অনেক যুদ্ধ জয় করে দাদা বৌদির বিখ্যাত বিরিয়ানি খাওয়া।

in hive-129948 •  2 months ago 

যুদ্ধ জয় করে দাদা বৌদির বিরিয়ানি খাওয়া

☘️☘️☘️☘️☘️☘️☘️


Onulipi_10_15_09_56_21.jpg

🙏🙏সকলকে শুভ বিজয়ার শুভেচ্ছা🙏🙏

হঠাৎ গতকাল রাতে ঠিক হলো বিরিয়ানি খাব। কিন্তু ভালো বিরিয়ানি বাড়ির কাছাকাছি পাই কোথায়? কলকাতায় আজকাল বিরিয়ানির অভাব নেই। প্রায় সর্বত্র হাঁড়ি নিয়ে বিক্রি হয় বিরিয়ানি। হাঁড়িতে লাল কাপড় জড়িয়ে স্বল্প পয়সায় বিরিয়ানি বিক্রির অভাব নেই প্রতি রাস্তায়। কিন্তু কেন জানিনা কাল মনে হল সেই বিরিয়ানি না খেয়ে ভালো কোয়ালিটির বিরিয়ানি খাব। আর খুব সহজে ভালো বিরিয়ানির খোঁজ পাওয়া যায় একমাত্র ব্যারাকপুরে। ব্যারাকপুরকে বিরিয়ানির শহর বলা হয়। সে নামকরণের পেছনে যথার্থতা অনেক। দাদা বৌদি, আরসালান, ডি বাপী থেকে শুরু করে সমস্ত বড় বড় বিরিয়ানির দোকান ব্যারাকপুরে অবস্থিত। তাই কলকাতায় এসে সকলেই একবার ব্যারাকপুরের বিরিয়ানি খাওয়ার জন্য আসবার চেষ্টা করে। ব্যারাকপুর থেকে আমার বাড়ি খুব বেশি দূরে নয়। মাঝে রয়েছে গঙ্গা। তাই বাইককে বহন করে আমি আর আমার বন্ধু বেরিয়ে পড়লাম দাদা বৌদি থেকে বিরিয়ানি আনবার উদ্দেশ্যে। কিন্তু রাস্তায় যে যে ঘটনার সম্মুখীন হলাম তা সত্যিই মনে রাখবার মতো। বেরোনোর প্রয়োজন কিছু একটা ছিল না। কিন্তু বিরিয়ানি আনাই বা কম প্রয়োজন কী? একেবারেই না। ফলত আমরা সমস্ত বাধা বিঘ্ন কাটিয়ে এগোতে শুরু করলাম আমাদের লক্ষ্যকে উদ্দেশ্য করে। সমস্যা উপস্থিত হয়েছিল একটাই। প্রতিমা নিরঞ্জনকে কেন্দ্র করে সমস্ত রাস্তা বন্ধ ছিল গতকাল। যেদিকেই এগোচ্ছি পুলিশ রাস্তা আটকে দিচ্ছে। আর বারবার ঘুরিয়ে দিচ্ছে অন্য রাস্তায়।

IMG_20241014_184458_924.jpg

IMG_20241013_201857_585.jpg

হুগলি জেলায় জি টি রোড এবং ব্যারাকপুরের দিকে বি টি রোড দুটি প্রধান রাস্তাই গতকাল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ছিল। তাই বাইক নিয়ে এগনোর মত সঠিক রাস্তাই খুঁজে পাচ্ছিলাম না কোনভাবে। উপরন্তু বিরিয়ানি আনবার বদলে রাস্তায় দেখছিলাম প্রতিমা ভাসানের কার্নিভাল। যেভাবে হোক ভেতরের গলি ধরে গঙ্গার ঘাটে উপস্থিত হয়েছিলাম। কিন্তু গঙ্গা পেরনোর পর দেখলাম ব্যারাকপুরের সমস্ত রাস্তা বন্ধ। চারদিকে শুধু ঠাকুর বিসর্জনের ভিড়। রাস্তাঘাট আটকে গাড়ি আটকে পরপর প্রতিমা এগিয়ে আসছে শোভাযাত্রা সহকারে। কত রকম তাদের বৈচিত্র। কত তার রকম সকম। ছেলেবেলায় আমরা দেখেছি ঢাক বাজিয়ে অথবা ব্যান্ড বাজিয়ে ঠাকুর বিসর্জন। এখন সবটাই যেন বদলে গেছে। তাই ঢাক ব্যান্ডের বদলে এখন বিভিন্ন রকম ট্যাবলো সাজিয়ে এবং দেশ-বিদেশের বিভিন্ন নাচের শোভাযাত্রায় ঠাকুর বিসর্জনের পথে এগিয়ে চলে। রাস্তার দু'ধারে বাঁশের বেড়া এবং তার পাশে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে মানুষ। তখন আমি এটাই বুঝতে পারছি না কি বিরিয়ানি আনবো কিভাবে। অথচ আমরা নাছোড়। দাদা বৌদির বিরিয়ানি আমরা খাবই।

IMG_20241014_184338_646.jpgIMG_20241014_184332_961.jpg
IMG_20241014_184257_708.jpgIMG_20241014_184225_883.jpg

প্রতিমা নিরঞ্জনের শোভাযাত্রা

অবশেষে অনেক ঘুরে ঘুরে গিয়ে পৌছলাম দাদাবৌদির দোকানের কাছাকাছি। শেষ পর্যন্ত পুলিশ আর এগোতেই দিল না বাইক নিয়ে। অগত্যা থেমে যেতে হল আমাদের। সেখানেই এক জায়গায় বাইক রেখে এরপর থমকে গেলাম বিসর্জন দেখতে আসা জনতার ভিড়ে। সেখানেই দুজন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ প্রতিমাগুলি এবং তাদের শোভাযাত্রা দর্শন করলাম। কিন্তু তখনও হাল ছাড়িনি বিরিয়ানির। মাথায় ঘুরছে সেটাই। হেঁটেই এগোতে শুরু করলাম ব্যারাকপুর স্টেশন এর দিকে। বহুদিন ওই অঞ্চলে কাজ করার জন্য মোটামুটি সবকটি রাস্তাই আমার চেনা। হেঁটে হেঁটে এক সময় পৌছালাম দাদা বৌদির বিখ্যাত বিরিয়ানির দোকানে। সেখানেও বিশাল লাইন। সেই লাইনে দাঁড়ানোর পর অবশেষে হাতে পেলাম বহুপ্রতীক্ষিত চিকেন ও মাটন বিরিয়ানি।

IMG_20241014_183601_855.jpgIMG_20241014_183609_512.jpg

IMG_20240912_173336_623.jpg

দাদার বৌদির বিখ্যাত বিরিয়ানি

হাতে বিরিয়ানি নিয়ে আবার ফেরবার জন্য সে এক যুদ্ধ। কিন্তু তাও হার মানিনি আমরা। এবার আর বাইক নিয়ে বড় রাস্তায় উঠবার চেষ্টাই করিনি। গলি দিয়ে দিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরে এসেছি বাড়ির পথে। যদিও তার জন্য অনেক অন্ধকার গলিপথ অথবা মাঠ ঘাটের রাস্তা অবলম্বন করতে হয়েছে আমাদের। কিন্তু তাও হাতে দাদা বৌদির বিরিয়ানি থাকলে সেই গন্ধে কোন কিছুই অসম্ভব নয় মনে হচ্ছিল। ফলত আমরা বেশ কিছুক্ষণ সময় পরে সমস্ত যুদ্ধটা জয় করে বাড়ি আসতে পেরেছি। রাতে সকলে মিলে দাদা বৌদির বিরিয়ানি খেয়ে সমস্ত কষ্ট লাঘব হতে বেশি সময় লাগেনি। যাত্রাপত্তা কঠিন থাকলেও তা সফল হয়েছে আমাদের ঐকান্তিক ইচ্ছার জন্য। তাই আমার সব সময় মনে হয় ইচ্ছা থাকলে যেকোনো উপায়েই কার্যসম্পাদন হয়। কঠিন বলে আসলে কিছু নয়। ইচ্ছা শক্তির বল প্রবল।

আমার এই পোস্ট আপনাদের ভালো লাগলে নিশ্চয় কমেন্ট করে আমার সঙ্গে থাকবেন।


Onulipi_08_07_01_37_53-removebg-preview.png

চিত্রগ্রহণ
ইনফিনিক্স হট ৩০
ক্যামেরা স্পেশিফিকেশন
৫০ মেগাপিক্সেল
স্ট্যাটাস
আনএডিটেড
চিত্রগ্রাহক
কৌশিক চক্রবর্ত্তী
লোকেশন
ব্যারাকপুর, পশ্চিমবঙ্গ
ছবি এডিটিং সৌজন্য
অণুলিপি

🙏 ধন্যবাদ 🙏


(৫% বেনিফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)



1720541518267-removebg-preview.png

Onulipi_07_27_10_21_22.jpg


Yellow Modern Cryptocurrency Instagram Post_20240905_213048_0000.png

new.gif

1720541518267-removebg-preview.png


--লেখক পরিচিতি--

IMG_20240303_181107_644.jpg

কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।

Drawing_11.png

44902cc6212c4d5b.png


Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.