সাজাও মন, রাঙাও হৃদয়, বাংলা ভাষা দিয়ে-
আমাদের পাশের বাড়ির দুর-সম্পর্কের এক দাদার জমজ দুই ছেলে ছিল। যাদের মধ্যে বড় ছেলেটির নাম সহিন ও ছোট ছেলেটির নাম শাহিন। দরিদ্র পরিবারের সহিন শাহিন দুই ভাই একসাথেই বড় হয়েছে। অল্প একটু জায়গার মধ্যে দুই চালার একটি টিনের ঘর ছিল তাদের। দুইজন তেমন পড়াশোনা করে নাই। বড় ভাই সহিন স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীর ক্লাস রুম অতিক্রম করতে পারে নাই। সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। ছোট ভাই শাহিন অবশ্য গ্রামের কওমি মাদ্রাসায় ষষ্ট শ্রেনী পর্যন্ত পড়েছিল। সংসারের হাল ধরতে সহিন বিদেশে যাওয়ার প্রবল ইচ্ছা পোষন করে। কিন্তুু বিদেশে যাওয়ার মত ক্যাশ কোন অর্থ তাদের ফেমিলির কারো হাতে ছিল না। ফলে নিজের বাবার শেষ সম্বল তাদের একমাত্র আশ্রয়স্থল ভিটেবাড়ি বিক্রয় করে সহিন বিদেশে যাওয়ার চিন্তা করে। বিদেশে গিয়ে অনেক টাকা ইনকাম করবে, তাদের অনেক বড় বাড়ি হবে, তারা উন্নত জীবন লাভ করবে এমন আশার বানী শুনিয়ে বাবাকে রাজি করায় সহিন। অবশেষে তাদের এক চাচার কাছে তাদের ভিটেবাড়ি বিক্রয় করে সহিন মধ্যে পাচ্যের দেশ ওমানে যায়। সেখানে সে কনস্ট্রাকশনে হেলপারের কাজ করতো। বাংলাদেশের ত্রিশ পয়ত্রিশ হাজার টাকার মত ইনকাম করতো। সহিনের পাঠানো টাকায় মোটামুটি ভালোই যাচ্ছিলো তাদের সংসার জীবন।
বাংলাদেশের শিক্ষিত ও অশিক্ষিত তরুণ তরুণীদের মধ্যে উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় বিদেশে পাড়ি দেওয়ার প্রবল ইচ্ছা রয়েছে। যারা অল্প ও কম শিক্ষিত তারা মধ্যে পাচ্যের বিভিন্ন দেশে কাজের সন্ধানে যায়। আর যারা শিক্ষিত তারা ইউরোপ আমেরিকায় পাড়ি জমায়। মধ্যপাচ্যের সৌদিআরব, কাতার, কুয়েত, সিঙ্গাপুর, মালোশিয়া, ওমান, বাহরাইন সহ বিভিন্ন দেশে লাখ লাখ বাংলাদেশি প্রবাসী রয়েছে। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুসারে ২০২২ সালে বিভিন্ন দেশে যান ১১ লাখ ৩৫ হাজারে কর্মী। ২০২৩ সালে বিদেশে গেছেন ১৩ লাখ কর্মী। ২০২৪ সালের প্রথম চার মাসে ৩ লাখ ২২ হাজার ২০৭ জন কাজের জন্য বিদেশে গেছেন। ২০২০ এবং ২০২১ সালে করোনার জন্য বিদেশে যাওয়ার সংখ্যাটা কিছুটা কমে গিয়েছিল।
বড় ভাই সহিন বিদেশে গিয়ে ছোট ভাই শাহিনকে বিদেশে নেওয়া ইচ্ছা পোষন করে। কিন্তুু শাহিনের ইচ্ছা ছিল আরো উন্নত জীবনের। সে জেনারেল লাইনে পড়াশোনা না করলেও ইউরোপে যাওয়ার ইচ্ছা পোষন করতো। মধ্যপাচ্য বা এশিয়ার দেশ তার ভালো লাগতো না। আবার বৈধ পথে ইউরোপ যেতে হলে ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা লাগবে। সেই টাকাও তাদের কাছে ছিল না। অবশেষে সে বড় ভাইকে অনেক রিকুষ্টে করে, যে কোন ভাবে তাকে যেন ইউরোপ পাঠানোর ব্যবস্থা করে। অবশেষে শাহিন এক দালালের মাধ্যমে অবৈধ পথে ইউরোপ যাওয়ার সমস্ত প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করলো। শাহিনের ইউরোপ যাওয়ার ব্যপারে তার ফেমিলি ছাড়া আর পাড়াপ্রতিবেশি আত্নীয় স্বজন কেউ জানতো না।
যতটুকু শুনেছি শাহিন ২০১৮ সালেরর শেষের দিকে সন্ধার পরে ব্যাগ গুছিয়ে বাসা থেকে বের হয়। চট্রগ্রামে তিন দিন থেকে কক্সবাজার হয়ে ট্রলারে মালদ্বীপে যায়। মালদ্বীপে প্রায় দেড় মাস থাকে। সেখান থেকে মালোশিয়া কাতার হয়ে ইরাকে যায়। তারপর মিশরে গিয়ে প্রায় ছয় মাস ছিল। মিশর থেকে লিবিয়া যাওয়ার পরেই করোনার কবলে পড়ে শাহিন। সেখানে তার মত কয়েকশো মানুষ ছিল তার সাথে। বাংলাদেশ সহ সুদান, আইভরি কোস্ট, মিসর, ইরিত্রিয়া ও লিবিয়ার নাগরিক ছিল। ২০২১ সালের শেষের দিকে বড় ভাই সহিনের মাধ্যমে শাহিন লিবিয়া থেকে ওমানে যায়। তারপর সেখানে কয়েক বছর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারীতে বাংলাদেশে আসে। কিছুদিন আগে বাড়িতে গিয়ে দেখি শাহিন এবং সহিন দুই ভাই অটো চালায়। তবে তারা ওমানে থাকতে একটি জমি কিনে সেখানে মাটি ফেলে একটি বাড়ি করেছে। বাবা মা মারা গেলেও এখন দুই ভাই সেই বাড়িতেই বসবাস করছে।
অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়া পথে অনেক বাংলাদেশি তরুণ মৃত্যুকে আলিঙ্গন করছে। আবার অনেক মানুষ সফল হয়েছে। তবে যারা অবৈধভাবে ইউরোপে গিয়েছে তাদের কাহিনী শুনলে চোখ দিয়ে জল চলে আসে। শাহিনের ভাগ্য ভালো সে বেঁচে ফেরে এসেছে। দেশে যদি পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যেতো তাহলে মানুষ এভাবে বিদেশ যেতো না। বৈধ অবৈধ পথে লাখ লাখ বাংলাদেশি বিদেশ যায়। এর মাধ্যমে প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে মেধাও পাচার হয়ে যায়। উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রতিবছর হাজার হাজার তরুণ তরুণী বিদেশে পড়াশোনার জন্য যায়। বাংলাদেশ সরকার তাদের যথাযথ মর্যাদা দেয় না বলে তারা আর দেশে ফিরে আসে না।
বর্তমনে বাংলাদেশের মেরুদন্ড হলো প্রবাসিদের রেমিটেন্স। রেমিটেন্স না আসলে আমাদের দেশের অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে যায়। সেই রেমিটেন্সের জন্য লাখ লাখ প্রবাসী পরিবার পরিজন ছেড়ে বিদেশে মানবতের জীবন যাপন করে। তাদের উপর অর্থনীতির নির্ভরতা কমিয়ে বাংলাদেশেও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা উচিত। বাংলাদেশেও সরকারি হিসাব মতে প্রায় দেড় লাখ বিদেশি কাজ করে। বাস্তবের সংখ্যা হয়তো আরো বেশি হতে পারে। তাই এখনই বাংলাদেশের জনসংখ্যাকে সম্পদে রুপান্তরিত করার উদ্যোগ নেওয়া খুবই জরুরী।
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit