আজ দোলপূর্ণিমা। রঙের উৎসবে মেতে ওঠার দিন। হোলি নিয়ে দু-চার কথা।

in hive-129948 •  10 days ago 

আজ দোলপূর্ণিমা। বিভিন্ন রঙের বাহারে মেতে ওঠার দিন।

💮💮💮💮💮💮💮💮💮


happy-holi-hai-8636532_1280.jpg
সোর্স


🙏 সকলকে স্বাগত জানাই 🙏


আজ দোলপূর্ণিমা। পূর্ণিমার চাঁদের সঙ্গে দোল যাত্রার এক ওতপ্রোত সম্পর্ক আছে। দোলপূর্ণিমা বা বাসন্তী পূর্ণিমা সারা বছরের মধ্যে একটি অন্যতম তিথি হিসেবে পরিচিত। এই দিন সারা ভারতজুড়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষেরা রঙের খেলায় মেতে ওঠেন। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হল এই দিন রাধাকৃষ্ণকে বন্দনা করে রংয়ের মুহূর্তকে উদযাপন করা হয়। হিন্দু পুরাণ মতে এই বাসন্তী পূর্ণিমা তিথিতেই বৃন্দাবনে রাধাকৃষ্ণ রংয়ের খেলায় মেতে উঠতেন। সঙ্গে ব্রজভূমিতে থাকতেন সকল সখা এবং সখীগণ। আমরা জানি কৃষ্ণের সখাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন শ্রীদামসখা, সুবোলসখা, সুদামসখা প্রভৃতি। আর সখীদের মধ্যে ললিতা, বিশাখা বা চন্দ্রাবলীর নাম উল্লেখযোগ্য। বৃন্দাবনে সকলে মিলে এই দিনে হোলি খেলায় মেতে উঠতেন। সেই থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষেরা এই দিনটিকে হোলি বা দোলযাত্রা হিসেবে অভিহিত করেন। সারা ভারতবর্ষ জুড়ে তাই এই দিনটি বিশেষভাবে উদযাপিত হয়।

দোলযাত্রার ইতিহাস ঘাঁটলে আমরা ভারতবর্ষের মাটিতে বহু পুরনো দৃষ্টান্ত দেখতে পাই। অশুভর বিরুদ্ধে শুভ শক্তির উত্থানকে এই উৎসবের মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হয়। এক্ষেত্রে সবার প্রথমে যার নাম আসে তিনি দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপুর বোন হোলিকা। হরিভক্ত প্রহ্লাদকে হত্যা করবার জন্য বিভিন্নভাবে তাঁর বাবা হিরণ্যকশিপু চেষ্টা করে যেতেন। যেমন কখনো পাহাড় থেকে ফেলে দিয়ে বা কখনো সরাসরি অস্ত্রের মাধ্যমে আঘাত করে। কিন্তু ভক্ত প্রহ্লাদকে কোনদিন তিনি হত্যা করে উঠতে পারেননি। সেই সময় তার বোন হোলিকা দাদাকে প্রস্তাব দেন যে তিনি প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে জ্বলন্ত অগ্নির মধ্যে প্রবেশ করবেন। আসলে হোলিকার একটি বর ছিল, যে তিনি কখনোই অগ্নিদহনে মৃত্যুবরণ করবেন না। সেই বরকে মাথায় রেখেই তিনি প্রস্তাবটি দিয়েছিলেন। তিনি জানতেন এর মাধ্যমে প্রহ্লাদকে খুব সহজে হত্যা করা যাবে। কিন্তু অগ্নিতে প্রবেশ করার পর ঘটনা ঘটলো উল্টো। ভক্ত প্রহ্লাদকে আগুন ছুঁতে পারল না, কিন্তু হোলিকা মারা গেলেন সেই জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডের মধ্যে। আর এই ঘটনাকেই মনে রেখে শুভ শক্তির উত্থানকে স্বাগত জানিয়ে হোলিকা দহন করা হয় প্রতি দোলপূর্ণিমার আগের দিন। যাকে আমরা চলিত ভাষায় ন্যাড়াপোড়া বলি।

girl-3194977_1280.jpg
সোর্স

আর এই দিনের পরেই আসে দোলপূর্ণিমা তিথি। এই দিনটি রঙের উৎসব। বিভিন্ন রকম রং এবং আবির সহযোগে মানুষ একে অপরের সঙ্গে হোলি খেলায় মেতে ওঠেন। সেক্ষেত্রে উঁচু নীচ ভেদাভেদ ভুলে রং খেলার মাধ্যমে সকল মানুষে মানুষে মিলন ঘটে। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এই দোলপূর্ণিমাকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। যেমন উত্তর ভারতে বলে হোলি, আর বাংলা বা উড়িষ্যায় বলা হয় দোলযাত্রা। আবার ক্ষেত্রভেদে একে ফাগ পূর্ণিমা বা ফাগুয়া বলা হয়েও থাকে। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে রাজা হর্ষের ৭ম শতাব্দীর রচনা রত্নাবলীতেও হলিকোৎসব উৎসবের উল্লেখ করা হয়েছে।

ভারতবর্ষ ছাড়াও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জতে এই দিনটি পালিত হয়ে আসছে। বিভিন্ন দেশে ভারতবর্ষের সঙ্গে একসাথে হোলি উৎসব পালন করা হয়। হোলি উৎসব নিয়ে বহু জায়গায় বহু কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। মানুষ এই দিনটিকে আবির এবং রং দিয়ে মাতিয়ে দিতেই পছন্দ করেন। এমনকি উপনিবেশিক ব্রিটিশরাও ভারতবর্ষে আসবার পর এই উৎসবের খেলায় মেতে উঠেছিলেন। ভারতবর্ষের বিভিন্ন উৎসবের মধ্যে এই উৎসবটি তাদের কাছে অন্যতম প্রিয় হয়ে উঠেছিল। তাই দিওয়ালি বা নবরাত্রির মত বিভিন্ন উৎসবের সঙ্গে হোলি উৎসব বা দোলযাত্রাও ভারতীয় সংস্কৃতির একটি অত্যাবশ্যক অঙ্গ হয়ে উঠেছে।

আজ আমার বাংলা ব্লগের সকল বন্ধুকে এই দোলযাত্রা তিথির শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা জানাই। আজকের দিনে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলের কাছে একটাই প্রার্থনা, আসুন আমরা সকলে হাতে হাত রেখে পথ চলি। সকলের সঙ্গে সমস্ত বিবাদ এবং জাতিগত বিদ্বেষ ভুলে আমরা যাতে সকলের জন্য কাজ করতে পারি এবং সকলের পাশে দাঁড়াতে পারি, সেটিই দেখা উচিত। আপনারা জানেন তো আজ শুধু দোলপূর্ণিমা নয়। আজ আর একজন মহামানবের জন্মদিন। তিনি হলেন বাঙালির এক অবিসংবাদী নেতা গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু। তাই আজ গৌরপূর্ণিমাও৷ সেই মানুষটা আজ থেকে ৫৪০ বছর আগে জন্মেছিলেন বাংলার মাটিতে। আর তিনি সেই যুগে দাঁড়িয়ে হিন্দু ধর্মের কৌলিন্যবাদ এবং জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে এক তীব্র আঘাত এনেছিলেন। সাম্যবাদের হয়ে তিনি যে বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সারা পৃথিবীর কাছে তা আজও সমান প্রাসঙ্গিক। উঁচু নীচ বা জাতিগত বিদ্বেষ ভুলে তিনি সারা দেশে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সাম্যবাদের বাণী। আজ তাই দোলপূর্ণিমা তিথিতে সেই মহামানবকেও প্রণাম জানাই। আর তাঁর সুর ধরেই আজ বলি, সব জাতি বর্ণভেদ প্রথার ঊর্ধ্বে উঠে আমরা মানুষ। আর তার উপরে আমাদের আর কোন পরিচয় নেই।


🙏 ধন্যবাদ 🙏


(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)



1720541518267-removebg-preview.png

Onulipi_07_27_10_21_22.jpg


Yellow Modern Cryptocurrency Instagram Post_20240905_213048_0000.png

new.gif

1720541518267-removebg-preview.png


--লেখক পরিচিতি--

IMG_20240303_181107_644.jpg

কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।

Drawing_11.png

44902cc6212c4d5b.png

6VvuHGsoU2QBt9MXeXNdDuyd4Bmd63j7zJymDTWgdcJjo1LsUc8S2zjHiaW6UcX2M5SAfbrPcxiCjQzCc6aZJSjUDgt85bSStrwGCUjZMWCDKxNata4NQ2cZTKGxsY.png

FrDSZio5ZCzUamf35asauSgs1tnNGCc8exBrDii52qi3JpjTyYCF9oFoYfs1EV4VTnFw6faxzt5X7uHiwMAHmLS3ef2Jb2JcxHBkpRBd2y...Qa3Q3c7Biv4c8mKsr8DHNVYqqpVomFSv1wmkMCbhs7oCjb14sjkA3vxAfSRk8QPzNZ5UirrZUzvHCXygHCV49RVVZBeTFCeo47WcQXnjLYGy2RNdJQycJW4cN.jpeg

2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif


Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

Daily tasks-

Screenshot_20250314-233151.jpg

Screenshot_20250314-231607.jpg