নস্টালজিক পুজো কলেজ স্কোয়ার সার্বজনীন
শুরু হয়ে গেছে বাঙালির সর্ববৃহৎ উৎসব দুর্গোৎসব। যদিও আজ ছিল চতুর্থী, কিন্তু বাঙালির উন্মাদনার শেষ নেই। মহালয়ার পর থেকেই মন্ডপে মন্ডপে মানুষের ঢল। আমি খুব একটা ভিড় কোনদিনই পছন্দ করি না। সেদিক থেকে দেখতে হলে পুজোর এই ছুটির দিনগুলি নিজের মতো কাটাতে ভালবাসি। আজ কিছু কাজে পৌঁছে গিয়েছিলাম কলেজ স্ট্রিট। আপনারা হয়তো জানেন সারা ভারতে কেন, সমগ্র এশিয়াতে কলেজ স্ট্রিটের মতো বইয়ের বাজার আরেকটিও নেই। এখানে পাওয়া যায় না এমন কোনো বই নেই। এমনকি মূল্যবান সব দলিল এখানে অবহেলায় পড়ে থাকে পুরনো বইয়ের পাতার ভাঁজে। এইতো কদিন আগেই আমার এক বন্ধু কলেজ স্ট্রিট থেকে বই কিনে বাড়ি নিয়ে গেল। তারপর তার ভিতর থেকে বেরোলো পুরোনো কিছু সই করা দলিল। সেগুলি আমাকে পাঠাতে আমি তো দেখে হতবাক৷ এগুলি কিনা আজ থেকে ২০০ বছর আগের হিন্দু কলেজের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে একজন অন্যতম ব্যক্তি তৎকালীন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হাইল্যান্ড ইস্ট সাহেবের সই করা দলিল। এমনই বিভিন্ন ঐতিহাসিক নথি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কলেজ স্ট্রিটের দোকানে দোকানে।
যদিও আজকে আমার পোষ্টের উদ্দেশ্য কলেজ স্ট্রিটের বই বা তার ইতিহাস নয়। আজ আমি বলব দুর্গাপুজো বিষয়ক কিছু কথা। কলেজ স্ট্রিট বললেই যে দুর্গাপুজোর কথা প্রথম মাথায় আসে বাঙালির, তা হল কলেজ স্কোয়ার সর্বজনীন দুর্গোৎসব। এই দুর্গোৎসব কলকাতার এক ঐতিহ্য বহন করে নিয়ে চলেছে বহুদিন। থিমের পুজোর রমরমা চারপাশে হলেও কলেজ স্কোয়ার সেসবের ধার ধারে না। তারা সেই একই চিরায়ত মন্ডপের সাথে চিন্ময়ী মায়ের ঐতিহ্যমন্ডিত মূর্তির পূজা করে। আজ কলেজ স্ট্রিটে যাওয়ার হেতু একবার ঢুকে পড়লাম এই কলেজ স্কোয়ার মণ্ডপটিতে। মাঝখানে বহুদিন যাওয়া হয়নি। কিন্তু অনেক বছর পরে এই মন্ডপ আমাকে নস্টালজিয়া এনে দিল কিছুক্ষণের জন্য। সেই ছেলেবেলায় কলেজ স্ট্রিটের স্কুলে পড়বার সৌজন্যে এই কলেজ স্কোয়ার দুর্গোৎসবের সাথে ছিল ওতপ্রোত সম্পর্ক। স্কুলের বারান্দা থেকে প্রতিদিন দেখতাম একটু একটু করে এই মন্ডপ তৈরীর মুহূর্তগুলো। কিন্তু আজ এত বছর পরেও গিয়ে দেখলাম একটুও বদলাইনি তার ঐতিহ্য। সেখানে কুমোরটুলির বিখ্যাত মৃৎশিল্পী রমেশ পালের তৈরি সাবেকি প্রতিমা আজও স্থাপিত হয়েছে মন্ডপে। মন্ডপ সজ্জায় বৈচিত্র থাকলেও তাতে নেই কোন থিমের বাড়াবাড়ি। তাই সব মিলিয়ে এই কলেজ স্কোয়ার সার্বজনীন আমাকে যেন ফিরিয়ে নিয়ে গেল অনেক পুরনো সেই স্কুলের দিনগুলোয়। ভেতরে ঢুকে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম মন্ডপের দিকে চেয়ে। অসাধারণ ঝাড়বাতি এবং মণ্ডপের ভেতরে আলোকসজ্জা কিছুক্ষণ দাঁড় করাবেই আপনাকে। কয়েকটি ছবি ক্যামেরাবন্দি করে তারপর ধীরে ধীরে পা বাড়ালাম গন্তব্যের দিকে।
আজ কলেজস্ট্রিটে গিয়েছিলাম কলকাতা বইমেলা সংক্রান্ত কয়েকটি কাজে। কিন্তু পুজোর সময় বলে উপরি পাওনা হিসেবে পেয়ে গেলাম কলেজ স্কোয়ারের মন্ডপটি। খুব অল্প সময় হলেও সেখানে গিয়ে আমার ভালোলাগা বুকে করে বয়ে আনলাম বাড়ি পর্যন্ত। দুর্গা পুজো বাঙালির সার্বজনীন উৎসব। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলে এই পুজোয় মেতে ওঠে একসাথে। আর আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকি এই পাঁচটা দিনের জন্য। এদিক থেকে দেখতে গেলে আজ এই কলেজ স্কোয়ারের মন্ডপটি দর্শন আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। পুজোর দিনগুলো প্যান্ডেল হপিংয়ের নেশা কোনদিনই খুব একটা নেই। তাই আলাদা করে আর উত্তর কলকাতার এই পুজো মণ্ডপে আসা হয় না কখনোই। কিন্তু আজ কাজের মধ্যেই কোনভাবে এসে গেল মুহূর্তটি। সব মিলিয়ে কিছুটা ভালো সময় কাটালাম কলেজ স্কোয়ারে গোলদিঘির পাশে।
আমার ভালো লাগাটুকু আজ আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করলাম এই পোস্টে। আপনাদের মন্তব্য কমেন্ট এর মাধ্যমে নিশ্চয়ই জানাবেন। পুজোর দিনগুলোয় সকলে ভালো থাকুন এবং সুস্থ থাকুন। বাইরে খাওয়া দাওয়া করলেও তা যেন শরীরে অসুস্থতার কারণ না হয় সেদিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখুন। তবে হ্যাঁ, একটা কথা বলে যাই। আপনার আনন্দ যেন আর পাঁচজনের নিরানন্দের কারণ না হয় সেদিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন।
🙏 ধন্যবাদ 🙏
(৫% বেনিফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
https://x.com/KausikChak1234/status/1843378014681461034?t=jQFPVgX11ngOWi-udQlHQA&s=19
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
@tipu curate
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Upvoted 👌 (Mana: 1/7) Get profit votes with @tipU :)
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit