১৫ই ভাদ্র-১৪২৯
হ্যলো বন্ধুরা কি খবর সবাই। প্রতিযোগিতার আরেক নাম আমার বাংলা ব্লগ। আশা করি সবাই প্রতিযোগিতা-২০২২ এ অংশগ্রহন নিয়ে অনেক ব্যস্ত সময় পার করতেছন। আমাদের কমিউনিটির এডমিন-মডারেটর ভাইয়েরা সব সময় আমাদেরকে আনন্দে রাখার চেষ্টা করেন, নতুন নতুন অনুভূতি প্রকাশ করার সুযোগ করে দেন। সে জন্য এডমিন-মডারেটর ভাইদের প্রতি আমার অন্তর থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। আপনারা জানেন যে এবারের প্রতিযোগিতার বিষয় সেয়ার করো তোমার জীবনে প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি। আজকে আমি আমার অনুভূতি সেয়ার করে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করতে যাচ্ছি।
মোবাইল ফোন একটি ছোট আকারের ইলেকট্রনিক ডিভাইস। প্রতিদিন দীর্ঘ সময় ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক ডিভাইস গুলির মধ্যে মোবাইল ফোন অন্যতম। আজ মোবাইল আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে উঠেছে। আমাদের দিনটিও শুরু হয় মোবাইল দিয়ে। সকালে ঘুম থেকে উঠে দুচোখ মেলে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দিনটি শুরু করি আবার রাতে ঘুমানোর আগে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দু চোখ বন্ধ করি। মোবাইলের ব্যাবহার এখন শুধুমাত্র যোগাযোগের মধ্যেই থেমে নেই, শপিং, ব্যাংকিং, অনলাইন পড়াশোনা, বিনোদন সব কিছুতেই মোবাইল ফোনের ব্যাবহার রয়েছে।
বর্তমানে অমরা যে অবস্থায় মোবাইল ফোন দেখতেছি, মোবাইল মুলত সে অবস্থায় ছিল না। অনেক পরিবর্তন হয়ে বর্তমান অবস্থায় এসেছে। এক সময় পুরো গ্রাম জোরেও কারো হাতে মোবাইল ছিল না। মোবাইল দেখার জন্য মানুষ এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে, এক পাড়া থেকে অন্য পাড়ায়, এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে যেত। তেমনি ভাবে আমার জীবনে প্রথম মোবাইল দেখা ও হাতে পাওয়ার অনুভূতি আপনাদের সাথে সেয়ার করতেছি।
সময় টা তখন ২০০৪ বা ২০০৫ সালে হবে আমি তখন মাদ্রাসায় পড়ি। আমাদের সমবয়সি যারা ছির তাদের কারো হাতে মোবাইল ছিল না। তবে আমাদের সাথে কয়েকজন বড় ভাইয়া ছিল। তারা হেফজ শেষ করে আমাদের সাথে কিতাব খানায় ভর্তি হয়েছিল। তারা এক বছর রমজান মাসে তারাবীহ পড়িয়ে যে টাকা হাদিয়া পেয়িছিল সে টাকা দিয়ে প্রত্যেকে একটি করে নোকিয়া ১২০৮ মডেলের মোবাইল কিনে ছিল। তখন তাদের কাছে সর্বপ্রথম আমি মোবাইল নামক যন্ত্রটি দেখে ছিলাম।
তারা যখন ফোনে কথা বলতো তখন চিন্তা করতাম, তার বিহীন যন্ত্র দিয়ে এত দুর থেকে কিভাবে কথা শুনা যায়। খুব আগ্রহ নিয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। রাতের বেলা আমরা সমবয়সিরা মাদ্রসায় থাকতাম আর বড় ভাইয়ারা বাড়িতে বা বিভিন্ন মসজিদে আযান দিতে চলে যেত। তখন রাতের বেলা আর মোবাইল দেখতাম না।
দিনের বেলা আমারা যখন ক্লাস করতাম তখন মাঝে মাঝে টিচার না থাকায় ক্লাস ফাকা যেত। ঐ ফাকা সময়ে বড় ভাইয়ারা মোবাইলে একটি সাপের গেইম খেলতো। গেইম খেলার সময় ছুত ছুত একটি আওয়াজ হতো। আওয়াজটা শুনে আমারা বুঝতে পারতাম তারা গেইম খেলছে তখন আমারা তাদের পাশে বসে মোবাইলে গেইম খেলা দেখতাম। তখন মোবাইলে গেইম খেলা দেখতে কত যে ভাল লাগতো সেটা বলে বুঝাতে পারবো না।
তাদের পাশে বসে খেলা দেখতাম কিন্তুু তাদের মোবাইল ধরতাম না। নতুন মোবাইল কিনছে নিজের শরীর থেকে তখন মোবাইলের দাম বেশ ছিল। প্রায় ৫ থেকে ৬ মাস যাওয়ার পর একটু একটু তাদের মোবাইল ধরার চেষ্টা করতাম। মানে তাদেরকে অনেক রিকুষ্টে করতাম একটু গেইম খেলার জন্য। কেউ দিতো আবার কেউ দিতো না। তবে কামাল আর ছানাউল্লাহ নামে দুইজন বড় ভাইয়া ছিল,তাদেরকে রিকুষ্টে করলে একটু খেলতে দিতো। তখন সর্ব প্রথম মোবাইল স্পর্শ করেছিলাম। প্রথম মোবাইল স্পর্শ করে বা হাতে নিয়ে গেইম খেলার অনুভূতি লিখে প্রকাশ করা অসম্ভব।
২০০৯ সালের দিকে বড় মামা বিদেশ থেকে আমাদের ফিমিলিতে একটি মোবাইল দিয়েছিল। মোবাইলটিতে কথা বলার পাশাপাশি ছবি তুলা যেত। ভিতরে ছোট কালো ৫১২ একটি মেমোরি ছিল। যার মাধ্যমে অডিও বিডিও গান দেখা যেতে এবং শোনা যেত। মোবাইলটি বেশি সময় আমার বড় ভাইয়ার হাতেই থাকতো। বড় ভাইয়া নিজের ঘরে এবং রাস্তা দিয়ে হাটার সময় আওয়াজ দিযে গান শুনতো। যেখানে যেত সেখানে সাথে করে মোবাইলটি নিয়ে যেত। আম্মু এবং ভাইয়ার এই দুজনের চার হাতেই মোবাইলটি বন্দী থাকতো। তারা বড় মানুষ তাদের থেকে জোর করে তো আর মোবাইল আনা যায় না।
আমি মাদ্রাসা থেকে এসে অনেক মান অভিমান করে মাঝে মাঝে চালাতাম। প্রায় সময় অনেক বন্ধু থেকে ব্লুটুথ দিযে অডিও বিডিও গান,গজল এসব আনতাম।আমি মাদ্রসায় পড়ার কারনে আওয়াজ দিয়ে গান শুনতাম না। নিজের মতকরে স্বাধীন ভাবে মোবাইলটি চালাতে পারতাম না। তবে মোবাইলটিতে ক্যামেরা থাকায় অনেক ছবি তুলতাম। আমাদের বাড়ির আশে পাশের সকল বাচ্ছাদের ছবি তুলে তাদের কে দেখাতাম। সব বাচ্ছারা একটি ছবি তুলার জন্য আমার পিছনে পিছনে ঘুরতো।আমি মাদ্রাসায় বা কোথাও ঘুরতে গেলে অথবা কোন আত্নীয় স্বজনের বাসায় গেলে মোবাইলটি নিয়ে যেতে পারতাম না। মনে মনে আখাংকা করতাম কখন আমার নিজের একটি মোবাইল হবে।
২০১১ সালে আমাদের মাদ্রাসা থেকে বেফাক পরিক্ষা দেওয়ার জন্য ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলা শহরে যাওয়ার সিধান্ত হলো। যারা যারা যাবে তাদের তালিকা করা হলো। আমিও তালিকার মধ্যে ছিলাম। আমাদের গ্রাম থেকে জেলা শহর প্রায় ১৫ কিলোমিটার।ঐখানে প্রায় এক সপ্তাহ থাকতে হবে। আমি বাসায় জানিয়ে দিলাম যে আমাদের পরিক্ষা অতি নিকটবর্তী। পরিক্ষার দেওয়ার এক সপ্তাহ আগে আমার ছোট মামা আমদের বাড়িতে বেড়াতে আসলেন। সবার সাথে কথা বলার পর সবার শেষে মা মামা কে বললো যে আমি এক সপ্তাহের জন্য জেলা শহরে যাবো পরিক্ষা দিতে। কিন্তুু এই এক সপ্তাহ আমার সাথে যোগাযোগ করার জন্য একটি মোবাইল হলো ভালো হতো। মামা বললো তিনি বাড়িতে গিয়ে একটি মোবাইল আমার জন্য পাঠাবেন। আমি সে কথা শুনে তো অনেক খুশি। আমার নিজের একটি মোবাইল হবে। মোবাইল নিয়ে কি কি করবো আমি মনে মনে পরিকল্পনা শুরু করে দিলাম।
মামা আমাদের বাড়ি থেকে যাওয়ার দুইদিন পরই আমার এক চাচা আমাকে তাদের বাড়িতে ডেকে পাঠালেন। আমি চাচার বাড়িতে যাওয়ার সময় মনে মনে চিন্তা করতে লাগলাম। চাচা আমাকে ডাকে কেন, আমি কি কারো সাথে কোন অন্যাই করলাম। তেমন কিছু তো আমার মনে পড়ছে না। তারপর চাচার বাড়ির পাশে দাড়িয়ে পিছনের দিনে গুলোতে কোন অপরাধ বা কারো সাথে বেয়াদবি করেছি কি না সে বিষয়ে অনেকক্ষন চিন্তা করলাম। চিন্তা ভাবনা করে আমি আমার কোন অপরাধের কথা মনে করতে পারলম না।
মনের মধ্যে অনেক সাহস নিয়ে চাচার বাড়িতে ঢুকে পড়লাম। চাচার বাসায় গিয়ে দেখি আমার বাবা চাচা সাথে বসে বসে কথা বলতেছে। আমি সালাম দিয়ে পাশে দাড়ালাম,চাচা আামকে পড়া শোনার কথা জিঙ্গেস করলেন। পরিক্ষা দিতে কবে যাবো সেটাও জিঙ্গেস করলেন। আমি দাড়িয়ে দাড়িয়ে সুন্দর ভাবে সব কিছুর উত্তর দিলাম। তারপর চাচা আমার হাতে একটি মোবাইল ফোনের প্যাকেট দিলেন। আর বললেন এই মোবাইলটি তোমার জন্য। পরিক্ষা দিতে যাওয়ার সময় নিয়ে যাবা আর সুন্দর ভাবে পরিক্ষা দিবা। কোন সমস্যা হলে আমাকে বা তোমার বাবাকে সাথে সাথে ফোন দিবা। আমি সালাম দিয়ে সেখান থেকে বিদায় হলাম।
চাচার বাসা থেকে এক দৌড়ে আামাদের বাসায় আসলাম। পিছনের দিকে ফিরে তাকালাম না। বাড়িতে এসে প্যাকেট খুলে দেখি নতুন একটি স্যামসাং মোবাইল।
বন্ধুরা কেমন হলো আমার জীবনে প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার গল্পটা। আশা করি ভাল লাগা,মন্দ লাগা কমেন্ট করে জানাবেন। তো আজকে এখানেই বিদায় নিচ্ছি। আবার দেখা হবে নতুন দিনে নতুন বিষয় নিয়ে। সবাই ভাল থাকুন,সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।
ভাই আপনার লেখনী বড়ই চমৎকার। অত্যন্ত সুন্দরভাবে আপনি আপনার প্রথম ফোন পাওয়ার অনুভূতি তুলে ধরেছেন।পড়ে অনেক ভাল লাগল।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জী ভাইয়া চেষ্টা করেছি একটু অন্যভাবে লিখতে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার প্রথম মোবাইল ফোন হাতে পাওয়ার অনুভূতিটা সত্যিই খুবই দারুণ ছিল। যদিও ওই সময়টায় মোটামুটি মানুষের হাতের নাগালে মোবাইল এবং সিম কার্ড এসে গিয়েছিল। তবে হ্যাঁ এই ক্ষেত্রে আপনি আসলে একজন ভাগ্যবান এই বয়সে আপনার চাচার থেকে আপনি একটি মোবাইল ফোন উপহার পেয়েছিলেন। পুরো পোস্টটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো। আর তাছাড়া মোবাইলের কিছুই ইতিহাসে তুলে ধরেছেন আসলে সত্যি দারুন ছিল সব মিলিয়ে।।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জি ভাইয়া চাচা অনেক ভাল।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলে কিছু অনুভূতি মানুষের অন্তরালে রয়ে যায় যদি সেটা সুযোগ পাওয়া না যায় কখনো ফুটে উঠে না যেমনটি আজকে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অনেকের মোবাইল পাওয়ার অনুভূতি জানতে পারলাম ধন্যবাদ আপনাকে
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জি ভাইয়া মনের ভিতরের কথাটা প্রকাশ করলাম।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
অনেক ভালো লাগলো ভাই আশা করি ভালো কিছু হবে ধন্যবাদ
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলে কিছু ইচ্ছা বা ভালোলাগা আবেগ রয়ে যায় কোন কিছুর পাওয়ার আশায়। আর সেই কোন কিছু পাওয়ার আশায় যদি সেটা পাওয়া যায় তাহলে তার অনুভূতিটা তখনই সে প্রকাশ করতে পারে তার আগে কিন্তু কখনো সে অনুভূতি প্রকাশ করার সাহস পায় না। যেমনটি আজ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অনেকেরই মনের ভাব আমাদের মাঝে শেয়ার করেছে পড়ে অনেক ভালো লাগলো।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
প্রতিযোগিতার বদৌলতে সবার মনের কথা জানতে পারলাম।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
সত্যি ভাই এই অনূভুতি কখনো ভোলা যাবে না। আপনার প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার ঘটনা টা বেশ ভালো লাগল। তবে আপনার অন্তত প্রথম ফোন নোকিয়া না এটা দেখে ভালো লাগল হি হি হি।।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমি একটু আলাদা।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বাহ,আপনার অনুভূতিগুলি পড়ে ভালো লাগলো।সত্যিই আগে নোকেয়া ফোনের বেশ কদর ছিল।তাছাড়া আপনার চাচা আপনাকে ফোন গিফট করেছিল প্রথম ফোন দিয়েছেন জেনে ভালো লাগলো।সাপ খেলতে আমার ও খুব ভালো লাগতো, ধন্যবাদ ভাইয়া।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জি আপু প্রথম ফোন চাচা দিয়েছিল।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit