কেমন আছেন সবাই। আশা করি সবাই ভাল থাকার জন্য দিন রাত জীবনের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন। বিশাল বড় এই পৃথিবীতে নানা রকম মানুষ রয়েছে। কারো ইচ্ছা অনিচ্ছা,ভাল লাগা,মন্ধ লাগা অন্য কারো সাথে মিলে না। সবার মন মানুষিকতা আলাদা। চিন্তা চেতনা আলদা। আমরা একটি জিনিষ যে ভাবে চিন্তা করি অন্যরা সেটা অন্য ভাবে চিন্তা করে। আমাদের কাছে যেটা সঠিক মনে হয় অন্য জনের কাছে সেটা সঠিক নাও হতে পারে। তারপরও আমরা সবাই মিলে মিশে বসবাস করার চেষ্টা করি। বন্ধুরা আমি গত পর্বে বাস্তব জীবনে দেখা এক হতভাগ্য বাবার শেষ জীবনের প্রথম পর্ব আপনাদের সাথে সেয়ার করেছিলাম। আজকে দ্বিতীয়ও শেষ পর্ব সেয়ার করবো চলুন শুরু করা যাক।
জিয়া উদ্যান বা চন্দ্রিমা উদ্যান জায়গাটা উনার অনেক পরিচিত। প্রতিদিন সকাল বিকাল তিনি এই জাগায় আসতেন, বসতেন,হাটাহাটি করতেন,সময় কাটাতেন। এই জায়গায় উনার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। সর্বপ্রথম যখন ঢাকা এসেছিলেন তখন এই জায়গাতে বসেই বিজনেসের বিষয়ে সিধান্ত নিয়েছিলেন। আজকে জীবনের শেষ লগ্নে এসে এখানে বসেই তিনির সিধান্ত নিতে হবে, এখন তিনি কি করবেন, এখন তিনির কি করা উচিত। এখানে বসেই আমেরিকায় ছোট ছেলের কাছে ফোন করলেন। কয়েকবার ফোন দিলেও ছোট ছেলে ফোন রিসিপ করে নাই। অনেক বার চেষ্টা করার পরে ছোট ছেলে ফোন রিসিপ করলো। ছোট ছেলের কাছে বড় ও মেজো ছেলের সব কথা খুলে বললো। প্রতি উত্তরে ছোট ছেলে বললো ভাইয়াদের উপরে আমি কিছু বলতে পারবো না। তারা যে ভাবে থাকতে বলে আপনি সে ভাবেই থাকেন। আমি অনেক ব্যস্ত আছি পরে কথা বলবো। একথা বলে ছোট ছেলে ফোনটা রেখে দিলো।
এই মুহূতে ভদ্র লোক তার ফেলে আসা জীবনের দিকে ফিরে তাকালেন। ছেলেদের জন্য তিনি কি না করেছেন। যে ছেলে যেভাবে টাকা পয়সা চেয়েছেন তিনি সেভাবেই টাকা পয়সা দিয়েছেন। সবাইকে বড় বড় প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করিয়েছেন, শিক্ষিত করে গড়ে তুলেছেন। কিন্তুু তাদের কে নৈতিক শিক্ষা দিতে পারেন নি। ছেলেদেরকে মানুষ বানাতে গিয়ে অমানুষ বানিয়ে ফেলেছেন। ছেলেদের জন্য নিজের জীবনে সুখ করেন নাই। শুধু টাকা পয়সা সম্পদের পিছলে দৌড়িয়েছেন। আজকে তিনি অসহায় নিরুপায়। তার পাশে কেউ নাই।
ভদ্র লোক একজন এডভোকেটকে সাথে নিয়ে ফার্মগেটের বাড়িতে গেলেন বড় ছেলের সাথে কথা বলতে। রাতের বেলা বড় ছেলে ও ছেলের বউ, মেজো ছেলে ও তার বউ এবং এডভোকেট কে নিয়ে জরুরী বৈঠকে বসলেন। ভদ্র লোক সবার উদ্দেশ্যে বললেন যে তিনির দুইটি বাড়িতে দশটি ফ্লাটের মধ্যে তিনটি ফ্লাট রেখে বাকি সাতটি ফ্লাট কোন ধাতব্য প্রতিষ্ঠান বা কোন এতিমখানায় দান করে দিতে চান। সাথে সাথে বড় ছেলে বললো যে বাবা আপনি এসব কি বলতেছেন মা মারা যাওয়ার পর আপনি আপনার সমস্ত সস্পত্তি টাকা পয়সা আমাদের তিন ভাইয়ের নামে সমান ভাবে ভাগ করে দিয়েছেন। আমাদের সবার কাছে আলাদা আলাদা দলীল আছে। আপনি স্বজ্ঞানে আমাদের নামে সব কিছু লিখে দিয়েছেন। আর সে জন্য ছোট ভাই তার নামের সব সম্পত্তি বিক্রয় করে আমেরিকায় নিয়ে গেছে। আর আমিও আমার ভাগের সম্পত্তির মধ্যে এই ফ্লাটটি ব্যতীত বাকি ফ্লাট গুলো বিক্রয় করে সব টাকা ব্যবসার মধে ইনবেস্ট করে দিয়েছি। সাথে সাথে মেজো ছেলেও তার ছেলের বউরা হাসবেন্ডের সাথে একমত পোষন করলো।
এসব কথা শুনে আর দলীল দেখে ভদ্র লোকের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। তিনি বুঝতে আর বাকি রইল না যে তিন ছেলে মিলে যুক্তি করে তিনির সম্পতির অরজিনাল দলীল চুরি করেছে এবং তাকে ভুল বুঝিয়ে সিগনেচার নিয়ে এসব করেছে। ঐদিন এডভোকেট কে বিদায় করে সাথে সাথে বাড়ি থেকে চিরতরে বের হয়ে যান। এই বৃদ্ধ বয়সে কোথায় যাবেন কিছু বঝতে পারতেছেন না। অবশেষে কোথাও জায়গা না পেয়ে মগবাজারে এই মসজিদে এসে আশ্রয় নিয়েছেন।
মসজিদের ইমাম সাহেবের জন্য যে খাবার দেওয়া হয়, ইমাম সাহেব নিজে অর্ধেক খেয়ে আর বাকি অর্ধেক খাবার ঐ ভদ্র লোককে খেতে দেয়। এভাবে দশ থেকে পনেরদিন যাওয়ার পর হঠাৎ একদিন সকাল বেলা মসজিদের বারান্দাতেই ভদ্রলোক চিরতরে ঘুমিয়ে যান। ইমাম সাহেব হুজুর ভদ্র লোকের মোবাইল দিয়ে প্রথমে মেজো ছেলের কাছে ফোন দিয়ে তার বাবার মৃত্যুর কথা বললেন। প্রতি উত্তরে মেজো ছেলে জানায় যে সে এখন আসতে পারবে না তার বড় ভাইকে যেন ফোন দেয়। তারপর হুজুর উনার বড় ছেলেকে ফোন দিয়ে তার বাবার মৃত্যুর সংবাদ দেয়। প্রতি উত্তরে উনার বড় ছেলে জানায় যে সে এখন জরুরী মিটিং এ আছে। সে এখন আসতে পারবে না লাশ যেন আঞ্জুমান মফিদুলে পাঠিয়ে দেয়।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
এই পৃথিবীর মানুষ বড়ই নিষ্ঠুর।আপনার এই গল্পের প্রথম অংশ টা পড়েছিলাম।আজ বাকি অংশ টা পড়লাম।মানুষের মাঝে সময়ের সাথে মনুষ্যত্ব লোপ পাচ্ছে। খুব কষ্ট লাগলো আপনার পোস্ট টি পড়ে।ছেলে থাকতেও লাশ নিতে আসে না।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার এই গল্পটি পড়ে আমার মনের ভিতর অন্য রকম লাগছে। সত্যি পৃথিবীতে কেউ আপন নয়। নিজের ছেলেরা যদি বাবার সাথে এরকম করে তাহলে অন্য মানুষগুলো কি করবে। মৃত্যুর পরও ছেলেরা বাবার কাছে আসেনি যে বাবা তাদেরকে অনেক কষ্ট করে বড় করেছিল। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে তাদের পাপের শাস্তি অবশ্যই দিবেন। নিজের ছেলে বাবার লাশ নিতে আসেনি অবিশ্বাস্য ঘটনা এরকম আমাদের দেশে অনেক আছে। যারা টাকার জন্য নিজের বাবা-মাকে ছেড়ে দেয়।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
সত্যিই সবাই যেন স্বার্থপর। শুধুমাত্র নিজের স্বার্থের কথা ভাবে। তাছাড়া সে মা হোক কিংবা বাবা তার কথা বাবার সময় নেই। লোকের ছেলেগুলোর এরকম আচরণ দেখে যেন স্থির থাকতে পারছি না। এভাবে কি করে নিজের বাবাকে ঠকানো যায়। এমনকি লোকটি যখন পরলোক গমন করেন তখন তাদের একটিবার দেখতে আসার কথা মনে হলো না। এ কেমন ছেলে, এ কেমন বাবা। সত্যিই শেষ বাক্যটা পড়ে যেন চোখে জল চলে আসলো।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বিচিত্র এই পৃথিবীতে। বিচিত্র রকম মানুষ বসবাস করে। আপনি ঠিকই বলেছেন সবার মন মানসিকতা কিন্তু এক নয়। তাইতো আজ এরকম করুন গল্পের সৃষ্টি হয়। যখন জীবনে টাকার ভূমিকাই মূখ্য। তখন বাবা-মা কিংবা আত্মীয়-স্বজন টাকার কাছে সকল সম্পর্ক হার মানে। তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত আজ আপনার এই গল্প। যেখানে মৃত্যুর পরেও ছেলেরা কাছে আসে না। এর চেয়ে মর্মান্তিক আর কি হতে পারে। সত্যি খুবই কষ্ট পেলাম। আল্লাহ তুমি আমাদেরকে হেফাজত করুন। মানুষকে হেদায়েত দান করুন। সকল বাবা মাকে জান্নাত নসিব করুন। আমিন।♥♥
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit