ফটোগ্রাফি পোস্ট৷ ছবিতে ধরা পাহাড়ের রাণী দার্জিলিং

in hive-129948 •  4 months ago 

পাহাড়ের রাণী দার্জিলিংয়ের ফটো অ্যালবাম


🌱🌱🌱🌱🌱🌱🌱🌱🌱


AddText_07-15-09.44.54.jpg

☘️ সকলকে স্বাগত জানাই ☘️

পাহাড়ের রাণী দার্জিলিং। সারা ভারতে শৈল শহরের অভাব নেই। তবু দার্জিলিং তো দার্জিলিংই৷ তার জুড়ি মেলা ভার। দার্জিলিংয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়নাভিরাম। দেশ বিদেশ থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ পর্যটক আসেন দার্জিলিং পাহাড় দেখতে। এখন বিভিন্ন অফবিট লোকেশন হলেও দার্জিলিং আছে দার্জিলিংয়েই। সেখানকার ম্যাল, টয় ট্রেন, চিড়িয়াখানা, চা বাগান যেন তার একান্তই নিজস্ব। আমিও দার্জিলিং এ গেছি বার কয়েক। আপাতত যা মনে পড়ছে, চার কিংবা পাঁচবার। এই শেষবার ডিসেম্বরেও ঘুরে এলাম আবার। আজ আপনাদের সামনে সেই অ্যালবাম থেকেই আমার তোলা কিছু ফটোগ্রাফি নিয়ে আসবো। এবার ভরা শীতে দার্জিলিং এর পরিবেশই ছিল আলাদা। হাড় কাঁপানো ঠান্ডা এবং পরিষ্কার আকাশ, এই হলো শীতের দার্জিলিং এর বৈশিষ্ট্য। আসুন আমার তোলা সেই ছবিগুলো দেখা যাক।

1721060473392-removebg-preview.png

পথের দিশা

IMG-20240715-WA0002.jpg

দার্জিলিং যেতে গেলে প্রথমে যেতে হয় শিলিগুড়ি। শিলিগুড়ি সমতলে অবস্থিত। সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে বা বাসে করে পৌঁছে যাওয়া যায় দার্জিলিং। এছাড়া টয় ট্রেনের বন্দোবস্তও আছে। এই ছবিটি শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং যাওয়ার পথে গাড়ি থেকে তোলা। যেখানে একদিকে সুউচ্চ পাহাড় আরেক দিকে ভয়ংকর সুন্দর খাদ। বর্তমানে দার্জিলিংয়ের রাস্তা ভীষণ মসৃণ ও সুন্দর। ঘুরে পাক খেয়ে যাবার রাস্তা আপনাকে স্বর্গীয় সুখ এনে দেবে। আকাশ পরিচ্ছন্ন থাকলে এইরকম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য জন্ম দেয় এক অপার ভালোলাগার। এক একটা বাঁকে এক একরকম দৃশ্য। আমার ভালোলাগার দৃশ্যগুলো ক্যামেরাবন্দী করছিলাম। তার মধ্যে একটা ভাগ করে নিলাম আপনাদের সাথে।

1721060473392-removebg-preview.png

তুষারশৃঙ্গ

IMG-20240715-WA0003.jpg

দ্বিতীয় ছবিটি দার্জিলিং এর প্রধান আকর্ষণ মাউন্ট কাঞ্চনজঙ্ঘার৷ পশ্চিমবঙ্গবাসীর কাছে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক আবেগের নাম। ছুটি পড়লেই আমরা ট্রেনের টিকিট কেটে ছুটে যাই এই পাহাড়ের টানে। পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্গের নাম কাঞ্চনজঙ্ঘা। চোখের সামনে দেখলে যে অনুভূতির জন্ম হয়, তা কোনদিন কলমে বা ভাষায় প্রকাশ করার নয়। ভোর বেলার কাঞ্চনজঙ্ঘা এক রকম, আবার বেলায় বিভিন্ন সময়ে তার পরিবর্তন হয় রং। এই ছবিটি সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে আমাদের হোটেলের ছাদ থেকে তোলা। এমন দৃশ্য চোখের সামনে দেখলে তা সারা জীবন সঞ্চিত হয় হৃদয়ের এক কোণে।

1721060473392-removebg-preview.png

পাহাড়ঘরে

IMG-20240715-WA0007.jpg

এই ছবিটি দার্জিলিংয়ের অন্যতম আকর্ষণ বাতাসিয়ালুপ থেকে তোলা দার্জিলিং শহরের পাহাড় বেয়ে তৈরি হওয়া ঘরবাড়ির দৃশ্য। চোখের সামনে থেকে দেখলে অসাধারণ এই দৃশ্য আপনার ভালোলাগার অ্যালবামে জায়গা করে নেবে সহজেই। পাহাড় চির মনোরম। তার জুড়ি মেলা ভার। বাতাসিয়ালুপ দার্জিলিং এর একটি টুরিস্ট পয়েন্ট। এখান দিয়ে প্রতিদিন ঘুরে ঘুরে এগিয়ে যায় দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের টয় ট্রেন। তাই এর নাম লুপ। সেখান থেকে সম্পূর্ণ দার্জিলিং শহরটাই চোখের সামনে ভেসে ওঠে। আমি চেষ্টা করেছি সেই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করার।

1721060473392-removebg-preview.png

সবুজের টান

IMG-20240715-WA0004.jpg

দার্জিলিং এর বিখ্যাত পাইন গাছ। পাহাড়ের গায়ে সারি সারি পাইন গাছ আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকবে প্রতিনিয়ত। গাড়ি নিয়ে ঘুরে ফিরে যেদিকেই যাবেন, পাইন গাছের সারি পাহাড়া দেবে আপনাকে। এই সারি সারি পাইন গাছের দৃশ্য এক অভূতপূর্ব প্রাকৃতিক ক্যানভাস যেন সাজিয়ে দেবে আপনার সামনে। রাস্তা থেকে তোলা এমনই একটি পাইন জঙ্গলের ছবি আপনাদের সামনে তুলে নিয়ে এলাম।

1721060473392-removebg-preview.png

মেঘপ্রপাত

IMG-20240715-WA0005.jpg

পাহাড়ের কোল থেকে তোলা মেঘ এবং কাঞ্চনজঙ্ঘার মাখামাখি করবার দৃশ্য। এই প্রেম অমলিন। যেকোনো পাহাড়ের ঢালে দাঁড়িয়ে যদি দেখেন চোখের সামনে তুষারশৃঙ্গের মাথায় খেলে যাচ্ছে এক ফালি রোদ আর মেঘের দৃশ্যপট, তাহলে আপনাকে আর পায় কে। পয়সা উসুল হতে সময় লাগবে না বেশিক্ষণ। আমার ক্যামেরায় বন্দি করতে চেষ্টা করেছি এমনই একটি দৃশ্যপটের। টাইগার হিল যাওয়ার পথে এই জায়গায় আপনাকে একটু থমকে দাঁড়াতেই হবে কিছুক্ষণের জন্য। কাঞ্চনজঙ্ঘা যেন হাত বাড়িয়ে ডাকছে আপনাকে সবটুকু উজার করে দেবে বলে।

1721060473392-removebg-preview.png

পদচারণা

IMG-20240715-WA0006.jpg

এই ছবিটি দার্জিলিং এর নিকটবর্তী লামাহাট্টা গ্রামে অবস্থিত পার্কের। পাইন গাছ দিয়ে ঘেরা এই পার্কের প্রাকৃতিক শোভা অসাধারণ। বেশ কিছুটা গাড়ি নিয়ে যাওয়ার পর যখন আপনি নামবেন এই পার্কের সামনে, তখন দৈনন্দিন জীবনের দুঃখ বিষাদ ভুলে কিছুক্ষণ প্রাকৃতিক আনন্দে মিশে যেতে বেশি সময় লাগবে না। পরিবার-পরিজন নিয়ে বা বন্ধুবান্ধবদের সাথে এই পার্কে ট্রেক করে উঠতে কিন্তু বেশ লাগে।

1721060473392-removebg-preview.png

নেশাযাপন

IMG-20240715-WA0008.jpg

এই ছবিটি দার্জিলিংয়ের বিখ্যাত চা বাগানের। এটি গোপালধারা চা বাগান। দার্জিলিং মিরিক রোডে এই চা বাগানটি একটি দীর্ঘ পাহাড় জুড়ে অবস্থিত। গাড়ি থেকে নেমে এই চা বাগানের ভেতর দিয়ে হাঁটলে যে অসাধারণ অনুভূতির জন্ম হয়, আপনার সারা জীবন স্মৃতির মনিকোঠায় তা থেকে যাবে। সেখানে স্বাদ গ্রহণও করতে পারেন স্থানীয় চায়ের। আমার বাড়ির জন্য কিনে আনতে পারেন পছন্দ সেই চা পাতা। এই চা বাগানে দুদন্ড খেলে বেড়ালে আপনার আর সমতলে ফিরতেই ইচ্ছে করবে না। এই বাগানের একটি অংশ আমি ক্যামেরাবন্দি করেছিলাম।

1721060473392-removebg-preview.png

জলতরঙ্গ

IMG-20240715-WA0009.jpg

এই ছবিটি বিখ্যাত মিরিক লেকের। পাহাড়ের খাঁজে তৈরি হওয়া এই বিশাল লেক সকলের কাছে এক বিস্ময়ের দ্রষ্টব্য। কয়েকটি পাহাড়ের মাঝখানে যে বিপুল জলরাশি এই হ্রদে সঞ্চিত আছে, তা দেখলে বিস্মিত হতে আপনার বেশি সময় লাগবে না। শিশুদের জন্য সেখানে হর্স রাইড ও সবার জন্য লেকে বোটিংয়ের ব্যবস্থা আছে। পরিবার বা বন্ধুদের নিয়ে কিছু মূল্যবান সময় কাটানোর জন্য অবশ্যই আসবেন এই মিরিক লেকে। লেকের আশপাশে পাহাড়ি ছেলেমেয়েদের বিচরণ ও খেলে বেড়ানো আপনাকে এক পরম তৃপ্তি দেবে। লেকের নয়নাভিরাম দৃশ্য ছেড়ে আসতে আপনার মন খারাপ করবে এমনটি চোখ বুজে বলা যায়।

1721060473392-removebg-preview.png

নৌকাজন্ম

IMG-20240715-WA0010.jpg

মিরিক লেকের বুকে ভেসে চলেছে শিকারা। পাশে একটি প্যাডেল বোট। এই লেকের ধার বেয়ে বোটিং করার অনুভূতি একেবারেই অন্যরকম। স্বনিয়ন্ত্রিত এই বোটগুলি ভেসে বেড়াবে আপনার আজ্ঞাবহ হয়ে। ততক্ষণ আপনিই এই লেকের রাজা।

আমার দার্জিলিং অ্যালবাম কেমন লাগলো জানাবেন। আপনাদের জন্য বাছাই করা কয়েকটি ছবি আমি নিয়ে এলাম আজকের এই ব্লগে। এই ছবিগুলি আমার ভীষণ প্রিয়। বাঙালীর দার্জিলিং প্রেম বেঁচে থাকুক। ভালো থাকুক পাহাড়ের রাণী৷ ভালো থাকুক সেখানকার মানুষ।


1720541507968-removebg-preview.png


চিত্রগ্রহণের বিবরণ
চিত্রগ্রহণ
রেডমি প্রো ৯
ক্যামেরা
২০ মেগাপিক্সেল
চিত্রগ্রাহক
কৌশিক চক্রবর্ত্তী

সবকটি ছবি আনএডিটেড

(৫% বেনিফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)


Banner_New.png


new.gif

1720541518267-removebg-preview.png


--লেখক পরিচিতি--

IMG_20240303_181107_644.jpg

কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার সহ সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।


Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

আমি যে কোন ছোটবেলায় দার্জিলিং গিয়েছিলাম কোন দৃশ্যই আগের মনে নেই। তোমার ছবিগুলো দেখে ভীষণ ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে আবার কবে দার্জিলিং যাব। ছবিগুলো যেমনি সুন্দর করে তুলেছো সাথে সাথে ছবির বিবরণ গুলো খুব ভালো লিখেছো। এভাবেই লিখে চলো। জয়তু...

সত্যিই দার্জিলিং আজও পাহাড়ের রানী। এর জুড়ি মেলা ভার। যতই মানুষের ভিড় হোক আর যানবাহনের আধিক্য হোক দার্জিলিং আছে দার্জিলিংয়েই।