প্রিয় আমার বাংলা ব্লগ বাসি.. সবাই কেমন আছেন? আশা করছি সবাই খুব ভালো আছেন,আমিও আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। আমি আজকে আপনাদের সামনে হাজির হয়ে গেলাম নতুন একটি পোষ্ট নিয়ে। আজকে আমার ছোট সময়ের কিছু কথা লিখবো । আশা করি মনযোগ দিয়ে পড়লে আপনাদের অনেক ভাল লাগবে। চলোন তাহলে শুরু করা যাক।
আমি যখন ছোট ছিলাম তখন মোবাইলের তেমন প্রচলন ছিল না। দুই একজন মানুষের হাতে সিটিসেল মোবাইল দেখতে পেতাম। তাও আবার ক্যামেরা ছাড়া। মোবাইলের ভিতরে কোন মেমোরি কার্ড ছিল না। কোন গান বা বিডিও দেখা যেত না। শুধু কথা বলা যেত। এসবের আরো কয়েক বছর আগে, আমার এখনো মনে আছে আমরা যখন ছোট ছিলাম বাবা তখন ঢাকাতে চাকরী করতেন। এক দুই সপ্তাহ পর পর বাবা আমাদের বাড়িতে টেলিফোন করতেন।
আমাদের বাড়ি থেকে যেতে চার পাঁচ মিনিট সময় লাগে, জায়গাটার নাম হলো তালপট্রি। তিন রাস্তার মোড় হওয়ায় বেশ কিছু দোকান হয়েছে সেখানে। তখন টেলিফোনে কথা বলার জন্য একটি দোকানও ছিল। এক মিনিট কথা বললে সাত টাকা করে চার্য নিতো। আমার বাবা মাঝে মাঝে এই দোকানে টেলিফোন করে বলতো আমাদের বাসার মানুষের সাথে কথা বলবে। দোকানের মালিক আমাদের বাসায় খবর পাঠাতো যে ঢাকা থেকে আমাদের টেলিফোন এসেছে। আমাদের বাড়ি কাছে হওয়ায় খবর পৌছাতে তেমন কষ্ট হতো না। কিন্তুু যাদের বাড়ি দূরে ছিল তাদের বাড়িতে সাইকেল দিয়ে খবর পৌছাতে হতো।
খবর আসার সাথে সাথে আমি আর দাদা আমরা তারাহুড়ো করে দোকানে গিয়ে বসে থাকতাম, আর অপেক্ষা করাতাম কখন বাবা আবার টেলিফোন করবে। অনেকক্ষন বসে থাকতাম এক দুই মিনিট কথা বলার জন্য। প্রায় তিশ চল্লিশ মিনিট বসে থাকার পর বাবা টেলিফোন দিলে দাদা কথা বলতেন, আমি লজ্জায় কথা বলতে পারতাম না। বাবা অনেক জোর করতো ডাক দিতো কথা বলার জন্য কিন্তুু আমি কথা বলতে পারতাম না। লজ্জায় মুখ দিয়ে কথা বের হতো না। বেশি জোর করলে দোকান থেকে বের হয়ে যেতাম। দাদা যখন কথা বলতো আমি তখন দেখেছিলাম টেলিফোনের সাথে একটি তারের জয়েন ছিল। আর দোকানের পিছনে বাশ দিয়ে একটি টাওয়ার বসানো ছিল। তখন বুঝতাম না এটা কি, এখন বুঝতে পারলাম সেটা নেটের টাওয়ার ছিল।
মাঝে মাঝে আমাদের বাড়িতে একজিন মহিলা বড় একটি টেলিফোন নিয়ে আসতো। আব্বুর সাথে আম্মু কথা বলতো তবে ঐফোনের সাথে কোন তারের জয়েন ছিলা না। আম্মু টেলিফোন করে কথা বললেও ঐ মহিলাকে টাকা দিতো আবার আব্বু ফোন দিলেও টাকা নিতো। মানে টেলিফোন আসলেও টাকা নিতো আবার টেলিফোন করলেও টাকা নিতো। যেভাবেই হোক কথা বললেই টাকা দিতো হতো।
তারপর বেশি কয়েক বছর পর আমার বড় মামা বিদেশ থেকে একটি মোবাইল দিয়েছিল সেটা কোন তারের সাথে জয়েন ছিল না, ভিতরে সিম ছিল,আবার ৫১২ একটি মেমোরি কার্ডও ছিল। মানে আধুনিক মোবাইল। অডিও বিডিও গান শুনা যেত। আমি প্রায় সময় মোবাইলের দোকনে গিয়ে গান এবং ছবি ঢুকিয়ে আনতাম। একটি বিডিও গান পাচঁ টাকা আর একটি অডিও গান একটাকা করে নিতো। তখন থেকে দোকানে গিয়ে বা কারো বাসায় গিয়ে আমাদের আর কথা বলতে হতো না।
তখন দোকানে কথা বলার রেট কমিয়ে দিয়েছিল। সাত টাকা থেকে পাচ টাকা করা হয়েছিল,তারপর আরো কিছু দিন পর পাচঁ টাকা থেকে ২ টাকা করা হয়েছিল। ততদিনে প্রায় অনেকের হাতেই মোবাইল নাকম যন্ত্রটি চলে এসেছিল। তারপর ২ টাকা দিয়েও যখন মানুষ কথা বলে না। তখন দোকান টি বন্ধ করে দিয়েছিল। আর ঐযে বাশ দিয়ে টাওয়ার বানিয়েছিল, সেটা বাতাসে ভেঙ্গে পড়ে গেছিলো। মানুষ আসে না দোকান বন্ধ সেটা দিয়ে আর কি করবে তাই সেটিও আর মেরামত করা হয়নি।
বেশ কিছু দিন পর আমার এক চাচাতো মামা রাত বারোটার সময় দরজায় এসে আওয়াজ দিলো। আমার আম্মুকে সে আপা ডাকতো। আপা আপা ও আপা বলে ডাকতে লাগলো আর দরজায় আওয়াজ দিতে লাগলো। মা ঘুম থেকে উঠে লাইট জ্বালিয়ে মামাকে বললো কি হয়ছে জাহাঙ্গীর। এত রাতে ডাকতাছো কেন, খালা খালুর কোন সমস্যা হয়েছে,তারা সুস্থ আছে তো..? মামার নাম জাহাঙ্গীর ছিল। সে বললো তেমন কোন সমস্যা না, তারা ভাল আছে। তাহলে এত রাতে..? মামা বললো আমার এক বন্ধু এই মোবাইলটি বিক্রয় করবে আপনি কিনবেন কি না...
যে লোক মোবাইলটি বিক্রয় করবে সে বিদেশ থেকে মোইলটি নিয়ে এসেছে, এখন টাকার সমস্যা তাই মোবাইলটি বিক্রয় করে দিবে। নোকিয়া লাল একটি ক্যামেরা মোবাইল ছিল। ভিতরে মেমোরি ছিল কিন্তুু মোবাইলের মালিক সেটা খুলে রেখে দিয়েছে। পাঁচ হাজার টাকা হলে মোবাইলটি বিক্রয় করে দিবে। মা বললো আমার কাছে তো এত টাকা নাই, মামা বললো কত টাকা আছে ,মা বললো দুই হাজার টাকার মত আছে। মামা বলো মোবাইলটা রেখে দুইহাজার টাকাই দেন,পরে বাকি টাকা দিয়েন,আর না দিতে পারলে আমি দুই হাজার টাকা দিয়ে মোবাইলটি নিয়ে যাবো। মামা দুই হাজার টাকা দিয়ে মোবাইলটি রেখে দিলেন, সকাল বেলা সেই মোবাইল নিয়ে শুরু তুমুল কান্ড...
যেটা আসতেছে দ্বিতীয় পর্বে.....
বন্ধুরা আজ এখানেই বিদায় নিচ্ছি, প্রথম পর্ব কেমন হলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। দেখা হবে আবার দ্বিতীয় পর্বে ততদিন পর্যন্ত ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন, নিজের প্রতি খেয়াল রাখবেন। অপচয় রোধ করবেন। নিজের শহর নিজে পরিষ্কার রাখবেন। আল্লাহ হাফেজ।