বিশাখাপত্তনম ভ্রমণের কিছু স্বনির্বাচিত ছবি
📷ফটোগ্রাফি পোস্ট📷
আজ আপনাদের সামনে কিছু এমন ফটোগ্রাফি শেয়ার করব যেগুলি ভারতবর্ষে একটি অন্যতম টুরিস্ট গন্তব্যে অবস্থিত। কিছু বছর আগে কয়েক দিনের ট্যুরে গিয়েছিলাম ভাইজাক বা বিশাখাপত্তনম। এই বিশাখাপত্তনম ভারত ভূখণ্ডে অবস্থিত অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের রাজধানী। এই স্থানটি ভারতবাসী তথা বিদেশের বহু মানুষের প্রিয় একটি গন্তব্য। কয়েক দিনের ছুটি কাটানোর জন্য কাছেপিঠে এর থেকে ভালো নৈসর্গিক জায়গা খুব কম আছে। ভাইজাকের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এখানে নীল সমুদ্র মিশে গেছে পূর্বঘাট পর্বতমালার উপত্যকার সাথে। অর্থাৎ একটি জায়গাতেই পাহাড় ও সাগরের মিলন মন ভালো করে দেয় পর্যটকদের। বিভিন্ন ধরনের মনমুগ্ধকর সী বিচ এবং সুউচ্চ পাহাড় সম্পূর্ণ ভ্রমণটিকে মনোরম করে তোলে। এছাড়াও এখানে দেখবার জায়গার অভাব নেই। বিশাখাপত্তনম ভারতের একটি অন্যতম নৌসেনা বন্দর। তাই এখানে গেলে চোখের সামনে দেখা যায় ভারতীয় নৌ সেনার বিভিন্ন ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজগুলি। সাধারণ মানুষের কাছে সে এক ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা। আমি তো একটি বিশেষ দ্রষ্টব্যেরও সাক্ষী হয়েছিলাম। তখন চলছিল ভারতীয় নৌসেনার অস্ত্র প্রশিক্ষণের মহড়া। তাই বিশাখাপত্তনম বন্দর থেকে একে একে মিসাইল যুদ্ধজাহাজ থেকে সমুদ্রের দিকে ছোড়ার দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেছিলাম। সে এক বিরল দৃশ্য। আর ভারতীয় নৌসেনার অত্যন্ত ক্ষমতাসম্পন্ন অত্যাধুনিক জাহাজগুলি চোখের সামনে থেকে দেখার অভিজ্ঞতাই আলাদা।
বিশাখাপত্তনমে পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে সমুদ্র দেখার অভিজ্ঞতা যার হয়েছে সে এই জীবনে কোনদিন ভুলতে পারবেনা সেই অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্যপট। এমন দৃশ্য ভারতবর্ষে খুব কম জায়গাতেই দেখা যায়। আজ এই পোস্টে আমি বিশাখাপত্তনম ভ্রমণ কালে আমার ক্যামেরায় তোলা কিছু প্রাকৃতিক দৃশ্য আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নেব।
বিশাখাপত্তনম যাওয়ার পথে সমুদ্রের পাশ দিয়ে পাহাড়ের চড়াই উতরাই ভাঙতে ভাঙতে গাড়িতে করে যেতে বড় ভালো লাগে। এই রাস্তায় এক পাশে পাহাড় ও অন্য পাশে সমুদ্র আপনাকে চুম্বকের মত টেনে রাখবে। রাস্তাঘাট বেশ পরিষ্কার এবং পাহাড়ি রাস্তা গুলো যেন একধারে সমুদ্রের সঙ্গে মিশে গেছে। তাই এহেন মনোরম রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যেতে কার না ভালো লাগে। আমিও চলার পথে তুলে রেখেছিলাম পাহাড় ও সমুদ্রের মাঝে এই প্রবেশদ্বারের দৃশ্যটি।
পাহাড়ে ওঠার পর উপর থেকে সমুদ্রের দৃশ্য যে অপার ভাললাগার জন্ম দিয়েছিল তা কোনোভাবেই ভাষায় প্রকাশের নয়। অনবদ্য সে অভিজ্ঞতা। ছবিতে দেখুন। রাস্তাগুলো কেমন সমুদ্রের ধার দিয়ে এঁকেবেঁকে পাহাড় থেকে নেমে গেছে সমতলের দিকে। গাড়ি করে নামতে নামতে এই অসাধারণ দৃশ্যপট ক্যামেরায় বন্দি করেছিলাম সেই মুহূর্তে। এই দৃশ্য আজও যেন চোখে লেগে আছে ক্যানভাসের মত।
আমার ক্যামেরায় বন্দি করা ভারতীয় নৌসেনার এক অতি ক্ষমতা সম্পন্ন যুদ্ধ জাহাজের ছবি। এই জাহাজগুলি এতদিন ছবিতে দেখে এসেছিলাম। কিন্তু বিশাখাপত্তনম সমুদ্র সৈকতে দাঁড়িয়ে চোখের সামনে দিয়ে এমন যুদ্ধ জাহাজ যেতে দেখেছি একের পর এক। কখনো সেই জাহাজ থেকে যুদ্ধ মহড়ার জন্য ছুঁড়তে দেখেছি ক্ষেপণাস্ত্র। আপনারা সকলেই জানেন ভারতীয় নৌসেনা পৃথিবীর প্রথম কয়েকটি শক্তিধর নৌ সেনার একটি। তাই বিভিন্ন অত্যাধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় জাহাজ এবং ডুবোজাহাজ ভারতীয় নৌ সেনার হাতে রয়েছে। ছবিতে যে জাহাজটি দেখছেন এটিও একটি ক্ষেপণাস্ত্র ও রাডার সিস্টেম সহযোগী যুদ্ধজাহাজ যা শত্রুকে দূর থেকে চিনে নিয়ে সফলভাবে ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ করতে সক্ষম।
এই ছবিটি আজও যেন আমার মস্তিষ্কতে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এমন মনভোলানো দৃশ্য আমি সচরাচর কোথাও দেখিনি। কৈলাসগিরি পাহাড়ের উপর থেকে ভাইজাকের সমুদ্র সৈকত ঠিক এমনই দেখায়। চর্মচক্ষুতে ধরা এই মনোরম নৈসর্গিক সৌন্দর্য আজীবন যেন মস্তিষ্ক দখল করে নেয়। ছবিতে দেখুন। পাহাড়ের সঙ্গে সমুদ্রের কি প্রাকৃত মিলন দৃশ্য। যেন স্বর্গ নেমে এসেছে পৃথিবীতে। এই দৃশ্যে যে পাহাড়টি দেখা যাচ্ছে তা পূর্বঘাট পর্বতশ্রেণীর একটি অংশ। আর সাগরটি অবশ্যই আমাদের প্রিয় বঙ্গোপসাগর। এই দুইয়ের মিশ্রণে ভাইজাক শহর যেন তার নিজের রূপে রঙে বর্ণময়।
ভাইজাক থেকে সামান্য দূরে একটি পাহাড়ের উপর অবস্থিত সিমাচলম মন্দির। এই মন্দিরে অধিষ্ঠাতা দেবতা বিষ্ণু। মন্দিরের কারুকার্যে দেখুন অসাধারণ দক্ষিণী কাজ। সম্পূর্ণ মন্দিরটি বিভিন্ন ধরনের খোদাই কার্যে সুন্দর হয়ে উঠেছে। সামনে থেকে দেখলে এর সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করার নয়। এই মন্দিরে পৌঁছোবার জন্য অনেকটা পাহাড়ে উঠতে হয়। সম্পূর্ণটিই গাড়ি বা বাসে করে পৌঁছে যেতে পারেন। একবার উপরে উঠলে এবং মন্দিরের সামনে দাঁড়ালে আর যেন ফিরতে ইচ্ছা করে না। সেই মন্দিরের একটি দৃশ্য আজ আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিলাম।
সমুদ্রসৈকতে আমার ক্যামেরায় তোলা একটি প্রাকৃতিক দৃশ্য। দৃশ্য দেখা যাচ্ছে সমুদ্রের জলে নিমজ্জিত একটি পাথর। এবং দূরে একটি যুদ্ধ জাহাজ আপন খেয়ালে চলেছে তার গন্তব্যে। দেশের নিরাপত্তায় এরা সদা জাগ্রত প্রহরী। ভাইজাকে সমুদ্রের এক অনাবিল শোভা আছে। ফেনিল সমুদ্র যেন দিগন্তকে চুম্বন করে একাত্ম হয়ে যায়। এই মিলনের কোন মুহূর্ত নেই, কোন তিথি নেই। সর্বদা এক অনাবিল নির্ভরতায় মেঘ, দিগন্ত, সমুদ্র ও পাহাড় বিশাখাপত্তনমে যেন এক লুকোচুরি সৃষ্টি করেছে অহরহ। আর সেই সৌন্দর্যে ভাগ বসাতেই আমরা বারবার ছুটে যাই ভাইজাক বা বিশাখাপত্তনামের দিকে।
ধন্যবাদ সকলকে। ছবিগুলি ভালো লাগলে অবশ্যই মন্তব্য করে সঙ্গে থাকবেন।
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit