে একটি অংক আমাকে করতে দিলেন। আমি তো খুশিতে তারাতারি অংক করা শুরু করে দিলাম। এখানেও একটি প্রবাদ বলি “যে ভাত তারাতারি খাওয়ার চেষ্টা করা হয় সেই ভাত তারাতারি মাটিতে পড়ে”। সবটা অংক করার পর লাষ্টে গিয়ে আনছার মিলাতে পারতেছি না। সম্ভবত উত্তর হবে ১২ আমার উত্তর হচ্ছে ১৬। খুশিতে কোথায় ভুল করে ফেলছি সেটা বুঝতে পারতেছি না। সবাই অংক করে জমা দিয়ে দিলো কিন্তুু আমার আনছার মিলছে না। যাদের অংক হয়েছে তাদের বসিয়ে রাখছে আর যাদের হয়নি তাদের দাড়ঁ করিয়ে রাখছে। কোন উপায় না পেয়ে সবার লাষ্টে ভুল অংকই স্যারকে দিলাম। স্যার অংক দেখেই দুইটি ঘোড়ার ডিম দিয়ে আমাকে দাড় করিয়ে রাখলো। এবার শুরু হলো ঝড় তুফান।
আমার আগে কয়েকজকে টপাস টপাস করে মাইর দিলো। আমি তো তাদের মাইর দেখেই মন চাইতেছে দৌড়ে ক্লাস থেকে বের হয়ে পালিয়ে যায়। কিন্তুু কপালে মাইর থাকলে সে মাইর কি কপাল থেকে খন্ডানো যায়। আমার পিঠে প্রথম যখন বেত চালালো তখন ফস করে একটি আওয়াজ হলো মানে বেতের আঘাত আমার শরীরে লাগে নাই,কাপড়ের উপড় দিয়ে গেছে। স্যার তো বুঝে ফেললো। ধরা খেয়ে গেলাম। তারপর স্যার এক এক করে আমার সব গুলো কাপড় খুলতে বললো। আরেহ পেন্ট খুলে নাই,পেন্ট ছাড়া বাকি সব গুলো কাপড় খুলতে বললো। তারপর আমাকে ক্লাস থেকে বের করে আমার হাতে সব গুলো কাপড় দিয়ে খালি শরীরে সারা স্কুল ঘুরালো। সবাই আমাকে দেখে হাসাহাসি করলো। আমার তো তখন লজ্জায় মাটি ভেদ করে মাটির নিচে চলে যায়তে মন চাইছিলো। ক্লাসের ভিতরে মাইর দিলে তো ক্লাসমেট ছাড়া আর কেউ দেখতো না আর এখন তো সিনিয়র জুনিয়র সবাই দেখলো যে আমি মাইরের ভয়ে বেশি কাপড় পড়ে এসেছি। কি লজ্জা কি অপমান। ঐদিনের ঘটনাটা আমি হয়তো জীবনে কোনদিন ভুলবো না।
এই ঘটনটা স্কুলের বাহিরে এই প্রথম কোথাও সেয়ার করলাম। স্কুল আর অংক শব্দটা শুনলেই ঐ দিনের ঘটনাটা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে। ধন্যবাদ সবাইকে।।
কি ভাই একদম পারা অংকটাই মেলাতে পারলেন না। যাইহোক অংকটা পারলেন না স্যারের কাছ থেকে মাইর খেয়ে নিতেন তাও ভালো ছিল শুধুমাত্র ক্লাসের ছাত্র ছাত্রী দেখত। মাইর গুলোকে জামা কাপড়ের উপরে চালাতে চেয়েছেন এই জন্য তো একেবারে মান সম্মান সব গেল। সারা স্কুলের সবাই জামা কাপড় ছাড়া দেখল। আসলেই এটা অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতা। প্রতিযোগিতায় আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপু ভয়ে পারা অংকটাও ভুলে গেছি হা হা হা
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
যে স্যারকে দেখে আমরা সবচেয়ে বেশি ভয় পেতাম সেই স্যারের ক্লাসেই ভুল তত বেশি হতো। তাই তো সেই স্যারের সামনে গেলেই সব পড়া ভুলে যেতাম। আপনিও স্যার কে ভয় পেতেন এটা জানতে পারলাম। ভাইয়া আপনার অনুভূতি জেনে অনেক ভালো লাগলো। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জী আপু ঠিক বলছেন, যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সকাল হয়।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
কি করবো ভাইয়া কপালে মাইর থাকলো তো আর খন্ডানো যায় না। ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
পঞ্চম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় আপনার একদিনের তিক্ত অভিজ্ঞতা আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন।। এরকম পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে মোটামুটি আমরা সবাই কম বেশি পরিচিত।।
যাকে দেখে যত বেশি ভয় পেতাম তার ক্লাসে তত বেশি ভয় হত।।
তবে আপনার পরিকল্পনা কিন্তু দারুন ছিল এত অল্প বয়সে এত ভাল পরিকল্পনা করে কাজ করলেন সত্যি অনেক হাসি পাচ্ছে আমার।।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ভাইয়া কাজটা তো সফল হলো না। আরো অপমানিত হলাম। ধন্যবাদ ভাইয়া।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
মারের থেকেও অপমান বেশি বেদনাদায়ক হয়। তবে আপনার পোস্ট পড়ে অনেক হাসি পেয়েছে কারণ টি শার্ট আর জামা অনেকগুলা পড়েছিলেন তাই। তবে তাড়াতাড়ি কোনো জিনিস করলে সেটা ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনি মনের কথাটা বলছেন ভাইয়া, মাইরের থেকেও অপমান বেশি বেদনাদায়ক হয়। ধন্যবাদ ভাই বুকে আসেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমিও ছোটবেলা থেকে অঙ্কে খুব কাঁচা। পাটি গণিত মুখস্ত করতাম। আর বীজগণিতের সূত্র পড়ে বীজগণিত কোনরকম পারতাম। তবে জ্যামিতি একটু বেশি ভাল পারতাম।তবে আমরা কিন্তু স্কুলে বিভিন্ন স্যার ম্যাডামদের বিভিন্ন নামের উপাধি দিতাম। ঠিক আপনারা যেমন স্যারের নাম দিয়েছেন ডিপজল।♥♥
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জী আপু নবম আর দশম শ্রেণীতে গিয়ে অংক শিখেছিলাম। ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার স্কুল জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা পড়ে বেশ হাসি পাইছে। আপনি মনে হয় অংক টা মুখস্থ করে গেছেন সেই জন্য ভুলে গেছেন। লাস্টের অংশ টা পড়ে খারাপ লাগল। স্যার উচিত হয় নাই এভাবে আপনাকে খালি গায়ে ঘুরানো।প্রতিযোগিতা জন্য রইল অবিরাম শুভকামনা।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জী আপু আপনি ঠিক বলেছেন। আমি অংকটা মুখস্থ করে গেছিলাম। এই জন্যই ধরা খাইছি। ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার স্কুল জীবনের পঞ্চম শ্রেণীর তিক্ত অভিজ্ঞতার অনুভূতির কথা গুলো পড়ে হাসিতে আর থাকতে পারলাম না। আপনার অংকটির উত্তর 12
কিন্তু আপনি করেছেন 16, যদি উত্তর মিলে যেত তাহলে এত সুন্দর মজার একটি অনুভূতি আমাদের মাঝে হয়তোবা শেয়ার করতে পারতেন না আর আমরা ও এত মজা করে গল্পটি পড়তে ও পারতাম না। ধন্যবাদ ভাই সুন্দর একটি অনুভূতি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হয়তো এজন্যই ১২ জাগায় ১৬ উত্তর হয়েছে। ধন্যবাদ আপু।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ধন্যবাদ ভাই।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit